নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আপনালাপ

সরজিত চক্রবর্তী

সরজিত চক্রবর্তী › বিস্তারিত পোস্টঃ

মানবতা ও মৃত্যুদণ্ড

১১ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৫

অপরাধের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড আমার
কাছে কোন ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে
আমৃত্যু কারাদন্ড। এবং সংশোধনাগারে
পাঠিয়ে অপরাধীর মানসিক পরিবর্তন হতে
পরে সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা।

হাতের বদলে হাত, চোখের বদলে চোখ,
খুনের বদলে খুন কোনভাবেই সভ্য মানুষের
কামনা হতে পরে না। এগুলো নিতান্তই
মধ্যযুগীয় কার্যকলাপ। চৌরাস্তায়
শিরচ্চেদ, চুরির দায়ে হাত কেঁটে
দেওয়া, পাথর ছোড়ে হত্যা এগুলো বর্বর
বেদুঈনদের মানায়। কোন সভ্য দেশের
নাগরিক এর কোনটিকেই সমথর্ন করতে
পারে না। ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যু কার্যকর
কোন অংশেই এগুলোর চেয়ে কম নয়।

একজন মানুষ অপরাধি হয়ে উঠার পেছনে
নানা ঘটনাপ্রবাহ ও কার্যকরণ থাকতে
পারে। অনেক ক্ষেত্র তার অন্ধ বিশ্বাস,
ধর্ম বিশ্বাস, সামাজিক মনোভব, তীব্র
জাতীয়তাবাদন্ধতা তাকে অপরাধ
সংগঠনে প্ররোচিত করতে পারে। আর
একটি আদর্শ রাষ্ট্রের উচিত তার
সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তা সংশোধনের
ব্যবস্থা করা, মৃত্যুদন্ড দিয়ে পৃথিবী থেকে
নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া কোনভাবেই নয়।
অপরাধীর অপরাধের গভীরতার
প্রেক্ষিতে সংশোধনাগারে পাঠানো
যেতে পারে বিভিন্ন মেয়াদে। আর
যেসমস্ত অপরাধীর অপরাধ কোনভাবেই
ক্ষমার যোগ্য নয় কিংবা তার সংশোধন
কোনভাবেই সম্ভব নয় তাদের ক্ষত্রে
আমৃত্যু কারাদন্ডই হতে পারে সর্বোচ্চ
শাস্তি।

বতর্মান পৃথিবী মৃত্যুদেন্ডর ব্যপারে
যথেষ্টই স্পর্শকাতর হয়ে গিয়েছে।
বিশ্বের অধিকাংশ উন্নত ও সভ্য দেশ
ইতোমধ্যে হয় প্রাণদন্ডন আইনগতভাবে
নিষিদ্ধ করেছে, নতুবা প্রাণদন্ড দানে
বিরত আছে। সংশোধনাগারে পাঠিয়ে
অপরাধীর মানসিক উন্নয়ন করাই তাদের
প্রধান লক্ষ্য। প্রবল প্রতিশোধপ্রবনতার
রাস্তা থেকে তারা অনেক আস্তে
আস্তে দূরে সরে আসছে। কেননা
প্রতিশোধপরায়নতা কোনভাবেই একটি
আদর্শ রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য হতেপারে না।
রাষ্ট্র হবে সম্পূর্ণরূপে প্রতিশোধপরায়নতা
হীন।

বাংলাদেশের সরকারেরও উচিত মৃত্যুদন্ড
নিষিদ্ধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দেশের
জেলখানা গুলোকে আধুনিক
সংশোধনাগারে পরিনত করা হোক।
প্রতিটি জেলখানায় যথেষ্ট পরিমানে
মনোবিজ্ঞানী, মোটিভেটর নিয়োগ
দেওয়া প্রয়োজন। দেশের অবকাঠামোগত
উন্নয়নের সাথে সাথে মানবিক উন্নয়ন
করাটাও কম প্রয়োজনীয় নয়। দেশের
জনসাধারণের মানবিক উন্নয়ন না করা
গেলে সমস্ত অবকাঠামোগত উন্নয়ন
অর্থহীন হয়ে পরবে। সরকারের উচিত এ
খাতে বাজেটের একটা বড় অংশ বরাদ্দ
রাখা।

বর্তমান বাংলাদেশের সবচেয়ে
আলোচিত বিষয় হল যুদ্ধাপরাধীর বিচার।
নৈতিক বিবেচনায় এটি অবশ্যই একটি
সময়োচিত পদক্ষেপ, যা অনেক পূর্বেই
নেওয়া প্রয়োজন ছিল। আমাদের জাতীয়
কলঙ্ক হিসেবে প্রকট হয়ে আছে বিষয়টি।
কলঙ্কমোচনের জন্য বিচারের কোন
বিকল্প নেই। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের
দাবিতে ধর্ম, বর্ণ, জাতি নির্বিশেষে
সকলের একমত হওয়া উচিত।


যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সর্বোচ্চ
শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে মৃত্যুদন্ড।
কিন্তু নৈতিক বিচারে মানবতা বিরোধী
অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে মৃত্যুদন্ড কি
গ্রহনযোগ্য? মৃত্যুদন্ড ব্যপারটা কি একটু
অমানবিক হয়ে যায় না? বিশেষকরে যখন
বিচারটা হচ্ছে অমানবিকতার, পাশবিকতার
বিরুদ্ধে।

যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদন্ডের বিরুদ্ধে
বিশ্বের অনেক প্রভাবশালী দেশ আপত্তি
উঠিয়েছে। তারা মৃত্যুদন্ডের বদলে আমৃত্যু
কারাদন্ডের সাজা দিতেই বেশি
আগ্রহী। এর পেছনে অবশ্যই জামাতী
প্রচারযন্ত্র, অসৎ অর্থ, লবিংতন্ত্রের হাত
আছে। পাশাপাশি মৃত্যুদন্ডের বিরুদ্ধে
দেশসমূহের অবস্থানটাও একটা কার্যকর
কারণ হতে পারে।

যদিও আমি মৃত্যুদন্ড বিরোধী, তারপরও
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে এই
নীতিতে থাকতে আমারও ইচ্ছা করেনা।
আমার মাঝে মাঝেই মনে হয় এদের
মৃত্যুদন্ডের বদলে যদি আমৃত্যু কারাদন্ড
দেওয়া হত তাহলেও আমি খুব বেশি অখুশী
হতাম না। কিন্তু এই ভাবনার পরই একটা ভয়
মনে আসে, ক্ষমতার পালাবদলে যখন অন্য
দল ক্ষমতায় আসবে তখন হয়তো এদের
বিচারকার্যকে অবৈধ ঘোষণা করে
নিরপরাধ নিষ্পাপ বলে কোলে তুলে
নিতে পারে। কেউ যদি আমাকে এই গ্যারান্টি দিত যে এদের বিচারকে অবৈধ করা হবে না, পাপের শাস্তি এরা অবশ্যই পাবে, তাহলে আমি মৃত্যুদণ্ড না দিতেই বলতাম। তাই এক্ষেত্রে একটু
চতুরতার অবলম্বন করে বলি, এবারের মতো
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারটা হয়ে যাক তারপর
থেকে আমি সম্পূর্ণরূপে মৃত্যুদন্ড বিরোধী
অবস্থান পালন করব।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.