নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানুষ

সরোজ মেহেদী

The inspiration you seek is already within you. Be silent and listen. (Mawlana Rumi)

সরোজ মেহেদী › বিস্তারিত পোস্টঃ

\'দুঃখিত নই বলে, দুঃখিত নই জাফর ইকবাল স্যার\'

৩১ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:২৮

সব তর্ক বিতর্কের শেষে 'জাফর ইকবাল' আমার কাছে একজন স্বপ্নের ফেরিওয়ালা।যার ডানায় হাজারো তরুণ মুখ স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে।আজ তিনি কিছু তরুণ মুখেরই বিচার চেয়ে রাস্তায় নেমেছেন, বৃষ্টিতে ভিজেছেন।সরকার সমর্থক একদল শিক্ষার্থী আজ শাবিতে যা করেছেন তাতে পুরো ছাত্রসমাজকেই অপরাধী বানানো হয়েছে।আমি স্বীকার করছি আমাদের এ অপরাধ অমার্জনীয়।এবার আপনিও স্বীকার করেন স্যার এমন অনাকাঙ্খিত অঘটনের পেছনে আপনাদের শিক্ষক সমাজেরও দায় আছে।আমাদের শিক্ষকেরাতো নিজের ঘরে লাভের গুর তুলতে গিয়ে দায়িত্ব জিনিসটা বিসর্জন দিয়েছে বহু আগেই। তাই আমি তাদের দায়ের কথা বললাম।

তারা মানে আমাদের সম্মানিত শিক্ষকেরা স্যার।যাদের বড় বড় বিদেশি ডিগ্রী আছে।এদের অনেকেরই আবার শ্রেণী কক্ষে পাঠ দেয়ার রসদ নেই যদিও।তবু আমরা তাদের ছোটবেলায় শেখানো বুলি মেনে মা-বাবার পরের স্থানটাই দিয়ে থাকি।তাদেরকে বাইবেলের সেই পবিত্র চরিত্র হিসেবে কল্পনা করেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।কিন্তু এই শিক্ষককেই যখন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে পাই।আমার আশাভঙ হয় স্যার।এ বেলায় এসে লিঙ বৈষম্য না করে পারছি না। 'নানা রঙে সেজে আসা, বিভাগ ছেড়ে ভিসি রুমে বসে থাকা ম্যাডামদের' নিয়ে আমার আপত্তি খানিকটা বেশি।তাদের অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে আসেন, না প্রদর্শনে দেখে বোঝা মুশকিল।

একটু অতীতে ফিরে যাচ্ছি স্যার।২০০৮ সালের কোনো এক রাত।কলেজের বড় ভাইয়ের ট্রাংক থেকে আপনার বেজি বইটা চুরি করে এনে পড়া শুরু করি।শুরু করার পর বুঝলাম উপন্যাস শেষ না করলে ঘুম আসবে না।উপন্যাস শেষ হলো গভীর রাতে।সবাই ঘুমে।আমি কাঁপছি।আমর চারপাশে বেজি।এই যেন আমাকে কাঁমড়ে খাচ্ছে।আমি দৌড়ে ঘুমিয়ে থাকা বন্ধুর শিয়রের পাশে যাই।আবার ফিরে আসি নিজের বিছানায়। জানেন, সেই ভয় কাটতে আমার বহুদিন লেগেছে।সেদিন থেকে বেজিকে ভয় পাই আর বেজির লেখককে সম্মান করি, ভালোবাসি।আজও বাসি স্যার।

গত ক'বছরে আপনাকে একজন রাজনৈতিক ভাষ্যকারের ভূমিকায় দেখছি।যার অনেক কিছুই আমার পছন্দ হয়নি।আপনি নানা বিষয়ে নিজের মতামত দিয়ে আসছেন।এসব মতামতের একজন একনিষ্ঠ পাঠক আমি।তবে আপনার অনেক মতের সাথে আমি একমত হই না। যেমন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বেতন বাড়িয়ে দিয়ে শিক্ষার মান ভাল করার যে মত আপনার তার সাথে আমি একমত হতে পারি না।
আমি এখন অন্য একটি দেশে পড়াশোনার জন্য থাকছি।আপনি নিজে দীর্ঘ বছর দেশের বাইরে ছিলেন। আমাদের এখানে শিক্ষা ফ্রি।তার্কিশদের শিক্ষার জন্য কোনো রকম ফি দিতে হয় না।তবে এখানে যেসব বিদেশী পড়তে আসে তাদের মোটা অঙ্কের টিউশন ফি দিতে হয়।
একটা রাষ্ট্রের নাগরিক যত ধনীই হোক, শিক্ষাটা ফ্রি করেই দেয়াই যৌক্তিক মনে হয় আমার কাছে।আর আমরাতো গরীবদের মধ্যে, গরীব এক দেশের নাগরিক।আমাদের বাজেটের প্রায় সবটাই শিক্ষার পেছনে ঢালা উচিৎ নয় কি স্যার।
বিদেশে এসে দেখলাম, শিক্ষকদের রাজনৈতিক মত আছে।তবে প্রকাশ্য কোনো রাজনৈতিক দল নেই।প্রতিটা ছাত্রকে গেটে পরিচয়পত্র দেখিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে হয়।কত পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন ক্যাম্পাস।ক্যাম্পাসের দেয়ালে না আছে কোনো রাজনৈতিক নেতার শেভেচ্ছা বিজ্ঞাপন, না দেখা যায় কোনো ছাত্র নেতার শুভেচ্ছা সর্বস্ব পোস্টার। আর কোচিং সেন্টারের কোনো পোস্টার ঝুলার প্রশ্নই আসে না। নামে মাত্র মূল্যে ছেলেদের তিনবেলা খাবারের ব্যবস্থা করা আছে।প্রতিটি বিভাগের জন্য আলাদা ক্যাফেটেরিয়া, আলাদা লাইব্রেরী আছে স্যার।ফ্রি ইন্টারনেট সুবিধা সবার জন্যে।
গত এক বছরে আমি আমার একজন তার্কিশ বন্ধুও পাইনি যে তার শিক্ষকের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে আলোচনা করছে।ফলে দিন শেষে তাদের সম্পর্কটা শিক্ষক-আর ছাত্রের পবিত্র ভালোবাসার মধ্যে সতেজ থাকে।
আমাদের দেশেওতো এমনটাই হওয়ার কথা ছিল স্যার।আমাদের শিক্ষকেরা মেধার চাষ করবেন। শিক্ষক তার দৃষ্টিতে আলোর পথের কাউকে দেখে যেমন উচ্ছসিত হবেন।আবার অন্ধকার পথের কাউকে দেখে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরবেন।নিজের চেষ্টা ও প্রচেষ্টায় আলোর পথে নিয়ে আসবেন।ঘৃণাতো বা-মার ধর্ম হতে পারে না স্যার।মেধার চাষ হলেইতো আরও দশটা মেধাবী আমরা পাব?
কিনতু আমাদের শিক্ষকেরা নেহায়েতই দলবাজের চাষ করেন।যেখানে মেধা বিবেচনায় আসে না।মানবিকতা আর বিশ্বাস অবিশ্বাসের কাছে ধর্ষিত হয় সকাল বিকাল।ফলে আমাদের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠগুলোতে তৈরি হয় অন্ধ মতাদর্শিক ক্যাডার।ওদের কেউ ধর্মনিরপেক্ষ ।কেউ কেউ জাতীয়তাবাদ রক্ষার ক্যাডার।কেউ আবার ইসলাম রক্ষার ক্যাডার। অজোপাড়া গা থেকে সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠে পড়তে আসা যে ছেলেটির হওয়ার কথা ছিল শিক্ষা ক্যাডার।সে হয়ে যাচ্ছে এক দুর্ধুর্ষ রাজনৈতিক ক্যাডার। কত জীবনের মহানুভবতা আর ভালোবাসায় ছেলেটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসল। কতো করুণ আর কন্টকাকীর্ণ তার উঠে আসার কাহিনী।অথচ এই ছেলেটায় বিদ্যায় সর্বোচ্চ আঙিনায় এসে কলম ফেলে হাতে তুলে নিল অস্ত্র।আঘাতে আঘাতে নিভিয় দিল তারই মতো আর একটি জীবন!
এর দায়ভার কার স্যার?
আমরা সবাই মিলে এমন উগ্র সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলছি স্যার, যেখানে ধর্ম রক্ষার নামে জীবন বলি দেয়া হয়।প্রগতির নামে জীবন কুরবানি দেয়া হয়।জীবনটাকেই আমরা আসলে মূল্যহীন বানিয়ে ফেলেছি।

একবারও কি ভেবে দেখেছেন স্যার, বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন শেষে আমি হঠাৎ করে মরে গেলে আমার বাবা মায়ের কি অবস্থা হবে? আমায় নিয়ে তাদের দেখা স্বপ্ন হয়তো এই এলিট সমাজ তুবরি মেরে উড়িয়ে দেবে।কিন্তু মা বাবা নামক বৃদ্ধ প্রাণী দুটির বাকি ক'টা বছর খেয়ে বাঁচার জন্য আমার উপার্জনের যে প্রয়োজনিয়তা ছিল তা অস্বীকার করলেই কি মিথ্যা হয়ে যাবে! তাহলে যারা ঝরে গেল? সেই সব সন্তানের মা বাবাদের চোখের পানি কি প্রতিদিন আমাদের ঘারে অভিশাপ হয়ে নিঃশ্বাস ফেলছে না!অভিশপ্ত রাজনীতি যেখানে মানুষের জীবন কেড়ে নেয় সেখানে শিক্ষক লান্চনা আমাকে পোড়ায় না স্যার।
শেষ করছি আশা দিয়ে, আমাদের সামনেতো হুমায়ূন আহমেদের মতো জাতীয় চরিত্র আছেন।আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ নামক আলোর বাতিঘর আজও জ্বলছে।সুতরাং আমি এমন এক জাদুর কাঠির স্বপ্প দেখতেই পারি, যে কাঠির ছোয়ায় একদিন শিক্ষক মহোদয়েরা শ্রেণীকক্ষে ফিরে যাবেন।শিক্ষাঙন হবে একমাত্র মেধা চাষের জায়গা।সেদিন কোনো শিক্ষক লান্চিত হবে না।যদি হয় তবে আমি দুঃখিত হবো।প্রতিবাদী হবো।আজ অনলাইনে শিক্ষক লান্চনার খবর পড়ে খারাপ লাগছে বটে।তবে আমি অসুখী না।কেন যেন ঠোঁটের কোনায় শ্লেষ ভরা এক হাসি ভীড় করছে...

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৭:১৪

সরলপাঠ বলেছেন: ডঃ জাফর কয়েকদিন পর পর খবরের শিরোনাম হন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে তার রাজনৈতিক ভূমিকার জন্যে। আর ছাত্রলীগ খবরেরে শিরোনাম হয় অছাত্রের মত আচরনের জন্যে। জাফর সাহেবের উচিৎ হয় সত্যিকারের রাজনীতি করা, নতুবা তিনি আওয়ামীলীগের কোলে বাম আদর্শের আগাছা হিসাবে শুধু নিত্য নতুন সমস্যাই তৈরি করে যাবেন। এতে মানুষ শুধু বিভ্রান্তই হবে, কিন্তু দেশের কল্যানে কোন কাজে আসবেনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.