![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষ। বড় আজব এই মানুষ। মানুষ নাকি ফানুষ তাও এখন আর বোঝার ক্ষমতা আমি রাখি না। সব ক্ষমতা হারিয়ে গেছে। হারিয়ে দিন যাচ্ছে নির্জনে। নির্জনে থাকি নিজের সাথে। ধীরে ধীরে নির্জনতা প্রিয় মানুষে রুপান্তরিত হচ্ছি। হয়তো হয়েও গেছি। ইদানিং চলাফেরা করতেও ভয় হয়। চারিপাশে মানুষ দেখি না। দেখি শুধু মুখোশ। মুখোশে-মুখোশে ছেয়ে গেছে গোটা পৃথিবী। নিজের বিভৎস চেহারা সামনে একটি মসৃন আবরন। সেটাই মুখোশ। নিজেকে লুকিয়ে রেখে ভালো মানুষি মুখোশটাকে ইদানিং দেখা যায় বেশী। স্বার্থ এমনই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। স্বার্থ ফুরালেই সব শেষ। মুখোশটা ঠিক তখনই উন্মোচন হয়। বিভৎস সেই চেহারা দেখে বমি চলে আসে। থুথু ছিটিয়ে প্রতিবাদ করতেও উদ্ধত হই। কিন্তু তাও পারি না। এত কাছের মানুষকে তাও করা সম্ভব হয় না। তাইতো নির্জনে চলে গেছি। একদম নির্জনে। হাজার অবিশ্বাস নিয়ে এখন আমিও মুখোশধারীদের মতো হয়ে গেছি। মুখোশটাই হয়ে গেছে জীবনের মূলমন্ত্র। কারণ, জীবন একটি মুখোশ।
অনাহারে মৃত্যু দেখে কেউ সেচ্ছায় অনাহার জীবন শুরু করার ঘটনা কেউ শুনেছে কখনো? বাংলার ফুটপাত কিংবা ট্রাফিক সিগনালগুলোতে অনাহারে ক্লিষ্ট দেহগুলো যখন ভিক্ষের জন্য হাত বাড়ায় তখন কি আমরা ভেবে দেখেছি, এই দেহ গুলো না খেয়ে বিলীন হয়ে যেতে পারে? আবার সেই বিলীন হওয়া দেখে কোনো অবস্থাপন্ন মানুষ সেচ্ছায় অন্ন ত্যাগ করবে। এটাও কি ভাবা যায়?
বাংলা সাহিত্যের "মানব সত্যের সপ্নপুরুষ" যাঁকে বলা হয় তিনি হচ্ছেন, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁরই সৃষ্ট “কে বাঁচায় কে বাঁচে! ” ছোট গল্পে এমনই এক বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন।
গল্পটির অন্যতম এবং প্রধান চরিত্র মৃত্যুঞ্জয় একদিন অফিস যাওয়ার পথে একজন মানুষের মৃত্যু দেখলো। তাও অনাহারে। লেখক গল্পটি শুরুই করেছেন এই ঘটনাটি দিয়ে।
সেদিন আপিস যাবার পথে মৃত্যুঞ্জয় প্রথম মৃত্যু দেখলো- অনাহারে
মৃত্যু! এতদিন শুধু শুনে আর পড়ে এসেছিল ফুটপাতে মৃত্যুর কথা,
আজ চোখে পড়লো প্রথম।....
ঘটনাটি মৃত্যুঞ্জয়ের মনে এক বিষ্ফোরণ ঘটালো। যার প্রভাব পড়ে তার দেহে। অফিসে গিয়েই অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। অফিসে তার সহকর্মী নিখিল তার খুব ঘনিষ্ঠ। নিখিল তার পছন্দের মানুষটির অবস্থা দেখে অনুমান করতে পারে, কোন একটা বিপদ হয়েছে। এই সময়টির বর্ণনা লেখক এভাবে বলেন,
মৃত্যুঞ্জয়ের রকম দেখেই নিখিল অনুমান করতে পারলো, বড়
একটা সমস্যার সঙ্গে তার সংঘর্ষ হয়েছে এবং শার্শিতে আটকানো
মৌমাছির মতো সে মাথা খুঁজছে সেই সচ্ছ সমস্যার অকারণ অর্থহীন
অনুচিত কাঠিন্য।
মৃত্যুঞ্জয়, "মরে গেল! না খেয়ে মরে গেল!" বলে আর্তনাদ করতে থাকে। নিখিল তার চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছিল তার সহকর্মীর মনের অবস্থা। ফুটপাতের বিভৎস মৃত্যুযন্ত্রণা অনুভব করবার চেষ্টা করলো সে। পরিস্থিতির বর্ণনাটি এসেছে এভাবে,
ফুটপাতের ওই বীভৎসতা ক্ষুধা অথবা মৃত্যুর রুপ? না খেয়ে মরা, কী ও কেমন? কত কষ্ট হয়- না খেয়ে মরতে, কী রকম কষ্ট? ক্ষুধার যাতনা বেশী, না, মৃত্যুযন্ত্রণা বেশী- ভয়ঙ্কর।
নিখিল মৃত্যুঞ্জয়কে প্রশ্ন করে। কিন্তু সে উত্তর দেয় অন্যভাবে। সে বলে উঠে,
আমি বেঁচে থাকতে যে লোকটা না খেয়ে মরে গেলো, এ
অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত কি? জেনে শুনেও এতকাল চার বেলা করে
খেয়েছি পেট ভরে। যথেষ্ট রিলিফওয়ার্ক হচ্ছে না লোকের অভাবে,
আর এদিকে ভেবে পাই না কী করে সময় কাটাব।ধিক্,শত
ধিক্, আমাকে।
অন্নের অভাবে মৃত্যু, মৃত্যুঞ্জয়ের ভাবনার জগতটা ঘিরে থাকে। সে ভুলে যায় সব কিছু। সে ভুলে যায় তার নিজের কথা। তার পরিবারের কথা। আর সে জন্যই মৃত্যুঞ্জয় তার মাইনের পুরো টাকাটা কোনো এক রিলিফ ফান্ডে দেয়ার জন্য তুলে দেয় নিখিলের হাতে। নিখেল তাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করে। কিন্তু কিছুতেই বুঝতে চায় না মৃত্যুঞ্জয়। সে শুধু ভাবে, সে থাকতে কেন কেউ না খেয়ে মরবে। আর এর প্রায়শ্চিত্ত কি হতে পারে। এ যেন তার অপরাধ।
এসব ভাবতে ভাবতেই মৃত্যুঞ্জয়ের সময় যায়। সে জাগতিক প্রয়োজনীয় সকল কাজ বাদ দিয়ে ঘুরে বেড়ায় রাস্তায় রাস্তায়। অনাহারী মানুষগুলোর জীবনের সঙ্গে মিশে গিয়ে তাদের জীবন বোধ বোঝার চেষ্টা করে। নিখিল তাকে ঘরে ফেরাবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। মানজগতের বিপর্যয় সামলানার ক্ষমতা ঈশ্বর যেসব মানুষকে দিয়েছেন, তাদের মধ্যে মৃত্যুঞ্জয় পড়ে না। প্রায়শ্চিত্ত করতে গিয়ে মৃত্যুঞ্জয় মিশে যায় লঙ্গরখানার অন্নপ্রার্থীদের ভীড়ে।
তারপর মৃত্যুঞ্জয়ের গা থেকে ধূলিমলিন সিল্কের জামা অদৃশ্য হয়ে যায়। পরনের ধুতির বদলে আসে ছেঁড়া ন্যাকড়া, গায়ে তার মাটি জমা হয়ে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। দাড়িতে মুখ ঢেকে যায়। ছোট একটি মগ হাতে আরো দশজনের সঙ্গে সে পড়ে থাকে ফুটপাতে আর কাড়াকাড়ি মারামারি করে লঙ্গরখানার খিচুড়ি খায়। বলে, গাঁ থেকে এইছি। খেতে পাই নে বাবা। আমায় খেতে দাও।
আমাদের সমাজে কজন মৃত্যুঞ্জয় আছে কে জানে। যে অন্নের অভাবে মানুষের মৃত্যুর জন্য নিজেকে দায়ি মনে করবে। এদেশের ক’জন মানুষ অনাহারে প্রাণ দেয় তার হিসেবই আমরা জানি না। কিংবা জানার চেষ্টাই হয়তো করি না। ব্যস্ত জীবনে এসব ছোটখাটো বিষয়ের সময় কোথায়!
দেশের দ্রব্যমূল্য যে হারে বেড়ে চলেছে। বলা যায় না কোন এক সময় সমাজের মধ্যতলার মানুষের মাঝে হয়তো দেখা দিবে অন্ন সংকট। তখন আমাদেরই হয়তো দেখা যাবে খিচুড়ির আশায় কোন এক লঙ্গরখানায়। খাদ্য পাবার আশায় আমরাও হয়তো বলব, গাঁ থেকে এইছি। খেতে পাই নে বাবা। আমায় খেতে দাও।
১৬ ই জুন, ২০০৮ রাত ৯:৩৪
শেরিফ আল সায়ার বলেছেন: ধন্যবাদ। আসলে বর্তমান অস্থির জীবনে যা কিছুই লিখতে যাই না কেন, তার মাঝে সমাজের সমস্যার কথা চলেই আসে।
ভালো থাকবেন।
২| ১৬ ই জুন, ২০০৮ সকাল ৯:৫৮
রিয়াজ শাহেদ বলেছেন: মানিকের "ছিনিয়ে খায় না কেনো" গল্পটি পড়েছেন কি শেরিফ ভাই?
১৬ ই জুন, ২০০৮ রাত ৯:৩৮
শেরিফ আল সায়ার বলেছেন: হুমম্ রিয়াজ ভাই, অনেক দিনপর। কেমন আছেন আপনি?
মানিকের "ছিনিয়ে খায় না কেনো" পড়েছি। আসলে এই গল্পটি কিংবা কে বাঁচায়, কে বাঁচে! এগুলো মানিক দূর্ভিক্ষের পটভূমিকার উপরে লেখা। মানিক মানেই বাস্তবতা। মানিক মানেই জীবনের চরম সত্যের প্রকাশ।
ভালো থাকবেন।
৩| ১৬ ই জুন, ২০০৮ বিকাল ৪:৩২
প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব বলেছেন:
১৬ ই জুন, ২০০৮ রাত ৯:৩৯
শেরিফ আল সায়ার বলেছেন: প্রত্যুদা, মন খারাপ করলেন কেন? পোষ্টটা কি পছন্দ হয় নি।
©somewhere in net ltd.
১|
১৬ ই জুন, ২০০৮ রাত ২:১৩
দূরন্ত বলেছেন: সচেতন লেখা। হৃদয় ছুয়ে গেল।