![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি আছি ..আবার আমি নেই
একটা গল্প দিয়ে শুরু করি । এক রাজার হটাত শখ হলো নিজের ছবি আঁকাবে । রাজ্যের সমস্ত চিত্রশিল্পীদের খবর দিয়ে আনানো হল । বলা হল যে সবচেয়ে সুন্দর এবং নিখুঁত ছবি আকবে তাকে পুরস্কৃত করা হবে । তবে যদি ছবি দেখতে সুন্দর না হয় তাহলে তৎক্ষণাৎ মৃত্যুদণ্ড । কেউ রাজার ছবি আঁকতে রাজি হল না । কারন রাজার এক পা এবং এক চোখ ছিল না এবং তাকে দেখতে ভয়ঙ্কর লাগত ! হটাত ভীরের মধ্য থেকে অল্প বয়সী এক ছেলে সামনে এসে দাঁড়ালো । সে রাজার ছবি আঁকতে চায় । ছবি আঁকা শেষ হল । রাজা ভীষণ খুশি হয়ে তাকে পুরস্কৃত করলেন । সবাই খুব অবাক ।এটা কিভাবে সম্ভব ! দেখা গেলো ছেলেটি একেছে রাজা একটি কাটা গাছের গুঁড়ির উপর এক হাটু ভাজ করে এক চোখ বন্ধ করে হরিন শিকার করছে । ছবি টি দেখে বুঝাই যাচ্ছে না রাজা অন্ধ এবং খোঁড়া ।
এটাই হচ্ছে দৃষ্টি ভঙ্গির তফাৎ । আপনি একটা নির্দিষ্ট বিষয় কে কিভাবে দেখছেন তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করে । একজন optimistic গ্লাসে অর্ধেক পানি দেখে বলবে গ্লাস্ টি অর্ধেক ভরা । ঠিক একই ভাবে একজন pessimistic বলবে গ্লাস টি অর্ধেক খালি । আর একজন opportunist বলবে গ্লাস টি আরও অর্ধেক ভরার সুযোগ আছে । দৃষ্টি ভঙ্গিই একজন কে আরেকজন থেকে আলাদা করে । সফলতা- ব্যর্থতা , আশা - হতাশার মধ্যে সূক্ষ্ম পার্থক্যকারি সরলরেখাটাই হচ্ছে দৃষ্টি ভঙ্গি ।
আমার দিনের বেশির ভাগ সময় কাটে ফেসবুকে নিউজ ফিড ঘেঁটে এবং চেনা অচেনা মানুষের সাথে কথা বলে । এতে অদ্ভুত কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে । হিউম্যান সাইকোলজি নিয়ে যাদের আগ্রহ আছে তাদের উচিৎ ফ্রয়েডের বই সাইডে রেখে মার্ক জুকারবারগের এই নীল সাদা বই ঘেঁটে বেরানো ! কি অদ্ভুত মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি । একই বিষয় নিয়ে হাজার মতবাদ - মতবিভেদ ! দর্শন তত্ত্ব জানার জন্য এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অতুলনীয় । প্রত্যেক টা মানুষ ই দার্শনিক । জীবন নিয়ে , সম্পর্ক নিয়ে , আবেগ-অনুভুতি নিয়ে তাদের নিজস্ব দর্শন আছে । নিজস্ব দৃষ্টি ভঙ্গি আছে । প্লেটো - সক্রেটিস যুগে ফেসবুক থাকলে কি হতো জানতে ইচ্ছা করে ।
মানুষের দৃষ্টি ভঙ্গি এবং বিশ্বাসের খুব সাধারণ কিন্তু অকাট্য প্রমান পাওয়া যায় ছোট্ট একটা প্রশ্ন থেকে - " আপনি কেমন আছেন??? " .
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই প্রশ্নের ঠোঁটের কোনে বিরক্তির চিহ্ন একে আমরা জবাব দেই "ভালো নেই" কিংবা দীর্ঘশ্বাস মেশানো কন্ঠে বলি " এই আছি আর কি " । " ভালো নেই " -কথাটি চিন্তা ভাবনা ছাড়া খুব সহজেই আমরা বলে ফেলি । বেশিরভাগ মানুষের টাইমলাইন ঘাটলে দেখা যাবে সপ্তাহে অন্তত ২-৩ বার তারা এই ধরনের মন্তব্য করে । আমরা ভালো থাকি না । কারন আমার প্রেমিক কিংবা প্রেমিকা আমার জন্মদিন ভুলে গেছে ,আমার পোষা বিড়াল অসুস্থ , আমি ফ্যানের নিচে বসে ঘামছি , রাস্তার জ্যামে বসে আছি ,আমার পছন্দ মতো রান্না হয় নি , বাবা-মা পড়াশোনার জন্য "ঘ্যান ঘ্যান" করে , প্রিয় নায়ক কে "অমুক" সেক্স বম্বের সাথে দেখা গিয়েছে - এমন হাজার-লক্ষ কারনে আমরা ভালো থাকি না । ফেসবুকের ফিডে " মাথা ব্যাথায় মরে যাচ্ছি" , " পরিক্ষা জঘন্য হয়েছে বেঁচে থেকে কি হবে ", " সালেকা আমাকে ছেড়ে পল্টু কে ভালবেসেছে হে জীবন তুমি এতো নিষ্ঠুর কেনো"- এই ধরনের স্ট্যাটাস ভেসে বেড়ায় । আমরা খুব সহজেই মরে যাই , খুব সহজেই আমাদের জীবন নিষ্ঠুর হয়ে যায়।
ফার্মগেটে আনন্দ সিনেমা হলের সামনে এক মহিলা তার পূর্ণ বয়স্ক প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। ছেলের নাকের সর্দি - মুখের লালা তে তার ঘাড় মাখা মাখি হয় । সে রোজ সকালে ছেলে কে কাধে নিয়ে খাদ্যের সন্ধানে মানুষের কাছে ঘুরে বেড়ায় যাকে আমরা বলি ভিক্ষা করা । তিন বেলা খাবার জোটানোর সাথে সে মানুষের গালি , ঘৃণা , অবজ্ঞা এসব ও মুঠো ভরে যোগায় । আমাদের মতো তিনিও "ভালো নেই"।
ফার্মগেটের আরেক দিকে রোকেয়া পার্কের কাছে কোনও এক মন খারাপ করা বিকালে ২-৩ বছরের এক শিশু কে ফুটপাথে্র ধুলা বালিতে গড়াগড়ি খেতে দেখেছিলাম। শিশুটির পা লোহার শেকল দিয়ে ফুটপাথের গ্রিলের সাথে বাঁধা । মা সম্ভবত কাজে গিয়েছে । জীর্ণ ময়লা সেন্ডু গেঞ্জি পড়া সেই শিশু কিংবা বুকের মানিক কে শেকল দিয়ে বেধে কাজে যাওয়া সেই মা - দুই জন ই আমাদের মতো "ভালো নেই" ।
বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ রাত পোহালে চোখ ডলতে ডলতে ভাতের সন্ধানে তাদের দিন শুরু করে । তাদের মাথা জুড়ে শুধু থাকে শুভ্র সাদা ভাতের ছবি । মাছ মাংস কিংবা কোনও লোভনীয় তরকারি না , শুধু সাদা ভাত , কাচামরিচ এবং ডাল। হ্যাঁ আমি সেই ভাতের কথা ই বলছি আমার- আপনার ফ্রিজে যে ভাত অযত্নে অবহেলায় পচে , মন মতো তরকারি না হলে যে ভাত আমরা খেতে চাই না , মাঝে মধ্যে আঠার অভাবে যে ভাত দিয়ে আমরা কাগজ লাগাই । পহেলা বৈশাখে পানি দিয়ে পান্তা বানিয়ে বাঙালি সাজি , সেই ভাত । ভাতের কষ্ট কি জানেন ? করেছেন কখনও ? শাহবাগ থেকে টি এস সি যেতে ফুটপাথে সস্পেনে ভরে ভাত বেচা হয় । রিস্কাচালক, ভ্যান চালক রা শ্রান্ত-পরিশ্রান্ত দেহে সেই সাদা ভাত লবন-পিয়াজ-মরিচ-ডাল দিয়ে মেখে বড় বড় লোকমাতে যখন খায় তখন তাদের দেখলে বোঝা যায় ভাতের কষ্ট কি । তারাও আমাদের মতই "ভাল নেই" ।
কখনও হসপিটাল ঘুরে দেখেছেন ? সাদা বেডে শুয়ে থাকা কিছু মানুষ মরে গিয়ে বাঁচতে চায় । তারা বাঁচার জন্য প্রার্থনা করে না । মরার জন্য করে । তারাও ভালো থাকে না । আমাদের মতই তাদের জিজ্ঞেস করলে উত্তর আসে -"ভালো নেই "
কোনও এক সকালে কান্নার শব্দে আমার ঘুম ভাঙ্গে । দেখি আমার পাশের বেডে শুয়ে থাকা মানুষ টা নড়াচড়া করছে না । লোকটির যে ক্যান্সার হয়েছে পুরা বিশ্বে ১০০ জনের সেই ক্যান্সার হয়নি । দুরারোগ্য সেই ক্যান্সারের ওষুধ ই এখন ও আবিষ্কার হয় নি । আগের রাতে তার ছোট ছেলের সাথে আমার ঘণ্টা খানেক আড্ডা হয়েছে । আমি তাকে বাংলাদেশের ব্যান্ডের গান দিয়েছি । ছেলেটার স্বপ্ন ডাক্তার হবে । যে বয়সে আমরা প্রেমিক প্রেমিকার সাথে ঝগড়া করে স্ট্যাটাস দেই " লাইফ সাকজ/লাইফ ফাকজ " সেই বয়সে সে বাবা কে নিয়ে হসপিটালে দৌড়ায় আর চোখে স্বপ্ন রাখে ডাক্তার হয়ে এই ক্যান্সারের চিকিৎসা করার । বাবার নড়াচড়া থেমে যাওয়ার মুহূর্তে সেই ছেলে টাও ভালো ছিলো না,আমাদের মতই ।
দিল্লির সেই ধর্ষিতা মেয়েটিও ভালো ছিলো না যখন ৫ জন হিংস্র পশু তাকে ছিরে খুঁড়ে খাচ্ছিলো । তার যোনি ক্ষত বিক্ষত করে ক্ষুদ্রান্তটি যে মুহূর্তে টেনে বের করে আনে সেই মুহুরতেও সে ভালো ছিলো না , যখন তাকে অত্যাচার শেষে বাস থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় তখন সে কিংবা তার সাথের সঙ্গি টি ভালো ছিলো না । মেয়েটির পরিবার মেয়েটির অবস্থা দেখে ভালো ছিল না । আমাদের মতই তারা ভালো ছিল না।
সিরিয়াতে বন্দুকের গুলি খাওয়া ছোট্ট শিশু টি মৃত্যুর আগে বলেছিল - ' ঈশ্বর কে আমি সব বলে দিবো ।" তার ছোট্ট কোমল মনে প্রশ্ন ছিল তার এতো কষ্টের কারন কি ? কেনো তাকে এভাবে মরতে হবে। সে তো কারো ক্ষতি করে নি । মৃত্যু যন্ত্রণা থেকে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে না পাওয়ার কষ্টটাই তার কাছে সম্ভবত বেশি ছিল । ছেলেটিও ভালো ছিল না , আমাদের মতই ।
আমরা খুব সহজেই বলে ফেলি আমরা ভালো নেই । জানি না "ভালো নেই" কথা টা বলার স্পর্ধা আমরা কোথায় পাই । অনেকেই ভালো নেই বলে কারন তাদের বলতে ভালো লাগে ! এর পর যখন বলবেন ভালো নেই , বলার আগে অন্তত একটা বার উপরের মানুষ গুলোর স্থানে নিজেকে বসিয়ে দেখবেন ।
(চলবে)
২৯ শে মে, ২০১৪ দুপুর ২:২৯
স্কিজোফ্রেনিয়াক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া . . সাথে থাকবেন আশা করি
২| ২৯ শে মে, ২০১৪ সকাল ১১:২২
আমি নী বলেছেন: অসাধারণ। মন ছুঁয়ে গেল।
২৯ শে মে, ২০১৪ দুপুর ২:৩১
স্কিজোফ্রেনিয়াক বলেছেন: ধন্যবাদ .।
৩| ২৯ শে মে, ২০১৪ দুপুর ১২:৩১
রাজীব নুর বলেছেন: বেশি বয়সের পুরুষ মানুষ কম বয়সী মেয়ে বিয়ে করলে যেসব সমস্যায় পড়ে, তার একটা হলো বউয়ের আবদার রক্ষা করা।
২৯ শে মে, ২০১৪ দুপুর ২:৩৩
স্কিজোফ্রেনিয়াক বলেছেন: সব সময়েই যে এই নিয়ম অনুসারিত হয় তা কিন্তু না ! মাঝে মধ্যে কিন্তু এর উল্টো টিও ঘটে !!! আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
২৯ শে মে, ২০১৪ রাত ২:০৮
আতাউল বারী বলেছেন: অসাধারন লেখা। পড়ে ভালো লাগলো