নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সােরায়ারমামুন

আমি এ দেশের মানুষ।এ দেশ আমাকে দিয়েছে অপূর্ব এক শৈশব।বিশাল এই পৃথিবীতে ছোট্ট এই দেশটাকে আমি ভালোবাসি আমার শরীরের একটুকরো হৃতপিন্ডের মত করে !

সােরায়ারমামুন › বিস্তারিত পোস্টঃ

"শুধু ভালোবাসাই একক" {(উপন্যাস)প্রথম অংশ}

১৯ শে নভেম্বর, ২০১১ বিকাল ৩:৩৫

"শুধু ভালোবাসাই একক"

“যায় দিন ভালো আসে দিন খাড়াপ”। কথাটা কতটুকু সত্যি ? আমার কাছেতো মনে হয় যায় দিন ভালো আসে দিন আরো ভালো। এ নিয়ে সেদিন কয়েক জনের সাথে তর্ক বিতর্ক হলো। সব শেষে দেখলাম আমার ধারণার সাথে অন্য কারোর ধারণার কোন মিল নেই; তাদের ধারণা সম্পূর্ন উল্টো। পর পর তিন জনের সাথে এ নিয়ে তর্ক বিতর্ক আর যুক্তি প্রদর্শনের পর আমার মনের ভেতর কথাটা চোরা কাঁটার মত গেথে রইল। তাহলে কি সবার ধারণার সাথে আমার ধারণার কোন মিল নেই! নাকি আমি নিজে ঠিক আছি, কোনটা ?



আমি যখন ছোট ছিলাম তখনকার দুনিয়া আর এখনকার দুনিয়ার মধ্যে কতোইনা তফাত ! তখনকার পৃথিবী আমার কাছে বিধবা নারীর আর্তনাদের মত লাগত; আর এখনকার পৃথীবি কেমন পূর্ন যুবতির মতন লাগে। কি নাই এই আল্ল-ার দুনিয়ায় ! সব আছে। শুধু টাকা পয়সার ক্রাইসেস। এটা থাকবেই, চির-জীবন। কারণ মানুষ কখোনই চায়না তার টাকার প্রয়োজন মিটে যাক। সে চায় তার এই ক্ষমতা সারাজীবন থাকুক, আর তার আসেপাশের মানুষ তার এই ক্ষমতার বলে তাকে শ্রদ্ধা করুক, সন্মান করুক তাকে ভয় পাক।



পৃথিবীকে আমি যতই দেখছি ততই আশ্চর্য হচ্ছি। এ সব কি হচ্ছে, পৃথিবীতে ! কি সব আশ্চর্য সফলতা আসছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি থেকে ! এক একটা আবিষ্কার এত অর্থবহ আর সফল কার্যকরি যে চিন্তা করলে মাথার ব্রেন আর কাজ করেনা। আমার নিজের জীবনেও পূর্ণ যৌবনা পৃথিবীর একটা মায়ার প্রভাব রয়েছে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমার মন মস্তিষ্কের পরিবর্তন দেখে আমি নিজেই হতবাক। এই রক্ত মাংসের শরীরটা পরিচালনা করতে এতটা নলেজ সত্যিই নি®প্রয়োজন। তাহলে বৃথাই আমার মানব জনম !! না এর কোন সঠিক দিক নির্দেশনা অবশ্যই আমি খুঁজে বের করতে পারব ?



দেহকে বাদ দিয়ে আতœার উন্নতি চিন্তা করা ঠিকনা, মারাতœক ভুল। আতœা আর মন কি এক ? এ প্রশ্নের জবাব একেক জনের একেক রকম। আমার নিজের মতামত হলো এক।



দিন যাচ্ছে আর আমার জ্ঞ্যানের পিপাষা বেড়ে চলেছে। সব মানুষের ক্ষেত্রে বোধহয় এরকমই হয় ! শারীরিক সহ্য ক্ষমতাও দিন দিন বেড়ে চলেছে, বেড়ে চলেছে গঠনমূলক কল্পনা শক্তি। সব মানুষের ক্ষেত্রে কি এই একই রকম পরিবর্তন হয় ? আজকের দিনে একজন মানুষ আরেকজন মানুষের চিন্তা চেতনা ভাবআবেগ খুব সহজেই ধরে ফেলতে পারে। এর কারণ কি ? মানুষতো আর আরেকজনের মস্তিষ্কের ভেতর অনধিকার প্রবেশ করছে না। তাহলে ঘটনা ঘটার আগেই মানুষ কিভাবে টের পায় যে এরকম একটা ঘটনা ঘটবে বা ঘটতে পারে। এর সঠিক উত্তর হলো ধারণা বা বিশ্বাস থেকেই মানুষ বুঝতে পারে সামনের মানুষটির আচড়ন বিধি। সামনের মানুষটি যদি স্বভাবিক থাকে তাহলে সেও কিছুটা স্বভাবিক থাকতে পারে, আর সামনের মানুষটি যদি অস্বাভাবিক থাকে তবে এই মানুষটির ভেতরেও একধরনের উত্তেজনা, ভয়-বিভ্রান্তি এসব অলুক্ষুনে কাজ কারবার ঘটতে থাকে নিরবে-নিভৃতে।



আমার মনের একটা বিশেষত্ব হলো আমার মনে খাড়াপ ভালো দুটো জিনিসই বরাবর কাজ করে। খাড়াপটা খুব দ্রত কাজ করে শেষ করে ফেলে। অন্যদিকে ভালোটা কাজ করে ধীরে সুস্তে। এখানেও কি অন্যান্য মানুষের সাথে আমার মিল ?



যে যা বলে বলুক আমি আমার ধারণা নিয়ে অটল। আমি জানি আমার ভেতরে অনেক কুসংস্কার ও ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। এগুলোকে একে বারে নির্মুল করা কোন দিনও একজন মানুষের পক্ষে সম্ভবপর নয়। এগুলো মাত্রা বজায় রেখে মানব দেহে থাকবেই। এটাই এক ধরনের বিধি-বিধান। যাই হোক দিন দিন আমি যে উন্নতি করছি এতে আমার মনে আর কোন সন্দেহ নেই। আমি সফল হবোই। কিন্তু কিভাবে সেটা আমার জানার বিষয় না। আমি শুধু জানি যে কোন ভাবে পৃথিবীতে আমার নামটা রেখে যেতে হবে। পৃথিবীতে অজস্র মানুষ আছে যাদের আমরা গর্বভরে স্বরন করি। আমরা তাদের ভবিষ্যত। ঠিক এমনি তাদের নামের সাথে আমার নামটাও জুড়ে দিতে চাই। এবং এই চাওয়াটা অবশ্যই খাড়াপ কিছু নয়।



এজন্যই বলি যায় দিন ভালো আসে দিন আমার জন্য আরো ভালো। কিন্তু এ নিয়ে আমি আর করো সাথে ডিবেট করতে রাজি না। তারা হতে পারে আমার চেয়ে জ্ঞ্যানি-জ্ঞুনি, বুদ্ধিমান। আমার জ্ঞ্যান-বুদ্ধির সীমা পরিসিমা সম্পর্কে আমার যথেষ্ট ধারণা রয়েছে। অন্যের কাছ থেকে বুদ্ধি ধার করে এনে নিজের কাজে খাটানোর মতো প্রয়োজন এখন আমার আর নেই



এই চয়ন আয়তো..

কোথায় যাবো ?

শ্যামাঃ আয়না।

আমি আর শ্যামা ভাই উঠে তিন্নি নামের একটা মেয়ের পিছু নিলাম। মেয়েটি লিফ্ট-এ এসে নাইন ফ্লোরে বটন চাপলো। আমাদের দেখে মেয়েটার মুখে কোন প্রতিক্রিয়া দেখা গেলনা। আমি যতদুর জানি শ্যামা মেয়েলী ব্যাপারে সর্বদা একটু বেশি সচেতন থাকতেই পছন্দ করেন। কিন্তু আজ এ কি হতে যাচ্ছে ? এরই মধ্যে শ্যামা কথা বলতে শুরু করেছে।

এক্রকিউজমি আপু যদি আমার ভুল না হয়ে থাকে তাহলে আপনি নিশ্চই তিন্নি ?

তিন্নিঃ- হ্যা, আপনি ?

শ্যামাঃ আমি শ্যামা ও চয়ন। আমি তোমার সাথে সরি তোমাকে তুমি করে বলে ফেললাম। তুমি আমার বয়সে ছোটই হবে তাইনা, তুমি আমাকে ভাইয়া বলতে পার।

তিন্নিঃ জ্বি, ভাইয়া বলেন।



এমন সময় লিফ্ট এসে এইট ফ্লোরে থামলো। আমি তিন্নির দিকে তাকিয়ে আছি। মেয়েটা সম্পর্কে আমি আগেও কিছু শুনেছি। একেবারে সিম্পল বাঙ্গালী মেয়ে। গায়ের রংও ফর্সা নয়-শ্যামলা। পোশাক আসাকে স্মার্ট, কথাবার্তা চাল-চলনে আধুনিক। এই মেয়ে মডেল করে আমার দেখে তা মোটেই মনে হলনা।

শ্যামাঃ এখানে দাঁড়িয়ে কথা বললে তোমার কোন সমস্যা হবেনাতো ?

তিন্নিঃ- না-না, বলেন। আমি এই ভাইয়াকে মনে হয় কোথাও দেখেছি।

আমি একটু হেসে ফেলে বললাম হ্যা দেখতে পারো; একই জায়গায় যেহেতু থাকি।

তিন্নির মনে হয় আমার কথাটা পছন্দ হলোনা সে আবার শ্যামার কথায় মন দেয়।

শ্যামাঃ তো যে কথা বলার জন্য এত তরিঘরি, সেটা হলো টিটুর সাথে তোমার সম্পর্ক কেমন ?

তিন্নিঃ- ওর সাথে আমার এখন কোন সম্পর্ক নেই, বুজছেন ভাইয়া। আমি..

শ্যামাঃ আচ্ছা আমি আগে বলে শেষ করে নেই তার পরে তুমি নির্দিধায় যা বলার বলো, ঠিকআছে।

আমি শ্যামার ভাবসাপ বেগতিক দেখে কেটে পরার জন্য বললাম তাহলে দাদা তোমরা কথা বলো আমি মোবাইলে একজনের সাথে একটু কথা বলে নেই।

শ্যামাঃ খুব জরুরী ?

আমি বললাম না।

শ্যামাঃ আচ্ছা টিটু কি তোমাকে এখন কোন ডিস্টার্ব করে ?

তিন্নিঃ- হ্যা-না, ভাইয়া।

শ্যামাঃ শোন তুমি আজ থেকে এই দু’ জন কে ভাই বলে যে কোন সমস্যার কথা জানাবা। যত রাতই হোক আর যে কোন সময়ই হোক তুমি আমার ফোন নাম্বারটা রাখ। টিটুকে আমরা যা করার করে দিয়েছি, ও আর কোন দিন তোমাকে ডিষ্টার্ব করার সাহস পাবে না।

তিন্নিঃ- আচ্ছা। আপনার কথাকি শেষ হয়েছে ভাইয়া ?

শ্যামাঃ হ্যা এবার তুমি বলো-

তিন্নিঃ- আসলে ভাইয়া আমি ওর সাথে কোন সম্পর্ক করতে চাইনি। ওই আমাকে ভয় দেখিয়ে আমার সাথে সম্পর্ক করার চেষ্টা করে। আমি কি করবো বলেন ? আমি ভয়ে ভয়ে ওর সাথে কথা বলতে যেতাম। তারপর ও আমাকে প্রায় সব সময়ই আমার মডেলিং সম্পর্কে এটা ওটা বাজে কথা বলতো।

শ্যামাঃ আজকের পর থেকে ভাববা যে তোমার আরো দুইটা ভাই আছে। ও যদি তোমাকে ফোন করেও কোন কিছু বলে সেটা আমাদের জানাবা। আমরা যা করার করবো।

তিন্নিঃ- কিছু মনে করবেননা ভাইয়া টিটু তো আপনাদের সাথেই মিসতো তাইনা ?

শ্যামাঃ হ্যা আমাদের সাথে মাঝে মাঝে আড্ডা দিতো কিন্তু ওর আচড়ন এতো নোংরা যে ওকে আমরা অপমান করে তারপর এই লেকসিটি থেকে বের করে দিয়েছি। ওযে এ-পর্যন্ত কত ঘটনা ঘটাইছে তা এতো দিনে সবাই জানতে পারছে, বুঝছো। খুবই বাজে একটা ছেলে বুঝছো। দাও তোমার নাম্বারটা দাও।



দাদা আমি নিচে নামি তুমি আসো। নিচে নামতেই শ্বপন আমাকে জিজ্ঞেস করলো শ্যামা কই ? আমি বললাম আসতেছে।

শ্বপনঃ শ্যামা কি বলছে তিন্নিরে ?

-ঃ কি আর বলবো বোঝেন না, একেবারে ভাই বানাইয়া নাম্বার টাম্বার নিয়া টিটুর বারোটা বাজায়া ফালাইছে।

শ্বপনঃ এহোনো কথা বলতাছে ?



বলতে বলতেই শ্যামাকে আমরাা আসতে দেখলাম। এরপর ঘন্টাখানেক আমাদের আড্ডার শিরমনি হয়ে রইলো তিন্নি প¬াস টিটু। অনেক কিছু জানা ছিলোনা আমার আজ নাটকিয় ভাবে জানা হয়ে গেলো। সবশেষে আমি বুঝলাম টিটো ছেলাটা আসলে মুখোশধারী ছদ্দবেশি একটা শয়তান। আসলে আমরা সবাই মুখোসধারী ছদ্দবেশী, টিটুরটা ধরাপরে যাওয়ায় সে আজ সমাজের নিকট অযাচিত। এ প্রসঙ্গে গং টিটুই সবচেয়ে নির্ভুল বলতে পারতো। যাই হোক আমরা টিটুর ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নিয়েছি যে, যে কোন মুহূর্তে যে কারোরই মুখোষ পাল্টানোর প্রয়োজন পরতে পারে। অতএব সাবধান। আসল চেহারা যেন সবাই দেখতে না পায়; তাহলে কিত্তু বিপদ



এখন আমাদের সার্কেলটার বর্ননা দেই। আমরা কোন সময় দশ জন হই কোন সময় তারো বেশি। যখন বাহিরে থেকে কেউ আসে তখনকার হিসেব আলাদা। ভেতরের স্থায়ি হিসেবে আছি, আমি-চয়ন, শ্যামা এবং কাউছার-এরা দু’ ভাই, শ্বপন, তুষার, বুখারী, সুমন, প্রিন্স-অমি আর শোভন তারেক এই ক’ জন। ফ্যিমেইল বলতে আছে, শ্বপনের বোন স্বপ্না, ওনি ঢাকা ইউনিভার্সিটির কোন এক মহিলা সংগঠনের চ্যেয়ারম্যেন পদে ছিলেন গত কয়েক বছড়। হ্যাভি ধূর্ত অথচ ঠান্ডা পানির মত তার মেজাজ। প্রথম দেখাতেই আমি যা বুঝার বুঝে নিয়েছি। স্বপ্না আপুর প্রশ্নের উত্তর দেয়া কোন পুরুষ মানুষের কাম্য নয়। এ এক আজব মুখোষধারী মানবী বলা চলে। এছাড়া আর কোন মেয়ে মানুষ আমাদের সঙ্গে আড্ডায় বসে না।



এবার একে একে সবার পরিচয় অবস্থান এবং ভূমিকা উল্লে¬খ করব। এর থেকে বেরিয়ে আসবে কে কি রকম মুখোশ ব্যাবহার করে আসছে এবং তাদের অর্জিনাল ফর্মেট কি ? সবগুলো চরিত্রই একটার সাথে আরেকটা লিংকেড। সুতরাং খুব সহজেই আনন্দ বেদনা, না বলা কথা, চাপা রাগ জিদ এসবের প্রতিফলন ঘটবে আমাদের সামনে এবং তাথেকে আমরা যথেষ্ট আনন্দের খোড়াক পাব এবং নিজেকে আরেক বার আয়নার সামনে আয়না ছাড়াই চিনে নিতে পারবো। কেমন ? ধন্যবাদ।



শ্যামা ভাই। আমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। গুরুত্বপূর্ন এজন্য বলছি যে উনার সাথেই আমার প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সব ধরনের যোগাযোগ হয়ে থাকে। রাতের আঁধারে আমি যখন ধ্যানে বসি সবার আগে উনিই আমাকে অটো সাজেসান দিয়ে যান। দিনে বেলা বাস্তব ক্ষেত্রেও তাই। ওনি আমাকে বোঝেন আমিও ওনাকে বুঝি সেটা যে মুখোষেই থাকি বা ওনি থাকুননা কেন। আমরা একে অন্যের বন্ধু আবার শত্রও বটে। সেটা কথায় কাজে এমনকি চিন্তার ক্ষেত্রেও। আমি ঘড়ে বসে টেলিপেথির মাধ্যমে যদি কোন কিছু ম্যাসেজ করি ওনি সাথে সাথে তার জবাব দিয়ে দেন। অথচ ওনার সাথে এ সম্পর্কে আজ পর্যন্ত আমার কোনই চুক্তি বা পর্যালোচনা হয়নি।



ওনার সাথে পরিচয়টা ছিল অদ্ভুত। আমার পঞ্চ-ইন্দ্রিয় মোটামুটি ভালোই কাজ করে জানি, এই প্রথম এর বাস্তব প্রতিফলন খুব ভালোভাবে লক্ষ করলাম। প্রায় তিন বছড় আগে আমি একা একা অনেক দুর চলে এসেছি। তো এক দোকানের পাসে চা খেতে দাঁড়িয়ে খেয়াল করলাম আমার এক স্কুল ফ্রেন্ড এর সাথে দাড়িয়ে শ্যামা গল্প করছে। আমি তাদের সামনে এগিয়ে যাই। আমার বন্ধুটিকে কিছু জিজ্ঞেস না করে সরাসরি ওনার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিলাম, আচ্ছা ভাই আপনার নামই কি শাকিল ? লোকটি হতবাক হয়ে আমাকে কিছুক্ষন পর্যবেক্ষন করে বলল আপনি আমার নাম জানলেন কি করে ! আমি একটু ভিলেনের মত সবজান্তা ভাব করে চায়ে চুমুক দিলাম। এর পর ওনার নাম্বার আমার কাছে আমার নাম্বার ওনার কাছে। সেই থেকে শুরু আমাদের মাঝে দৈব সম্পর্ক। এরপর বেশ কিছু দিন বন্ধর মতন চলাফেরা করি। একসময় রাত জাগতে থাকি। অনেক রাত অব্দি তার সাথে কথা বলে গান করে এছাড়া জগতের যত বিচিত্র, আজেবাজে বিষয় আছে সে সব নিয়ে আলোচনা ঘাটাঘাটি চালিয়ে যাই। এক সময় পরিচিত হই উনার বড় ভাই কাউছার ভাইএর সাথে।



এবার কাউছার ভাই প্রসঙ্গ।

ওনার সাথে পরিচিত হওয়ার পর আমার যেটা মনে হলো শাকিল ভাই মানে যার নাম আমি পরবর্তিতে শ্যামা রেখেছি সেই শ্যামা একজন পরম ভাগ্যবান ব্যাক্তি। কেননা ওনার মত একজন ভাই সে পেয়েছে। একই রক্তের একই ফ্যেমেলীর এবং আরো অনেক হিসেব নিকেস আছে যা দুভাইকে একসাথে না দেখলে পরখ করা যায় না। ধীরে ধীরে আমি কাউছার ভায়ের এক ধরনের ভক্ত হয়ে যাই। তার কাছ থেকে ভালোবাসা পাবার জন্য সহোযোগিতার আশায় ঘন ঘন টেলিফোনে যোগাযোগ করতে থাকি। এক সময় খেয়াল করলাম ওনি রাতের পর রাত না ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেন। দিনের বেলা ওনার দেখা পাওয়া বিরাট টাফ ব্যাপার হয়ে দাঁড়ালো আমার জন্য। রাত সারে এগারোটা থেকে সোয়া বারোটার মধ্যে ওনাকে পার্কের বেঞ্চিতে শোয়া অথবা পার্কের সিঁড়ির মধ্যে বসা অবস্থায় দেখা পাওয়া যায়। কিন্তু এতো রাতে তো আমার জন্যে বাড়ি থেকে আসা যাওয়া বিশল একটা পাহারের মত হয়ে দাঁড়ালো।



মাঝখানে কিছুদিন গ্যাপ এর পর আবার ওদের দুভায়ের সাথে চলাফেরা শুরু হয় আমাদের। আমাদের বলছি এ কারনে যে আমার একজন গুরু আছেন। শ্রদ্ধেয় নজরুল ইসলাম। পৃথিবীতে যার কাছ থেকে আমি পেয়েছি অকৃত্তিম ভালোবাসা প্রেম আরো অনেক কিছু যা কিনা আমার মত মানুষের জীবনে শত সহস্র অভিজ্ঞতার তুলনায় শ্রেষ্ঠ। তুলনা করার মতো কোন কিছু আমার অভ্যন্তরের কোন বর্ণের সাধ্য নেই। আমার কাছে অদ্বীতিয় পুরুষ। শ্যামা কাউছার দু’ ভায়ের সাথে একদিন আমার গুরু নজরুল কে পরিচয় করিয়ে দিই। সেই থেকে দির্ঘ এক বছড় তাদের সাথে সম্পর্ক ছিল। এর পর তাদের মধ্যে কি ঘটেছে জানিনা এখন আর তারা কেউ কাউকে আগের মত খুঁজেননা।



কেন খোঁজেন না ? তাদের মধ্যে একে অন্যের ভাব বিনিময় শেষ ? নাকি এটাই মানব প্রকৃতি ? আমার সাথে আজ পর্যন্ত কারো সম্পর্কতো একে বারে শেষ হয়ে যায়নি ! হয়তো সাময়িক আচড়নে অথবা সময়ের ব্যবধানে ছিটকে সরে এসে গেছি অন্যের মেরু অঞ্চল থেকে। এটা স্বাভাবিক নয় কি ?



এবার আসা যাক আমাদের ছোট্ট বন্ধু শোভন সম্পর্কে।

শোভন একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট। গার্মেন্টস টেক্রটাইলের উপর পড়াশোনা করছে। বড় ভাই বিয়ে করে বৌ নিয়ে ইউকেতে থাকেন। মা গৃহিনী, বাবা জর্জ। পাল্সার হুন্ডাটাই তার সবচেয়ে ঘনিষ্ট বন্ধু। উত্তরাতে কিছু বন্ধু-বান্ধব আছে। শুনেছি ঐ খানে ওর থাকার জন্য পারছনাল একটা রুমও নাকি আছে। এককথায় শোভন অত্যাধুনিক মন মানুষিকতার একটি ছেলে বলবোনা ‘ পিস’। প্রতি মাসে সে কম করে হলেও দুইটা একসিডেন্ট করবে এতে কোন সন্দেহ নাই। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো একসিডেন্টটা সে কেন করে, কোন ভুলের কারনে তাকে মাষুল গুনতে হয় তাসে জানে এবং জেনে শুনেই সে আবারো সেই একই ভুল করবে এবং হাত পা ভেঙ্গে ঘড়ে বসে থাকবে। শোভনের মন মানুষিকতা চলাফেরার সাথে আমার ব্যাক্তিগত অনেক কিছুই মিলে যায়; এটা আমার কথা না শোভনের মতামত। আর এদিকে শ্বপনের সাথে কাউছার ভায়ের অনেকটা মিল আছে। আর শাকিল মানে শ্যামার সাথে দু পক্ষেরই মিল অমিল..বরাবর।



শ্বপনঃ-

শ্বপন হচ্ছে আমাদের আসরের মধ্যমনী। ওনাকে ছাড়া আমাদের আড্ডা অসম্পূর্ন বললে ওনাকে কটুক্তি করা হবে; আড্ডা কোনদিনও এ পর্যায়ে আসতে পারতো না। এটা অনেকেই হয়তোবা স্বীকার করতে চাইবেনা। কিন্তু আমি আর শোভন এ ব্যাপারে সম্পূর্ন ডিটার্মাইন্ড। স্বপনের বাড়ি টাঙ্গাইল জেলায়। ওনার বাবা প্রবাশি, মাটা খুবই পরহেজগার মহিলা। আর ওনার বোন স্বপ্না তো হচ্ছে সাক্ষাৎ দেবী। শ্বপনের উচ্চতা কম করে হলেও ছ’ ফুটতো হবেই। চেহারা ভোতা ধরনের। যে কোন মেয়ে মানুষের কাছে প্রাথমিক অবস্থায় যা মনে হবে তা হল ছেলেটা ভয়ঙ্কর গুন্ডা নয়তো কিলার টিলার কিছু একটা হবে নিশ্চয়। আর ওর কাপর চোপরেরর যে ষ্টাইল তা দেখেও অনুমান করা সহজ যে এর ভেতরে কিছু একটা ঝাকানাকা ঝাকানাকা ভাব আছে। নয়তো এরকাম ক্ষ্যাপা টাইপের দেখা যাওয়ার মানেটা কি ?

আসলে ওনি বাহির থেকে যা ভেতরে আসলে তা না। ওনার মনে মানুষের জন্য যে সিমপ্যেথি আমি ব্যক্তিগত ভাবে লক্ষ করেছি তা পরবর্তিতে আপনাদের সামনে তুলে ধরতে পারবো বলে আশা করি।



বোখারী,

তৌহিদ বোখারী হচ্ছে শ্বপনের ভগ্নিপতি। টাঙ্গাইলের বিখ্যাত বোখারী পরিবারের সন্তান। ফর্সা সুন্দর। ওর পুর্বপুরুষরা শুনেছি রাশিয়ান ছিলেন। ছেলে খুবই ভালো, ব্রেনও ভালো। ইউ, কে যাবার জন্য ঢাকা থেকে সব গোছগাছ করছে। ওর বৌ মানে শ্বপনের ছোট বোন থাকে শ্বশুর বাড়ি। সেখানে থেকেই পরাশোনা করে। দুজনেরই দুজাগায় সমান যাতায়াত আছে।



তুষার,

তুষার হচ্ছে টাঙ্গাইলেরই সন্তান। শ্বপনেরই বন্ধু মানুষ। এখানে শ্বপনের সাথে সাবলেটর হিসেবে থাকে। খুব ভালো গানের গলা ওর। দরদ দিয়ে গান গান গেতে পারে। ছাত্র হিসেবেও ভালো। কমার্স কলেজে পড়ে।



সুমন,

সুমন হলো সিম্পল একটি ছেলে। ও হিন্দু। বিবাহিত। ও শ্বপনের সাথে থাকে। শ্বপন ওকে ছাড়া চলতেই পারেনা। ওর বাড়ি বগুড়া। ঢাকাতে অন্যান্য আতিœয় স্বজনও আছে কিন্তু; এখানে কি ভাবে এলো তার কিছু আমি জানিনা। জানার চেষ্টাও করিনি কখোনো। ছেলে হিসেবে আমার প্রথম দেখাতে খুবই ন্যাকা টাইপের লেগেছিল। এখন ভালোই লাগে। মাঝে মাঝে ওর স্ত্রী আসে, ওর বাবাও আসে। সুমন মার্চেন্ডাইজিং এর উপর একটা কোর্স করছে।



অমি,

অ’ মির আরেক নাম শ্যাম বালক। ছেলেটা কালো বলে ওর নাম দেয়া হয়েছে শ্যাম বালক। অমি শোভনের খালাতো ভাই। ও আর শোভন এক সাথেই ভার্সিটিতে পড়ে।



তারেক,

তারেকের আরেক নাম ডিজিটেল তারেক। কারণ কম্পিউটার সম্পর্কে হেন জ্ঞ্যান নেই যা ও জানেনা বলে আমাদের ধারণা। ও ভালো গানও গাইতে পারে। লালনের গানের সাথে ওর নিজের কথা মিলিয়ে কিভাবে যেন একটা গান তৈরী করে আমাকে শোনালো, আমি তার কিছুই বুঝিনি। এমনিতে আমি লালনের ভক্ত। ওর মাওথ অরগান বাজানোর শখ আছে। ওর ভাষায় এই দুটো মাওথ অরগান নাকি ওর লাইফ পার্টনার। আধ্যাতিক জ্ঞ্যান সম্পর্কেও ভালো ধারণা আছে ওর। এ স¤পর্কে ওর কি যেন একটা সূত্র বানানো হয়ে গেছে, এবং সে এই সূত্রটা ওয়েব সাইটেও প্রচার কাজ শুরু করে দিয়েছে। ওর ভেতরে গডগিফ্টেট কিছু ব্যাপার আছে বলে আমাদের বদ্ধমূল ধারণা। ওর স্বাস্ত খুবই ভালো, মিষ্টভাষি, বিনয়ী। আবার যখন যার উপরে, যে বিষয় নিয়ে রেগে উঠে সেটা ও নিজের আয়াত্বে এনে তারপর ছাড়বে। সেটা এনিওয়ে। ওর আরেকটা ধারণা হলো যে ঘড়ের কোনে বসে থাকে কাপুরুষেরা। ব্রয়লার মত খোয়ারে বসে না থেকে দূর দুরান্তে বেরিয়ে পরা উচিৎ। এবং সে তাই করে। বর্তমানে একটা বীমা কম্পানীতে মতিঝিলে জব করছে।



প্রিন্স,

প্রিন্স হচ্ছে বিক্রমপুরের ছেলে। এই লেকছিটি আবাসিক এলাকায় ওর চাচা-জ্যাঠাদের সবার মিলে সাত আটটা ফ্লাট রয়েছে। প্রায় প্রথম দিক থেকেই ও এখানে থাকে। বর্তমানে ওর ছোট চাচার ফ্লেটেই ওর বাবা মা দেখাশোনার দ্বায়িত্ব নিয়ে থাকে। প্রিন্সের চেহারাও মাসালল্লা প্রিন্সের মতই। আচার ব্যাবহারেও অমাইক সে। প্রেম করে বিয়ে করেছে কিন্তু বৌ নিয়ে আলাদা ছাবলেটর হিসেবে থাকে। আয়ের তেমন কোন নির্দিষ্ট উৎস নেই। বৌ এর বাড়ী নারায়নগঞ্জ। এবার এস,এস, সি, পরীক্ষা দিয়েছে। একমাত্র আল্লাই জানে ওর ভেতরে কি এক বিশেস গুন দিয়ে দিয়েছে !! শ্যামা একবার পারিবারিক কোন্দলে আতœহতœা করতে বসেছিলো। গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলেই পরেছিলো ঠিক ঐ মুহুর্তে ফেরেস্তার মত সে গিয়ে হাজির। ব্যাস বেঁচে গেল আজকের শাকিল ওরফে শ্যামা ভাই। আবার আমারও একটা বিশাল বদ অভ্যাস ছিল যা কিনা ভদ্র সমাজে বলে প্রকাশ করার মত নয়। এই প্রিন্সের কাছে আমি ওয়াদা বদ্ধ হই যে এ খাড়াপ কাজ আমি আর করবোনা। বহুবার নিজের মনের ভেতর সংকল্প করেছি এর আগে ফল হয়েছে এর উল্টোটা। কিন্তু এই প্রথম আমি দ্বিতীয় কোন ব্যাক্তির নিকট ওয়াদা করে তা রক্ষা করে চলেছি। ওর জন্য অন্তস্থল থেকে সৃষ্টিকর্তার নিকট প্রার্থনা করি যেন সে তার সংসার বাবা মা নিয়ে সুখে শান্তিতে থাকতে পারে। ওর সাথে আমার পরিচয় ঘটে শ্যামা ভায়ের মাধ্যমে। এরপর খুবই ঘনিষ্ট সম্পর্ক আজ আমাদের মধ্যে।





আজ দিন তারিখ মনে করতে ইচ্ছে করছে না। তবে সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ন। গুরুত্বপূর্ন বলছি এই জন্যে যে, আজ আমি আমার লক্ষের দিকে ১০% এগিয়েছি। আমার ভেতরে এই বিশ্বাস এসে উপনিত হয়েছে যে, যেমন কর্ম তেমন ফল। খুলে বলছি। আমি গিয়েছিলাম একজনের উপকার করতে..। একবার মিলিয়ে দেখুনতো আমার ভাগ্যের সাথে আপনার ভাগ্য কতবার টপকেছে...



আমি যতবারই অন্যের উপকার করেছি ততবারই আমার কষ্ট পোহাতে হয়েছে। এ দহন কাউকে দেখাবার মত নয়।



আজ বাবার মন ম্যেজাজ ভালো ছিলো তাই আমাকে নিয়ে একটুকরো জমিন দেখবেন বলে নিয়ে বেরিয়েছিলেন বিকেল বেলা। আমার যদিও কম্পিউটারে বসার ইচ্ছে ছিল !! আব্বা দুই কেজি গলদা চিংড়ি মাছ হাতে দিয়ে কোথায় জেন চলে গেলেন। আমি বাসায় এগুলো আমার বৌ এর হাতে দিয়েই বেরিয়ে পরলাম। চা খেলাম সিগারেট কিনলাম। কারেন্ট চলে গেছে। এক বন্ধুর সাথে পার্কে বসে শেয়ার করলাম। কারেন্ট আসার সাথে সাথে বাড়ি চলে এলাম। বাথরুমের কাজ শেষ করে কম্পিউটার অন করলাম। এমন সময় শ্যামার ফোন বেজে উঠলো। শ্যামার সাথে তাউহিদ বোখারীও এলো আমার এখানে।



আবার কারেন্ট চলে গেলো, নিচে নেমে এলাম। আবার চা-টা ইত্যাদী। আসার আগে শ্যামা আমাকে নিজের কষ্টের কথা শোনালো। ও বলতে পারতে ছিলোনা, আবার নিজের ভেতর কথাগুলো চাপিয়েও রাখতে পারতেছিলোনা। কিছুটা বাদ্ধ হয়েই সে আমাকে নির্বচন করেছিলো একটু কাউন্সিলিং এর জন্য। কারণ শ্যামা খুব ভালো করেই জানে আমি প্লেন প্রগ্রামের দিক দিকে আমি কতটা কঠোর এবং বাস্তব বাদী। আসলে ভেতরের কথাগুলো কিভাবে বেরিয়ে এসেছিলো আমাদের কথোপোকথনে যে সেই শব্দগুলি এখন আর পুনরায় মনে করতে ইচ্ছে করছে না। কি গভীর এক এক জনের ব্যাবহৃত শব্দগুলো !! পরিবেশটা যদিও অনুকুল ছিলোনা তবুও আমরা দু’ জন নিজেকে অনেকটা হালকা এবং চাপশূন্য মনে করতে পারছিলাম !



ঘটনা বলব না অঘটন কিছুই বুঝতে পারছিনা। যাক ঘটনা হিসেবেই ধরি..। পিচ্চি একটা ছোকরা এসে আমাদের সামনে দিয়ে হেঁটে চলে গেল, যাবার সময় বলে গেল সামনে ঐ খানে কিযেন একটা গন্ডগোল হচ্ছে। সে সময় আমরা তো নিজেদের একক ব্যাক্তি জীবন এনালাইসেস করতে করতে হাপিয়ে উঠেছিলাম। আমাদের মন নিয়ন্ত্রন করার যে কৌশল আছে তার ক্ষমতার ব্যাবহার দেখে কিছুটা আশ্চর্যও ছিলাম!



সামনে দেখি কাউছার ভাই-লাল একটা হাফ হাতা টি-শার্ট পরা। হাতে সম্ভবত মোবাইল ফোন হবে ! আমার সাথে শ্যামা, কাউছার ভাই একা, তার সাথে আমরা ঐ মুহূর্তে কোন কথা বলার চেষ্টা করিনি। একটু সামনে গিয়ে আরেক প্রসঙ্গে কথা ধরলাম আমরা। আমার বাড়িরর কাছাকাছি এসে আমার চোখ গেল ডানদিকে, দেখি আনেকগুলি মানুষ একসাথে জটলা পাকিয়ে আছে, কোন শব্দ নেই। আমি শ্যামার একটা হাত ধরে ঠাট্টা করলাম শ্যামা দেখ এহেনে কি যেন হইছে তোমারেও ডাকতাছে যাও..। ও সত্যি সত্যি আইলেন্ড টপকে ওপাশে ভিরের মধ্যে ঢুকে গেলো। আমিও পিছু পিছু এসে দাঁড়ালাম। দেখি একছেলে বলছে “ আল¬ার কছম ভাই আমি এই কাজ করিনাই”। ছেলেটার চেহারা দেখার আগেই বাচ্চা একটা ছেলে এর উত্তর দিলো ‘ যাও তোমার আল্ল¬ারে এহেনে ডাইক্কা লইআয়ো’। আমি সাথে সাথে কথার জবাবা দিয়ে বললাম “এই-এটা কোন কোন ধরনের কথা ? আল্লারে এহেনে লইআয়ো এটা কোন সুস্ত কথা ? এইটা কি কউ, হ্যা ? বলেই আমি প্যকেট থেকে একটা সিগারেট বের করলাম ধরাবো। দেখি ম্যাচ নেই। শ্যামা আর আমি বেশিনা পাচ হাত সামনে এগুলাম আর আমার কানের ভেতরে একটা নাম শুনতে পেলামঃ- কাউছার ভাই মাইরেননা।



আমার পিছু পিছু শ্যামা মানে কাউছারের আপন ছোট ভাই শাকিল এসে দেখে যে কাউছার ভায়ের হাতে এক টুকরো লোহার রড। মারমুখি ভঙ্গিমায় উত্তেজিত যাকে মারছে সে ছেলে আমার কাছ থেকে অনেক আশ্চর্যজনক জিনিস শিখেছে। কি কারনে তার কোন আগামাথা আমি আর শ্যামা দু’ জনের কেউই কিছু টের পাইনি। হঠাৎ আমি তৌফিক কে কাউছার ভায়ের সামনে থেকে টেনে জটলা থেকে বের করে ফেলি। কাউছার ভায়ের পেছনে আছে আমাদের লম্বু শ্বপন ভাই।



এখন সবার দৃষ্টি আমাদের দিকে। আমি প্রথমে তৌফিকের চোখ থেকে চশমাটা খুলেই ডান হাতে বাম গালে একটা চর। এরপর পিঠের মধ্যে ধাম ধাম দুইটা থ্বাপ্পর দিয়ে চিৎকার করে বললাম ‘ যা, সোজা বাসায় যা..



এরপর আমি শ্যামাকে বলে ঘড়ে চলে আসি। এসে দেখি কুমিল্ল¬া থেকে আমার তিন ফুপু একসাথে এসে বসে আছে। গোসল করলাম। খেতে বসেছি শ্যামার ফোন কল ! ফোন রিসিভ করে কথা বললাম না; খাওয়ার মধ্যে মনোযোগ ঢেলে দিলাম। আমার পাসে বসে আমার ছোট ভাইও খাচ্ছে। এর মধ্যে এসে হাজির শ্যমা আর বোখারী। কি শুন্দর হাসি খুশি চেহারা। খুব ভালোবাসে সাবাই ওকে। ঘড় থেকে বেরুবার আগে আম্মা কিচেন থেকে বললেন ওদেরকে লিফ্ট এর সামনে থেকেই বিদায় করে দে..। তাতে বুঝলাম এসেই আম্মার সামনে পরেছে নিশ্চই। আমি মোবাইলটা আর মনে করে তৌফিকের চশমাটা কোমড়ে নিয়ে নিলাম। দেখি শিড়ির মধ্যে দু’ জনে হাসিখুশি বসে আছে। শ্যামা বলল কাউছার ভাই তোরে নিচে জাইতে বলছে। তুই কি যাবি ? আমি শুধু বললাম আম্মা নিষেধ করছে। দুঃখিত। তারপর লুঙ্গি আর শুধু সেন্টু গেঞ্জি পরে। শ্যামা ইতস্তত ভাবে বলল তাহলে এই অবস্তাই চল দেখা কইরা শুধু আইসা পরিছ।



আমি জানতাম এ সময় ও ঠিক এই কথাটাই বলবে। ঠিক আছে চলেন। নিচে নামার সময় বললেন তুই শুধু বলবি ওরে আমি দুরে সরায়ে দিতে চাইছিলাম ও কথা মানেনাই, উল্টা আরো কাউছার ভায়ের দিকে যাবার জন্য উদ্দত হওয়ায় আমি ওরে জোরে ধাক্কা দিছি। নিচে নেমেতো দেখি এক চান্দিছোলার সাথে কাউছার ভাই উঁচা গলায় কথা বলতেছে। এখন লোক জন বেড়ে দ্বিগুন। বলিবল খেলার সব প্লি¬য়ার এক দিকে আর আমরা এই কয়জন এক-গ্র“প- এক সাথে। এখানে যে কজনের পরিচয় দেয়া আছে এখানকার প্রায় সবাই আগে পরে এ ঘটনার সাথে জড়িয়ে গেছি। কঠিন কঠিন প্রশ্নের সহজ সহজ উত্তর পর্ব চলছে। শ্যামা ফোন রিসিভ করে কথা বলছে আমি দাড়িয়ে শুনলাম মামুন কে ? এই ছেলেটা কে ?



কাউছার ভাই চিৎকার দিয়ে বললেন এজন্যইতো মামুনরে আনতে পাঠাইছি। আমি সঙ্গে সঙ্গে জবাবা দিয়ে এগিয়ে গেলামঃ- কি হইছে কাউছার ভাই, এই যে আমি, কি হইছে বলেন।

কাউছারঃ- এই তুই ওরে মারছত কে ? ওর সাথে কি তোর কোন ঝামেলা আছে ?



আমিঃ- না, আমি ওরে চাইছিলাম আপনের সামনে থেইকা সরায়ে দিতে। ছোট ভাই না বুঝে হয়তো কোন কথা বলেফেলেছে আমি এইটা ভাবছি কিন্তু; পরে ও আবার আমারে সরায়া আপনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করছে বিধায় ওরে পিঠে আমি ধাক্কা দিয়া সরায়া দিছি। কাউছার ভাই ঠাস ঠাস করে দুইগালে দুইটা চড় না ঘুষি বুঝলামনা শুধু বুঝলাম এখানে আমার আর থাকা ঠিক না। আমি ভির ঠেলে বেরিয়ে এলাম। সবাই আমার দিকে তাকালো এমন সময় কাউছার ভাই মুখে বললেন তুই মারতে গেলিকে ওরে? আর ধাপ করে আবার একটা সত্যিকারের ঘুষি মেরে বসলেন। শ্বপন ভাই প্রাণপন চেষ্টা করেও ঠেকাতে পারলেননা। এবার আমি আগের চেয়ে একটু বেশি গম্ভির ভাবনিয়ে শ্যামার দিকে তাকিয়ে আছি। তারপর বললাম এই দাদা আমি চলে যাই। আমার যা পাওয়ার আমি পাইছি। গেলাম। পেছন থেকে কাউছার ভাই ডাক দিলো এই খারা মামুন। ঘুড়ে দাড়াতেই দেখি চান্দিছোলা একটা লম্বা কাটুন আমার সামনে দাড়িয়ে আছে। কাউছার ভাই তৌফিককে আমার সামনে এনে বলল মিল তরা দুইজন মিল¬া যা, তৌফিক জবাব দিলো আরে মামুন ভায়ের সাথে আমারতো কোন ঝগড়া হয়নাই। এবার চান্দিছোলা প্রশ্ন করে উঠলেন এই তুমি তৌফিকরে মারলা কেন ? আমি কি বলব ? বললাম হ্যা ওরে ভালোবাসি বিধায় ওরে এটুকু শাষন আমি করেছি। কোন অধিকারে বিনা দোষে তুমি ওরে মারলা। আমি চিৎকার দিয়ে উঠলাম এই তৌফিক কম ভালোবাসা দিছি তোমারে..কম ভালোবাসা আদড় পাইছো আমাদের কাছ থেকে ? বলো ! নাকি ভালোবাসারে দুর্বলতা ভাবছো? এই নাও তোমার চশমা। চান্দিছোলা এবার একটু দমেছে। এবার কাউছার ভায়ের পালা। পোলাপান কাউছার ভায়েরে চার্য করা শুরু করলো। কাউছার ভাই বুঝলেন যে কান টানলে অবশ্যই মাথা যাবে। ওনি একটু স্থির ভঙ্গিতে দাড়ালেন। পাসে মোবাইল না কি যেন চুরি করেছে সে সন্দেহে একদল লেবার দাড়িয়ে আছে। এবার আবার আমার পালা-কি ভাই এই ছিন দেহানের লাইগা আমার মার কথাডা অবাট্টেক কইরা আমারে এহেনে নিয়া আইছো। নিআইছো ভালো কথা এখন চলো আমারে দিয়ে আসো। শ্যামা মুখ খুললো ” তুই বাইয়ার কাছে বইলা বিদায় নিয়া নে”। বল যে আমি যাই। গেলাম। কিছুক্ষন দাড়িয়ে থাকার পর দেখলাম চান্দিছোলার সাথে শ্যামার কথাকাটাকাটি শুরু হয়ে গেলো। কাউছার ভাইকে বললাম ভাই আমি যাই।

কাউছারঃ আমার কথা বইলা বাসাথাইকা তোরে আনছে না ?

আমিঃ হু, আম্মা না বলছে নিচে নামতে, তবুও আমি.. ..

কাউছারঃ তুই থাক পরে যাবি।

আমি আবার চটে গেলাম-এক মুরগি ক বার জবাই দিবেন ? এই বলে রক্তচক্ষু ভঙ্গিতে অন্ধকার ভেতরে ওনার চোখের মধ্যে আলো ফেললাম। ওনি কিছুটা ভড়কে গেলেন। মুখে শুধু বললেন মানে ?



পাস থেকে শ্বপন বলল এটা ছাড়া আর কি বলবো ? আরেক জন কে বলল হ ঠিকই আছে। তারপর পরিস্থিতিটা আবার আমার আয়াত্বে আনার জন্য নরম সুরে মিষ্টি ভাষায় করুন দৃষ্টি ভঙ্গিতে বললাম “ ভাই আপনে আমারে অনুমুতি না দিলেতো আমি যাইতে পারিনা। আপনে আমারে বলেন আমি যাই। এবার আসর কিছুটা ঠান্ডা হবার কথা। কারণ রাত বারটার বেশি বেজে গেছে। আমাকে হাতে শক্ত করে ধরে শ্যামা লিফট্ পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে গেল। এর ফাকে মাত্র তিন চারটা বাক্য বিনিময় হয়েছে খুবই গুরুত্বপূর্ন সেটা এখন আপনাদের জেনে কাজ নেই।



ঠিক তার পর দিন সন্ধ্যায়, আমার বৌ আমার হাতে ১০০$ দিয়ে বললো মোবাইলের কার্ড আনার জন্য। বেরিয়েছি টার্গেট প্রথমে শাকিল ভাই এর বাসায় যাবো। গেলাম গিয়ে শূনি আমার সম্পর্কে কথা হচ্ছে। আমি ্হাজির। অবাক হবার কিছুনাই। আমি আসবো এটাই সবার প্রত্যাশা। কিছুক্ষন পর এলো স্বয়ং কাউছার ভাই। আমরা কিছুটা উত্তেজিত ভঙ্গিতে পূর্বদিনের ঘটনা ডিস্কাস করছিলাম। পাসের ফ্লাটের এক ভদ্রলোক এসে বললেন আপনারা পি¬াজ একটু আস্তে কথা বলেন, বাচ্চার পরীক্ষাতো। আমরা জায়গা বদল করলাম। সিঁড়ির উপর যার যার পজিসন অনুযায়ী বসে পরলাম। আমার ঠোটে সিগারেট, অন্যরকম একটা ফিলিংস্ কাজ করছে, ফিলিংসটা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছিনা। যাই হোক কথোপোকথন থেকে আপনারা ঠিক বুঝে নিতে পারবেন..।



কাউছারঃ এই কবির কেরে ?

ঃ- কবির ?

কাউছারঃ ওর ব্রেনটা ওয়াস করানো জায়না ?

ঃ- কোন কবির ?

কাউছারঃ হাজী বাড়ির কবির। মাসুদ ওরে হায়ার কইরা আনছে।

ঃ- ও চিনছি, ওরতো ভালো পাওয়ার এখন। আওমিলিগ এখন ক্ষমতায়, থানায় ওর ভালো একটা প্রভাবও আছে।

বোখাড়ীঃ মামুন ভাই আপনে যাওয়ার পর কালকে কি হইছে শোনেন নাই ?

ঃ- না, কি হইছে ?

শ্বপনঃ শ্যামার গায়ে কবির হাত তুলছে, এইযে দেখেন ওর নাকের এই জায়গাটা..।

বোখারীঃ মামুন ভাই এস আই মাহাবুবের সামনেই ও শ্যামা ভায়ের গায়ে হাত তুলছে। ওর মনে হয় ভালো হ্যাডাম আছে !

শ্যামাঃ আমি বাইচ্চা থাকলে ওরে একবার দেইখা লমু।

ঃ- চান্দিছোলা সালারে আমার কাছে ডি,এন,এর মত লাগে। সালার চিন্তা ভাবনা সব সময় মাথার মধ্যে ডি,এন, এর মত ঘোর পাক খাইতে থাকে। কবির এর ঘাড়ের রগতো একটা তেরা। ওর সাথেতো আমার পূর্ব সত্র“তা। আরো দশ বছড় আগে থাকতেই। আমাদের এলাকার সাথে ওদের এলাকার একটা জাতী দুষমনী আছে। আমারে একবার ও ওর ভাইব্রাদার সহ সামুরাই নিয়া দৌড়াইছিলো। আমি দোতলার ওপর থাইকা লাফ দিয়ে কোন রকমে নিজেকে সেভ করি।?

বোখারীঃ ভাই ওর নাম ডিএনএ না দিয়া এক কাজ করেন এইচ আইভি নাম দেন। সালায় একটা ডেঞ্জারাস চিজ।

ঃ- আচ্ছা এখন নিচে চলেন চাটা খাই।

কাউছারঃ একটু পরে যাই, তুই আগে আমারে বল এই কবিরের ব্রেনডা ওয়াস করানো যায়না ?

ঃ- না, ও চরম একরোখা টাইপের আমি ওরে কিছুই করতে পারুম না। আর আমি ভুল করতে রাজি না। আপনি যদি কিছু করতে পারেন তাহলে চেষ্টা করে দেখতে পারেন।

বোখারীঃ মামুন ভাই এভাবে কথা বলতাছেন কেন ? এখন আমরা সবাই এই ঘটনার সাথে ইনভল্ব হয়ে গেছিনা ?

শ্বপনঃ আপনে চলে আসার পর আপনার বাবার নাম ধরে গালাগালিও করছে ও।

ঃ- কি ?

কাউছারঃ শ্যামারেও বকাবকি করছে। আচ্ছা যাই হোক ওর পার্টির কেকে আছে আমারে ইনফর্ম করতো দেখি কি করা যায় ?

ঃ- ওরা জাত গুষ্ঠি সব হচ্ছে আওয়ামিলীগ। বাজারে রফিক চাচার সাথে প্রায় সময় দেখি আমি। এছাড়া আর কার কথা বলমু, অনেক দিন যাবৎ এলাকার তেমন কারো সাথে যোগাযোগও নাই। কার যেন কি যানি কি অবস্তা !

কাউছা

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.