নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
The inspiration you seek is already within you. Be silent and listen. (Mawlana Rumi)
দেখতে দেখতে তুরস্কে আমার শিক্ষাজীবন শেষের দিকে যাচ্ছে। এই সময়টাতে ভিনদেশ, ভিন্ন ভাষা আর সংস্কৃতিসহ নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও অনেক কিছুই দেখা ও শেখা হয়েছে। তবে লেখা হয়নি কিছুই। সাগর আর পাহাড় দিয়ে ঘেরা আতাতুর্কের এ দেশ সত্যিই বড় রুপবতী। টানা ক’মাস কাজের পর হাপিয়ে উঠেছিলাম। মনপ্রাণ দিয়ে চাচ্ছিলাম একটা ব্রেক। ঠিক এ সময়ে সিনিয়র এক বন্ধুরও কোথাও থেকে ঘুরে আসার প্রস্তাব। নানা চিন্তা ভাবনার পর এই ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে গেলাম ইস্তাম্বুলের পাশের শহর ইজমিতে। ইজমিতের ইউভাজিক এলাকায় পাহাড়ের চূড়ায় বেশ ক’দিন ছিলাম আমরা। সবার সাথে শেয়ার করার জন্য বেশ ক’টা ছবি দিলাম। আমার ফোনটা (আইফোন) ছবি তোলার জন্য খারাপ না। কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে আমার হাত একদমই কাঁচা। কল করা, ধরা আর ফেসবুক ছাড়া ফোন জিনিসটা তেমন একটা ব্যবহার করি না। আসলে এনজয় করি না। যাইহোক, ফোনের ছবি দেখে জায়গাটা কতটা সুন্দর তা বোঝা যাবে বলে আমার মনে হয় না। আর আমি না ঘুরে সারাদিন রুমেই বসে ছিলাম, কেন বসেছিলাম তা নিচে বলা আছে।
আসল কথায় ফিরি।
পুরো তুরস্ক দেশটাই পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে। এখানেও এর ব্যতিক্রম না। পাহাড়ের বাঁকানো পথ ধরে চলতে চলতে প্রায়ই মনে হয় এই বুঝি খাদে পড়ে গেলাম। বাস এই নিচে নামছেতো, এই উপরে উঠছে। যাইহোক, গন্তব্যে পৌছানোর পর জায়গাটা পছন্দ হয় আমার। জনমানবশূন্য এ এলাকা দেখেই বোঝা যায় এটা মূলত ট্যুরিস্ট জোন। শুরুতে ভেবেছিলাম পাহাড়ের ফাঁকে ফাঁকে ছোট যে রিসোর্টগুলো দেখা যায় সেগুলো বোধহয় সরকারি সম্পদ। পরে আমাদের কটেজের সিকিউরিটি গার্ড জানাল, এগুলো বড়লোকদের প্রাইভেট প্রমোদ হাউজ। বছরে ২/১ বার বউ বা গার্লফেন্ড নিয়ে তারা আসেন ছুটি কাটাতে। আর বাকি সময়টা খালি পড়ে থাকে।
সমতল ভূমি থেকে প্রায় এক হাজার মিটার উঁচুতে ছিল আমাদের কটেজ। চারপাশে পাহাড়, সে পাহাড় বরফে ঢাকা আর তার মাঝে কিছু বাড়ি আর কিছু ছোট ছোট ক্যাম্প। ক্যাম্পগুলো সাধারণত গ্রীষ্মকালে ব্যবহার করা হয়। সেখানে পৌছে দেখি মোবাইলের নেটওয়ার্ক, ইন্টারনেট কিছুই কাজ করে না। নেই পত্রিকা পড়া বা টিভি দেখার কোন ব্যবস্থা। ফলে পুরো দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলাম।
সেদিন পৌছাতে পৌছাতে বিকেল। শরীর খুব ক্লান্ত হলেও বের হলাম বিকেল আর তার আকাশ দেখতে। তবে প্রচণ্ড শীত হওয়ায় বেশিক্ষণ বাইরে টিকতে পারলাম না। সন্ধ্যার পরপরই রুমে গেলাম ঘুমোতে। কিন্তু একি, রুমের হিটার কাজ করে না! তাপমাত্রা মাইনাস ৩০-৪০ এর মধ্যে হবে ধারণা। হিটার ঠিক হবে না জেনে খুঁজে একটা স্লিপিং ব্যাগ বের করলাম। তুর্কিশদের মাপে বানানো স্লিপিং ব্যাগটা বেশ বড়। পাশে কেউ থাকলে দু’জনে একটার মধ্যে ঢোকা যেত। আপসোস সেই সোয়ার খোঁজ আজও পেলাম না।
নেটহীন, যোগাযোগহীন দিনগুলো কেটে গেল খুব দ্রুত। যোগাযোগ বিপ্লবের এই যুগে কিছুটা সময় পুরো দুনিয়া থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার অনুভূতি অবশ্য বেশ ভালোই আমার। -৩৫ ডিগ্রীর মতো তাপমাত্রায় হিটারহীন রুমে কাঁপতে কাঁপতে ঘুমাতে গেলাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে মনে হলো ইশ, আমার হাতখানি আর দু’হাত লম্বা হলেই আকাশ ছুঁয়া যেত। আমি শুভ্র কোন রাজপুত্র হলে মেঘের ভেলারা আমাকে কোলে নিয়ে পাহাড় থেকে পাহাড় চষে বেড়াত। কত কাছে আকাশ আর পাহাড়। দু’পাহাড়ের মাঝে যেন জালরাশির দল হাসছে। মাঝে মাঝে উড়ে যাচ্ছে পাখির দল।
যেদিন ফিরব সেদিন তুষাড় ঝড় হচ্ছে। রেইনকোট বা ছাতা কোনটাই নেইনি। সুতরাং বৃষ্টিতে ভিজতে হলো। ও, আসার আগে পরিচয় হলো এক ফিলিস্তিনী প্রফেসরের সাথে। দীর্ঘ বছর লন্ডনে কাটিয়ে এখন তিনি থিতু হয়েছেন তুরস্কে। ৩০ বছর আগে ইসরাঈলের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ে দেশ ছাড়তে হয়েছিল বেচারাকে। এরপর একদিন একমাত্র ভাই মরার খবর পান, জানাজায় যেতে পারেননি। তারপর মারা যায় বাবা, তারপর মা। কারো মুখই দেখা হয়নি শেষবারের মতো। এখন তিনি নিজে বৃদ্ধ। জানেন না মৃত্যুর আগে আর কোনদিন নিজ ভূমে ফিরতে পারেন কি না। এ প্রফেসরের জীবন কাহিনী শুনতে শুনতে ভিজে আসে আমার চোখ। মনে পড়ে ৭১ এর কথা।
আহা! যারা আমাদের এনে দিয়েছিল এক টুকরো স্বাধীন ভূমি তাদের কাছে চিৎকার করে ঋণ স্বীকার করতে ইচ্ছে করে। শ্রদ্ধা আর কৃতজ্ঞতার ভারে নুয়ে আসে মাথা। সশ্রদ্ধ সালাম নাও হে বীরের দল। হৃদয়ের গহীনে জমে থাকা বিনম্র সালাম।
১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৪:০৩
সরোজ মেহেদী বলেছেন: আপনার জন্যও শুভকামনা।
২| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৭:১৬
চাঁদগাজী বলেছেন:
মোটামুটি
১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৫:৪৫
সরোজ মেহেদী বলেছেন: ‘মোটামুটি’ শব্দটার সাথে আর ২/১ লাইন পড়তে পারলে ভালো লাগবে। অপেক্ষায় থাকলাম।
৩| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৭:১৮
চাঁদগাজী বলেছেন:
ফিলিস্তিনী প্রফেসরের সাথে যখন কথা বলছিলেন, উনি কি বলেছেন, কি করে ফিলিস্তিন দেশ গঠন সম্ভব?
১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৫:৪৭
সরোজ মেহেদী বলেছেন: এই প্রফেসরের মতে, এই সমস্যাটা ফিলিস্তীন বা ইসরাঈলের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় কোন সংকট না। এটা হচ্ছে মুসলিম ও অমুসলিমদের মধ্যে একটা ঐতিহাসিক সমস্যা। কেন এটা মুসলিম বিশ্বের সমস্যা এমন দাবির স্বপক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে এই ভদ্রলোক কয়েকজন মুসলিম বীরের নাম বলেন যাদের নেতৃত্বে বাইতুল মোকাদ্দাস তার ভাষায় জয় করেছিল মুসলিমরা এবং তাদের কেউই আরব বা ফিলিস্তিনী ছিলেন না। তারা আসলে শুধু ‘পবিত্র ধর্মীয় দায়িত্ব’ পালন করছিলেন। তার বিশ্বাস, এমন একজন মুসলিম বীর আবার আসবেন। তার দাবি, বাইতুল মোকাদ্দাসকে কেন্দ্র করে মুসলিম ও অমুসলিমদের মধ্যে আর একটা যুদ্ধ হবে। সে যুদ্ধের একপাশে নেতৃত্ব দেবে অ্যামেরিকা। মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্ব কে দেবে এই প্রশ্নের উত্তর তিনি জানেন না। তবে তার বিশ্বাস অচিরেই একটা যুদ্ধ হবে।
আসলে ভদ্রলোক সম্পূর্ণ বিষয়টাকে তার মতো করে ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গী থেকে দেখেন। বাইতুল মোকাদ্দাসকে রক্ষা করে ওই অঞ্চলের মুসলমানদের জন্য একটা স্বাধীন অঞ্চল গঠন করা মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র দায়িত্ব বলে মত তার। আমি জানি না, ইসলাম ধর্মে এ নিয়ে কোন ব্যাখা আছে কি না? তিনি ব্যস্ত থাকায় তার সাথে এ নিয়ে আর আলোচনা এগুনো গেল না। আলোচনার মাঝ পথেই বিদায় বলতে হয়।
৪| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৮:৫৯
নতুন নকিব বলেছেন:
''ও, আসার আগে পরিচয় হলো এক ফিলিস্তিনী প্রফেসরের সাথে। দীর্ঘ বছর লন্ডনে কাটিয়ে এখন তিনি থিতু হয়েছেন তুরস্কে। ৩০ বছর আগে ইসরাঈলের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ে দেশ ছাড়তে হয়েছিল বেচারাকে। এরপর একদিন একমাত্র ভাই মরার খবর পান, জানাজায় যেতে পারেননি। তারপর মারা যায় বাবা, তারপর মা। কারো মুখই দেখা হয়নি শেষবারের মতো। এখন তিনি নিজে বৃদ্ধ। জানেন না মৃত্যুর আগে আর কোনদিন নিজ ভূমে ফিরতে পারেন কি না। এ প্রফেসরের জীবন কাহিনী শুনতে শুনতে ভিজে আসে আমার চোখ। মনে পড়ে ৭১ এর কথা।''
আহ! হৃদয় ছুঁয়ে গেল।
ফিলিস্তিনী প্রফেসরের জীবন থেকে নেয়া কথাগুলো।
ছবিগুলো মন কেড়ে নেয়ার মত।
১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৫:৪৫
সরোজ মেহেদী বলেছেন: ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য। ভালোবাসা।
৫| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২৮
নীল বরফ বলেছেন: ছবিগুলো সুন্দর তুলেছেন;সাথে আপনার চমৎকার বর্ণনা। মাঝে মাঝে এরকম সব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একা থাকা ভাল, নিজের সাথে নিজের এক ধরনের এসিড টেস্ট হয়ে যায়।ফিলিস্তিনী প্রফেসরের ঘটনা মন খারাপ করে দেবার মত।
দ্বিতীয় ছবিতে তুরস্কের বিখ্যাত পাহাড়ি শেপার্ড ডগ Kangal dog কে দেখা যায় ছোট্ট করে। পাহাড়ি নেকড়ে মারার জন্যে (কারণ নেকড়েগুলো পাহাড়িদের ভেড়া খেয়ে ফেলে ) এই কুকুর অনেক বিখ্যাত।ভাল থাকুন।
১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৫:৪৪
সরোজ মেহেদী বলেছেন: শেপার্ড ডগের বিষয়টা আমার জানা ছিল না। অনেক অনেক ধন্যবাদ। আপনিও ভালো থাকবেন।
৬| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:৫৪
মারুফ তারেক বলেছেন: ভালো লাগল বর্ননা
শুভকামনা জানবেন
১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৫:৪৪
সরোজ মেহেদী বলেছেন: আপনার জন্যেও শুভকামনা। ভালো থাকবেন।
৭| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৯:৪৯
মোস্তফা সোহেল বলেছেন: একাকি মানুষের জীবনের কথা শুনলেই বুকের ভেতর কেমন কষ্ট হয়। ছবি গুলি অনেক সুন্দর
১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৫:৩০
সরোজ মেহেদী বলেছেন: হা হা হা। আসেন বুকে বুক মিলাই।
৮| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:২৯
শোভন শামস বলেছেন: চমৎকার ছবি গুলো দেখে ভাল লাগল। লিখে যান, সুন্দর ছবি আর লেখার জন্য ধন্যবাদ। +
১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৫:৩৩
সরোজ মেহেদী বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ এমন সুন্দর করে উৎসাহ দেওয়ার জন্যে।
৯| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:১৫
কামরুন নাহার বীথি বলেছেন:
চমৎকার ছবি গুলো দেখে সত্যিই ভাল লাগল।
আর আপনার বর্ণনাও অসাধারন!!
শুভকামনা নিরন্তর!!
১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৫:৩৫
সরোজ মেহেদী বলেছেন: অনেক আন্তরিক মন্তব্য। ভালো লাগল। শুভ হোক পথচলা।
©somewhere in net ltd.
১| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১:৪৩
সেতুর বন্ধন বলেছেন: সুন্দর সব ছবি ও বর্ননা নিপুন পোষ্ট খানি অনেক ভাল লেগেছে।