![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
[ডিসক্লেমার: বিজ্ঞান আর কল্পকাহিনীর মিশেলে বিজ্ঞানের উপস্থাপন।]
১ম শ্রেণির অসম্ভাব্যতা > ১. বল ক্ষেত্র অধ্যায়ের বাকি অংশ
মহাকাশ ভ্রমণ ও শিল্পে প্লাজমা জানালার বহু ব্যবহার হতে পারে। শিল্প কারখানায় অনেক সময়ই বায়ুশূন্য স্থানে শুষ্ক খোদাইকাজ বা সুক্ষ্ম নকশার কাজ করার প্রয়োজন হয়। এসব ক্ষেত্রে বায়ুশূন্য স্থান তৈরি করে কাজ করা বেশ ব্যয়বহুল। কিন্তু প্লাজমা জানালা প্রযুক্তির মাধ্যমে কেবল এক বোতামের চাপেই এমন পরিবেশ তৈরি সম্ভব।
কিন্তু একে কি অভেদ্য দেয়াল হিসেবে ব্যবহার করা যাবে? এটি কি কামানের গোলার আঘাত ফিরিয়ে দিতে পারবে? ভবিষ্যতে এমন শক্তি ও উত্তাপের প্লাজমা জানালা হবে যা এমন গোলাকেও ধ্বংস করতে পারবে। তবে বিজ্ঞান কল্পকাহিনীতে দেখা বল ক্ষেত্র তৈরি করতে হলে কয়েক স্তরে কয়েক ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে। প্রতিটি স্তর এককভাবে আঘাত মোকাবিলা করার মত শক্তিশালী না হলেও একত্রে কাজ করে সেগুলি অনেক বড় আঘাত ঠেকাতে পারবে।
বাইরের স্তরটি হতে পারে সুপারচার্জ করা একটি প্লাজমা জানালা যা ধাতুকে গলিয়ে দিবে। পরের স্তরটি হতে পারে উচ্চ শক্তির লেজার বীমের পর্দা। হাজার হাজার কোণাকুণি লেজার বীমের জাল ভেদ করে গোলা যাওয়ার সময় উত্তপ্ত হয়ে বাতাসে মিলিয়ে যাবে। পরের অধ্যায়ে আমি লেজার সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করব।
এই লেজার পর্দার পিছনে আবার ‘কার্বন ন্যানোটিউবের’ এক জাল লাগবে। কার্বন ন্যানোটিউব হলো এক অণূ পরিমান মোটা কার্বন অণূর তৈরি টিউব যা স্টীলের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। বর্তমানে আমরা মাত্র ১৫ মিলিমিটার দৈর্ঘ্যের কার্বন ন্যানোটিউব তৈরি করতে পারি কিন্তু একসময় এটি যেকোনো দৈর্ঘ্যের তৈরি করা যাবে। এমন একটি জাল হবে অদৃশ্য কারণ প্রতিটি ন্যানোটিউব মাত্র অনূ পরিমান জায়গা দখল করে।
তাহলে, প্লাজমা জানালা, লেজার পর্দা ও কার্বন ন্যানোটিউবের জাল দিয়ে একটি অদৃশ্য দেয়াল তৈরি করা সম্ভব হবে। এটি ভেদ করা প্রায় অসম্ভব হবে। তবে এতেও ঠিক বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর মত কাজ হবে না। কারণ এটি স্বচ্ছ হওয়ায় লেজার বীম ঠেকাতে পারবে না। লেজার কামানের যুদ্ধে এই তিন স্তরের দেয়াল কাজে আসবে না। লেজার বীম ঠেকানোর জন্য আমাদেরকে উন্নত ‘ফটোক্রোমাটিক’ ব্যবহার করতে হবে। অনেক সানগ্লাসে যে কাঁচ থাকে যা রোদে গেলে কালো হয়ে যায় তেমন কিছু। ফটোক্রোমাটিকের দুটি অবস্থা আছে – সাধারণ অবস্থায় এটি স্বচ্ছ কিন্তু আল্ট্রাভায়োলেট রেডিয়েশনে এটি অস্বচ্ছ হয়ে যায়। একদিন আমরা ন্যানোপ্রযুক্তি ব্যবহার করে এমন কার্বন ন্যানোটিউব তৈরি করতে পারব যা লেজার আলোর সামনে এলে এর অপটিকাল বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করতে পারবে। তখন লেজার কামানের গোলাও ঠেকানো যাবে। তবে বর্তমানে লেজার ঠেকানোর মত ফটোক্রোমাটিক আমাদের কাছে নেই।
চুম্বকের সাহায্যে শূন্যে উত্তোলন
বিজ্ঞান কল্পকাহিনীতে রে-গানকে ফিরিয়ে দেয়া ছাড়াও বল ক্ষেত্রের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে – সেটি হলো মাধ্যাকর্ষন বলের বিরুদ্ধে কাজ করা। ব্যাক টু টি ফিউচার সিমেনায় আমরা দেখি, মাইকেল জে. ফক্স বাতাসে ভাসমান একটি হোভার বোর্ডে করে রাস্তায় যাতায়াত করছে। পদার্থবিদ্যার বর্তমান নীতির আলোকে এমন অ্যান্টিগ্রাভিটি ডিভাইস তৈরি সম্ভব না। তবে ভবিষ্যতে চৌম্বকীয় ভাবে প্রভাবিত হোভার বোর্ড বা হোভার কার রাস্তায় চলবে। ভবিষ্যতে যদি “কক্ষ তাপমাত্রার সুপারকন্ডাকটর” বাস্তবে পরিণত হয়, তাহলে চৌম্বকীয় বল ক্ষেত্র ব্যবহার করে বস্তুকে শূন্যে ভাসানো যাবে।
দুটি চুম্বক দন্ডের উত্তর মেরুকে কাছাকাছি আনলে তারা একে অন্যকে বিকর্ষণ করে। এই সাধারণ নীতি ব্যবহার করে বেশ কিছু দেশ এখন ম্যাগনেটিক লেভিটেশন ট্রেন (ম্যাগলেভ ট্রেন) চালাচ্ছে। ট্রেনগুলি রেললাইন থেকে ভেসে থাকার ফলে বাতাসের কুশনে ভাসতে ভাসতে কোনো ঘর্ষণ ছাড়াই অবম্ভব দ্রুত গতিতে চলতে পারে। ১৯৮৪ সালে বিশ্বের প্রথম অটোমেটেড ম্যাগলেভ ট্রেন যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বার্মিংহাম রেলস্টেশন পর্যন্ত চালু হয়। জার্মানি, জাপান ও কোরিয়াতেও এই ট্রেন আছে। তবে অতি উচ্চ গতির ম্যাগলেভ ট্রেন সাংহাইয়ে চালু হয় ঘন্টায় ২৬৮ মাইল গতিতে চলার জন্য। এছাড়া, জাপানি ম্যাগলেভ ট্রেন ঘন্টায় ৩৬২ মাইল গতিতে চলতে সক্ষম।
কিন্তু এ ধরনের ম্যাগলেভ ডিভাইস অতি ব্যয়বহুল। কার্যদক্ষতা বাড়ানোর একটি উপায় হলো সুপারকন্ডাকটর ব্যবহার করে সব বৈদ্যুতিক বাধা নষ্ট করা। ১৯১১ সালে হেইক ওনস সুপারকন্ডাকটিভিটি আবিষ্কার করেন। কিছু কিছু বস্তুকে পরম তাপমাত্রার কাছাকাছি নিয়ে গেলে তা সব বৈদ্যুতিক বাধা হারায়। কোনো ধাতুকে ঠান্ডা করলে ধীরে ধীরে এই বাধা কমতে থাকে কারণ তাপমাত্রা কমালে অণূর ইলেকট্রনের কম্পন কমে আসে ও বিদ্যুত কম বাধায় চলাচল করে। ওনস দেখেছিলেন যে কিছু কিছু বস্তুর ক্ষেত্রে এই বাধা শূন্যে নেমে আসে।
পদার্থবিদেরা তাৎক্ষণিকভাবে এই পরীক্ষার ফলাফলের উপযোগিতা কতটা হতে পারে তা অনুধাবন করলেন। কারণ এই বাধার জন্য লম্বা দূরত্বে বিদ্যুৎ পাঠানোর সময় বৈদ্যুতিক তারে যথেষ্ট শক্তি খরচ হয়ে যায়। এই বাধা পুরোপুরি দূর করা সম্ভব হলে বিদ্যুৎকে বলতে গেলে বিনা খরচে দূরে পাঠানো যাবে। আসলে বাধা ছাড়াই যদি বিদ্যুৎকে একটি তারের কয়েলে আবর্তন করানো যায়, তাহলে লক্ষ লক্ষ বছর ধরে বিশাল পরিমান বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হতে থাকবে কোনো বাড়তি প্রচেষ্টা ছাড়াই। এমন বৈদ্যুতিক প্রবাহের মাধ্যমে বিশাল শক্তিধর চম্বুক তৈরি করে প্রচন্ড ভারি বস্তু উত্তোলন করা যাবে।
এত কিছুর সম্ভাবনার পরেও সুপারকন্ডাকটরের সমস্যাটি হলো, বিশাল আকারের চুম্বককে অতিশীতল তরলে ডুবিয়ে রাখার পদ্ধতিটি অতি ব্যয়বহুল। তরলকে অতিশীতল করার জন্য যে আকারের রেফ্রিজারেশন প্ল্যান্ট দরকার তার খরচের কথা চিন্তা করেই এমন প্রকল্প হাত নেয়া সম্ভব হয় না।
কিন্তু, আমরা তো ভাবতেই পারি, একদিন বিজ্ঞানীরা সাধারণ তাপমাত্রাতেই সুপারকন্ডাকটর তৈরি করতে পারবে। এটি পদার্থবিদদের কাছে পবিত্র পানপাত্র খূঁজে পাওয়ার মত বিষয় হবে। সাধারণ তাপামাত্রার সুপারকন্ডাকটর তৈরি হলে আরেক শিল্প বিপ্লব ঘটবে। স্টার ওয়ার্সে দেখা উড়ন্ত গাড়ি তখন সাধারণ মানুষ ব্যবহার করবে। তাত্ত্বিকভাবে বলা যায়, এমন সুপারকন্ডাকটিভ বেল্ট কোমরে জড়িয়ে আমরা বাতাসে ভাসতে পারব। সুপারম্যানের মত উড়তে পারব। ১৯৭০ এর ল্যারি নিভেনের রিংওয়ার্ল্ড সিরিজের উপন্যাসগুলিতে এ ধরনের সুপারকন্ডাকটরের ব্যবহার দেখতে পাওয়া যায়।
এমন সুপারকন্ডাকটরের খোঁজ করাটা অনেকটা খড়ের গাঁদায় সূই খোঁজার মত। তবুও বিজ্ঞানীরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বেশ কয়েক দশক থেকেই। ১৯৮৬ সালে ‘উচ্চ তাপমাত্রার সুপারকন্ডাকটর’ এর খোঁজ মিললে চারিদিকে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এটি ছিল এমন সুপারকন্ডাকটর যা পরম তাপমাত্রার ৮০ ডিগ্রী আগেই এই বৈশিষ্ট্য পায়। এরপর বিজ্ঞানীদের মধ্যে যেন এক প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এর চেয়ে বেশী তাপমাত্রার সুপারকন্ডাকটরের খোঁজ করা চলতে থাকে। কিন্তু তেমন অগ্রগতি না হওয়ায় একসময় এই খোঁজে ভাটা পড়ে।
বর্তমানে সবচে বেশী তাপমাত্রার সুপারকন্ডাকটির নাম হলো: মার্কারি থেলিয়াম বেরিয়াম ক্যালসিয়াম কপার অক্সাইড যা ১৩৮ কেলভিন (-১৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস) তাপমাত্রায় সুপারকন্ডাকটরে পরিণত হয়। তবে সাধারণ কক্ষ তাপমাত্রার থেকে আমরা এখনো দূরে আছি। তবে ১৩৮ কেলভিন কিন্তু খুব কম সাফল্য নয়। নাইট্রোজেন ৭৭ কেলভিন তাপমাত্রায় তরল হয় এবং এটি সাধারণ দুধ পেতে যে খরচ হয় তেমন খরচ পড়ে। তাই তরল নাইট্রোজেন ব্যবহার করে আমরা এসব উচ্চ তাপমাত্রার সুপারকন্ডাকটরকে শীতল করতে পারব। (তবে সাধারণ তাপমাত্রার সুপারকন্ডাকটর খুঁজে পেলে তার আর শীতল হওয়ার দরকার হবে না।)
বিব্রতকর কথাটি হলো কি, বর্তমানে পদার্থবিদেরা এসব উচ্চ তাপমাত্রার সুপারকন্ডাকটরের বৈশিষ্ট্যকে ব্যাখ্যা করার কোনো নীতি জানেন না। যিনি এর ব্যাখ্যা দিতে পারবেন তিনি অবশ্যই নোবেল পুরস্কার পাবেন । (এসব সুপারকন্ডকটর নির্দিষ্ট স্তরে সাজানো অণুর তৈরি। পদার্থবিদেরা বলেন, সিরামিকের মত এমন স্তরায়ন সহজে নির্দিষ্ট স্তরের ভেতরে বিদ্যুতের চলাচল করতে দেয়। কিন্তু কিভাবে এটি ঘটে তা এখনো রহস্য।)সাধারণ তাপমাত্রার সুপারকন্ডাকটর যেদিন আবিষ্কার হবে সেদিন পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের চেয়ে লক্ষ গুন শক্তিশালী চুম্বক তৈরি হবে।
সুপারকন্ডাকটিভিটির একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো: মেইসনার প্রভাব। সুপারকন্ডাকটরের উপর কোনো চুম্বক ধরলে সেটি শূন্যে ভাসতে থাকে। এমন হওয়ার কারণ হলো, উপরের চুম্বকটি সুপারকন্ডাকটরের ভিতর নিজের একটি প্রতিবিম্ব তৈরি করে এবং এক অপরকে বিকর্ষণ করে। এভাবেই শূন্যে উত্তোলনের কাজটি করা সম্ভব। এই মেইসনার প্রভাবের ভবিষ্যত কি হেতে পারে? কল্পনা করুন: হাইওয়েগুলি এমন সুপারকন্ডাকটিভ সিরামকের তৈরি আর আপনার বেল্টে কিংবা গলার টাইয়ে বা লকেটে চুম্বক ঝুলছে। আপনি বাধা ছাড়াই ভেসে ভেসে আপনার গন্তব্যে যাচ্ছেন।
মেইসনার প্রভাব কেবল চৌম্বকীয় বস্তুতেই প্রভাব ফেলে, একথা ঠিক। তবে সুপারকন্ডাকটিভ চুম্বক ব্যবহার করে অ-চৌম্বকীয় বস্তু অর্থাৎ প্যারাম্যাগনেট ও ডায়াম্যাগনেটকেও শূন্যে ভাসানো যায়। এসব বস্তুর নিজস্ব চৌম্বকীয় বৈশিষ্ট্য না থাকলেও বাহিরে থাকা চুম্বকের মাধ্যমে এদের ভেতর চৌম্বকীয় বৈশিষ্ট্য সৃষ্টি করা যায়। প্যারাম্যাগনেট বহিস্থ চুম্বকের প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং ডায়াম্যাগনেট বহিস্থ চুম্বক থেকে বিকর্ষিত হয়।
পানি একটি ডায়াম্যাগনেট। জীবন্ত সবকিছুতেই পানি আছে আর তাই এদেরকে শূন্যে ভাসানো সম্ভব। তবে এর জন্য প্রয়োজন ১৫ টেসলা (পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের ৩০,০০০ গুন) শক্তিসম্পন্ন চৌম্বক ক্ষেত্রেরে সাহায্যে এটি করা সম্ভব। বিজ্ঞানীরা পরীক্ষাগারে ব্যঙের মত ছোট প্রাণিকে শূন্যে ভাসিয়েছেন। তবে সাধারণ তাপমাত্রার সুপারকন্ডাকটর পাওয়া গেলে হাতিকেও শূন্যে ভাসানো যাবে।
শেষমেষ বলা যায়, বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর বল ক্ষেত্র আমাদের পরিচিত চার বল ক্ষেত্রের সাথে মেলে না। কিন্তু এরপরও তেমন কিছু সম্ভব। কয়েক স্তরে প্লাজমা জানালা, লেজার পর্দা, কার্বন ন্যানোটিউব আর ফটোক্রোম্যাটিকের ব্যবহারের মাধ্যমে বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর অভেদ্য ঢাল তৈরি সম্ভব হবে। তবে এর জন্য আমাদেরকে কয়েক শতাব্দি বা এমনকি শতক অপেক্ষা করতে হবে। আবার, সাধারণ তাপমাত্রার সুপারকন্ডাকটরের খোঁজ পেলে সিনেমার মতই উড়ন্ত গাড়ি, ট্রেন ব্যবহার করতে পারব।
[পরবর্তী অধ্যায়: ১ম শ্রেণির অসম্ভাব্যতা: ২. অদৃশ্য হওয়া]
পূর্বের পর্বঃ পর্ব চার: Click This Link
২| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১:৪৫
নতুন বলেছেন: কাকুরে ভালা পাই। তার ডকুমেন্টরি দেখি। তার বলার স্টাইটা ভাল লাগে।
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:১৫
শতদ্রু একটি নদী... বলেছেন: এই পর্ব চোখ এড়িয়ে গিয়েছিলো। এখন পড়লাম। ++