![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
"চলো বদলে যাই" ২০-মার্চ-২০১১ইং
স্থান: কলেজের গ্যেটের সামনে চটপটির দোকানে।
কাল:
বৃষ্টি: এইরে জন্মের টক খেয়ে ফেলেছি আজকে..!
প্রশ্ন: আরেকটু দেই?
(বৃষ্টি একটা মড়িচ এর টুকরা চামচ দিয়ে উঠিয়ে মুখে দেয় আর বড় বড় চোখ করে ওর দিকে ভয় দেখাবার মত করে তাকায়।)
আঁখি: দেখি তোর এখান থেকে একটু খেয়ে দেখি, আমাট্টা শেষ।
প্রশ্ন: ও নিজেটটা শেষ করে এখন আমাট্টায় ভাগ বসাতে এসেছ?
আঁখি: এই ..চুন্নি, এত আস্তে খেলে তোর জামাই দেখবি খেয়ে দেয়ে নাক ডাকা শুরু করেছে।
প্রশ্ন: আস্তে আস্তে খাওয়ার সাথে নাক ডাকার সম্পর্ক কি?
আঁখি: ও, ন্যেকা! ন্যাকামি করিস? মেয়েদের তারাতারি খেতে হয় জানিস না?
প্রশ্ন: নে ধর প্লেট সহ খা..বৃষ্টি তুই কিছু বলবিনা? এত্ত কষ্ট করে এত্তো মজা করে চপটিটা মাখালাম আর কুত্তিটা উড়ে এসে জুরে বসলো।
বৃষ্টি: একটা কথা বলব? তুই তোর স্বামীকে রেখে ঢেকে রাখতে পারবিতো? চিলের মত অন্য দ্রুপদী যদি থাবা দেয় রক্ষা করতে পারবিতো?
(বৃষ্টি কথাগুলো এক ধরনের ভাব নিয়ে চোখ রাঙ্গিয়ে বলে যায়।)
প্রশ্ন: তোদের সাথে আমি আর জিন্দিগিতে এই চটপটির দোকানে পা দেবনা, ফাজলামির সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছিস তোরা। চটপটি কাকা মনে রেখো কথাটা..।
বৃষ্টি: শোন শোন প্রশ্ন, দোস্ত, সরি দোস্ত।
প্রশ্ন: তোরা ডাইনী তোদের সাথে কাট্টি..চটপরি দোকান শুধু খেয়ে ফেল।
আঁখি: দোস্ত তোরে ছাড়া আমরা বাঁচবোনা মরে যাব, ফিরে আয়। চটপটির বিল তোকে দিতে হবেনা, এসে পর।
প্রশ্ন: ধুততর চটপটি! না খেলে তোদের মত স্বামী ছাড়া বিধাব হব না।
আঁখি: কি বললি?
বৃষ্টি: এই ধর শালিরে।
(চটপটির বাটি ছুড়ে ফেলে ওরা কোন রকমে নিজেদের ব্যেগ হাতে নিয়ে প্রশ্নকে ধাওয়া করে..ওরা ছুটতে ছুটতে কলেজের ভেতরের দিকে এগুতে থাকে।
প্রশ্ন এক সময় দোতলার সিঁড়ি বেয়ে উঠতে থাকে। ওরাও ওর পিছু দৌড়াতে থাকে। প্রশ্ন বিশাল কলেজের লম্বা প্যেসেজ বরান্দার চারদিকে ঘুড়তে থাকে, এক সময় ওরা তিন জন তিন প্রান্তে দাঁড়িয়ে হাপাতে থাকে। এক প্রান্ত থেকে বৃষ্টি বলে উঠে-)
বৃষ্টি: পনি খাব ।
(আরেক প্রান্ত থেকে প্রশ্ন বলে উঠে-)
প্রশ্ন: আমার দম ফেলতে কষ্ট হচ্ছে।
(অন্যপ্রান্ত থেকে থেমে থেমে আখি বলে-)
আঁখি: আমার পেট ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে..অনেক হয়েছে এবার থাম।
স্থান: বহুতল বিশিষ্ট মার্কেট।
কাল:
আঁখি: তুই বসে থাক আমরা আইসক্রিম খেয়ে আসি।
বৃষ্টি: এই তোরা একটু বসনা, আমার একা ভাল্লাগবেনা।
আঁখি: এ কাজটানা আমার একদম বিরক্তিকর লাগে। তুই চুল ফোল্ডিং করছিস কর। দুইঘন্টার জায়গায় ছয় ঘন্টা বসে থাক তাতে আমাদের কোন আপত্তি নেই কিন্তু আমাদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার কোন অধিকার কারো নেই, এই চল প্রশ্ন।
প্রশ্ন: তোর ফোনটা নিয়ে গেলাম।
বৃষ্টি: কেন? না না, এই শোন শোন, তোরা এমন করিসনা আমার সাথে-আমার জন্য আনিস কিন্তু।
(ওরা তারাহুরো করে পেন্সীল হিলের কটকট শব্দ করতে করতে পার্লারের থাই গ্লাসটা টেনে বেরিয়ে আসে। বৃষ্টি একা একা নির্বাক আয়নার দিকে চেয়ে থাকে। ওকে সত্যিকারের ডাইনীর মতই আয়নায় ভাষতে দেখা যাচ্ছে।)
স্থান: লিফটে আইসক্রিম খেতে খেতে।
কাল:
আঁখি: এই চল একটু উপরে যাব ছাদে।
প্রশ্ন: কি! ছাদে যাবি মানে? একা একা!
আঁখি: একা একা মানে,চল, আমরা দুজন আছিনা একসাথে। একটু হাওয়া খাব।
প্রশ্ন : আচ্ছা তুই যে লুকিয়ে লুকিয়ে ধুমপান করিস তোর লজ্জা করেনা, ভয় পাসনা কাউকে?
আঁখি: দেখ আমাকে একদম জ্ঞ্যান দিবিনা, আয় আমার সাথে। দু একটা সিগারেট না ফুকতে পারলে দিনটাই কেমন যেন পানসে লাগে।
(ওরা ১০-তলা ছাদের কাছে চলে আসে। সিকিউরিটি ইনচার্জকে বলে ওরা ছাদে প্রবেশ করে। প্রশ্নের হাতে তখনো আইসক্রিম দেখা যাচ্ছিল আর আঁখির খাওয়া শেষ। ওরা নিচের দিকে একসাথে তাকিয়ে দেখে ভূ-পৃষ্টটাকে।)
প্রশ্ন: আমার পায়ের তলা শির শির করছে।
প্রশ্ন: নিচের দিকে তাকিয়ে?
(প্রশ্ন আইক্রিম মুখে নিয়ে বোকার মত তাকিয়ে শব্দ করে)
প্রশ্ন: হু।
আঁখি: ধুর বোকা! আমাকে যদি কেউ পেরাসুট নিয়ে ১০০০০-ফুট উপড় থেকে লাফ দিতে বলে তাও পারব।
প্রশ্ন: তুই পারবি আমি পারব না।
আঁখি: যে পারে সে সব পারে, তুই কিছুই পারবিনা, নে ধর একটা সিগারেট খা..।
প্রশ্ন: না, কেউ দেখে ফেলবে।
(প্রশ্ন উচ্চ স্বরে খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে। এমন সময় সিকিউরিটি ইনচার্জ ছাদের গ্যেটে উকি মারল। আঁখি তাতক্ষনিক ধমকের সুরে লোকটাকে ইসারায় কাছে ডেকে আনল। এরপর ২০-টাকার একটা গোলাপী নোট তার হাতে ধরিয়ে বলল)
আঁখি: আমরা আরো ২০-মিনিট থাকব, যাও। এরপর ব্যেগ থেকে একটা প্যেকেট বের করে জিপু লাইটার দিয়ে সুকৌশলে প্রফেসনালদের মতই একটা সাদা সিগারেট ধরিয়ে ধোঁয়া ছেড়ে দেয়।)
প্রশ্ন: তোকে একটা প্রশ্ন করি? তুই মৃত্যুকে ভয় পাসনা?
আঁখি: পাই, কেন হঠাৎ এ প্রশ্ন?
প্রশ্ন: না মানে এমনি। আর কোন কথা মনে আসছেনা তাই। আতœহন্তা করতে পারবি তুই?
আঁখি: জটিল একটা প্রশ্ন করে ফেললি তুই। আতœহতœা আমি করতে পারবনা কারণ আতœহননের জন্য যে সাহস প্রয়োজন তা আমার মধ্যে নেই। হ্যা পরিস্থিতির স্বকিার হলে পরে বলা যায় না।
প্রশ্ন: কেউ কেউ বলে বেঁচে থাকতে হলে নাকি সাহসের প্রয়োজন। মানুষ ইচ্ছে করলেই নাকি নিজের মৃত্যু নিজে ডেকে আনতে পারে!
আঁখি: তুই মৃত্যুকে ভয় পাস? এমন কিছু দেখেছিস কখনো?
প্রশ্ন: কেমন?
আঁখি: এই ধর মৃত্যু যন্ত্রনা!
প্রশ্ন: আমি এটুকু বুঝি যে, মৃত্যু অবধারিত। এখান থেকে মুক্তির কোন উপায় কারো জানা নেই। মৃত্যুর স্বাদ সবাইকে গ্রহণ করতে হবে।
আঁখি: কারেক্ট, এজন্য মৃত্যুকে উপভোগ করার মধ্য দিয়েই জীবনকে জয় করা যায়।
প্রশ্ন: তুই মদ খেয়েছিস কখনো?
আঁখি: বহুবার।
প্রশ্ন: কেমন রে এসবের মজা?
আঁখি: সে তুই বুঝবিনা, তোর বোঝার দরকারও নেই। তুই যেমন আছিস তেমনি থাকিস, সুখি থাকতে পারবি সারা জীবন। শুধু চশমার ফ্রেম এর কালারটা একটু চেঞ্জ করে নিস, তোর স্বামীর পছন্দ মতন।
প্রশ্ন: আমি বুঝিনা তোরা দুজন কথায় কথায় কোন এক অদৃশ্য থেকে আমার জন্য বর নিয়ে আসিস। বর মানে আমার স্বামি কে হেবে কেমন হবে, হবে কি হবেনা এসব কি আমার চেহারায় ছাপা আছে যে তোরা তাকলেই দেখতে পাস, তোদের যন্ত্রনায় আমার মাঝে মাঝে চির কুমারী মরতে ইচ্ছা করে।
আঁখি: রাগ করিস কেন? রাগ করলে তোরে বিশ্রি লাগে।
প্রশ্ন: দেখ ছেলে মানুষের মত একদম ঢং করবিনা আমার সাথে বলে দিচ্ছি।
আঁখি: তুই কিন্তু সত্যি সত্যি রেগে যাচ্ছিস।
প্রশ্ন: তুই কোনদিন আমার সামনে আর এই কাজটা করবিনা।
আঁখি: কোন কাজটা?
প্রশ্ন: এই যে এই কাজটা, যেই কাজটা এখনো চলমান বর্তমান কাল। হাতের ওটা ফেল। পেকেটটা আমার কাছে দে ভেঙ্গে ফেলে দেব।
আঁখি: তাহলে তুই শান্তি?!
প্রশ্ন: চল নিচে চল, একটা মেয়ে কতটা নির্লজ্জ হলে পলে সিগারেট খায়? ছি ছি ছি...ছি: ছি:!
স্থান :
কাল :
(ফোনে কথোপকথোন।)
(বৃষ্টির কাছে ফোন দেয় প্রশ্ন। চোখ কচলাতে কচলাতে ফোন ধরে বৃষ্টি।)
বৃষ্টি: হ্যালো, হ্যালো? কিরে এত সকালে তুই?
প্রশ্ন: কাল বাসায় ফিরে দেখি বাবা নতুন গাড়ি কিনেছে। আমি বাবর ব্রিফকেস থেকে ৫০০০ টাকা মেরে দিয়েছি। অনেক টাকা ছিল, বাবা বুঝতেই পারবেনা। পুরান গাড়িটা নিয়ে আমি তোদের নিয়ে আজ ঘুরবো, বাবাকে বলে রেখেছি। বাবা রাজি হয়েছে কিন্তু ড্রাইভার নেই যে..!
বৃষ্টি: তাই বলে এত সকালে কাচা ঘুমটা নষ্ট করলি ! দুই ঘন্টা পরেওত ফোন দিতে পারতি, তাইনা। এখন কটা বাজে? মাত্র আটটা, দশটা পর্যন্ত না ঘুমালে রাত জাগার ক্লান্তি দূর হয় ? মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকে। তুই দশটা পর্যন্ত অপেক্ষা কর, আমি ঘুমাব..রাখি। আর শোন ড্রাইভার লাগবেনা গাড়ি আমি চালাব তোর বাবাকে ম্যেনেজ করে রাখস।
স্থান: গাড়ির ভেতর।
কাল :
(পেছনের ছিট থেকে আঁখি প্রশ্ন করে উঠে)
আঁখি: কিরে কোথায় যাচ্ছিস তোরা?
বৃষ্টি: শহড়ের বাইরে।
আঁখি: হাহলে আমাকে নামিয়ে দে.. আমার কাজ আছে।
প্রশ্ন: কি কাজ তোর? আজ এমনিতেই শুক্রবার তোর কোন কাজ নেই, বসে থাক।
আঁখি: আরে আমার ফোনটা কাজ করছেনা, গতকাল হাত থেকে পরে কি যে হলো! তোরা বাসায় না গেলে আমি..।
বৃষ্টি: অন্য কোন প্রগ্রাম আছে কিনা সেটা বল? আমার কাছে লুকাবি না। অবশ্য ধরা পরে যাবি। কারণ আমি তোর সব খবড়ই রাখি।
আঁখি: ও আচ্ছা তাই? ভালো। তা তোদের আজ মতলবটা কি শুনি? একা একা গাড়ি বের করে আগানে বাগানে ঘাস খেতে বেরিয়েছিস।
প্রশ্ন: ইস্ মেয়েটানা বেশি কথা বলে। কতদিন পর একটু মুক্ত বাতাস খেতে ছুঁটে চলেছি, না এরা হাড্ডি মাংষের মত লেগে আছে।
(এমন সময় গাড়ি হার্ড ব্রেক করল। সামনে একটা মাইক্রো বাস থেকে লাগেজ পরে গিয়েছিল। বৃষ্টি সবাইকে তারা দেয়।)
বৃষ্টি: সবাই ঠিক হয়ে বস।
(প্রশ্ন একটা গানের ক্যেসেট প্লে করে দেয়। ওদের গাড়ি আবার ছুটতে শুরু করল। এর কিছুক্ষন পর থেকে জাগায় জাগায় গাড়ি থামিয়ে ওরা এটা সেটা কিনল যেমন-রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়া হকারের কাছ থেকে পত্রিকা, তাল পাখা, বাষের বাঁশি, কোল্ড ড্রিংস, মোবাইল কার্ড ইত্যাদী। একসময় গাড়ি এসে থামল কোন এক গ্রামের কাঁচা রাস্তার পাসে। জায়গাটা অচেনা হলেও সুন্দর! ওরা একটু পিছিয়ে এসে চায়ের দোানটাতে নেমে চা খেতে শুরু করে। এরপর এসে থামে পাম্পে। তেল গ্যাস দুটোই চেক করে নেয় ওরা। এরপর দুপুর এর আজান হচ্ছে এমন সময ওরা এসে থামে একটা নদীর ধারে ফেরী ঘাটে। এখানে এস একটা ভাতের দোকানে ঢুকে পরে ওরা। আসে পাসের লোকজন ওদের দিকে বাবা দৃষ্টিতে চিকনে তাকাচ্ছে। ওরা ইলিশ মাছ এর ডিম ভুনা, শুকনা মড়িচ তেলে ভাজা আর চিংরি মাছ আর গড়ম ভাত নিয়ে খেতে বসে পরে।
একটি সুন্দর হ্যান্ডসাম স্বাস্তবান যুবক ছেলে ওদের দিকে খাবারগুলো এগিয়ে দিলো। ছেলেটাকে দেখে মনেই হচ্ছে না যে এখানকার কাজের লোক। বেকব্রাষ করা মাথার চুলে ওকে শহড়ের শিক্ষিত যুবকদের মতই ঠেকছিল। প্রশ্ন এক সময় প্রশ্ন করে বসল)
প্রশ্ন: আ..ভাইয়া আপনি কি এখানে কাজ করেন?
(ছেলেটি জবাব দেয়)
যুবক: অবশ্যই কাজ করি। এটা আমার নিজের দোকান। আপনারা এ দোকানে মেহমান হিসেবে এসেছেন তাই আপনাদের সন্মান করার জন্য এগিয়ে এলাম।
বৃষ্টি: ও আচ্ছা কষ্ট করার জন্য থেংকিউ, আপনাকে ধন্যবাদ।
যুবক: আর কিছু দেবো আপনাদের?
আঁখি: একটু ঠান্ডা পানির ব্যাবস্থা করে দিতে পারেন?
(ওরা খাওয়া শেষ করে গাড়ি নিয়ে একটা উঁচু জায়গায় এসে দাড়ায়। এখান থেকে নদীটা ডান বাম সামনে কাছে পুরোটা সমান সমান দেখা যাচ্ছে। নদীতে তেমন কোন ঢেউ নেই তবে বাতাসে পালতোলা নৌকা চলতে দেখা যাচ্ছে।
বেশ কিছুক্ষন ওরা চুপচাপ দাঁড়িয়ে তন্ময় হয়ে সে দৃশ্য দেখে। নদীর পানি রোদ্রের তাপে চিকচিক করছে।
বৃষ্টি হঠাত আবৃত্তির সুরে বলে উঠে)
বৃষ্টি: “নদীর এই কূল কহে ছাড়িয়া নিশ্বাঃস-ঐ কূলেতে সর্ব সুখ আমার বিশ্বাস”।
আঁখি: তোর আবার কি হল ঐ পারে যাবি নাকি?
প্রশ্ন: চল নদীর পাস দিয়ে একটু হাঁটি ।
বৃষ্টি: আমি যে সাতার শিখি নাই।
আঁখি: দে মোবাইলটা দে, তোদের একটা ছবি তুলি।
(ওরা এক অন্যের ছবি তুলে নেয়। এর পর ঢালা জায়গা দিয়ে নদীপারে হাঁটতে শুরু করে। পায়ের নিচে বালুময় রাস্তা। আঁখি একটুকরো মাটির চাড়া তুলে পানিতে বাকা করে ছুড়ে দেয়। ব্যাং লাফের মত কিছু দুর ছন্দবদ্ধ ভাবে পানির উপর ভেষে আবার ডুবে যায় সেটা..ওরা দুজন মুদ্ধ হয়ে তা তাকিয়ে দেখে।)
আঁখি: আমাদের জীবনটাও এরকম ভাবে এগিয়ে এসে মাঝপথে ডুবে যাওয়া। ও পারের স্বপ্ন শুধুই কল্পনা!!
বৃষ্টি: জীবনটা এমন কেন বলতে পারিস! ভাল করে জীবনটাকে যখন উপলব্ধি করতে শুরু করলাম তখন থেকেই শুরু হল মৃত্যু ভয়!
প্রশ্ন: ঠিকই বলেছিস , এই ধর এখন যেমন আছি এমন যদি সারা জীবন থাকতে পারতাম!
আঁখি: তারমানে তুই সারা জীবন যুবতী থাকতে চাস? খোদার কসম!!!
বৃষ্টি: এই দেখ দেখ কাশবন। চল-চল ওখানে গিয়ে ছবি তুলি।
আঁখি: এই রোদের ভেতর আমার ভারলাগছেনা। তোরা যা আমি গাড়িতে গিয়ে বসি।
বৃষ্টি: তোর এই স্বভাবটা পাল্টা। সব কিছুতেই ডিফেন্স। তুই আগে হাট।
(ওরা কাশবনে ঢুকে একেবারে মাখামাখি অবস্থা। সারা শরীর চুলে কাশফুলের ছিটেফোটা।
অনেক সুন্দর সুন্দর ছবি তুলে নিল ওরা প্রকৃতির এই অপার সোন্দর্যের সাথে ওদের মনের মাধুরী মিশিয়ে।
ঠিক গোধুলী লগ্নে ওরা শহড়ে ঢুকে পরল।)
আঁখি: একটা টেলিকম দোমানে ঢুকে মোবাইলটা সার্ভিসিং করাতে দিয়ে রাস্তার অপজিটের দোকান থেকে একপ্যেক সিগারেট কিনে নিয়ে গাড়িতে এসে বসল। বৃষ্টি গাড়ির মিউজিক লাউড করে দিল। প্রশ্ন পেছন থেকে এসে সামনে বসল। আঁখি সিগারেট ধরাবে এমন সময় বৃষ্টির সাথে মিররে চোখাচোখি হল। আখির চোখেমুখে একবারে তাচ্ছিল্লের দৃষ্টিভঙ্গি। কুছ পরওয়া নেহি, এক বারে ড্যেমকেয়ার। তার আচড়ন থেকে ছেলে না মেয়েতা বোঝার উপায় নেই।
আঁখি: আমার আজকে ২০০০-টাকা ধার দিবি তুই।
প্রশ্ন: এই কি খাবি তোরা? আমার বাসায় যেতে হবে, অসুবিধা হয়েছে। এই নে ধর আমি তোদের টাকা দিয়ে দিলাম। আমি বাসায় যাব।
বৃষ্টি: টাকা লাগবেনা, আজ আর কিছু খেতে ইচ্ছে করছেনা, তুই আখিকে টাকা লোন দে।
(বৃষ্টি এবং আখি দুজন দুপাস থেকে একই সময়ে কথা বলতে থাকে।)
আঁখি: কখন হল? কি বলিস? আগে থাকতে সাবধান হবিনা।
প্রশ্ন: আরে তোদের বলিনি তোরা জানিস না, সমস্যাটা অনেক দিনের।
বৃষ্টি: ডাক্তার দেখাসনি?
প্রশ্ন: ডাক্তার কি দেখাব? আমার লজ্জা লাগে।
বৃষ্টি: তবে এখন চল। রুমাল লাগবে?
প্রশ্ন: না লাগবে না। বাসায় যাব, খাড়াপ লাগছে।
(এই সময় প্রশ্নের মোবাইল বেজে ওঠলো। ডিসপ্লেতে প্রশ্নের বাবার নাম্বার দেখা যাচ্ছে।)
স্থান: বৃষ্টিদের বাড়ির দোতলা বারান্দায়।
কাল: জোতসনা রাতে।
কি নিষ্ঠুর এই পৃথিবী তাইনা? কেউ কারো আপন নয়। কেউ কারো আপন হতে পারেনা! কি ভয়ংকর সত্যকথা! জন্ম মাত্রই একা! সামান্য কিছু সময়ের ব্যবধানে কতইনা পার্থক্য। এইতো কিছু দিন আগে আমি ছিলামনা আবার কিছুদিন পরও আমি থাকবোনা। মধ্যেখানের সময়গুলি আমি পৃথিবী নামক মহাশূন্যে ভেষে ভেষে কাটিয়ে গেছি। এরই নাম কি জীবন? এরই নাম বেঁচে থাকা?
এই এক জীবনে মাটির পৃথিবীতে মাটির তৈরী মানুষের কত বিচিত্র চাওয়া, পাওয়া, আশা আকাঙ্খা, দুঃখ, কষ্ট! এই হিসেবের কোন পরিধী নেই, নেই কোন ব্যাস অথবা ব্যসার্ধ।
জীবনই যেখানে আপন নয়, জীবনই যেখানে নিজেকে ফাঁকি দিয়ে যায় সেখানে এই খেলনার পৃথিবীর মানুষগুলো আর কতটুকু আঘাত দিতে পারে একে আরেক জনকে? যেমন আমার মা..
(এমন সময় বজ্রপাত হল। ঝড়ো বাতাসের শব্দ হতে শুরু করল। কালো মেঘের ঢেউগুলো এসে পূর্ন চাঁদের ভেলাটাকে ক্ষনে ক্ষনে ডুবিয়ে দিতে চাইল। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলে মনে হয় চাঁদটা ভীষন গতিতে সামনের দিকে মেঘের ঢেউ ঠেলে সাঁতার কেটে যাচ্ছে; জীবন বাঁচাবার তাগিদে।
এমন সময় আকাশে বজ্রপাত এর ফাটল দেখা গেল। দেখতে দেখতে ঝড়ো বাতাসের সু-শা শব্দে গাছপালা দুলতে আরম্ভ করলো। আকাশে ঘন কালো মেঘের আনাগোন শুরু হল। আলো মেঘের ঢেউগুলি এসে পূর্ন চাঁদের ডিঙ্গিটাকে ক্ষনে ক্ষনে বারে বারে ডুবিয়ে দিয়ে যেতে চাইল। এক দৃষ্টিতে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকার পর বৃষ্টির কাছে মনে হল যেন, ডিঙ্গি নৌকাটা প্রাণ প্রন চেষ্টা করছে সাতার কেটে বাঁচার জন্য।
পাসের একটা ট্রান্সমিটার খুব জোরে ব্রাষ্ট হতে শোনা গেল। সেই আলকিত শব্দে সে ভয় পেয়ে চিৎকার করে ঘড়ে ঢুকে যায়। এমন সময় মোবাইল বেজে উঠে। সে অন্ধকারের মধ্যে ফোনের ডিস্পের দিকে এগিয়ে যায়। ফোনটা রিসিভ করতেই ডিসকানেক্ট হয়ে যায়। আবার একটা বিজলী চমক সমস্ত ঘড়কে ক্ষনিকের জন্য স্বর্গের আলোয় আলোকিত করে দিয়ে যায়। বৃষ্টি জানে শব্দের গতির সাথে আলোর গতির কি সম্পর্ক তাই সে কানের মধ্যে হাত দিয়ে চেপে ধরে থাকে। যেন বজ্রপাতের শব্দটা শুনতে না হয়। এমন সময় আবার মোবাইল বাজতে শুরু করে। পরক্ষনেই ভূমি কম্পের মত কাপুনি দিয়ে বজ্রপাতটা শেষ হয়। বৃষ্টি ফোনটা ধরতে যায় কিন্তু বেটারীর চার্জ শেষ হয়ে যাওয়াতে লো বেটারী সিগনাল দেখতে পায়। সাথে সাথে সাট ডাউন হলে সে চুপচাপ যেখানে ছিল সেখানেই বসে থাকে। এমন সময় বৃষ্টি পরা শুরু করে। বৃষ্টি অন্ধকার পৃথিবীতে বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ শুনতে শুনতে ঘুমের দেশে তলিয়ে যায়।
স্থান: আবাসিক এলাকা।
কাল: সকাল
গাফ্ফার: এই গ্যেট খোল।
সিকিউরিটি: কেন, আমার কাছে দে..।
গাফফার: নিষেধ আছে। তুই পরবি বাষি পত্রিকা। পেপার পড়লে ডিউটি করভি কোন সময় ?
সিকিউরিটি : যা ব্যাটা..নিজের চর্কায় তেল দে।
( গাফফার দুইটা পেপার নিয়ে সদর দড়জার নিচ দিয়ে ঠেলে দেয়। এমন সময় ভেতর থেকে মোটা ভরাট কণ্ঠে একজন বলে উঠে)
:- কাল থেকে আর পেপার লাগবেনা। বিকালে এসে বিল নিয়ে যাস।
গাফফার : স্যার পেপার না বেচলে খামু কি ?
স্থান: বস্তি এলাকা।
কাল :
বৌ চল তোমারে ডাক্তারের কাছে নিয়া যাই।
শাপলা : ডাক্তারের কাছে যামু, টেকা কই ?
আবদুল্লাহ : আব্বা আব্বা আমার লাইগা কিটকেট আনোনাই ?
গাফফার : আমি এর কোন মানে বোঝলাম না। এতগুলা টেকার ঔষুধ খাইলা জ্বর ভাল অইলনা। সব হইল হাতুরি ডাক্তারের কারখানা বুঝছ ?
শাপলা : হ, বিজিট বেশি দিয়া ঔষুদ কম খাওন বালা। যে টেকার ঔষুধ খাইছি এ টেকা দিয়া কিছু ফলমূল কিন্না খাইলেও গায়ে জোর থাকত।
গাফফার : বুল কইলা ঔষুদের কাম খাওনে অয়না। তুমি শোও আমি পোলাডারে লইয়া দোকান থাইকা আহি।
শাপলা : সারাদিন কত চকলেট যে তোমার পোলায় খাইতে পারে আল্লা মাবুদ জানে। আমি অসুকে পরার পর পরতেতো বসেইনা..খালি চাহিদা।
স্থান : রিক্রায়
কাল :
(গাফফার ওর বৌ বাচ্চাকে নিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে বাড়ি ফিরছে। এমন সময় কে যেন নাম ধরে ডেকে উঠল। সে থামে। পেছনে তাকিয়ে দেখে হুন্ডা থেকে ওর মালিক ওকে হাত ইসারায় ডাকছে। ও ছুটে যায়..।
ওর অসুস্থ বৌ রিক্রার হুট এর পাস দিয়ে উঁকি দিয়েই চোখাচোখি হয়।
কথা শেষ করে সে আবার দৌরে রিক্রায় উঠে বসে।)
গাফফার : নজরুল ভাই। আমার বস
শাপলা : মানুষটা কেমন? বালনি ?
গাফফার : হ, বাল তবে খারাপ দোষ আছে। এমনে মন বাল, মদুরী। বিকালে বাসায় যাইতে কইছে।
শাপলা : তোমার মালিক বছেরে কইয়া একটা বাল বাসাটাসার ব্যাস্থা করনা। এই টেন্ডল পোলাপান লইয়া এই পরিবেশে আমার আর সহ্য হয়না।
গাফফার : তুমি ঠিকই কইছ। আমি বারো চিন্তায় আছি। আবদুল্লারে স্কুলে বর্তি করানো দরকার।
শাপলা: ভেরি ভেরি ইম্পর্টেন্ট।
গাফফার: তুমি দেখি আবার ইংরেজীও জানো।
শাপলা: জ্বরের মধ্যে ঠাট্টা করতাছ, করো।
আবদুল্লা: আব্বু আমি-আমি স্কুলে যামু। আমারে একটা ছাইকেল আর একটা ব্যেগ কিন্না দিবা।
গাফফার: আইচ্ছা পোলাডারে একটু সুদ্ধ ভাষায় কতা হিগাইতে পারোনা ?
শাপলা: চুপ কর। আমার প্যেচাল পারতে বালো লাগতাছে না।
স্থান: পত্রিকার ব্যাবসাহি নজরুল এর ফ্লাট বাড়ি
কাল:
গাফফার কলিং বেল বাজাতেই দড়জা খুলে যায়। ভেতরে পরিস্থিতি গড়ম। ডাইনিং টেবিলে বসে সবাই খাচ্ছে। কি একটা বিষয় নিয়ে যেন সবাই উত্তেজিত ভাবে কথা বলছে। নজরুল খাওয়া শেষ না করেই গাফফার কে নিয়ে ড্রইংরুমে চলতি মাসের হিসাব করার জন্য ল্যেপটপ আর প্রয়োজনীয় খাতাপত্র ডকুমেন্ট এসব নিয়ে বসে।
( আধঘন্টা পর )
গাফফার : স্যার গত কাল থেকে ১১-নাম্বার রোডের ৭-নম্বর বাসায় পত্রিকা বন্ধ হয়ে গেছে।
নজরুল : বন্ধ হইয়া গেছে মানে? নিয়ম আছে নাকি ? টেকা দিয়া এরিয়া কিনছি। কইলেই হইলো।
গাফফার : আজকেও গেছিলাম কিন্তু সিকিউরিটি গত মাস আর এ মাসের বিল ধরায়ে দিছে।
নজরুল : টাকা কি করছ ?
গাফফার : স্যার আমার কাছে টাকা ছিলনা, বৌটার ছিরিয়াছ জ্বর তাই ডাক্তার দেখাইতে গেছিলাম।
নজরুল : ভাল করছ। টাকা লাগলে আমার কাছে চাইবা কিন্তু কোন প্রকার অসততা করবানা। চুরি এবং মিথ্যা আমি ঘৃনা করি।
স্থান: আবাসিক এলাকা।
কাল :
গ্যেটে সিকিউরিটি নেই। গাফফার নিজ হাতে গ্যেট খুলে ভেতর থেকে লাগিয়ে দেয়। বাড়িটাকে সে নতুন করে পর্যবেক্ষন করে। একেবারে সুনসান। মরাপাতা-ঝরাপাতা দিয়ে বাগানটা প্রায় নষ্ট হয়ে পরেছে। শুধু ঘাসগুলো তাজা আছে।
গাফফার বেল চাপে। কেউ নেই। এক সময় সে ফিলে চমকে যায়। সে গ্যেটের কাছে ফিরে আসে। আবার সদর দড়জার দিকে পেছনে তাকায়। হঠাৎ তার চোখ পরে ছাদের ওপর। সাদা পাঞ্জাবী পরা কাধ-অব্দি চুল নিয়ে ফর্সা ধবধবে একটা নর কঙ্কাল ধনুকের মত বাকা হয়ে রেলিং এর উপর ভর দিয়ে আছে। গাফফার চোখ ছোট করে সেদিকে তাকায় ভালোকরে দেখার জন্য।
হঠাৎ সিকিউরিটির ডান্ডার শব্দে ওর মোহ কেটে যায়। চট করে ও গ্যেট খুলে দেয়। গাফফার প্রায় ফিসফিস করে ওর কানের কাছে এসে ছাদের দিকে তর্জনি নির্দেশ করে জিজ্ঞেস করে ওনি কে তোমার মালিক ? ওনার নাম কি রিতুল স্যার ?
( সিকিউরিটি পানের চিপটি ডাষ্টবিনে ফেলে দাঁত বের করে জবাব দেয়)
সিকিউরিটি : হু, কতা কইবা ? কিন্তু সাবদান আমরা ভয় পাই। ওনি যেটা বলে সেটাই ঠিক। মুখের উপরে আমরা কেউ কিছু বলি না। ভালটাও না খারাপটাও না।
গাফফার : ওনি কি অবিনয় করতেন ? মানে বিদেশ থাইকা কবে আইলেন ?
সিকিউরিটি : কেন তোমার কি ধারণা বিদেশ গেলে কি মানুষ ফেরত আহেনা ?
গাফফার : তুমি সিইরতো যে ওনি অবিনয় করতেন যে ঐ রিতুল ভাই, মানে স্যার।
সিকিউরিটি : না। সিউর না। কারন আমার চাকরির বয়স মাত্র ৯-মাস। আর আমি আসার পর থাইকাই দেখতাছি ওনি সারাদিন বাসায়ই থাকে। তেমন কোন আতিœয় স্বজন এ বাড়িতে আসে না ওনিও বিশেষ জরুরী কাজ ছাড়া বাইওে যাননা। এ পর্যন্ত ৪-৫ দিন দেখছি সাবেরে বাইরে যাইতে। তয় শুনছি ওনি বিদেশ থাইকা চিগিৎসা কইরা আসছেন।
( সিকিউরিটি পানের চিপটি ফেলে গাফফারের দেওয়া মেগাজিনটা পড়ার জন্য মুখের সামনে তুলে ধরে।)
স্থান: বৃষ্টির বাসা।
কাল :
বৃষ্টির বাবা দড়জা খুলে ঘড়ে এসে ঢোকে। জানালার পর্দাগুলো সরিয়ে দেয়। বৃষ্টি শব্দ পেয়ে চোখ খুলে দেখে আবার চোখ বুজে থাকে। ওর বাবা আবুল বাশার এসে মেয়ের পাসে বসে। মাথার চুলগুলো মুখের কাছ থেকে সরিয়ে দিয়ে মৃদু স্বরে বলে)
আবুল বাশার :মা বেলা হয়েছে উঠে পর, উঠে পর।
( বৃষ্টি পাস ফিরে উল্টোদিক মুখ করে শোয়। ওর বাবা মেয়ের বাহুতে হাত রেখে বলে)
আবুল বাশার: বৃষ্টি মা আমি জানি তুমি আমাকে ঘৃণা কর।
বৃষ্টি : হ্যা, হ্যা ঘৃনা করি। আমার সাথে কথা বলতে এসোনা।
আবুল বাশার : ছি: মা বাবার সাথে এভাবে কথা বলতে হয়না।
বৃষ্টি : এই একুশ বছড় বয়সে তোমার কাছ থেকে আমি নতুন করে আচার ব্যবহার শিখবো না। তুমি আমার মাকে খুন করেছ। আমার মার মৃত্যুর জন্য একমাত্র তুমি দায়ি। আমার মা সারা জীবন তোমার সংসারে কষ্ট পেয়েছে। কোনদিন এতটুকু সুখ সে বেচে থাকতে পায়নি। তুমি একটা মানুষ নও দানব!
আবুল বাশার : আমাকে ভুল বুঝনা প্লিজ। তোর মা মানুষিক রোগে ভুগছিলেঅ-তোরা নিশ্চই সেটা জানতি।
বৃষ্টি: এর জন্য কে দায়ি? আমরা না তুমি? তোমার কর্মকান্ডই আমার মার অসুস্থতার কারণ। তুমি তাকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছ। তা না হলে সে কখনই আমাদের ছেড়ে আত্নহত্না করত না। তোমার বিরুদ্ধে ১০-টা মামলা করা উচিত ছিল।
বাশার : লক্ষি মা এদিকে ঘোর, আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বল। তোর মন চাইলে রিভালবার এনে দেই তুই নিজ হাতে তোর বাবাকে গুলি কর কিন্তু তবুও..
বৃষ্টি: চুপ করো। আমার ঘড় থেকে বের হও। তুমি কারো বাবা নও। তুমি কারো বাবা হতে পারনা। তুমি একটা দানব। আমি তোমাকে কোনদিন ক্ষমা করবোনা, কোনদিন না।
স্থান: আঁখিদের ভাড়া বাড়ি।
কাল:
ওরা বাসা চেঞ্জ করেছে। মাল সামানা ওলট পালট হয়ে আছে। এগুলো গোছাচ্ছে আর গজগজ করছে আঁখি।
আঁখি: সারাজীবন কি আমাদের ভাড়া বাড়িতেই থাকতে হবে ? কি অভিষপ্ত এক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছি! আগের জনমে কি পাপ করেছিলাম কে জানে! এই চরম দারিদ্রতার বোঝা আর দু’চোখে সয়না।
( আঁখির মা রান্ন্ ঘড় থেকে ডাকে)
আঁখির মা: এই আখি নাস্তা খেয়ে যা । এগুলো রেখে দে তোর গুছাতে হবেনা। তুই শুধু তোর জিনিসপত্রগুলো গুছায়ে রাখ।
আঁখি: এই বান্দর দুইটা উঠে না কেন এখনো ? এদের কি পূর্বপুরুষের জমিদারি আছে যে. বেলা ১০-টা পর্যন্ত নবাবের মত পরে পরে ঘুমাবে। এদের কোন কাজ কর্ম নাই? কাজ না থাকলে গার্মেন্টস্ এ চাকরি করতে বলো।
জনী: দেখ আপা সকাল-সকাল মন ম্যেজাজ খাড়াপ করবিনা।
বৃষ্টি: এই ফাজিলের ফাজিল। কত্তোবড় সাহস। বড় হয়ে গেছিস নারে? থাপ্পর খাইলে ঠিক হইয়া যাবি। যা ওঠ বাইরে গিয়ে কাজ কর। পড়াশোনা করের কত মানুষ আয় করে নিজের খড়চ চালাচ্ছে। অসুস্থ বুরা বাপটার জানটারে একটু আছান দে বুঝছস..??
( পাসের ঘড় থেকে ওর বাবা কেসে ওঠে। ওর মা আবারো তারস্বরে চিৎকার করে ডেকে উঠে )
আঁখির মা : এই আঁখি নাস্তা খেয়ে যা, কলেজে যাবিনা।
স্থান : রেল স্টেষন।
কাল:
( মিজান ওর ছোটবোন শাপলাকে ফোন দেয়।)
মিজান: বইন আমি জিয়া আন্তর্জাতিক রেল ষ্টেষনে। তোগো বাড়িটা কোন জাগায় আমারে একটু কতো শুনি।
শাপলা : আপনে আসবেন আগে ফোন করে জানাবেন না? কিছু রান্না করে রাখতাম।
মিজান ঃ আমি তোর এহনে খাইতে আসি নাই, থাকতেও আসি নাই। তোরে একটু দেইখা যাই। আমি অনেক ব্যাস্ত।
শাপলা ঃ সিএনজি নিয়া আইলে বালো অইবো । রাস্তা ঘাটের ঝামেলা থেইকা বাঁচতে পারবেন। বলেন নিকুঞ্জ দুই এর পাসে যে থানা আছে তার পাসে ১০-নাম্বার রোডের বস্তিতে। আপনে নিকুঞ্জ আসেন আমি আবদুল্লার বাপরে সামনে পাঠাইতাছি।
মিজান : তোরা বস্তিতে থাকস ?
স্থান : গাফফার এর বাসা।
কাল :
মিজান : তোরা এই নোংরা পরিবেশে থাকস আমি আগে জানলে আসতাম না।
গাফফার : ভাই সরবতটা নেন। লেবু দিয়া বানাইছি।
মিজান : ঝামেলা করার দরকার নাই। আমি চলে যাবো। শোনেন আপনে বালো একটা বাসা দেইখ্যা ওঠেন। আমি ঢাকা শহড়ে ব্যবসা করুম।
শাপলা : কিসের ব্যাবসা ?
মিজান : গার্মেন্টস এর ব্যাবসা। ফ্লাট বাসা হলে ভালো হইতো।
গাফফার : চাকরি করবেন ?
মিজান : চারি না, চাকরি না গার্মেন্টস্ এর কাপড় বেচা কেনার ব্যবসা।
শাপলা : বাই বিয়াসাদি করবেন না।
গাফফার ভায়ের বয়সতো বেশি না।
মিজান : প্রতিষ্ঠিত না হয়ে বিয়ে করুমনা। আমার নিজেস্ব কিছু এইম আছে কিছু লক্ষ আছে।
শাপলা : ভাই আপনের টিউশনি ছাইরা দিছেন?
মিজান : না। ছাড়ি নাই, তবে এ কাজে টাকা ও সন্মান দুনোটাই আছে কিন্তু অবস্থা অবস্থান নাই। সামাজিক পদমর্যাদার স্বীকৃতি নাই। ভালো মেয়ে দেখতে গেলে আজকাল শুধু টাকা পয়সা আর সন্মান হলেই চলে না.. এক্রটার্নাল কিছুও জরুরী। আরে মামা আবদুল্লাহ কেমন আছো? আসো আসো কোলে আসো।
শাপলা : ওর কপালটা মামার মত হইছে। বাপের মত খাটু না হইলেই হয়।
মিজান : আমি ওরে একটু দোকানে নিয়া যাই আর তোর জিনিসপত্র সব গোছগাছ শুরু করে দে। গাফফারকে বল ৬-৭ হাজার টাকার মধ্যে বাসা খুঁজে বের করতে। আর চেহারার একি অবস্থা কইরা রাখছত? আয়না দিয়া নিজের চেহারাটা একবার দেখ। চুলে তেল পানি দেছনা ? মাসে ৭০-৮০-হাজার টাকা কামাইছি ব্যাচ কইরা স্টুডেন্ট পড়াইয়া। এই চাইর বছড়ে একবারওতো গেলিনা বাড়িতে। তোদের এই গাজীপুরে তিন কাঠা জায়গা বায়না করে রাখছি। বাড়িতেও দুই বিঘা ক্ষেতের জায়গা কিনছি। বাড়ি ঘড় করছি। পুকুর কাটাইলাম। বাপে যা রাইখ্যা গেছে তাতো আছেই। একবার ভাবছিলাম বিদেশ চইল্যা যামু। কিন্তু যখন যাইতে চাইলাম তখন কাগজপত্র পাইলাম না। এখন আর যাওয়ার ইচ্ছা নাই। আম্মারে আর তোদের দুইবোন নিয়ে সব ছেড়ে ছুরে শহড়ে একসাথে সেটেল হয়ে যামু। শেফালীও অনেক কষ্ট করে। দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে সারাদিন একলা টানা হেচরা করে। পড়া শোনার কোন নাম গন্দ নাই, কালো কুচকুচা ছাই হয়ে গেছে একেটার গায়ের রং। অবশ্য এসব ঘটতে সময় লাগবো..পরিশ্রমও করতে হইবো অনেক।
শাপলা : ভাইজান আপনে আমার ওপর এখনও রাগ করে আছেন ?
স্থান: বৃষ্টিদের বাড়ি।
কাল:
(বৃষ্টি বাড়ি থেকে বের হচ্ছে এমন সময় ড্রইংরুম থেকে ওর ভাই পরাগ এবং পরাগের বৌ ওকে একসাথে নাম ধরে ডাক দেয় )
ঃ-বৃষ্টি?
(বৃষ্টি জায়গায় দাঁড়িয়ে পরে। পর্দার ফাক দিয়ে দেখে গেষ্ট বসে আছে। ওর ভাবি ওকে ডাকে)
ভাবি: বৃষ্টি দেখে যাও কে আসছে।
(বৃষ্টি কপালের চুলগুলো ডান হাতে সরিয়ে উঁকি মেরে দেখে মোটা মতন এক কালো মহিলা বোর্কা পরে পান চিবোচ্ছে আর পাসে এক সুদর্শন কোকরাচুলওলা এক তরুন যুবক লাল শার্ট আর নীল জিন্স পরে বসে আছে।
পরাগ পরিচয় করিয়ে দেয় )
পরাগ: চিনেছো ওনি কে ? এ হচ্ছে তোমার আসলাম ভাই আর ওনি হচ্ছেন ওর আম্মা মানে আমাদের মোষারফ মামি।
(বৃষ্টি হাসি হাসি মুখে সালাম দেয়। এটা আসলে ওর অভিনয়! এরপর মামির হত ধরে বিনীত ভাবে বলে)
বৃষ্টি : মামি মামা কেমন আছে ?
মামি : ভালো মা। তোমারেতো অনেক ছোট্ট দেখছিলাম মা। তুমিতো মাসাল্লা ডাঙ্গর হয়ে গেছ। তা তোমার আম্মার কথা আমার বহুত মনে পরে, খুবই ন্যেক ইনছান আছিল, আল্লায় বেহস্ত নছিব করুক। তা মা মনি কোথায় যাইতেছো.. একটু বস, আদর কইরা দেই।
( মামি বৃষ্টির মুখে ও মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।)
বৃষ্টি : মামি কহিনূর আপা কেমন আছে ?
মামি : ও ভালো আছে। এইতো গত মাসে ওর জমজ দুইটা বাচ্চা হইলো! একটা ছেলে একটা মেয়ে। মাসাল্লা দুইটাই সুস্ত আছে। ওর হাজবেন্ড ইটালী থেইকা ৬-মাস পর পরই আসতে পারে, কোন সমস্যা হয় না। সুখেই আছে ওরা। এহন আমার এ পোলাডারে একটা লালা টুকটুকা বৌ দিয়া গুছায়া যাইতে পারলেই শান্তি। জুরাইনের বাড়িটা বিক্রি করে বুড়িগঙ্গার পাসেই নতুন বাড়ি করছি ১০-তালা। তোমার আব্বাইতো সব বুদ্ধি মরামর্স দিলো। ঢাকা শহরে হাতে গোনা ১০-টা বাড়ির মধ্যে একটা বুঝছো মা, দারুন সুন্দর করছে। তুমি যাইবা কিন্তু মা-হ্যা ?
(পরাগের বৌ ওঠে যায় নাস্তাপানি আনার জন্য। যাবার সময় দড়জার পাসে রাখা বিশাল বিশাল মিষ্টির পেকেট আর বাক্রগুলো ওঠাবার চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়। পরাগ এস তাৎক্ষনিক হাত লাগায়।)
পরাগ: এতকিছু কেন আনতে গেলে আসলাম?
আসলাম: তেন কিছুনা ভাই। আমাদের বেকারীর প্রডাক্টয়। বাবা বলে স্পেসালভাবে আনিয়েছে।
পরাগ: এই বৃষ্টি তোর ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করেছিস কেমন আছে ?
বৃষ্টি: জিজ্ঞেস করার কি আছে, দেখতেইতো পাচ্ছি কি মোটা আর পয়সাআলা হয়ে গেছে ওনি। আমাদের কথা কি আর মনে আছে ওনার?
আসলাম: এ কথাটা তুমি ঠিক বললেনা বৃষ্টি। অন্যয় কথা বলেছো। তোমার স্বভাব সেই ছোট বেলার মত নাদনই রয়ে গেছে।
বৃষ্টি: হ্যা, আমরও তাই মনে হয়, আমি অপরীবর্তনীয়।
আসলাম: তোমার মনে আছে আমরা যে একবার মেলাতে গিয়েছিলাম?
বৃষ্টি: বাসে করে ।
আসলাম: তোমাকে আমি দুটো গ্যাসের বেলুন গিফট করেছিলাম।
বৃষ্টি: হ্যা, হ্যা ছবিগুলো এলবামে আছে।
মামি : মামনি গড়ির ড্রাইভারটারে কিছু জল-পানি দেওয়ার ব্যাবস্থা করত বলোনা লক্ষী।
বৃষ্টি: জি মামি ব্যবস্থা করছি।
মামি: এই নানা তুমি থাক, তোমার যাইতে হইবোনা। আসলে পুরান টাউনের বাসিন্দাতো যা কওনের ছরাছরি কইয়া ফালাই। কিছু মনে কইরোনা।
বৃষ্টি: মামি এটা কোন কথা বললেন আপনি। বসেন ।
আসলাম: তোমার ভর্সিটি ?
বৃষ্টি: একটা ক্লাস মিস হলে রিকভার করে নেব সমস্যা নাই ।
আসলাম: এখনো ক্লাস করতে হয়? ফাইনাল কবে ?
বৃষ্টি: এ বছড়ের শেষের দিকে, এখনো হাতে প্রচুর সময় আছে।
( এমন সময় পরাগ ও তার বৌ একসাথে ঢোকে। ঢুকে কথাটা শুনে রিপ্লে উত্তর দেয়)
:-সময় কারো হাতে থাকেনা বুঝছো। সময় চলে যায়। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে মানুষ পারে না। সময়কে কাজে লাগাতে হলে সুযোগ এর সদ্বব্যহার করতে হয় ।
মামি: তুমি ঠিকই বলেছ বাবা। সময় বড়ই নিষ্ঠর প্রাণী।
স্থান: রিতুল সাহেবের বাড়ি
কাল:
গাফফার সাইকেলে বেল দেয়। সিকিউরিটি লাঠিতে তেল দিচ্ছিল। গোফে হাত বুলাতে বুলাতে এগিয়ে এসে গ্যেটে একটা বারি দিল। হাঁটা চলার একটা ভাব দেখে গাফফার জিজ্ঞেস করে)
গাফফার: কি দোস্ত তোমার হাটার ইষ্টাইল এমন বদলায়ে গেলো কে? কেমন জানি বেকা তেরা হইয়া হাঁটার চেষ্টা করতেছ, বিষয়টা কি ?
( সিকিউরিটি পকেট থেকে একটা সিগারেটের বিদেশি প্যেকেট বের করে একটা সিগারেট গাফফারের দিকে এগিয়ে দেয়। গাফফার এক পা মাটিতে রেখেই সিগারেটটা নেয়।
গাফফার: প্রেমে টেমে পরছ নাকি? কথা বলনা কেন?
সিকিউরিটি: খুব ভাবে আছি।
গাফফার: ভাব ছারো । যে ভাবের জন্য কথা বলা যায় না এমন ভাব ধরলেতো জিন্দেগী তামা হইয়া যাবে।
সিকিউরিটি: কিছু হবেনা। আমার খুব খালো লাগতাছে।
গাফফার : কেন ?
সিকিউরিটি: কারণ স্যারে আইজকা আমারে ১০০ টাকার একটা এস্ কালারের নোট বকসিস দিছে।১৮টা বিদেশি সিগারেট সহ পেকেট গিফট করছে। স্যারের দুইটা টি সার্টও আমারে দিলো। দিয়া কইলো সৎভাবে ডিউটি করতে। এটা বইলা স্যারে বাইর হলো সেভ করতে। এই প্রথম আমি তার সাথে এতক্ষন কথা বলি। সে আমার কাধে হাত
©somewhere in net ltd.