নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফেসবুকে আমি - রিয়াদুল রিয়াদ (শেষ রাতের আঁধার)

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার )

কিছু মানুষ অন্য মানুষকে মুগ্ধ করার অসীম ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়। আর কিছু মানুষের ভিতর এই ক্ষমতা কখনই আসে না। আমি দ্বিতীয় দলের মানুষ। কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু কখনই করতে পারি না। কেউ অনেক সুন্দর গান গায়, আমি শুধু শুনে যাই। কেউ অনেক সুন্দর নাচে, আমি শুধু হাত তালি দিয়ে যাই। কেউ অনেক সুন্দর লেখে, আমি শুধু ভেবে যাই, কী করে এত ভালো লেখে কেউ? আমিও লিখি। তবে তা কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু না। আমার লেখায় আমার ভালোবাসা ছাড়া কিছুই নেই। পড়াশুনা শেষ, বুটেক্স থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বের হয়ে চাকরি, বিয়ে, পেশা পরিবর্তন সব হয়েছে। লেখালেখির ধারাবাহিকতায় চারখানা উপন্যাস অমর একুশে বইমেলায় বেরিয়েছে। টুকরো ছায়া টুকরো মায়া (২০১৫) – সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । একা আলো বাঁকা বিষাদ (২০১৬) – সামাজিক উপন্যাস । মধ্য বৃত্ত (২০১৮) – ডিটেকটিভ সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । অভিসন্ধি (২০২০) – ক্রাইম থ্রিলার । দেশটাকে ভালোবাসি অনেক। অনেক মায়া কাজ করে। মাঝে মাঝে ভাবি, সব বদলে দিতে পারতাম। স্বপ্নের মত না, বাস্তবের মত একটা দেশ গড়তে পারতাম …………………………

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) › বিস্তারিত পোস্টঃ

ক্রাইম থ্রিলার: অভিসন্ধি - ৩য় পর্ব

১১ ই জুন, ২০২৫ বিকাল ৩:২৭

পর্ব ১ পর্ব ২
জিম্মি ঘটনার ছয়দিন পর
কায়েস বসে আছে রক্তিমের পাশে। আগের চেয়ে এখন অবস্থা অনেকটাই ভালো রক্তিমের। টুকটাক কথা বলছে রক্তিম। কায়েস ছোট করে একটা কাশি দিয়ে বলে, “আপনার সাথে কথা বলা যাবে কিছুক্ষণ?”
রক্তিম শোয়া অবস্থা থেকে উঠতে উঠতে বলে, “জি, বলেন।”
“না না, উঠতে হবে না আপনার। শুয়ে থাকুন।”
শুয়ে পড়ে আবার রক্তিম। কায়েস বলে যায়, “আমি কিছু ছোটখাটো প্রশ্ন করব। আপনি চাপ নিবেন না, যতটা পারেন চাপমুক্ত হয়ে উত্তর দিবেন।”
“আচ্ছা।”
“আপনার নাম?”
“মেজবাউর রহমান রক্তিম।”
“বয়স।”
“সাতাশ।”
“কোথায় থাকেন?”
“আজিমপুর।”
“কী করেন?”
“কিছুই করিনা আপাতত। বেকার। চাকরি খুঁজি।”
“আচ্ছা, পড়াশুনা করেছেন কোথা থেকে?”
“স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, সিএসইতে।”
“বিয়ে করেছেন?”
“না।”
“বাসায় কে কে আছে?”
“ঢাকা আমি একাই থাকি। বাবা মা কুষ্টিয়া থাকে।”
“আচ্ছা। বাবা মা গ্রামেই থাকেন? ঢাকায় আসেন না?”
“বাবার কাঠের ব্যবসা। ওগুলো নিয়েই ব্যস্ত থাকে।”

কায়েস টেবিলের উপর রাখা বোতল খুলে দুই ঢোক পানি খেয়ে নিল। রক্তিম মনোযোগ সহকারে সে পানি খাবার দৃশ্য দেখল। রক্তিম বলে, “আপনি ডিটেকটিভ না পুলিশ?”
কায়েস আলতো করে হাসি দিল, “আমি পুলিশ ডিপার্টমেন্টেরই, তবে আপাতত ডিটেকটিভের কাজ করছি।”
“আপনি নো কান্ট্রি ফর ওল্ড মেন মুভিটা দেখেছেন?”
কায়েস প্রশ্ন শুনে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেল।
“না। কেনো বলুন তো?”
“সিনেমাটা আমার অনেক প্রিয়। ওখানে এক দুর্ধর্ষ খুনি কয়েন টস করে ভাগ্য নির্ধারণ করত আপনার সাথে কী ঘটবে তা। আপনি আমাকে কী জিজ্ঞেস করবেন আমি জানি। আমি ধরেন সেরকম কোনো টসে জিতে গিয়েছি।”
কায়েস চোখ ছোট ছোট করে তাকায় রক্তিমের দিকে। রক্তিমের কথার কিছুই মাথায় ঢুকছে না।
“আপনার কথা আসলে কিছুই বুঝতে পারছি না,” কায়েস বলে। “আমি আপনাকে কী জিজ্ঞেস করব?”
রক্তিম অন্য দিকে তাকিয়ে বলে, “এই যে যাদের উদ্ধার করেছেন আপনারা, সবার শরীরে ক্ষত, আমার শরীরে কোনো ক্ষত নেই। আমি কতদিন ওখানে আটকা ছিলাম, কে আমাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল, কেনো ধরে নিয়ে গিয়েছিল?”
কায়েস ঢক ঢক করে পুরো পানি শেষ করে ফেলে, “হ্যাঁ, আপনার মনে যা যা এসেছে, আমার মনেও সেসব প্রশ্ন আসাটা কি স্বাভাবিক নয়?”
রক্তিম বড় করে একটা শ্বাস নিয়ে বলে, “অবশ্যই স্বাভাবিক। আমি একটা করে উত্তর দেই না-কি?”
কায়েস কিছু বলে না। চুপ করে রক্তিমের দিকে তাকিয়ে থাকে।
রক্তিম বলে যায়, “প্রথম কথা, আমার সাথেও আমার ছিনতাইকারী ঠিক ওভাবে টস টস খেলেছে। একটা কয়েন দিয়ে টস করে আমাকে হেড অথবা টেইল ডাকতে বলেছে। আমি ডেকেছি, প্রতিবার আমি জিতেছি, তাই একবারও আমার শরীরে আঘাত পড়েনি। তবে প্রতিটা মুহূর্ত আমি ভয়ে থাকতাম, এই বুঝি আমি টসে হেরে গেলাম।”
কায়েস এক দৃষ্টিতে রক্তিমের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে। জানতে চায়, “আপনি প্রতিবার টসে জিতলেন?”
“হ্যাঁ। তবে আমাকে একবারও কয়েন দেখানো হয়নি। প্রতিবার টস করে, নিজেই কয়েন দেখে চলে যেত ও।”
“ও টা কে?”
“জানি না। হয়ত আমি ওকে চিনি।”
“কে সে?”

রক্তিম উঠে বসে। বসে বসে বলে, “আমার প্রচণ্ড সিনেমা বানাবার শখ। এখানে ওখানে ঘুরে বেড়াই, সিনেমা বানানো শুরু করে কীভাবে আমি জানি না। তাও ছুটে বেড়াই।”
কায়েস কিছুটা বিরক্ত হয়। বিরক্তি যদিও চোখে মুখে ফুটিয়ে তোলে না। রক্তিম আবোলতাবোল বকে যাচ্ছে। যা জানতে চাচ্ছে তার উত্তর ঠিকমতো দিচ্ছে না।
“সিনেমা বানাতে দারুণ গল্প লাগে। সিনেমা একটা বানালেই তো হলো না, আলাদা কিছু করতে হবে। ঠিক যেমন লাদ্রি দি বিচিক্লেত্তে।”
কায়েস বিরক্তির চরম মাত্রায় চলে যাচ্ছে, তবে তদন্তকারী পুলিশদের অধৈর্য হলে হয় না। কায়েস বলে, “সর‍্যি কী বললেন? বুঝতে পারিনি।”
“লাদ্রি দি বিচিক্লেত্তে একটা ইতালিয় সিনেমা। ইংলিশে এর নাম বাইসাইকেল থিভস। যে সিনেমা দেখে, সত্যজিৎ রায়ের মনে হয়েছিল, তার সিনেমা বানানো প্রয়োজন, অবশ্যই প্রয়োজন। এই সিনেমা দেখে অনুরাগ ক্যাশাপ পড়ালেখা ছেড়ে চলে এসেছিল মুম্বাই শহরে সিনেমা বানাবে বলে।”
কায়েস কোনো আগ্রহ এই কথাবার্তায় পাচ্ছে না। তবু চুপচাপ বসে থাকে রক্তিমের পাশে।
“আপনি খুব সিনেমা দেখেন, তাই তো?”
“সিনেমা বানাতে চাই, সিনেমা দেখব না?”
“তাও কথা।”
রক্তিম কথার তুবড়ি ছুটায়, “আমাকে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে, একটা সিনেমার নাম বলো তো। আমি সোজা উত্তর দেই, দ্য ইউজুয়াল সাসপেক্টস। পুরো মুভি দেখবেন, খুনি খুঁজবেন, শেষে গিয়ে বোওও। মাথা আপনার নষ্ট হয়ে যাবে। আপনি ডিটেকটিভ মানুষ, আপনার অবশ্যই এই সিনেমা দেখা উচিত। খুনি যদি চোখের সামনে থেকে বোওও হয়ে যায়, পরে কিন্তু আর খুঁজে পাবেন না।”

কায়েস বুঝতে পারছে, ও ঠিকভাবে আগাতে পারছে না। অদিতকে ছাড়া প্রথম কেসেই ভালোভাবে হোঁচট খেতে যাচ্ছে। পাঁচজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে একজনের সাথে গত দুইদিন কথা বলে কোনো তথ্যই বের করতে পারেনি। আরও চারজন বাকি আছে, তাদের সামলাতে কী পোহাতে হবে কে জানে? কায়েস প্রশ্ন করে রক্তিমকে, “এখানে খুনি, খুন এসব আসল কোথা থেকে?”
“খুনি না আসুক, অপরাধী আছে। হয়ত আশেপাশেই আছে, আপনি দেখতে পাচ্ছেন না।”
“আপনার তো অনেক সিনেমা দেখার অভ্যাস, অপরাধী কে তা বোঝবার ক্ষমতাও অনেক। আমাকে তাহলে একটু সাহায্য করুন। আমি খুঁজে বের করি তাকে।”
কিছুটা কড়া গলায় কথা গুলো বলে কায়েস। কথা গুলো বলেই বুঝতে পারছে, অদিতের অল্পতে রেগে যাওয়া স্বভাব কায়েসের মাঝে বাসা বেঁধেছে। কিন্তু অল্পতে রেগে গেলে হবে না। ঠান্ডা মাথায় সব সমাধান করতে হবে। অদিতের সহযোগী হিসাবে কাজ করার সময়টায় ব্যাপারগুলো এতো জটিল ছিল না। অদিতের নিয়ন্ত্রণে সব ছিল, কায়েস শুধু সাথে থেকে টুকটাক সাহায্য করে গিয়েছে। কায়েস নিজেকে একটু নিয়ন্ত্রণ করে বিনয় ভরা স্বরে বলে, “দেখুন, এমন একটা ঘটনা ঘটে গেল। আপনিও বুঝতে পারছেন, ব্যাপারটা এতোটাও সহজ নয়। আপনার দিক থেকে যতোটা সাহায্য আপনি করতে পারেন, প্লিজ করুন সাহায্য।”
রক্তিম উদাস ভঙ্গিতে বলল, “আপনার কেনো মনে হলো, আমি আপনাকে সাহায্য করতে চাচ্ছি না?”
“আমি একবারও বলিনি আপনি সাহায্য করতে চাচ্ছেন না। সাহায্য করতে চাচ্ছেন বলেই তো আমার কথায় সাড়া দিচ্ছেন।”
রক্তিম আবার শুয়ে পড়ল বেডে। কায়েসের দিকে তাকিয়ে বলল, “অবশ্যই আমি সাহায্য করতে চাচ্ছি, সে জন্যই আপনাকে খুঁটিনাটি সব বলছি। এতোদিন সিনেমায় এসব দেখতাম। এখন নিজেই সাক্ষ্য দিচ্ছি। তবে আমার মনে হচ্ছে আপনার জন্য ব্যাপারটা অনেক কঠিন হবে। বলতে পারেন প্রিজনারস কিংবা জোডিয়াক সিনেমার মত পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। আপনি অপরাধী খুঁজে পেলেন, কিন্তু সবার কাছে নির্দোষ, আপনি কিছুই করতে পারলেন না।”
কায়েস শান্ত গলায় বলে, “আমি এসব সিনেমার কোনোটাই দেখিনি। আপনি আমাকে সাহায্য করুন, বাকিটা আমি বুঝব। আমাদের পুলিশ ডিপার্টমেন্ট বুঝবে।”
“তাহলে আসল কথায় আসি আবার। আমার সিনেমার জন্য গল্প দরকার, দারুণ একটা গল্প। আলাদা এক গল্প। আমি কাকতালীয় ভাবে গল্প পেয়ে যাই। আমি সেদিন এক টঙ দোকানে চা সিগারেট খাচ্ছি। কোথা থেকে এক বছর দশের ছেলে এসে আমার হাতে একটা ডায়েরি ধরিয়ে গিয়ে গেল। আমি ডায়েরি খুলে হতবাক।”

রক্তিম কথা বলার মাঝে থামে। টেবিলে রাখা একটা আপেল তুলে নেয় হাতে। আপেলে একটা কামড় দিয়ে বলে, “আপেলে ফরমালিন নেই তো?”
কায়েস নীরব দৃষ্টিতে রক্তিমের দিকে তাকায়, আবার বিরক্তি ঝেঁকে বসছে। এক দুইটা ঘন নিঃশ্বাস ফেলে সে বিরক্তি কাটাতে চায়। রক্তিমের প্রশ্নের উত্তর দেয়, “বাজারে এখন কোনো ফলে ফরমালিন থাকে না। নিয়মিত সব বাজারে পরীক্ষা করা হয়।”
“আপনারা সব বাজারের সব ফল পরীক্ষা করেন কীভাবে?”
“এটা যাদের কাজ, তারা এটা করছে। তাদের অবশ্যই কোন পদ্ধতি আছে, এটা নিয়ন্ত্রণ করার।”
“আচ্ছা, আচ্ছা। যা বলছিলাম আমি। ডায়েরি খুলে দেখি তার মধ্যে কিছু পৃষ্ঠা, টাইপ করা এক গল্প।”
“কে পাঠিয়েছিল?”
“আমি জানি না। ছেলেটাও আমাকে ডায়েরি দিয়ে পালিয়ে গেল।”
“আশেপাশেও কাউকে দেখেননি?”
“রাস্তার পাশে হাজার হাজার মানুষ। আমি কাকে দেখে ভাবব আমাকে গল্প পাঠিয়েছে?”
“তারপর বলুন।”
“আমি বাসায় গিয়ে গল্প পড়া শুধু করলাম। দারুণ এক থ্রিলার গল্প। আমি বুঝলাম আমার সিনেমার জন্য আমি গল্প পেয়ে গিয়েছি। কিন্তু সমস্যা বাঁধল অন্য জায়গায়।”

রক্তিম আবার থেমে যায়। আপেলে আরও দুই তিন কামড় দিয়ে বলে, “গল্প পড়ে আমার মাঝে বিশাল হাহাকার দেখা দিল। গল্পের শেষটা ছিল না। কিংবা গল্প ওখানেই শেষ। আমি গল্পের শেষটা বুঝতে পারি না। আপনি শাটার আইল্যান্ড সিনেমাটা দেখেছেন না? ঠিক অমন। শেষটা কী, আসলে কী ঘটল, আপনি একেকভাবে ভাবতে পারেন।”
কায়েস ঠান্ডা গলায় বলে, “আমি এই সিনেমাও দেখিনি।”
“সে যাই হোক। আমি গল্পের শেষটা নিয়ে খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম। আমি ডায়েরির মধ্যে তন্নতন্ন করে খুঁজে বেড়াই, লেখকের সাথে যোগাযোগের ঠিকানা আছে কিনা কোনো। শুধু লেখকের নাম খুঁজে পাই, কোনো ফোন নাম্বার বা যোগাযোগের ঠিকানা নেই।”
কায়েস উঠে দাঁড়ায়। কেবিনের মধ্যে পায়চারি করে এদিকওদিক। রক্তিম বলে ওঠে, “চলে যাচ্ছেন আপনি?”
কায়েস থেমে দাঁড়ায়। মাথার চুলে হাত বুলিয়ে বলে, “না, আপনার কথা শুনছি। আপনি বলে যান।”
রক্তিম বলতে থাকে, “লেখকের নাম পাই আমি, রিমন শাহরিয়ার। তো রিমন সাহেবের সাথে যোগাযোগ করার জন্য আমি ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ি। কোন উপায় পাই না।”
কায়েস এসবের কিছুই শুনতে চাচ্ছে না। তাও রক্তিম বলেই যাচ্ছে। কায়েস নিজের ধৈর্য বাড়িয়ে নিচ্ছে।
“এরপর এই অশান্ত ভাবের মাঝে একদিন আমার ফোনে একটা কল আসে একটা নাম্বার থেকে। ওপাশ থেকে গম্ভীর গলায় আমাকে জিজ্ঞেস করেন, গল্প পড়েছি কি-না? নিজেকে সে পরিচয় দেন রিমন শাহরিয়ার হিসেবে।”
“আপনি তাহলে দেখা পেয়ে গেলেন তার?”
“দেখা তখনই পাইনি। আমার কাছে উনি আরেক ছেলের মাধ্যমে গল্পের পরের অংশ পাঠান। সাথে নিজের একটা ছবি। আমাকে দেখা করতে বলেন ওনার সাথে। উনি যে গল্প পাঠান, সেখানেও গল্প শেষ নয়। আরও আছে। উনি আমার সাথে সরাসরি দেখা করে কথা বলতে চান। ছোট একটা টাইপ করা পত্র পাঠান আমার কাছে। সেখানে বিস্তারিত বলেন, উনি আমাকে সাহায্য করবেন সিনেমা বানাবার জন্য। ওনার পরিচিত প্রযোজক আছেন। টাকা ইনভেস্ট করবেন তারা, কোনো সমস্যা নেই।”
“আপনি দেখা করতে রাজি হয়ে গেলেন?”
“হ্যাঁ, আমি সেদিন রাতেই ওনার সাথে দেখা করতে চলে গেলাম ওনার কথামতো।”

কায়েস আবার এসে বসে রক্তিমের পাশে, “কোথায় দেখা করলেন?”
“উনি আমাকে দেখা করতে বললেন, ধানমন্ডি আবাহনী মাঠের পাশে। আমি ওখানে রাতের বেলা সময়মতো চলে গেলাম। উনি অপেক্ষা করছিলেন একটা প্রাইভেট কার নিয়ে। চারপাশ অন্ধকার থাকাতে ওভাবে সব দেখা যাচ্ছিল না।”
“অন্ধকারে আপনি তাকে চিনলেন কীভাবে?”
“আমি তো চিনি নাই। আমি গাড়ির পাশ দিয়ে যাবার সময়, উনিই ডাক দিলেন আমাকে রক্তিম সাহেব বলে। আমি থেমে গেলাম তখন। গাড়ির ভিতর থেকেই উনি পরিচয় দিলেন নিজের।”
“উনিই রিমন সাহেব ছিলেন?”
“হ্যাঁ, তবে আমি কিছুটা অবাক হলাম। ভেবেছিলাম লেখক মানুষ, একটা পাঞ্জাবি পরে, চটি জুতা পায়ে দেখা করতে আসবেন। আমি প্রাইভেট কার সমেত কোনো লেখককে আশা করি নাই।”
“আচ্ছা, তারপর। আমি অন্ধকারে তার চেহারা ঠিকঠাক চিনতে না পারলেও বুঝলাম উনিই রিমন সাহেব। আমাকে বললেন গাড়িতে উঠতে। আমি সামনের সিটে উঠে বসলাম। আর সাথে সাথেই ঘটনাটা ঘটল।”

রক্তিম আবার কথার মাঝে বিরতি দেয়। আপেলের বাকি অংশ খেয়ে শেষ করে ফেলে। কায়েস আগ্রহ নিয়ে বাকি কথা শোনবার অপেক্ষা করে। কায়েস বুঝতে পারে, অতিরিক্ত সিনেমা দেখার ফলে, কথার বলার মাঝে রক্তিমের একটা সিনেম্যাটিক ভাব চলে এসেছে। কথা বলার মাঝে সাসপেন্স ধরে রাখার জন্য, মাঝে মাঝেই কথার মধ্যে অপ্রাসঙ্গিক ব্যাপার নিয়ে আসে, হুটহাট বিরতি দেয়।
রক্তিমের আপেল শেষ করার অপেক্ষা করে কায়েস। কিছু বলে না। রক্তিম আপেল শেষ করে ভয়ার্ত চোখে তাকায় কায়েসের দিকে, “এরপর যা ঘটল, তার জন্য আমি কোনোভাবেই আসলে প্রস্তুত ছিলাম না। রিমন সাহেব আমার মুখের উপর কিছু একটা চেপে ধরলেন। আমার নাক চিরে কেমন একটা কড়া গন্ধ মস্তিষ্কে পৌঁছে গেল। আমি টের পেলাম আমি জ্ঞান হারাচ্ছি, কিছুই করতে পারছিলাম না।”
“আপনার লেখক রিমন সাহেব এমন করল?”
“হ্যাঁ। এরপর কী ঘটেছে না ঘটেছে আমি জানি না। আমার যখন জ্ঞান ফিরে এসেছে, আমি তখন একটা চেয়ারে বাঁধা। হাত মুখ সব আটকা। ওখানেই ওভাবে কতদিন ছিলাম জানি না।”
“আপনার রিমন সাহেবের চেহারা মনে আছে?”
রক্তিম আলতো করে একটা হাসি দিলো। এই হাসির অর্থ কায়েস জানে না। কায়েস বলে, “হাসছেন যে?”
রক্তিম উদাস ভঙ্গিতে উত্তর করে, “অবশ্যই মনে আছে। এমনকি রিমন সাহেব, এখন এখানেই আছেন।”
“মানে?”, কায়েস উত্তেজনা ধরে রাখতে পারে না।“কোথায় আছেন?”
রক্তিম আরও উদাস হয়ে বলে, “আমার পাশের বেডেই আছেন। আমাদের যে পাঁচজনকে উদ্ধার করা হয়েছে, তার মধ্যে একজন রিমন শাহরিয়ার। কী অদ্ভুত খেয়াল করেছেন? আমাকে যে কিডন্যাপ করল সে শরীরে ক্ষত নিয়ে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে। আর আমি দিব্যি বসে বসে আপনার সাথে গল্প করছি। ব্যাপারটা সিনেমাকেও হার মানাবে, তাই না বলেন?”

কায়েস ভাবলেশহীন ভাবে রক্তিমের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। রক্তিম যা বলছে, তা সত্যি হলে কী হবে? আসলেই কি রিমন সাহেবই এসবের পিছনে? কিংবা সত্যি কি পাশের বেডে যিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি রিমন সাহেব?
কায়েস প্রশ্ন ছুড়ে দেয়, “আপনাকে যে টস করে বারবার আঘাত করা থেকে বাঁচিয়ে দিত, সেও কি রিমন সাহেব?”
“আমি জানি না। হয়ত রিমন সাহেবই। আমি যে ঘরে আটকা ছিলাম, সে ঘর সবসময় অন্ধকার থাকত। আমি চেহারা ঠিক ভাবে বুঝতে পারি নাই। এমনকি যখন আমাকে কিডন্যাপ করা হয় তখনও আমি তার চেহারা ঠিকভাবে চিনতে পারি নাই। তবে আমি মোটামুটি নিশ্চিত ওটা রিমন সাহেব।”
কায়েস চিন্তিত মুখে বসে থাকে। খানিক সময় ভাবে কী বলা উচিত। শেষমেশ কিছুই বলে না। পকেট থেকে ছোট ডায়েরিটা বের করে কিছু জিনিস নোট করে নেয়। উঠে দাঁড়িয়ে বলে, “আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। অনেক তথ্য পেলাম আপনার থেকে। আপনার সাহায্য হয়ত অনেক সহযোগিতা করবে আমাদের তদন্তে। আপনি বিশ্রাম নিন। আর আমি সিয়াম সাহেবকে পাঠিয়ে দিচ্ছি, আপনার বাবা মার নাম্বার তার কাছে দিয়ে দিন, উনি তাদের নিয়ে আনার ব্যবস্থা করবেন।”

কায়েস চলে আসে রক্তিমের কেবিন থেকে। সোজা চলে যায় পাশের কেবিনে। রক্তিমের কথামতো উনি রিমন সাহেব। এখন কিছুটা সুস্থ লাগছে তাকে। হয়ত কথা বলার মত অবস্থায় আছেন।
৪র্থ পর্ব

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই জুন, ২০২৫ সকাল ১০:১৬

রাজীব নুর বলেছেন: ফরমালিন শরীরের জন্য ঠিক কতটা ক্ষতিকর?
আমি যদি একশ' গ্রাম ফরমালিন খাই তাহলে আমার কি ক্ষতি হবে?

১২ ই জুন, ২০২৫ সকাল ১১:৪৬

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: ভাই, প্রথম কথা হচ্ছে ফলমুল সবজিতে ফরমালিন ব্যবহার করে কোনো লাভ নাই। ফরমালিন কাজ করে প্রোটিন জাতীয় জিনিসের পঁচন রোধে। বাজারে ফলমুলে তাই এখন ফরমালিন ব্যবহার করে না। কাচা ফল পাকাতে ব্যবহার করে কার্বাইড। চকচকে দেখাতে মোম। ফলে যদি ফরমালিন ব্যবহারও করে, তা ভালো করে ধুলেই চলে যায়।

ফরমালিনের প্রধান উপাদান ফরমালডিহাইড সবচেয়ে বেশি গ্রহণ করে মানুষ সিগারেটের সাথে। তামাক পোড়ার সময় এটা তৈরি হয়। ফরমালডিহাইড সিগারেট খাওয়ার নেশা বাড়িয়ে দেয়।

আর আপনি যদি ১০০ গ্রাম ফরমালিন খান, তা তো শরীরে খারাপ প্রভাব ফেলবেই। ১০০ গ্রাম তো অনেক পরিমাণ।

১২ ই জুন, ২০২৫ সকাল ১১:৫৩

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: আর ফরমালডিহাইড খুবই রিয়েক্টিভ, , এত পরিমাণ মৃত্যুও ঘটাতে পারে। শরীরে লাগলেও তা ক্ষতি করতে পারে । আমি টেক্সটাইলে জব করার সময় ইন্টারন্যাশনাল বায়াররা কাপড়ে ফরমালডিহাইড খুব স্ট্রিক্টলি মেইনটেন করত। বড়দের কাপড়ে তা ২০ পিপিএম আর বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ২ পিপিএম। রঙে ফরমালডিহাইড থাকে, তা শরীরে গেলে নিয়মিত ব্রেইন ডিফেক্টও হতে পারে।

টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং আর বর্তমানে কেমিস্ট্রি পড়াবার অভিজ্ঞতায় ব্যাপারগুলো বললাম।

২| ১৩ ই জুন, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৫

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: ৪র্থ পর্ব

৩| ১৪ ই জুন, ২০২৫ সকাল ১১:৪৮

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.