![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শফিক সাহেব ”বিড়াল” খুবই অপছন্দ করেন, তার মাঝে মাঝে মনে হয় পৃথিবীতে “বিড়াল” এবং “তেলাপোকা” এ দুটি জীব না থাকলে এমন কোন ক্ষতি হতনা।
আল্লাহর সাথে কথা বলার সুযোগ থাকলে হয়তো তিনি যুক্তি দিয়ে বোঝাতেন বিড়ালের বদলে আরো কিছু হাঁস-মুরগী সৃষ্টি করলে মুরগীর হালি আর ৮০০ টাকা হতনা।
জনতা ব্যাংকের চাকরী ছেড়ে অবসরে গিয়েছেন ১ বছর হল, দুই ছেলে এক মেয়ের প্রত্যেকেই বিদেশে থাকে, একতলা নিজস্ব বাড়িতে স্ত্রী মর্জিনা বেগমকে নিয়ে মোটামুটি সুখেই দিন কাটিয়ে দিচ্ছিলেন…
এক সকালে তার স্ত্রী মর্জিনা বেগম সুখের বারটা বাজিয়ে দিলেন, ঘটনার দিন সকালে শফিক সাহেব বারান্দায় বসে খোশমেজাজে চা পান করছিলেন ও পেপার পড়ছিলেন,
হঠাৎ মর্জিনা বেগম এসে হাজির, স্ত্রীর দিকে তাকাতেই তিনি অস্ফুট আর্তনাদ করে উঠলেন..
কারণ মর্জিনা বেগম কোলের মধ্যে কাল সাদায় মেশানো একটা বিড়ালের বাচ্চা নিয়ে আদর করছেন, শফিক সাহেব চিৎকার করে বলে উঠলেন “এটা কি?”, মর্জিনা বেগম বিরক্ত স্বরে বললেন “চোখের মাথা খেয়ে বসে আছ নাকি?
দেখছ না বিড়ালের বাচ্চা, আহারে বাড়ির পেছনের ঝোপটাতে বসে ক্ষুদায় মিউ মিউ করছিল, ডাকতেই কোলে এসে পড়ল,
ও এখন থেকে আমাদের সাথেই থাকবে, আমি ওর একটা নামও রেখে দিয়েছি”,
শফিক সাহেব শুকনো গলায় বললেন “কি নাম রেখেছ?”, মুখ ভর্তি হাসি নিয়ে মর্জিনা বেগম বললেন, “লুলু”…
বাসার মধ্যে “লুলু” অধ্যায় শুরু হয়ে গেল, দামী একটা কম্বল দিয়ে লুলুর বিছানা তৈরী করা হল,
মর্জিনা বেগম বাজার খেকে ৩০০ টাকা দিয়ে লুলুর খাবারের জন্য প্লেট কিনে এনে শফিক সাহেব কে যখন দেখালেন, কষ্টে তখন শফিক সাহেবের বুক ফেঁটে যাচ্ছিল,
অবশ্য আসল কষ্ট তখনও বাকি ছিল.. একদিন খেতে বসে দেখেন সখ করে কিনে আনা রুই মাছের মাথাটা মর্জিনা বেগম কত আদরে লুলুকে খাওয়াচ্ছেন..
এদিকে লুলুর কাহিনী এলাকায় ছড়িয়ে পড়ল, একদিন বাজার করে আসতে নিজাম সাহেবের সাথে দেখা, নিজাম সাহেব বলে বসলেন, “কি শফিক সাহেব, ঘরে নাকি বিড়াল পালছেন, এই বিড়াল নাকি ১০০০ টাকা দামের রুই মাছের মাথা ছাড়া কিছু খায়না,
কাশ্মিরী কম্বল ছাড়া ঘুমায়না, তার বাথরুম খেকে নাকি সেন্টের গন্ধ বের হয়, আমার তো মনে হয় এ বিড়াল না অন্য কিছু, আপনার ভাগ্য প্রসন্ন বলতে হয়..” হাসিমুখে থাকলেও শফিক সাহেবের ইচ্ছা হচ্ছিল মাংশ যেভাবে কষায় সেভাকে কষিয়ে এ লোকটাকে দুটো থাপ্পর মারতে পারলে তার মনটা শান্ত হত.. বাসায় গিয়ে দেখেন পাড়ার বউ-ঝিরা লুলুকে দেখতে এসেছে,
মর্জিনা বেগম হাসি মুখে লুলুর সাথে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন, লুলুরও সেই কি হাঁটা ও তাকানোর ভঙ্গি, যেন মোঘল সম্রাট “আকবর দি গ্রেট”, আরেকদিন রাতে ভ্রু কুঁচকে দেখেন বিছানায় তার পাশে লুলু কি আরামে ঘুমিয়ে,
স্ত্রীর মুখ ঝামটার ভয়ে নীরব দর্শক হয়ে তিনি সব সহ্য করতে থাকেন… লুলু নিয়ে মাতামাতি চলতেই থাকে..
এক সকালে মর্জিনা বেগমের চিৎকার চেঁচামেচিতে শফিক সাহেবের ঘুম ভেঙ্গে যায়, হন্তদন্ত হয়ে এসে শুনেন লুলুকে পাওয়া যাচ্ছেনা,
সকালেও নাকি বারান্দায় খেলা করছিল, মর্জিনা বেগম সকালের নাশতা বানিয়ে এসে দেখেন নেই,
স্ত্রীর কান্না-কাটি দেখে তিনি বের হলেন লুলুকে খুঁজতে, কি মনে করে থানাতেও গেলেন,
থানা থেকে বের হওয়ার সময় দেখেন দুই-তিনজন হাবিলদার মুচকি মুচকি হাসছে… সারাদিন লুলুকে খোঁজাখুজি করে ক্লান্ত, অবসন্ন দেহে তিনি বাসায় ঢুকে বিছানায় শুয়ে পড়েন, চোখটা লেগে এসেছিল, হঠাৎ আবার বাসায় চিৎকার চেঁচামেচি শুনে তিনি বের হয়ে এসে শোনেন লুলুকে নাকি পাওয়া গিয়েছে,
লুলু নাকি কোথা হতে নিজের থেকেই চলে এসেছে, গিয়ে দেখেন লুলু চুপচাপ মর্জিনা বেগমের কোলে গুটিসুটি মেরে বসে আছে..
যে লুলু তার কাছে চোখের বিষ ছিল আজ সেই লুলুকে দেখেই তার অনেক আনন্দ হচ্ছে,
কোলে নিতে ইচ্ছা করছে,
কাছে না পাওয়া সন্তানদের প্রতি যে স্নেহ, ভালবাসা ও আদর তিনি মনের মধ্যে পুষে রেখেছিলেন মনের অজান্তে কখন যে লুলু সেটা নিয়ে নিয়েছে তা তিনি বুঝতেই পারেন নি..
কি আশ্চর্য! শফিক সাহেবের চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে… এ কান্না কি ভালবাসার কান্না?
পাঠক, আপনার চোখ দিয়েও কি পানি পড়ছে ?
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:০৬
সাইফুল শাকিল বলেছেন: লুলে লুলায়িত হয়ে গেলাম
