নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার প্রতিদিন

সায়েম অনি

আমার প্রতিদিনের খুঁটিনাটি নিয়েই লেখালেখি করি

সায়েম অনি › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার প্রতিদিন (একটি নিষ্ঠুর মিষ্টি )

২২ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ১:২৪

পৃথিবীর সকল বিরক্তি যেন মাজেদ সাহেবের একার, সবকিছুতেই তার বিরক্তি, তার কুঞ্চিত ভুরুজোড়া দেখে একজন অচেনা মানুষও তার কাছে ভিড়তে সাহস পায়না, তার স্ত্রী কোহিনূর বেগম এর কাছে তো এই কুঞ্চিত ভুরুজোড়া "পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য", ৪০ বছরের চাকরী জীবন শেষ করে দুই মাস হল অবসর নিয়েছেন, বিরক্তিতে কুঁচকে রাখা ভুরুর কল্যাণে জীবনে বন্ধু-বান্ধব জুটেনি বললেই চলে, হাতে অখণ্ড সময়, তাই এখন তার প্রধান কাজ হচ্ছে তার ঘরের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকা, অবশ্য কিছুদিন টেলিভিশনে টক শো দেখে সময় কাটানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু টক শো তার কাছে অনেকটা মাছের বাজারের মত মনে হয়, শুধু তাই না, একেকজন দেশপ্রেমিকের দেশ উদ্ধারের অবস্থা দেখলে তার ইচ্ছা হয় গজারি লাঠি দিয়ে সবগুলোকে... থাক আর নাই বা বললাম।



এভাবেই প্রতিদিনের মত একদিন তিনি ঘরের জানালা দিয়ে বাইরের পরিবেশ দেখছিলেন, হটাৎ খেয়াল করলেন তার ফ্ল্যাট এর সামনের মেইন রোডে ফুটপাথে ৫ - ৬ বছরের একটি বাচ্চা মেয়ে একদৃষ্টিতে কি যেন দেখছে, বাচ্চাটি কি দেখছে সেটা তিনি দেখতে পাচ্ছেন না, তিনি খুব চেষ্টা করলেন বাচ্চাটি কি দেখছে তা দেখার জন্য, কিন্তু সামনের বিল্ডিং এর কারণে সেটা সম্ভব হলনা, এতে প্রচণ্ড বিরক্ত হয়ে তিনি জানালা থেকে সরে গেলেন, দুপুরে খেয়ে একটু ঘুমিয়ে বিকালে আবার তিনি জানালার সামনে দাঁড়ালেন, সাথে সাথে তার ভুরু কুঁচকে গেল, দেখলেন মেয়েটিকে যেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলেন এখনও সেখানে দাঁড়িয়ে আছে, একটু অবাক হলেও ব্যাপারটা তিনি আমলে নিলেন না। পরের দিন ঠিক একই দৃশ্য, তিনি একটু অবাক হয়ে ভাবলেন বাচ্চাটার সমস্যাটা কি, এতটুকুন বাচ্চার হয় স্কুলে না হয় খেলার মাঠে থাকার কথা, এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সামনে কি দেখে। পরের দিন আবার একই দৃশ্য দেখলেন মাজেদ সাহেব, এবার তিনি বেশ বিরক্ত হলেন, মনে মনে ভাবলেন "মাংশ যেভাবে কষায়, এভাবে কষিয়ে দুই থাপ্পড় দিলে এখানে সারাদিন দাঁড়িয়ে থাকার সাধ বের হয়ে যেত, বদমাশ মেয়ে"।



এভাবে কিছুদিন যাওয়ার পর তিনি আর ধৈর্য ধরে রাখতে পারলেন না, তিনি ঠিক করলেন নিচে গিয়ে দেখবেন ব্যাপারটা কি, পরিকল্পনামাফিক পরের দিন তিনি নিচে নেমে বাচ্চাটি যেখানে দাঁড়িয়ে থাকে সেখানে চলে গেলেন, গিয়ে দেখলেন বাচ্চাটি যেখানে তাকিয়ে থাকে সেখানে একটি দর্জির দোকান, একটি মিষ্টির দোকান ও তিন চারটি মুদি দোকান আছে, বাচ্চাটি তাকিয়ে কি দেখে সেটা তিনি বুঝতে পারলেন না, হটাৎ তিনি পাশের ছাপড়া বস্তি থেকে একজন মহিলার গলা শুনতে পেলেন, মহিলাটি বলছে " মুনিয়া, মা ঘরে আয়"; এই ডাক শুনার সাথে সাথে বাচ্চাটি দৌড়ে বস্তির দিকে চলে গেল, তিনিও কৌতূহলবশত বাচ্ছাটির পেছনে যেতে লাগলেন, বস্তির একটা ঘরে বাচ্চাটিকে ঢুকতে দেখে তিনি সেই ঘরের সামনে গেলেন এবং শুনতে পেলেন মেয়েটি কেঁদে কেঁদে বলছে "আমারে একটা মিষ্টি কিনা দেও মা......", অনেক দুঃখ নিয়ে মাজেদ সাহেব বাসায় চলে আসলেন, প্রচণ্ড বিরক্তি নিয়ে ভাবলেন, এমন এক দেশে বাস করেন যেখানে ছোট একটি বাচ্চা মেয়ে একটি মিষ্টির লোভে সারাদিন রাস্তায় দাড়িয়ে থাকে, তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন কাল মুনিয়ার জন্য মিষ্টি নিয়ে যাবেন, নিজে বসে থেকে মেয়েটির মিষ্টি খাওয়া দেখবেন।



পরেরদিন মাজেদ সাহেব ঘুম থেকে উঠেই সেই মিষ্টির দোকানে চলে গেলেন, লাইটপোস্টের নিচে মুনিয়া কে না দেখে তিনি একটু অবাকই হলেন, তিনি এক কেজি মিষ্টি কিনে সেই বস্তিতে মুনিয়াদের বাসার দিকে যেতে লাগলেন, বস্তির সামনে মানুষের একটি ভিড় দেখে তিনি ভিড় ঠেলে মুনিয়াদের বাসার সামনে গিয়ে দেখেন মাটিতে মুনিয়ার নিথর দেহ পড়ে আছে আর সেই দেহের সামনে বসে মুনিয়ার মা আহাজারি করছে, একজন কে জিজ্ঞেস করার পর মাজেদ সাহেব জানতে পারলেন, প্রতিদিনের মত মুনিয়া রাস্তায় দাঁড়িয়ে মিষ্টির দোকানের দিকে তাকিয়ে ছিল, মিষ্টির দোকানিরা রাস্তায় কিছু বাসি মিষ্টি ফেলে দেয়, সেই মিষ্টির লোভে মেয়েটি দৌড় দিয়ে রাস্তা পার হওয়ার সময় তাঁকে গাড়ি চাপা দেয়, মুহূর্তেই সব শেষ.........



রাস্তায় হাঁটছেন মাজেদ সাহেব, হাতে মিষ্টির প্যাকেট, তার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে কিন্তু কি আশ্চর্য তার কুঞ্চিত ভুরুজোড়া এখন একদম স্বাভাবিক.........



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.