নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবন একটি মুখোশ

শেরিফ আল সায়ার

মানুষ। বড় আজব এই মানুষ। মানুষ নাকি ফানুষ তাও এখন আর বোঝার ক্ষমতা আমি রাখি না। সব ক্ষমতা হারিয়ে গেছে। হারিয়ে দিন যাচ্ছে নির্জনে। নির্জনে থাকি নিজের সাথে। ধীরে ধীরে নির্জনতা প্রিয় মানুষে রুপান্তরিত হচ্ছি। হয়তো হয়েও গেছি। ইদানিং চলাফেরা করতেও ভয় হয়। চারিপাশে মানুষ দেখি না। দেখি শুধু মুখোশ। মুখোশে-মুখোশে ছেয়ে গেছে গোটা পৃথিবী। নিজের বিভৎস চেহারা সামনে একটি মসৃন আবরন। সেটাই মুখোশ। নিজেকে লুকিয়ে রেখে ভালো মানুষি মুখোশটাকে ইদানিং দেখা যায় বেশী। স্বার্থ এমনই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। স্বার্থ ফুরালেই সব শেষ। মুখোশটা ঠিক তখনই উন্মোচন হয়। বিভৎস সেই চেহারা দেখে বমি চলে আসে। থুথু ছিটিয়ে প্রতিবাদ করতেও উদ্ধত হই। কিন্তু তাও পারি না। এত কাছের মানুষকে তাও করা সম্ভব হয় না। তাইতো নির্জনে চলে গেছি। একদম নির্জনে। হাজার অবিশ্বাস নিয়ে এখন আমিও মুখোশধারীদের মতো হয়ে গেছি। মুখোশটাই হয়ে গেছে জীবনের মূলমন্ত্র। কারণ, জীবন একটি মুখোশ।

শেরিফ আল সায়ার › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমাকে কেন দেখালে না বিশ্বস্ত মানুষ?

২৬ শে এপ্রিল, ২০০৯ রাত ৮:৩০

বেশকিছুদিন ধরে মুখোশ নামক শব্দটা আমাকে বড্ড নাড়াচ্ছে।

নাড়াচ্ছে মানে কি! একদম হামলে পড়ছে। মনে হয় চারিদিকে মানুষ দেখি না। দেখি শুধু মুখোশ। মানুষের ভন্ডামিতে যেনো ছেয়ে গেছে মানুষ। নিজ অস্তিত্বকে যেনো নিজেই বিপন্ন করে তুলছে তারা। তারা জানেও না যে তারা মানুষ নামক শব্দটি থেকে অনেক দূরে চলে গেছে।

বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দ্বন্দের খেলায় তারা নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে।

বিশ্বাস-অবিশ্বাসের খেলায় আমরাও অংশ নেই। আমরাও মুখোশের প্ররোচনায় পড়ে নিজেরাও একটি মুখোশ লাগিয়ে বেড়াই। কিন্তু যখন নিজের কাছে অন্যের মুখোশটা উন্মোচিত হয়ে যায়। যখন বিশ্বাসের সমস্ত দেয়াল ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। তখন? তখন নিজের মুখোশ পরে থাকার অপরাধে নিজের গলাটাই চেপে ধরতে উদ্ধোত হই। নিজেকেই আয়নার সামনে এক বিভৎস মানুষ মনে হয়। মনে হয়, কেনো সেই মুখোশের জন্য নিজেকে ভুলতে গিয়েছিলাম।

তখন নিজের সাথে কথা বলতে বলতে শেষ হয়ে যাই। নিজেকেই আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে প্রশ্ন করি। নিজেকেই মুখোশধারীকে চিন্তে না পারার অপরাধে অপরাধী বানাই।



শুরুতেই বলেছি। বেশ কিছুদিন ধরে মুখোশ নামক শব্দটা বড্ড জালাচ্ছে। ঠিক সে সময়েই একটি কবিতা পেলাম। বলা যায়, নিজের সাথে কথা বলার চেয়ে সেই কবিতা বার বার আবৃত্তি করাতে মনটা হালকা হয়ে উঠেছে। সেই কৃতিত্ব কবি আবুল হাসানকেই দিতে হয়।

"নিজের কাছে" কবিতাটি শুরুটাই হয়েছে এইভাবে,



তুমি কেন দেখালে না চারিদিকে প্রসন্ন মানুষ,

তুমি কেন শেখালে না আমাকে সহিষ্ণু হতে

সুখের পিছনে সুখ চেটে নেয় যে সব লোকেরা

তুমি কেন দেখালে না আমাকে তাদের;






বোঝাই যায় এটি একটি আত্মজিজ্ঞাসা নির্ভর কবিতা। কবি নিজেকেই নিজে বলছেন, কেনো প্রসন্ন মানুষকে বুঝলাম না। যে সব মানুষ বিশ্বাসের ভান করে নিজের স্বার্থ উদ্ধারে সব কিছু ছিনিয়ে নিয়ে যায়। যে মানুষগুলো পৃথিবীতে বিশ্বাস-আস্থা নামক শব্দগুলোকে প্রশ্নের মুখে নিয়ে যায়। যে মানুষগুলো সমস্ত আবেগ নিয়ে খেলা করতে পারে। সেই মানুষগুলোর প্রতি তীব্র ঘৃণা নিক্ষেপ করে কবি নিজেকে নিজে বলেছেন,



তুমি কেন দেখালে না আমাকে তাদের;



এরপর,



আমি তো গন্তব্যে যেতে দেখেছি পায়ের মাঝখানে

কি কোরে কষ্ট জমে, গোড়ালীতে ফোস্কা পরে ব্যাথা হয়,

শরীরে বিষন্ন স্মৃতি, পা আর চলে না।

অথচ আমাকে তুমি কেন আজো দেখালে না

পথাশ্রম, সেবাসংঘ, মানুষের স্বাধীন শুশ্রুষা?



তুমি বলেছিলে আমাকে একদিন তুমি দেখাবেই বিশ্বস্ত মানুষ,

আমাকে তুমি একদিন শেখাবেই সংসারের সব শীতলতা,

অথচ আমাকে কেন দেখালে না বিশ্বস্ত মানুষ?

অথচ আমাকে কেন শেখালে না সংসারের সব শীতলতা?




কবির আর্তনাদ স্পষ্ট। বারবার বলে উঠেছেন নিজেকে। নিজেকেই বার বার বলছেন,



অথচ আমাকে কেন দেখালে না বিশ্বস্ত মানুষ?

অথচ আমাকে কেন শেখালে না সংসারের সব শীতলতা?




নিজেকেই বার বার প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছেন। বিশ্বস্ত মানুষের খোঁজে কবি যেনো উন্মাদ হয়ে উঠেছেন।



আমরা প্রতিটি মানুষ বিশ্বাস খুজে বেড়াই। বিশ্বাসেই যে প্রশান্তি। বিশ্বাসই তো আমাদের বাচিয়ে রাখতে পারে নিশ্চিন্তে।

যে অবিরাম পথ চলা সে পথ চলায় বিশ্বাসের বড্ড দরকার। কিন্তু সেটাই যেনো এখন হারিয়ে যাচ্ছে। মানুষ এখন বিশ্বাস শব্দটাকেও মুখোশ পরিয়ে ফেলছে। হাজারো মিথ্যের আড়ালে সব কিছুই হারিয়ে যাচ্ছে।

মুখোশের পেছনে মানুষগুলোর প্রতি তীব্র ঘিন্না চলে আসে। তাদের উপর হামলে পড়তে ইচ্ছে হয়। ইচ্ছে হয় থুথু ছিটিয়ে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাই। কিন্তু পারি না। পারি না তাদের প্রতি ঘৃণা নিক্ষেপ করতে। কারণ, তাদের সাথে যে সুখময় স্মৃতিটি জড়িয়ে আছে তা ভেসে ওঠে চোখের সামনে। মধুর স্মৃতিগুলো আলিঙ্গন করে। তখন আর মুখোশধারীকে দোষ দিতে পারি না।

তখন নিজেকেই অপরাধীর কাঠগড়ায় দাড় করিয়ে বলি,



আমাকে কেন দেখালে না বিশ্বস্ত মানুষ?



মন্তব্য ১৯ টি রেটিং +৯/-০

মন্তব্য (১৯) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে এপ্রিল, ২০০৯ রাত ৮:৪১

আইরিন সুলতানা বলেছেন: সবার তো আর অন্তর্দৃষ্টি থাকেনা । চোখের সামনে যেভাবে দেখানো হয় ওটাই তাই বিশ্বাস করতে হয়। তবে একটা কথা কি, বার বার হোচট খেলে এটা যেমন প্রমাণ হয় সামনের মানুষগুলো প্রতারক তেমনি প্রমাণ হয় প্রতারণার স্বীকার মানুষটির সরলতা...সমস্যা হলো এই সরলতাকে আবার একপক্ষ লালন করতে মানা করে "বোকামি" উপমা দিয়ে ...বড়ই সমস্যা !

ভাল একটা কবিতা নিয়ে লিখেছো শেরিফ।

২৭ শে এপ্রিল, ২০০৯ ভোর ৪:০০

শেরিফ আল সায়ার বলেছেন: ভালোই বলেছেন আপু।
বিশ্বাস শব্দটা যেনো উঠেই যাচ্ছে আমাদের মাঝ থেকে। মানুষকে কিভাবে মানুষ হিসেবে মেনে নেবো!! সেটাই প্রশ্ন। অন্তত যারা বিশ্বাস ভঙ্গকারী তাদের তো মানুষ বলাই পাপ হবে।
এই সব মানুষরা সারাজীবন নিজের সাথেও অভিনয় করে যেতে পারে। তারা এই ব্যাপারটাও মানতে নারাজ থাকে। তাদের বোঝানো হলেও বুঝে উঠতে পারে না তাদের ভুলগুলোকে। কারণ, তারা যা করে যাচ্ছে তারা ভাবে এটাই সত্য। যেনো অবিশ্বাস আর জীবনের সাথে অভিনয়ের ভুত তাদের পেয়ে বসেছে।

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপু।

২| ২৬ শে এপ্রিল, ২০০৯ রাত ৮:৫০

শেরিফ আল সায়ার বলেছেন: কবিতাটিকে একসাথে পড়ি,

তুমি কেন দেখালে না চারিদিকে প্রসন্ন মানুষ,
তুমি কেন শেখালে না আমাকে সহিষ্ণু হতে
সুখের পিছনে সুখ চেটে নেয় যে সব লোকেরা
তুমি কেন দেখালে না আমাকে তাদের;

আমি তো গন্তব্যে যেতে দেখেছি পায়ের মাঝখানে
কি কোরে কষ্ট জমে, গোড়ালীতে ফোস্কা পরে ব্যাথা হয়,
শরীরে বিষন্ন স্মৃতি, পা আর চলে না।
অথচ আমাকে তুমি কেন আজো দেখালে না
পথাশ্রম, সেবাসংঘ, মানুষের স্বাধীন শুশ্রুষা?

তুমি বলেছিলে আমাকে একদিন তুমি দেখাবেই বিশ্বস্ত মানুষ,
আমাকে তুমি একদিন শেখাবেই সংসারের সব শীতলতা,
অথচ আমাকে কেন দেখালে না বিশ্বস্ত মানুষ?
অথচ আমাকে কেন শেখালে না সংসারের সব শীতলতা?

৩| ২৬ শে এপ্রিল, ২০০৯ রাত ৯:০১

শূন্য আরণ্যক বলেছেন: ভালো লেগেছে লেখা। ++

২৭ শে এপ্রিল, ২০০৯ ভোর ৪:৩৩

শেরিফ আল সায়ার বলেছেন: শুনে ভালো লাগলো। :)

৪| ২৬ শে এপ্রিল, ২০০৯ রাত ৯:২৭

অমাবশ্যার চাঁদ বলেছেন: অনেক ভাল লাগল। +++

২৭ শে এপ্রিল, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:২৪

শেরিফ আল সায়ার বলেছেন: ধন্যবাদ।

৫| ২৬ শে এপ্রিল, ২০০৯ রাত ১১:৪৯

আহমাদ মোস্তফা কামাল বলেছেন: লিখেছ ভালো, কিন্তু একইসঙ্গে দুশ্চিন্তায় ফেলে দিলে! আবুল হাসান আবার তোমাকে পেয়ে না বসেন!!

২৭ শে এপ্রিল, ২০০৯ ভোর ৪:০৬

শেরিফ আল সায়ার বলেছেন: পেয়ে বসতে কি বাদ রেখেছে? পড়াশুনা বাদ দিয়ে শুধু কবিতাই পড়ে চলেছি। সব আপনার দোষ!! :P....আপনার কাছ থেকেই তো বইটা আনলাম।
২৮ বছর জীবন প্রাপ্ত এই কবি কি করে এতো অসাধারণ সব কবিতা লিখে ফেলেছেন!! তাতেই অবাক হচ্ছি। তার উপর কবি হিসেবে তার জীবন কেটেছে ১০ বছর।
যে মানুষটি এতো কম সময়ে জীবনবোধ বুঝে উঠতে পারে; তিনি যে ২৮ বছরই বাঁচবেন এটাই তো স্বাভাবিক।
একটু চিন্তা করুনতো!! যদি দীর্ঘায়ু পেতেন তবে কবি আবুল হাসান কি প্রকৃতির সমস্ত সিস্টেমের মাঝে ঢুকে যেতে পারতেন না?
অবশ্যই পারতেন। পারতেন বলেই প্রকৃতি তাকে থাকতে দেননি।

যাইহোক। বেশী দার্শনিক টাইপ কথা বলে ফেলেছি। এতো ভাবুক ডায়লগ দেয়ার বয়স আমার হয়নি। :)
মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

৬| ২৬ শে এপ্রিল, ২০০৯ রাত ১১:৫৩

তনুজা বলেছেন: +++

একটা সমসাময়িক পোস্টের (শূন্য আরণ্যক) লিংক দিলাম , শব্দের মিল থেকে


Click This Link

২৭ শে এপ্রিল, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:৩৯

শেরিফ আল সায়ার বলেছেন: দেখলাম। ভালো লাগলো।

৭| ২৭ শে এপ্রিল, ২০০৯ রাত ১:৪৪

মশিউর রহমান মেহেদী বলেছেন: অনেক ভাল লাগল। +++

২৭ শে এপ্রিল, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:৪০

শেরিফ আল সায়ার বলেছেন: আপনাকেও প্লাস। :)

৮| ২৭ শে এপ্রিল, ২০০৯ সকাল ১০:৪৭

জেরী বলেছেন: একজন মানুষ আরেকজন মানুষের আসল রুপটা থেকে তার মুখোশ পরা রুপটাই বেশী ভালোবাসে রে ভাই......এটাই জগতের রীতি:(

২৭ শে এপ্রিল, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:৪২

শেরিফ আল সায়ার বলেছেন: হুমম....ঠিক। একদম ঠিক। মুখোশ পরা রুপটাই আমরা ভালোবাসি।

ভালোই বলেছেন। তবে মুখোশ পরা রুপটা যে অনেক ক্ষতি করে ফেলল। :(

৯| ২৭ শে এপ্রিল, ২০০৯ সকাল ১০:৫৫

সত্যের মত বদমাশ বলেছেন: অসাধারণ!

২৭ শে এপ্রিল, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:০৪

শেরিফ আল সায়ার বলেছেন: ধন্যবাদ।

১০| ২৭ শে এপ্রিল, ২০০৯ রাত ৯:৫৪

তিতিয়ানাতান্তা বলেছেন: আমাকে কেন দেখালে না বিশ্বস্ত মানুষ?খুব ভাল লেগেছে।

আসলেই আমরা সবাই মুখোশ পরেই ঘুড়ি, কেউ কাউ কে চিনি না।

২৭ শে এপ্রিল, ২০০৯ রাত ১০:০৪

শেরিফ আল সায়ার বলেছেন: হুমম.......বুঝছেন? মুখোশ খুব খারাপ। মুখোশ থেকে দূরে থাকুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.