নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লক্ষ্যহীন

ইহা কঠোরভাবে একটি রাজনীতি মুক্ত ব্লগ ।।

লক্ষ্যহীন

গন্তব্যহীন যাত্রা, লক্ষ্যের সন্ধানে ছুটছি , মায়া, ভালবাসা আর বাস্তবতার বন্দরে নৌকা ভিড়াই কিন্তু লক্ষ্যের দেখা পাইনা, আবারো ছুটে চলি দিক হারা নাবিকের মত ------চলার পথে ছায়া হয়ে থাকে মানুষের অপার মমতা আর ভালবাসা।

লক্ষ্যহীন › বিস্তারিত পোস্টঃ

“শুভ জন্মদিন সুন্দরী”

১৬ ই অক্টোবর, ২০১২ রাত ৯:২৫



জ্বরের তীব্র তাপমাত্রার প্রথম ধাক্কায় চেতনা লুপ্ত হয়ে গিয়েছিলাম, নিজেকে বড় পরিশ্রমী আর কঠিন ভাবা এই আমিই কেন যেন সেদিন নিজেকে চিনতে পারিনি। যতটা না জ্বর তার থেকেও বেশী যেন লজ্জায় কুকড়ে গিয়েছিলাম সেদিন। চেতনা হারানোর আগে কিংকর্তব্যবিমুঢ় শিক্ষকদ্বয়, কিছু উদ্দিগ্ন, কিছু বিহ্বল আর বেশিরভাগ বিরক্ত ক্লাসমেটদের মুখগুলো যত বেশী মনে পড়ছিল তত বেশী লজ্জা লাগতে লাগল। মনটা কিছুটা খারাপ হয়ে গেল, প্রতিবারের মতই কাজের সময়ে সবাই আমাকে ব্যবহার করে আর আমার প্রয়োজনে আমি কাউকে কাছে পাইনা, সবাই মুখ ফিরিয়ে নেয়। অভিমান হলেও পরে নিজেকে বুঝাই, ওদেরই বা কি দোষ, যতই আমি অর্গানাইজার হই না কেন ইঊনিভার্সিটির টাকায় এক সপ্তাহের চট্রগ্রাম, রঙ্গামাটি শীতকালীন ট্যুর এর একটি দিন কেন ওরা আমার জন্য মিস করবে !! আমি কেন জ্বরে পড়লাম !! আমার কারনে ওরা কেন আনন্দ হতে বঞ্চিত হবে!! হোকনা আমি ওদের উপকারী বন্ধু কিন্তু আপন ভাইতো আর নই। ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়তে লাগল, দিনের বেলা হলেও ঘর অন্ধকার, মাথার কাছে দেখলাম এক জগ পানি, দুইটা কলা, কয়েক পিস কেক আর একটা চিরকুট , লেখা-



“দোস্ত তোর ঘুম ভাঙলে কলা কেক খেয়ে একটা ঔষধ খেয়ে নিস, সবাই তোকে রেখে চলে গেছে কক্সবাজার, ফয়েজ লেক, বন্ধু ইস্রাফ ছাড়া কেউ থাকতে চায়নি , ওকে আমি থাকতে দেইনি, আমিই থেকে গেছি। তোর ঘুম ভাঙছে না দেখে আমি একটু বাইরে যাচ্ছি-আমার এক খালা থাকেন এই শহরেই কোথাও আমার কাছে ঠিকানা লেখা আছে, আমি যাচ্ছি- ঠিকানা খুজে ওনার সাথে দেখা করে আসি। মন খারাপ করিস না-সবার আসতে রাত হবে আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চলে আসব।এই বিল্ডিঙে কিন্তু ইলেক্ট্রিসিটি নাই। ঔষধ খেয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়িস”

ইতি – আলম



যাক একজন অন্তত আমার জন্য রয়ে গেছে; আলম কি তাহলে প্রতিদান দিল !! ওর জন্য এইকাজটাই একবার করেছিলাম আমি, ও হয়তো সেটা ভোলেনি। যাক একজন কৃতজ্ঞ বন্ধু অন্তত আছে আমার সাথে। অরুচী মুখে কিছুই খেতে পারিনি, শুধু পানি খেলাম। ঊঠতে যেয়ে দেখলাম শরীরে কোন জোর নেই,আশ্চর্য এত কাহিল হয়ে গেলাম আমি!!! কখনও অসুখ হয়না বলে গর্ব করতাম,আর সেই আমারই জ্বরে ধরল তাও এই স্টাডি ট্যুরে এসে!!! কিন্তু এই বৈরী অবস্থার মধ্যেও যেই জিনিসটা আমাকে চরম অবাক করেছিল এবং স্মৃতিতে আজও জ্বলজ্বলে সেটা আর কিছু নয়- আমার গায়ের কালো-সাদা-সোনালী ডোরাকাটা একটি চাদর। এই চাদরটা ইঊনিভার্সিটির সবার কাছেই মনে হয় পরিচিত, বিশেষ করে ছেলেদের। কারন এই চাদরের মালিক ইঊনিভার্সিটির সেরা সুন্দরীদের একজন, ইঊনিভার্সিটির সিনিয়র, জুনিয়র, ব্যাচ মেট যে কোন ২/৩টি ছেলে এক জায়গায় হলে তাকে নিয়ে প্রায়ই আলাপ করে বলে জানতাম। সে বড় বেশী জনপ্রিয়, কয়েকটি সংগঠন করা, ইলেকশনে জেতা, তুখোড় একজন সংগঠক এবং ভালো স্টুডেন্ট এই আমার থেকেও বেশী জনপ্রিয় সে-সেটা শুধু তার মাথা ঘোরানো রুপ, স্মার্ট চলাফেরা আর বাচনভঙ্গির কারনে। কিন্তু এই চাদর আমার গায়ে কিভাবে আসলো ?? কেউ কি জোর করে তার কাছ থেকে নিয়েছিল ? আরও তো অনেকের চাদর ছিল !! নাকি স্যার দের কথায় তার চাদরটাই দিতে হয়েছিল ? সে কি ভুল করে ফেলে গিয়েছিলে আর আলম সেটার সদব্যবহার করেছে! এই নির্জন বিদ্যুত হীন, দুইতলা সরকারী কোয়ার্টার এর ভৌতিক পরিবেশে অসুস্থ আমি এই চাদর নিয়ে চিন্তা করে অনেকাংশ সময় কাটিয়েছিলাম। যদিও তাকে আমি পছন্দ করতাম না, কিন্তু হাল্কা হলেও একটা ভাললাগা ছড়িয়ে দিয়েছিল সেই চাদরটি। নির্জন বাড়িতে চাদরটি গায় জড়িয়ে বসে মনে হচ্ছিল একজন হলেও ভালো একটি বন্ধু আমার পাশেই আছে। কিঞ্চিত হলেও আমার মধ্যে সেদিন একটা চিন্তাই এসেছিল তা হল, বন্ধুরা যে বলে সে নাকি আমাকে অন্য রকম ভাবে পছন্দ করে-তবে কি সেটা শুধুমাত্র ইয়ার্কি নয়, সত্যি !!!



যাক তারপরের কাহিনী অনেক দীর্ঘ। সে বলেছিল চাদরটা সেই নাকি অনেক জোড়া অবাক চাহনীর সামনেই আমার গায়ে বিছিয়ে দিয়েছিল। আর বলেছিল, আমি কাউকে ভয় পাইনা, সেদিন আমি শুধু মেয়ে মানুষ বলে তোমার সাথে থেকে যেতে পারিনি, কিন্তু মনটা পড়ে ছিল সারাক্ষণ তোমার সাথে। এটা এমন কি!! দরকার হলে এর থেকে বেশী করতে পারব। হ্যা বিস্মিত আমার কাছে সেটা ছিল তার ভালবাসার সত্যিকার প্রথম প্রমান। আমি চাদরটা ধুয়ে ফেরত দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সে কোনভাবেই তাতে রাজী হয়নি-একপ্রকার জোর করেই আমার কাছ থেকে নিয়ে গিয়েছিল। তার একবছর পরে সে আমাকে বলেছিল, "তুমি কি আমার সেই চাদরটা আর কখনও দেখেছ আমার গায়ে ? দেখবেনা, অনেক যত্ন করে রেখে দিয়েছি, আর তারপরে এখনো ধুয়ে দেইনি। অবাক হয়োনা, কারন কি জানো ? কারণ ঐ চাদরে তোমার গায়ের গন্ধ লেগে আছে।" মাঝে মাঝে ভাবি, এখনো কি সে তার চাদরে আমার গায়ের গন্ধ খুজে ফেরে !! না মনে হয়, ইউনিভার্সিটি জীবনের স্বপ্নের সাথে বাস্তবতার কোন মিল থাকে না। দশ হাজার মাইল দুরে অন্যের ঘরনী হয়ে হয়ত অন্য কোন স্বপ্ন বুনে চলেছে সেই স্মার্ট সুন্দরী। তার একটাই চাওয়া ছিল চরম ভাবে, সে বড় সুখী হতে চায়। হয়তো সে এখন সুখেই আছে উন্নত দেশে, গাড়ি বাড়ি , সংসার সবকিছু নিয়ে। শুনেছি তার একটা মেয়ে হয়েছে বছর তিনেক আগে। শুনে হাসি পেয়েছিল, কারন সে আমাকে বলেছিল-‘’দেখ, আমার প্রথম বাচ্চাটা ছেলে হবে, আমার মন বলছে। আর আমি বলেছিলাম, জানিনা আমি কোথায় থাকব তখন, কিন্তু আমার মনে হচ্ছে মেয়ে হবে। যদি মেয়ে হয় তবে আমাকে জানিও।‘ জানিনা তার মনে আছে কিনা, হয়ত সন্তান হবার আনন্দে ভুলে গেছে অথবা কি দরকার ৯ বৎসরের পুরোনো স্মৃতিকে টেনে আনার ।



১৬ই অক্টোবর, সেই চাদরের মালিকের আজ জন্মদিন। কত অভিযোগ ছিল তার, আমি কেন কখনও তার জন্মদিনে উইশ করিনা? অন্য সব মেয়েদের তো ঠিকই উইশ করি!!গিফট দেই!! কি সমস্যা তাকে একটু, ‘হ্যাপি বার্থ ডে’ বললে? আমি উত্তর দিতাম, আমি একজন নগন্য ছেলে, সারা ইউনিভার্সিটি ভরা তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী, তাদের উইশে মন ভরছে না? এই কথা শুনে চোখ মুখ লাল করে চলে যেত সে। তবে আজ মনের গভীর থেকে তার জন্মদিনে আমার শুভ কামনা রইল। ধন্যবাদ তাকে, সে শিখিয়েছিল আমাকে অনেক কিছু, দেখিয়েছিল অনেক কিছু চোখে আঙ্গুল দিয়ে। জীবনে চলার পথে ঘাত প্রতিঘাত, অভিজ্ঞতা মানুষের জীবনকে সুন্দর আকৃতি প্রদান করে, সে ছিল আমার আজকের সুন্দর আকৃতির জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য অভিজ্ঞতা। তার তীব্র ভালোবাসার জোয়ারে প্রথম বারের মত ভেঙ্গে গিয়েছিল আমার তিল তিল করে গড়া অবিশ্বাসের বাঁধ। তার অবদান অস্বীকার করা যাবে না কোনভাবেই। হয়ত সেই সময়ে পারিনি প্রতিদান দিতে, কিন্তু একজন ভাল বন্ধু হিসাবে সে রয়ে যাবে আমার স্মৃতিতে শ্রদ্ধাভরে চিরটা কাল। কৃতজ্ঞ রয়ে যাব আমি তার প্রতি আজীবন। আর অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে বলতে চাই, শুভ জন্মদিন বন্ধু-ভালো থেকো, সুখে থেকো-ছড়িয়ে দিও তোমার হৃদয়ের শুভ্র আলো পৃথিবী ব্যপী, তোমার স্নিগ্ধ ভালোবাসায় সিক্ত হোক অতি প্রিয় কাছের মানুষগুলি।



(বিঃদ্রঃ- এই গল্পের কোন চরিত্রের সাথে কার জীবনের ঘটনা মিলে গেলে তা হবে অনভিপ্রেত কাকতাল মাত্র। ছবিটি গুগল থেকে পাওয়া)

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১২ রাত ১০:২৩

রক্তভীতু ভ্যাম্পায়ার বলেছেন: চন্দ্রবিন্দুর একটা গান মনে পড়লোঃ
যেটুকু রোদ ছিলো লুকোনো মেঘ,দিয়ে বুনি তোমার শালে ভালোবাসা!!!! :) :) :) আপনার চাদরের কাহিনীটা আমার জীবনের সাথে মিলে গেছে,তাই এই গানটা মনে পড়লো! পোষ্টে প্লাস!

২| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১২ রাত ১০:২৬

রক্তভীতু ভ্যাম্পায়ার বলেছেন: এরকম পোষ্ট নির্বাচিত তে যে কেনো আসেনা,বুঝিনা! :| :| :| :|

৩| ১২ ই নভেম্বর, ২০১২ দুপুর ১:০৬

শাহিন বলেছেন: সুন্দর পোষ্ট । ভালো লেগেছে । শুভেচ্ছা ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.