নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবন একটি মুখোশ

শেরিফ আল সায়ার

মানুষ। বড় আজব এই মানুষ। মানুষ নাকি ফানুষ তাও এখন আর বোঝার ক্ষমতা আমি রাখি না। সব ক্ষমতা হারিয়ে গেছে। হারিয়ে দিন যাচ্ছে নির্জনে। নির্জনে থাকি নিজের সাথে। ধীরে ধীরে নির্জনতা প্রিয় মানুষে রুপান্তরিত হচ্ছি। হয়তো হয়েও গেছি। ইদানিং চলাফেরা করতেও ভয় হয়। চারিপাশে মানুষ দেখি না। দেখি শুধু মুখোশ। মুখোশে-মুখোশে ছেয়ে গেছে গোটা পৃথিবী। নিজের বিভৎস চেহারা সামনে একটি মসৃন আবরন। সেটাই মুখোশ। নিজেকে লুকিয়ে রেখে ভালো মানুষি মুখোশটাকে ইদানিং দেখা যায় বেশী। স্বার্থ এমনই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। স্বার্থ ফুরালেই সব শেষ। মুখোশটা ঠিক তখনই উন্মোচন হয়। বিভৎস সেই চেহারা দেখে বমি চলে আসে। থুথু ছিটিয়ে প্রতিবাদ করতেও উদ্ধত হই। কিন্তু তাও পারি না। এত কাছের মানুষকে তাও করা সম্ভব হয় না। তাইতো নির্জনে চলে গেছি। একদম নির্জনে। হাজার অবিশ্বাস নিয়ে এখন আমিও মুখোশধারীদের মতো হয়ে গেছি। মুখোশটাই হয়ে গেছে জীবনের মূলমন্ত্র। কারণ, জীবন একটি মুখোশ।

শেরিফ আল সায়ার › বিস্তারিত পোস্টঃ

হলি আর্টিজান হামলা: সাংবাদিকের বয়ানে সে রাতের অভিজ্ঞতা

০৩ রা জুলাই, ২০২০ রাত ১২:১৮



২০১৬ সালের জুলাইয়ের ১ তারিখ। একে তো রমজান মাস তার উপর শুক্রবার। বাসার সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম বাইরে কোথাও ইফতার করবো। বিকেল পর্যন্ত কোন রেস্টুরেন্টে ইফতার করতে যাবো সেটাই নির্ধারণ করতে পারলাম না। শেষে সিদ্ধান্ত হলো গুলশান-বনানীর দিকেই আমরা যাবো। কিন্তু ততক্ষণে বেঁকে বসলো আমার মা। বললেন, বিকেল হয়ে গেছে এখন যাওয়া লাগবে না। তার মধ্যে ড্রাইভারও নেই, সে ছুটিতে। সুতরাং প্ল্যান ক্যান্সেল। সিদ্ধান্ত হলো পরের শুক্রবার আমরা সবাই মিলে যাবো।

ইফতারের পর বাসার সবাই গেলো কাছেই এক মার্কেটে। হঠাৎ করে ৯টার কাছাকাছি সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের এক বড় ভাই আমাকে ফোনে জানালেন, বনানীতে হলি আর্টিজান নামে এক রেস্টুরেন্টে কোনো একটা ঝামেলা হয়েছে এ বিষয়ে আমি কিছু জানি কিনা। আমি তখনও কিছু জানি না। সেটাই ওনাকে জানালাম। তবে কোনো আপডেট পেলে ওনাকে কলব্যাক করবো সেটাও নিশ্চিত করলাম।

সঙ্গে সঙ্গে অফিসে ফোন দিয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম, একজন রিপোর্টার অ্যাসাইন করা হয়েছে, তিনি স্পটে যাচ্ছেন। ততক্ষণে টিভিতে স্ক্রল- গুলশানে কিছু দুর্বৃত্ত একটি রেস্টুরেন্টে ঢুকেছে।

বিষয়টাকে গুরুত্বই দেইনি শুরুতে।

নাভাবে খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করছিলাম, পরিস্থিতিটা বোঝার জন্য। কিন্তু এটা যে জঙ্গি হামলা তা ঘুণাক্ষরেও বোঝার কথা নয়, বুঝিও নি। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি পরিষ্কার হলো। আমরা দেখলাম এক বিভৎস হত্যাকাণ্ড। সে রাতেই ২০ জনকে হত্যা করা হয়। ভারতীয় ১ জন, বাংলাদেশি ৩ জন, জাপানি ৭ জন, ইতালির ৯ জন। এছাড়া শুরুর প্রতিরোধে ২ জন পুলিশ নিহন হন।

এরপর প্রায় বেশ কয়েক মাস অনেকটাই মানসিক অস্থিরতায় ভুগেছি। খালি মনে হতো সেদিন যদি ইফতার করতে আমরা ওই রেস্টুরেন্টে যেতাম? তাহলে কী হতো? এসব ভেবে রাতে ঠিক মতো ঘুমাতেই পারতাম না। আশেপাশে পরিপাটি স্মার্ট ছেলের কাঁধে ব্যাগ দেখলেই আঁতকে উঠতাম। অনেক কষ্টে, নিজের মনকে অনেক ভুলিয়ে এই অস্থিরতা থেকে মুক্তি মেলে। তবুও হৃদয়ে সেই ভয়ঙ্কর ছাপটা এখনও অনুভব করি।

হলি আটিজান ঘটনার কয়েকদিন পরই বাংলা ট্রিবিউনে জয়েন করেন নুরুজ্জামান লাবু। তিনি ক্রাইম রিপোর্টার। ধীরে ধীরে ওনার সঙ্গে চমৎকার একটা সম্পর্ক তৈরি হয় আমার। আমি প্রায়ই লাবু ভাইয়ের কাছে সেদিনের ঘটনা জানতে চাইতাম। শুধু হলি আর্টিজান নয়, ক্রাইম রিপোর্টিংয়ে ওনার ভয়ঙ্কর সব অভিজ্ঞতার কথা আড্ডায় প্রায়ই জানার আগ্রহ প্রকাশ করতাম। দীর্ঘ সময় আড্ডায় লাবু নানা অভিজ্ঞতা শেয়ার করতেন। হলি আর্টিজান নিয়ে তার একটি গ্রন্থও ২০১৭ সালে প্রকাশ হয়। যার নাম ‘হোলি আর্টিজান: একটি জার্নালিস্টিক অনুসন্ধান’। এই গ্রন্থটি এক অর্থে চমৎকার। হলি আর্টিজানের সমস্ত তথ্য এই গ্রন্থে রয়েছে। এমনকি সকলের জবানবন্দিও অন্তর্ভুক্ত আছে।



তবে আজকের লেখাটি আমি সাজাবো লাবু ভাইয়ের সঙ্গে ব্যক্তিগত আলাপগুলো দিয়ে। নানা সময়ে ওনার সঙ্গে আলাপের যে সূত্র সেগুলোই এই লেখায় তুলে ধরবো। আশা রাখি একজন সাংবাদিক এ ধরনের ঘটনার মুখোমুখি কীভাবে হলেন সেসবের একটা আঁচ পাওয়া যাবে।

কারণ হলি আর্টিজান হামলার ঘটনা বলতে গেলে অনেকেই অনেকভাবে জানেন। কিন্তু এই তথ্য কাদের মাধ্যমে আমরা জানি? নিশ্চয়ই গণমাধ্যমের মাধ্যমেই ভয়ঙ্কর হামলার ঘটনাগুলো আমাদের সামনে হাজির হয়। এই সংবাদ বা তথ্য যারা সামনে আনেন তাদেরও তো ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার একটা গল্প থাকে। যেটা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমাদের জানা হয় না। রিপোটার্স ডায়েরি বিষয়টা আমাদের দেশে এখনও সেভাবে প্রচলিত হয়নি। তাই হলি আর্টিজান হামলাটি সামনে থেকে পর্যবেক্ষণ করা সাংবাদিক নুরুজ্জামান লাবুর সঙ্গে এ বিষয়ে আড্ডায় বিস্তর আলাপগুলোকেই এক সূতোয় গাঁথার চেষ্টা করলাম।

আমি জিজ্ঞেস করলাম এই খবর তিনি কিভাবে জানলেন? লাবু ভাই বললেন, আমি তো তখন মানবজমিনে ছিলাম। অফিস ছিল কাওরানবাজারে। রাত নয়টার একটু পরে অফিসের নিচে নামলাম চা খেতে আর আড্ডা দিতে। নিচের নামার পর শুনলাম, গুলশানের একটা রেস্টুরেন্টে কোনো একটা ঝামেলা হচ্ছে। ঝামেলা হচ্ছে মানে সন্ত্রাসীরা গিয়েছে, এরকম শোনার পর আমি জুনিয়ার কলিগকে বললাম, একটু খোঁজ নিতে।

অফিসের নিচে আমার আরেক বন্ধু বাংলাদেশ প্রতিদিনের সাখাওয়াত কাওসার এসেছিল, তার সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলাম। আড্ডার মাঝখানেই আমি নানান তথ্য পেতে থাকি। এরই মধ্যে তথ্য আসলো, চাঁদার জন্য সন্ত্রাসীরা গিয়ে গোলাগোলি করছে। এমন সব তথ্যই প্রথম আসে। আরো কিছু সময় পরে তথ্য আসলো, না এটা চাঁদার জন্য না, এটা বড় গোলাগোলি হচ্ছে।’

জিজ্ঞেস করলাম, তথ্য আসছিল মানে কারা আপনাকে দিচ্ছিল তথ্য? আপনার জুনিয়র কলিগ? তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ সেটাও ছিল, এছাড়া নানারকম সোর্সের মাধ্যমেও আসে। যখন নিশ্চিত হলাম এটা আসলে চাঁদার জন্য না। তখন মনে হলো, এটা ভিন্ন কোনো বড় ঘটনা। তখনই তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিলাম যে স্পটে যেতে হবে।

সুনির্দিষ্ট স্পট কোথায়? জানলাম গুলশান ৭৯ নম্বর রোডে। আমাদের বন্ধু সাখাওয়াত কাওসার, ওকে আমরা সাকা বলেও ডাকি। দুজনই পাশাপাশি মোটরসাইকেল নিয়ে রওনা দিলাম।’

অর্থাৎ তখনও লাবু ভাইদের কাছে তথ্য আসেনি এটা বড় একটা জঙ্গি হামলা হতে চলেছে। জানবেই বা কিভাবে? পুরো দেশও তো এটা কল্পনা করেনি। যাইহোক, জিজ্ঞেস করি, যাওয়ার পথে কোনো বাধা পেয়েছেন কিনা।

‘হ্যাঁ, আমি কাওরানবাজার থেকে শুটিং ক্লাবের এদিকে গিয়ে রাস্তায় জ্যামে আটকা পড়লাম। কারণ গুলশানের দিকে রাস্তা বন্ধ। মানে গুলশানের ভেতরের গাড়ি বাইরে বের হতে দিচ্ছে না, বাইরের গাড়ি ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে না। এজন্য রাস্তায় জ্যাম। সাকা আবার করলো কী সে ফুটপাতে বাইক উঠিয়ে দিল। খুব সহজে জ্যামটা পার করে চলে গেলো। আমার আবার একটু সময় লেগেছে জ্যাম পার করে ক্লিয়ার রাস্তায় যেতে।’

জিজ্ঞেস করলাম, পুলিশ কি চেকপোস্ট বসায়নি?

‘হ্যাঁ। বসিয়েছে। আমাকে থামালো। সংবাদকর্মী যেহেতু তাই কার্ড দেখানোর পর বলল, ঠিকাছে যান। আমিও ছুটলাম। ততক্ষণে সাকাকে আর দেখি না। আমি দ্রুত ৭৯ নম্বর রোডের মোড় পর্যন্ত গেলাম। দাঁড়ানো মাত্রই দেখলাম পুলিশ সদস্যরা ইনজুরড অবস্থায় আসতেছে।’

আমি প্রশ্ন করলাম, মানে তখন তো একটা বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল। তার মানে আপনি ওই সময়েই হাজির হয়েছেন?

‘হ্যাঁ হ্যাঁ। কী একটা ভয়ঙ্কর অবস্থা। শিউরে ওঠার মতো। চিৎকার চেঁচামেচি। পুলিশরা রক্তাক্ত হয়ে আছে তাদের দ্রুত গাড়িতে তুলছে, হাসপাতাল নিয়ে যাচ্ছে দ্রুত। আমি তো হতভম্ব হয়ে পড়লাম। এমন সময় দেখলাম ওই গলি থেকেই সাকা হাঁপাতে হাঁপাতে দৌড়ে আসছে। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, কী ব্যাপার কী হয়েছে? সে বলল, অল্পের জন্য বেঁচে গেছি। সাকা একজন ঘনিষ্ট পুলিশ অফিসারের সঙ্গে স্পটের দিকে যাচ্ছিল। সৌভাগ্যক্রমে সেই কর্মকর্তার হাত থেকে মোবাইল ফোন পড়ে স্ক্রিন ভেঙে যায়। আর ওই সময় বিস্ফোরণটা হয়। এজন্য তাদের জীবনটা রক্ষা পায় আর কী।’

এটা কি প্রথম টিমটা যে যাচ্ছিল ওটার কথা বলছেন? ‘ওই যে কমিশনারের টিমটা যে যাচ্ছিল। যেখানে বোমা বিস্ফোরণ হয়ে দু’জন পুলিশ কর্মকর্তা মারা গিয়েছেন। সেই টিমটার পেছনে ছিল এরা।’

আমি দেখেছি লাবু ভাই যখনই এসব নিয়ে কথা বলেন তখনই যেন ফিরে যান ভয়ঙ্কর সেই স্মৃতিতে। বারবার বলতে থাকেন, কী যে এক বিভৎস অবস্থা, না দেখলে বুঝবেন না। আরও বলতে থাকেন, ‘আহত পুলিশদের দেখে কেউই বুঝে উঠতে পারছিল না কী করবে। আমি নিজেও বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছি। বুঝতে পারছিলাম না কী হলো। কারণ এমন ঘটনা তো কখনও চোখের সামনে দেখিনি। এরই মধ্যে আমি খবর পেলাম বনানী থানার ওসি সালাউদ্দিন খান এবং ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার রবিউল করিম মারা গেছেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে ক্রস চেক করার চেষ্টা করলাম। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, তারা শুনেছেন কিন্তু নিশ্চিত না।’

আমি থামিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ভেতরের অবস্থা সম্পর্কে কি কিছুই জানা যায়নি তখনও? বললেন, ‘আসলে ক্লিয়ার ইনফরমেশন তো পাওয়া সম্ভব ছিল না। তবে পুলিশের অনেক কর্মকর্তাদের সঙ্গে তো কাজের সূত্রে সম্পর্ক থাকে। তাদের মাধ্যমে জানতে পারছিলাম যে ভেতরে একটা জিম্মি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আর দেশি-বিদেশি নাগরিকও রয়েছে। তবে আন-অফিশিয়ালি অনেকেই বলছিলেন, ভেতরে একটা কিলিং হয়েছে। আমরা তো ততক্ষণে নিশ্চিত যে এটা জঙ্গি হামলা।’
এবার থামাই। বলি, না, আমি বলতে চাচ্ছিলাম আসলে পুলিশও বা এসব ইনফরমেশন কিভাবে পাচ্ছিল? এই প্রশ্নে লাবু ভাই একটু জিরিয়ে নেন। বলেন, ‘এসব ইনফরমেশনগুলো আসছিল ভেতরে যারা ছিলেন তাদের মাধ্যমেই। মানে যারা জিম্মি অবস্থায় ছিলেন তাদের অনেকের সঙ্গেই কিন্তু আত্মীয় স্বজনদের একটা যোগাযোগ হয়েছিল। বিশেষ করে পুলিশও সেই আত্মীয় স্বজনদের মাধ্যমে ইনফরমেশন নিচ্ছিল যে ভেতরের কী অবস্থা।’

এখানে একটা কথা বলে নিলে মনে হয় ভালো। লাবু ভাইয়ের বইয়ে সকলের জবানবন্দিতেও এই বিষয়টির প্রমাণ পাওয়া যায়। অনেকেই তাদের জবানবন্দিতে বলেছেন, জঙ্গিরা এক পর্যায়ে তাদের যার যার বাসায় ফোনে কথা বলতে বলে লাউড স্পিকার অন রেখে।

যাইহোক। লাবু ভাইয়ের কথায় ফিরে যাই। তিনি বলতে থাকেন, ‘রেস্টুরেন্টের শেফ বা কাজ করে বা যারা খেতে এসেছিল তাদের কেউ কেউ ঘটনার শুরুতেই পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছিল। ক্যাফের পাশে যে বাসাগুলো আছে। তো, দুই বাসার মাঝ বরাবর যে ফাঁকা জায়গাগুলো, মানে ধরেন ময়লা-ড্রেনের যে জায়গাগুলো, ওখান দিয়ে পালিয়ে এসেছিল আর কী। তো, তাদের পুলিশ উদ্ধার করেছিল। তাদের কাছ থেকে কিছু ইনফরমেশন পাওয়া গেলো। তখন ক্লিয়ার হওয়া গেলো যে চার পাঁচজনের একটা সন্ত্রাসী দল অস্ত্র হাতে ঢুকে এলো-পাথাড়ি গুলি ছোড়ে। তাদের মাধ্যমেই প্রথম তথ্য আসে যে ভেতরে অনেক লোকই আটক আছে আর বিদেশিরাও আছেন।’

এমন একটা বিভৎস ভয়ঙ্কর মুহূর্তের কথা মনে করতেই জানতে ইচ্ছে হয় উনি যেখানে অবস্থান করছিলেন সেখানকার পরিস্থিতি কেমন ছিল? জিজ্ঞেসও করি। লাবু ভাই এটাও বলেন।

‘তখন তো ওই গলির মোড়ে ভীষণ রকম একটা উত্তেজনাকর মুহূর্ত। বাংলাদেশে তো এরকম আগে কখনও ঘটেনি।পুলিশ সদস্যরা কী সিদ্ধান্ত নেবে, কী অপারেশন চালাবে- এসব মিলিয়ে তাদের জন্য একটা নতুন অভিজ্ঞতা। আমি তো পরবর্তী সময়ে তৎকালীন কমিশনার, তৎকালীন ডিজি র‌্যাব তাদের ইন্টারভিউ করেছিলাম। মানে তাদের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা যে কীভাবে কী হবে। আমরা যারা সাংবাদিক ওখানে ছিলাম, আমাদের জন্যও কিন্তু নতুন অভিজ্ঞতা। তারপর এসব জিম্মি ঘটনায় কতটুকু খবর পরিবেশন করা যাবে সেটাও একটা ভাবনার বিষয় ছিল। রাতে বিশেষ করে টেলিভিশন মিডিয়াগুলোতে যেভাবে লাইভ সম্প্রচার হচ্ছিল সেটিও কিন্তু নানান কৌশলে কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে বলা হয়। কারণ ভেতরে সন্ত্রাসীরা বাইরে কী হচ্ছে সেটা মিডিয়ার লাইভ দেখে তারা আপডেট পাচ্ছিল। এজন্য পরবর্তীতে র‌্যাবের তৎকালীন ডিজি অনুরোধ করেছিলেন লাইভ কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। ওই সময়ে এ বিষয়টা খুব একটা মাথায় আসেনি। পরে কিন্তু বুঝেছি, জঙ্গিদের মিডিয়ার মাধ্যমেই আপডেট নেয়ার প্রমাণ আছে। আপনি জানেন মুম্বাই হামলার সময়ে লাইভ দেখে সন্ত্রাসীরা পুলিশসহ কয়েকজনকে গুলি করে হত্যা করে।’

আমি জিজ্ঞেস করি, আপনিও কি আপডেট দিচ্ছিলেন নিজের হাউজে? ‘না না, আমি তো তখন মানবজমিনে। প্রিন্ট পত্রিকা। ঘণ্টায় ঘণ্টায় আপডেট দেওয়ার তো বিষয় নেই। তবুও অফিসকে আমি বিষয়টা সম্পর্কে জানাচ্ছিলাম। আর তাছাড়া টেরোরিজমটাকে অনেকদিন থেকে কাভার করার চেষ্টা করি তাই নিজের পেশাগত কারণ ও কৌতূহল থেকেই আমি সারা রাত স্পটে ছিলাম। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম শেষ পর্যন্ত দেখে যাবো কী হয়।

আমি আবার থামিয়ে দিলাম। বললাম, একটু রাতেই ফিরে যাই। কারণ ওই সময়ে তো প্রত্যেকটা সেকেন্ড গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সবাই সারারাত জেগে থেকেছি, টিভিতে চোখ রেখেছি। সোশ্যাল মিডিয়াতেও চোখ রাখছিলাম। রাতে ফেসবুকে দুটা ছবি ভাইরাল হয়। একটা হলো কয়েকজন বিদেশি মানুষের লাশ পড়ে থাকার ছবি আর একটা হলো কয়েকজন ছেলের বাথরুমে আটকে থাকার ছবি। এসব কি আপনাদের কাছে এসেছিল? ক্রসচেক করতে পেরেছিলেন? কারণ আমি শুরুতে দেখে ভাবছিলাম কেউ গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করছে।

একটু চিন্তা করে বলেন, ‘জঙ্গিরা আমাকের মাধ্যমে কয়েকটা ছবি প্রকাশ করেছিল। আমাক তো আসলে তাদের মুখপাত্র। আর বাথরুমের যে ছবিটার কথা আপনি বলেছেন, সেটা রেস্টুরেন্টের কিছু কর্মী বাথরুমে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল ঘটনার শুরুতেই। তারা সেখান থেকে ছবিটা তুলে ফেসবুকে দেয়। এই ছবিটাও আমাক এজেন্সির ছবি দেয়ার পরপরই আসে।’

তার মানে ছবি প্রকাশের পর কি নিশ্চিত হয় যে ভেতরে একটা কিলিং হয়ে গেছে।

‘এটা শুরুতেই বললাম যে একটা ইনফরমেশন ছিল যে ভেতরে কিলিং হয়েছে। তবে নিশ্চিত ছিল না। ছবিগুলো আসার পর তথ্য-উপাত্ত এনালাইসিস করে মধ্যরাতে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিশ্চিত হয়ে যান ভেতরে অনেককেই হত্যা করা হয়েছে আর বাকি যারা আছেন তাদের জিম্মি করে রাখা হয়েছে। এরপরই তারা অভিযান কীভাবে চালাবেন সেসব নিয়ে আলোচনা চলতে থাকে। সে রাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বিভিন্ন বাহিনীর প্রধান ও বিভিন্ন সংস্থার প্রধানরা মিলে সিদ্ধান্ত নেয় কমান্ডো অভিযান হবে। তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে আর্মি কমান্ডোদের সিলেট থেকে উড়িয়ে নিয়ে আসা হয় ঢাকায়। তারপর তো সকালে অপারেশন হয়।’

অনেক প্রশ্ন আসে। তবুও একটা জায়গাতেই আমি আটকে থাকার চেষ্টা করি। আমি নিজেও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি এসব তথ্য জানতে গেলে। তারপরও জিজ্ঞেস করি, অপারেশনের আগেই তো অনেক জিম্মি বের হয়ে আসেন। সেটা কি সরসারি দেখেছিলেন আপনি?

এই প্রশ্নে আরও উত্তেজিত হয়ে যান। যেন এখনও সামনে থেকে তিনি দেখছেন। বলছেন, ‘আরে হ্যাঁ। আমি তো এটা নিজ চোখে দেখেছি। হাসনাত করিম ও তার পরিবার, তাহমিদ ও তার দুই বান্ধবী। একজন ভারতীয় নাগরিকও বের হয়ে আসেন। একজন শ্রীলঙ্কান দম্পতি এবং একজন জাপানিজ নাগরিক যার শরীরেও গুলির চিহ্ন ছিল। আমি একজন প্রত্যক্ষদর্শী তাদের বের হয়ে আসাটা। তাদের রিকোভারটা আমি সরাসরি দেখেছি। আমি তো শ্রীলঙ্কান দম্পতির বের হয়ে আসার একটা ছবি তুলেছিলাম, আমার বইয়েও ছবিটা যুক্ত করেছি। যাইহোক, পরে যেটা জানতে পারি যে জাপানিজ নাগরিক ও শ্রীলঙ্কান দম্পতি তারা গোলাগুলোর সময়েই পাশে একটা পিৎজা চুলা ছিল সেখানে লুকিয়ে ছিল।’

এখানে আমার একটা বড় প্রশ্ন আছে। কারণ হাসনাত করিম ও তাহমিদকে নিয়ে ওই সময়ে সোশ্যাল মিডিয়া ছবি ভাইরাল হয়। সেটা নিয়ে প্রচুর বিতর্ক হয়েছে। এখনও হয়। এটা নিয়ে প্রশ্ন করার আগেই দেখি লাবু ভাই বলেন, ‘আপনি তো জানেন তাহমিদের একটা ছবি ভাইরাল হয়। তাই যখন সে বের হয় তখন কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছবিটির কারণে তার উপর প্রচণ্ড চড়াও ছিল। এটাও আমি নিজ চোখে দেখেছি। হাসনাত করিম আর তাহমিদকে নিয়ে বিতর্ক তো এখনও হয়। এটা থাকবে। ছাদে যখন তাদের নেয় জঙ্গিরা। সেখানে দুটি ছবি ভাইরাল হওয়ার পর ব্যাপকভাবে বিতর্কটা সৃষ্টি হয়। হাসনাতের হাতে সিগারেটের মতো কিছু দেখাচ্ছিল আর তাহমিদের হাতে পিস্তল সহ একটা ছবি ভাইরাল হয়।’

এ বিষয়ে লাবু ভাইয়ের বইয়ে তাহমিদের জবানবন্দি পুরোটাই আছে। সেখানে ছাদে যাওয়া প্রসঙ্গে তাহমিদ যা বলে,

…প্রায় দুই ঘণ্টা পর রোহান নিচে নামে। তখন হাসনাত সাহেবকে ডাক দেয়। তারপর বলে যে তুমি আসো। আমি প্রথমে না তাকিয়ে পরে তাকাই। ফ্যাকাশে গলায় জিজ্ঞেস করি, ভাইয়া আমি? বলে, হ্যাঁ। তাকে পিছু করতে বলে এবং তাই করি। বন্দুকের মাথায় যা বলবে তাই করবো। তারপর বলে ওপরে আসো। তখন চোখের আড়ালে দেখি ফাইরুজকে। তাদের চোখে ভয়। আমি জানি না কী হবে। চারিদিক নিস্তব্ধ। দোতালায় ওঠার পর এক সহযোগীকে বলে বন্দুক দিতে। খালি করে দিতে বলে না কি নিজে খালি করে মনে নেই। কিন্তু এটা মনে আছে যে, সে লোড করে ট্রিগার চাপ দেয়। একটি ‘ক্লিক’ শব্দ হয়। আমাকে বোঝায় যে বন্দুকে গুলি নেই। এটা আমার মনে আছে কারণ আমি জানতাম আমি কিছু করতে পারব না। এছাড়া আমাকে নেওয়ার কারণ হলো যে আমার সাথে নিচে বন্ধুরা ছিল ও হাসনাত সাহেবের পরিবার ছিল। আমার বন্ধুরা ছিল যে তাদের ছেড়ে আমি কোথাও যাব না। তারপর আমাকে হাতে বন্দুক দেওয়ার চেষ্টা করে। একটি কালো পিস্তল। আমি প্রথমেই না করি। বলি ভাইয়া আমি পারব না। সে হাসনাত সাহেবকে দরজা খুলতে বলে এবং আমাকে আবার বলে। আমি আবারও বলি একই কথা। নিচের ওরাও শুনে। ভয়ে আমি শেষ পর্যন্ত হাতে নেই। ছাদের থেকে বের হওয়ার আগে আমাকে বলে যে, ‘সিনেমায় যেভাবে দেখেছ সেই ভাবে ধরে বের হবে’। আমি তার কথা শুনি।…

এই একই প্রসঙ্গে হাসনাত করিমও জবানবন্দিতে বলেছে। যা লাবু ভাইয়ের গ্রন্থে আছে।

যাইহোক। কথাতেই ফিরে যাই। সেখানকার স্টাফদের নিয়েও লাবু ভাই আমাকে অনেক কিছু বলেছেন। সেসবের মধ্যে বলেন, ‘সেখান থেকে প্রায় ১৪-১৫ জন রেস্টুরেন্ট স্টাফকে আর্মি কমান্ডো বাহিনী উদ্ধার করে। আমি কিন্তু তাদেরও ইন্টারভিউ করেছিলাম পরবর্তী সময়ে। তারা জানিয়েছিল, যখন হামলার ঘটনা ঘটে তখন যে যেভাবে পেরেছে বেরিয়ে এসেছে অথবা লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করেছে। যেমন, আমি জানি ৯ জন একটা বাথরুমে গিয়ে লুকিয়ে ছিল। আবার ৪ জন স্টাফ জিম্মি অবস্থায় ছিল অন্যদের সাথে। তাদের একজন কিন্তু সেহরির সময়ে রান্নাও করে দেয়। ওই ছেলেটি কিন্তু ভিন্নধর্মের। জঙ্গিরা জিজ্ঞেস করেছিল সে মুসলমান কিনা। এমনকি তাকে কালেমা শরিফও জিজ্ঞেস করে। ও পেরেছিল তাই জঙ্গিরা আর সন্দেহ করতে পারেনি। জিম্মিদের মধ্যে কিন্তু ভারতীয় নাগরিকও ছিলেন। ডা. সাত প্রকাশ। তিনিও কিন্তু কৌশল অবলম্বন করে বেঁচে গেছেন।’

আমাদের আড্ডায় শ্রীলঙ্কান দম্পতির বেঁচে যাওয়ার বিষয়ে বিস্তারিত করে বলেননি। তবে এটি তার গ্রন্থে রয়েছে। সেখানে তিনি বিষয়টি লিখেছেন। কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের যে কর্মকর্তা তাদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন, তিনি লাবু ভাইকে জানান, জঙ্গিদের হামলার পরপরই উপস্থিত সবাই চিৎকার, চেঁচামেচি ও দৌড়াদৌড়ি করতে থাকে। এ সময় এক জঙ্গির মুখোমুখি হয় শ্রীলংকান দম্পতি। জঙ্গিদের দিকে তারা নিজেদের ব্যাগও ছুঁড়ে দেন। তারপর এক সুযোগে হলি আর্টিজানের উত্তর দেয়াল ঘেঁষা পরিত্যক্ত পিৎজা চুলার আড়ালে গিয়ে আশ্রয় নেন। সকালে সেখান থেকেই উদ্ধার করা হয়। ওই একই জায়গায় ডা. সাত প্রকাশও ছিলেন। পরে তাকে জঙ্গিরা ভেতরে নিয়ে যায়। এটি সাত প্রকাশের জবানবন্দিতেও রয়েছে।

লাবু ভাই এবার বলেন, ‘আসলে এত বড় একটা ঘটনা এখানে সংবাদকর্মী হিসেবে আমার অভিজ্ঞতা ভয়াবহ। এমন অভিজ্ঞতা আমি আশা করি না। তবে এটা ঠিক ক্রাইসিস জার্নালিজম কিভাবে করতে হবে এটার একটা শিক্ষা পেয়েছি। এছাড়াও এই ঘটনার সঙ্গে অনেকেরই অভিজ্ঞতা সংবাদকর্মী হিসেবে শোনার সুযোগ আমার হয়েছে। যেমন, আকাশ নামে একটা ছেলে আছে। তার সঙ্গে আমার দীর্ঘক্ষণ আলাপ হয়। ও আমাকে বলল, সে তো বাথরুমে লুকিয়ে ছিল কয়েকজনের সঙ্গে। জঙ্গিরা তাদের বাথরুম থেকে বের করে আনে। আকাশ বের হয়েছিল সবার শেষে। সে তখনও জানে না এটা জঙ্গি হামলা। সে বের হয়ে ভেবেছিল সবকিছু নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে পুলিশ। তাদের বের করে এনেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। সে বের হয়ে শার্ট গায়ে দিতে দিতে দেখে অনেকগুলো লাশ পড়ে আছে। এখন আর্মস হাতে যে সন্ত্রাসীরা দাঁড়িয়ে আছে তাদের একজনকে আকাশ বলছিল, এতগুলা লোককে মেরে ফেললো আপনারা তাদের ধরতে পারলেন না?
মানে সে ভেবেছিল সন্ত্রাসীরা সবাইকে মেরে দিয়ে চলে গেছে। তখন দুজন জঙ্গি তার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলছিল, আমরাই এদের মেরেছি। আকাশের ভাষ্য হলো, আমার তখন মনে হলো আমি বোধ হয় শেষ।’

এবার জানার ইচ্ছে হলো যে, জঙ্গিরা কি রেস্টুরেন্টে অনেকটা বিনা বাধাতেই ঢুকে পড়েছিল? জিজ্ঞেসও করলাম। তিনি বলেন, ‘আরে এই বিষয়টা নিয়ে আমার বইয়ে আছে। রেস্টুরেন্টের নিরাপত্তাকর্মী নূরে আলমের সাক্ষাৎকারও আমি নিয়েছি। তার কাছেই কিন্তু জঙ্গিরা প্রথম বাধা পায়। সে আমাকে বলেছিল, জঙ্গিরা যখন প্রথম ঢুকে তখন তার একটু সন্দেহ থেকে তাদের জিজ্ঞেস করে, ‘স্যার আপনারা কোথায় যাবেন?’ দুই তিনবার তাদের প্রশ্ন করে। সঙ্গে সঙ্গে ‘সর ব্যাটা’ বলে তাকে একটা ঘুষিও দেয় একজন। এর পরই অস্ত্র বের করে গুলি ছুড়তে ছুড়তে ভেতরে ঢুকে যায় জঙ্গিরা।

এই বিষয়ে কথা বললে আসলে শেষ হবে না। তাই জিজ্ঞেস করে বসলাম, এমন বিভৎস একটা অভিজ্ঞতা থেকে আপনি কী শিখলেন?

তিনি বললেন, কী বলেন? অনেক কিছুই শেখার আছে। প্রধান বিষয়টাই হলো সতর্কতার সঙ্গে থাকা। মানে নিজের সেইফটি ফার্স্ট। আমি যদিও নিজের সেইফটি নিয়ে খুব না ভাবলেও একটু সতর্ক তো থাকার চেষ্টা করেছি। আপনাকে তো আগেও বলেছি, কমান্ডো অপারেশনের আগে সবাইকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল। আমি কৌশলে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করি। আমি জীবনে প্রথম দেখি কমান্ডোরা কিভাবে স্ক্রলিং করে অপারেশনের জন্য যাচ্ছে। এটা সামনাসামনি দেখাও তো একটা বড় অভিজ্ঞতা। আরেকটা বিষয় হলো, সাংবাদিক হিসেবে তথ্যের যাচাই খুব গুরুত্বপূর্ণ। এধরনের ঘটনায় স্পটে থাকলে প্রচুর তথ্য আসতে থাকে। বুঝতে হবে কোনটা সত্য কোনটা অসত্য। আরেকটা সিদ্ধান্তও আপনাকে নিতে হবে সেটা হলো, ওই সময়ে কিন্তু ক্রস চেক করারও সুযোগ খুব একটা থাকবে না। তাই কতটুকু পর্যন্ত তথ্য আমি প্রকাশের জন্য আমার অফিসকে দেব এদিকে খেয়াল রাখা। খুবই সেনসিটিভ সময়ে অনেক কিছু খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ভাবতে হবে, সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এটা খুব চ্যালেঞ্জিং।

নুরুজ্জামান লাবুর সঙ্গে এই বিষয়ে আমার আড্ডা এখনও শেষ হয়নি। সামনে হয়তো আরো আলাপ হবে। তবে তার গ্রন্থটি এখন প্রিন্ট আউট। নতুন সংস্করণের পরিবর্ধন কপি এখনও তৈরি করতে পারেননি বলেও প্রায়ই দুঃখ প্রকাশ করেন। আমাকে এও বলেন, আমার এই গ্রন্থটি নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ হচ্ছে, এটা খুব বড় পাওয়া। আমি তাকে জিজ্ঞেস করি, কী কাজ এটা সবাইকে জানাবেন কবে? তিনি মৃদু হাসেন। তবে সামনে এই ইস্যুতে আরো বৃহৎ পরিসরে কাজ করার আগ্রহও তিনি প্রায়ই আমাকে বলেন।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা জুলাই, ২০২০ রাত ১:০২

কল্পদ্রুম বলেছেন: যদিও এখানে চুম্বক অংশ পড়ে অনেক কিছু অস্পষ্ট থেকে গেছে।তবে বইটার নাম জানা হলো।ঐ ঘটনা সবার জন্যই বড় শিক্ষা ছিলো।

২| ০৩ রা জুলাই, ২০২০ রাত ২:০৯

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: ঐখানে যে কয়টা জঙ্গি মারাগেছে আজকের প্রতিটা ওয়াজী তার থেকে বড় জঙ্গি।

৩| ০৩ রা জুলাই, ২০২০ ভোর ৫:৫৬

নেওয়াজ আলি বলেছেন: সন্ত্রাস দুর্নীতি কালোবাজারি জঙ্গী এরা সব একই রমের হারামি

৪| ০৩ রা জুলাই, ২০২০ সকাল ১০:১০

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
টাকলা হাসানাত আর তাহমিদের সাফাই গেয়ে বইও বানিয়ে ফেলছেন ...?

আমার তো মনে হয় টাকলা হাসনাত পুরো অপারেশনের চিফ।
হাসনাত করিম ও জঙ্গিদের হলি আর্টিজানের ভেতরে ঘুরে ঘুরে সহযোগিতা করেছে। হলি আর্টিজানে হামলার সময় জঙ্গিরা তাদের নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য ‘ডাব্লুআইসিকেআর’ নামে একটি অ্যাপস ব্যবহার করেছিল। হাসনাত করিমের মোবাইলে ওই অ্যাপসটি পাওয়া গেছে। জঙ্গিরা রাত ৮টা ৪৪ মিনিটে হলি আর্টিজানে ঢোকে। এরপর রাত ৮টা ৫৭ মিনিটে হাসনাতের মোবাইলে ওই অ্যাপসটি ব্যাবহারের প্রমান পাওয়া গেছে।
এখানে সেখানে ২২টি গলা কাটা লাশ। পুলিশ আর্মি চারিদিকে ঘেরাও, যে কোন সময় অভিযান শুরু। কে বাচে কে মরে কেউ যানে না। দোতালায় ওঠার শিড়িতে রক্তে ডোবা এক তরুণীর লাশ, মাথা থ্যাতলানো, শিড়ি বা করিডোর ব্যাবহার করতে হলে লাফ দিয়ে রক্ত টপকাতে হবে
এর জটিল টেনশানের ভেতর জঙ্গিদের সাথে চিংড়ি গরুর মাংস দিয়ে সেহেরী খেয়ে রোজা রাখা। মিশন সাক্সেসফুল, রিল্যাক্স তো হবেই।
সকালে আবার রক্ত টপকে শিড়ি বেয়ে ছাদে অস্ত্রধারি সন্ত্রাসিদের নিয়ে মিটিং মানে রোজা রেখে বিড়ি ফোকা।
লক্ষ করুন তাহমিদের হাতে পিস্তল, অস্রধারিদের লিডার রোহানের হাত পিছে, হাসিমুখে রিল্যাক্স ভাব। টাকলা সিগারেট হাতে দরজার দিকে সাবধানি দৃষ্টি। সবাই রিল্যাক্স হাসিমুখ। এক ইটালিয়ান তাবেলা সিজার মারাতে ৫০% বিদেশী ভেগে গিয়েছিল, এবার ২২ টা মারাসি! এইবার বাংলাদেশের তলাটাও থাকবে না, একটাও বিদেশী খুজে পাওয়া যাবে না।

এক ঘন্টা পর অভিযান শুরু গোলাগুলির ভেতর কে বাচে কে মরে ঠিক নেই
টাকলা ও তাহমিদ জেনুইন হলে সেই মরিয়া অবস্থায় রোহানকে খালিহাতেই কাবু করে ছাদ থেকেই আর্মি ডাকতে পারতো।
মৃতুমুখি কোনঠাসা বিড়ালের বাঘের চেয়েও বেশি শক্তি থাকে।

সরকারের সর্বচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তে পার্টি তহবিলে বিলিয়ন ডলার অর্থ বা সমপরিমান বিশাল সুবিধার বিনিময়ে তাহমিদকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
টাকলাকে ২ বছর পিটিয়ে সব তথ্য বের করে নেয়ার পর ছেড়ে দেয়া হয়েছে, তথ্য সব বের করা হয়েছে সত্য। কারন এর পরপরই নাটকিয় ভাবে ব্লগার হত্যা, বিদেশী হত্যার তান্ডোব সম্পুর্ন বন্ধ হয়ে যায়।
টাকলাকে ছাড়ার কথা ছিল না। কিন্তু ২ বছর আটকে রাখার পরও তার বিরুদ্ধের চার্জ প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। কারন টাকলাকে ঝুলালে তাহমিদকে ফাঁসিয়ে দিত।




০৩ রা জুলাই, ২০২০ সকাল ১১:২২

শেরিফ আল সায়ার বলেছেন: দু:খিত এই বইয়ে কারও সাফাই গাওয়া হয়নি। এমনকি এই লেখাতেও কারো সাফাই গাওয়া হয়নি। বইয়ে পুলিশকে দেওয়া জবানবন্দিগুলো তুলে দেয়া হয়েছে। আমি সেবিষয়টিই এখানে উল্লেখ করেছি। এর বাইরে কিছু বলার এখতিয়ার তো আমার নেই। ভালো থাকবেন।

৫| ০৩ রা জুলাই, ২০২০ দুপুর ১২:৫৯

মুজিব রহমান বলেছেন: আমার কাছে হাসনাৎ ও ফাইয়াজকে নিরপরাধই মনে হচ্ছিল। বিষয়টি নিয়ে কয়েকবার পোস্টও দিয়েছিলাম। শুধু সামাজিক মিডিয়ার ভুল প্রচারণার কারণেই হাসনাৎ সাহেব দীর্ঘদিন আটক ছিলেন।

৬| ০৩ রা জুলাই, ২০২০ দুপুর ১:৪৫

এ কাদের বলেছেন: অনেক জানলাম।

৭| ০৩ রা জুলাই, ২০২০ দুপুর ১:৫৭

রাজীব নুর বলেছেন: ভয়াবহ দিন গিয়েছে।

৮| ০৩ রা জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:২২

পদ্মপুকুর বলেছেন: চার নম্বর মন্তব্যে দেয়া ছবিটা আসলেই সন্দেহজনক

৯| ০৩ রা জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৩৭

ডার্ক ম্যান বলেছেন: হাসান কালবৈশাখি @ আপনি এত কিছু জানলেন কিভাবে

কানাডা ভিত্তিক একটি চক্র এদের সাথে জড়িত বলে সন্দেহ । ঐ সময়ের পরে বেশকিছু জঙ্গি নেতা মারা যায় যারা একসময় কানাডায় থাকতো

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.