![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কিছু মানুষ অন্য মানুষকে মুগ্ধ করার অসীম ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়। আর কিছু মানুষের ভিতর এই ক্ষমতা কখনই আসে না। আমি দ্বিতীয় দলের মানুষ। কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু কখনই করতে পারি না। কেউ অনেক সুন্দর গান গায়, আমি শুধু শুনে যাই। কেউ অনেক সুন্দর নাচে, আমি শুধু হাত তালি দিয়ে যাই। কেউ অনেক সুন্দর লেখে, আমি শুধু ভেবে যাই, কী করে এত ভালো লেখে কেউ? আমিও লিখি। তবে তা কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু না। আমার লেখায় আমার ভালোবাসা ছাড়া কিছুই নেই। পড়াশুনা শেষ, বুটেক্স থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বের হয়ে চাকরি, বিয়ে, পেশা পরিবর্তন সব হয়েছে। লেখালেখির ধারাবাহিকতায় চারখানা উপন্যাস অমর একুশে বইমেলায় বেরিয়েছে। টুকরো ছায়া টুকরো মায়া (২০১৫) – সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । একা আলো বাঁকা বিষাদ (২০১৬) – সামাজিক উপন্যাস । মধ্য বৃত্ত (২০১৮) – ডিটেকটিভ সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । অভিসন্ধি (২০২০) – ক্রাইম থ্রিলার । দেশটাকে ভালোবাসি অনেক। অনেক মায়া কাজ করে। মাঝে মাঝে ভাবি, সব বদলে দিতে পারতাম। স্বপ্নের মত না, বাস্তবের মত একটা দেশ গড়তে পারতাম …………………………
পর্ব ১পর্ব ২পর্ব ৩
জিম্মি ঘটনার দুই দিন পূর্বে
ফরহাদের সাথে আনুশার সম্পর্কের প্রায় পাঁচ বছর চলছে। আনুশার পড়াশুনা শেষ। বাসা থেকে বিয়ের চাপ আসছে। তবে ফরহাদের কোনো ভাবান্তর নেই সে ব্যাপারে। প্রতি দুই সপ্তাহ অন্তর একবার দেখা, দিনে একবার মিনিট পাঁচেকের জন্য কথা, এই হলো প্রেম ভালোবাসার নমুনা। নতুন নতুন ভালোবাসায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলত ফরহাদ। আস্তে আস্তে কমতে কমতে তা এসে থেমেছে মিনিট পাঁচেকে। আনুশার পরিবার থেকে ফরহাদের ব্যাপারে কোনো না নেই। ফরহাদের বাবা মোসলেম সাহেব জাতীয় সংসদের সদস্য। আনুশার বাবা জামাল সাহেব, উনিও রাজনীতিতে সক্রিয়, যথেষ্ট টাকা পয়সার মালিক, বহুমুখী ব্যবসা তাঁর। মেয়ের বিয়ে মোসলেম সাহেবের ছেলের সাথে হলে, রাজনৈতিক অনেক বাড়তি সুযোগ সুবিধা তিনি পাবেন। তাই মেয়েকে সোজা জানিয়ে দিয়েছেন, “যার সাথে প্রেম করেছ, তাকেই বিয়ে করবে। আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তুমি বড় হয়েছে, নিজের ভালো মন্দ তুমি নিজেই বুঝতে পারো।”
আনুশা জানে বাবা এতো সহজে রাজী হয়ে যাবার মানুষ না। শুধু মোসলেম সাহেবের ছেলে হিসেবে রাজী হয়েছেন। নয়তো ফরহাদের মত বেকার অকর্মণ্য ছেলেকে কোনো মেয়ের পরিবার থেকেই মেনে নেবার প্রশ্নই ওঠে না। বাবার টাকায় খায় দায় ঘুরে বেড়ায়। নিজের কোনো দৈহিক চাহিদা দেখা দিলে, আনুশাকে বলে কয়ে নিজের বাসায় নিয়ে যায়। গত মাস পাঁচেক ধরে তাও বন্ধ। প্রেমিক হিসেবে বেকার ছেলেরা দারুণ হয়। অফুরন্ত সময়, প্রেমিকার বাসা, ভার্সিটির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা, কোথাও যেতে হলে পৌঁছে দেয়া, কোনো প্রয়োজনে বলার আগে চলে আসা। মেকি বিরক্তি ফুটিয়ে যদিও মেয়েরা বলে, “এতো দেখা করতে হবে কেন?” তবু মেয়েরা ব্যাপারটা উপভোগ করে। কেউ একজন আমার জন্য নিজের প্রতিটা মুহূর্ত ব্যয় করছে, এই অনুভূতির সাথে অন্য কিছুর তুলনা হয় না। তবে ফরহাদ বেকার প্রেমিক হিসেবেও খুবই জঘন্য। অফুরন্ত সময় থেকে আনুশাকে এক চিমটি সময় দেয়, সে সময়টুকুও যে খুব আন্তরিকতায় কাটায়, ব্যাপার কিন্তু তেমন নয়। এই সম্পর্ক নিয়ে খুব হাঁপিয়ে উঠেছে আনুশা। সম্পর্কে গা ছাড়া ভাব চলে আসলে, সে সম্পর্ক আর মধুর থাকে না। তিক্ত হয়, তিক্ত হতে হতে একসময় বিষ হয়ে যায়। আনুশা এই বিষ থেকে মুক্তি চায়। ফরহাদের এমন দূরে দূরে থাকাটা মেনে নেয়া অসম্ভব আনুশার পক্ষে। ফরহাদকে ফোন দিয়ে বলে, “কোথায় তুমি?”
“আমাকে এখন ফোন দিয়েছ কেন? আমরা তো রাতে কথা বলবই।”
“আজব একটা অবস্থা। রাতে কথা বলবে কি এখন বলা যাবে না?”
ফরহাদ কড়া গলায় বলে, “না বলা যাবে না। আমি যখন ফোন দিব, তুমি তখন কথা বলবে। নিজে থেকে আমাকে ফোন দিবে না।”
আনুশা চুপ করে থাকে। হুট করে চোখে পানি চলে আসে। ধরে আসা গলায় বলে, “তুমি আমার সাথে এমন কর কেন? কী করেছি আমি?”
“কিছুই কর নাই। আমার তোমার সাথে কথা বলতে বিরক্ত লাগছে। ফোন রাখো।”
আনুশা নাক টেনে বলে, “আমি তোমার বাসায় আসব।”
“আমার বাসায় এসে তুমি কী করবে? বিয়ে করি, একবারে নিয়ে আসব তখন?”
“তাহলে বিয়ে করো। তোমার আমার দুজনের পরিবারই তো রাজি।”
ফরহাদ উঁচু গলায় বলে, “আমি কখন বিয়ে করব, সেটা কি তোমাকে বলতে হবে না-কি? যখন সময় হবে, তখন করব।”
আনুশা চুপ করে থাকে।
“ফোন রাখো। আমি ব্যস্ত আছি।”
“একটু কথা বলো প্লিজ।”
আনুশা কাঁদো-কাঁদো গলায় বলে। আনুশার এ স্বভাব এখনও যায়নি। কিছু হলেই অল্পতেই কেঁদে ফেলে। ফরহাদ একটু নরম হয়।
“আচ্ছা, তুমি পান্থপথ আসো। আমরা একটা রেস্টুরেন্টে বসি, কেমন?”
আনুশা চোখের পানি মুছতে মুছতে বলে, “আচ্ছা আসছি আমি।”
বেলা সাড়ে তিনটার দিকে পান্থপথ চলে যায় আনুশা। ফরহাদ দাঁড়িয়ে ছিল আগে থেকেই। একটা কফি শপে ঢুকে দুজন বসল। আনুশা সবুজ রঙের সোনালি পারের একটা শাড়ি পরে এসেছে। মেয়েটাকে সুন্দর লাগছে, আনুশার মন খারাপ হলেই শাড়ি পরে। শাড়ি পরে এসেছে মানে, মেয়েটার মন খারাপ। ফরহাদ একটু নরম গলায় কথা বলে আনুশার সাথে। অকারণে আসলেই প্রচণ্ড খারাপ আচরণ করা হয় মেয়েটার সাথে।
আনুশা নিশ্চুপ চোখে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে। ফরহাদের দিকে তাকায় না। ফরহাদ বলে, “দেখো আনুশা, আমি জানি আমার উপর তুমি প্রচণ্ড বিরক্ত। কিন্তু বিশ্বাস কর, সব ঠিক হয়ে যাবে অনেক তাড়াতাড়ি।”
আনুশা আহ্লাদি গলায় বলে, “কিছুই ঠিক হবে না। তুমি অনেক চেঞ্জ হয়ে গেছ।”
ফরহাদ আলতো করে আনুশার হাত ধরল। আনুশা মুখে তুলে তাকাল ফরহাদের দিকে। যেন সেই আগের মতই অনুভূতি, সেই একই রকম অনুভব।
ফরহাদ বলে যায়, “আমি জানি, আমি অনেক খারাপ আচরণ করছি তোমার সাথে। আমি মানসিকভাবে খুব ভেঙে পড়েছি আনুশা। আমি চাই আবার আগের মত হয়ে যেতে।”
আনুশা ফরহাদের হাতটা শক্ত করে ধরে বলে, “চল তোমাকে একজন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই। আমার পরিচিত একজন সাইকিয়াট্রিস্ট আছেন। বেশ ভালো।”
ফরহাদ আনুশার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, “আমি সাইকিয়াট্রিস্ট দেখিয়েছি, কাজ হয়নি কোনো। এখন অন্য একজনের সন্ধান পেয়েছি। জানি ব্যাপারটা হাস্যকর। তবু আমি তার সাথে দেখা করতে চাচ্ছি। আজ রাতেই দেখা করব।”
“কার সাথে?”
“একজন জ্যোতিষী। বেশ নাম ডাক তার। আমার মনে হয় উনি আমার সমস্যার সমাধান দিতে পারবেন।”
আনুশা চোখে মুখে একটা দ্বিধার দৃষ্টি নিয়ে ফরহাদের দিকে তাকাল।
“তুমি জ্যোতিষীর কাছে যাবে? সিরিয়াসলি ফরহাদ?”
“হ্যাঁ, আমি সিরিয়াস। এসব ব্যাপারে বিশ্বাস করাটা খুব অবান্তর। তবু চেষ্টা করতে তো দোষ নেই।”
আনুশা অসম্মতির সুরেই সম্মতি দিয়ে বলল, “আচ্ছা দেখো। যাও তাহলে। আমিও যাব তোমার সাথে।”
“না, আমাকে একাই দেখা করতে বলেছেন উনি।”
“আচ্ছা, দেখা করো। নাম কী ওনার?”
“দুলাল বিশ্বাস। গ্রিন রোডেই বসেন। উনি গ্রিন রোড বসছেন না কয়েকদিন ধরে। আমার সাথে উনি একাই দেখা করবেন। আমি বলেছি টাকা পয়সা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।”
আনুশা অবাক হয়ে ফরহাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। ছেলেটা কত বদলে গেছে। অথচ এখন কত আপন লাগছে। সব অবহেলা গুলো মিথ্যে লাগছে। সত্যি বলতে এই, ফরহাদ আনুশাকে ভালোবাসে, ভালোবাসে প্রচণ্ড আনুশা ফরহাদকে। এই ভালোবাসায় মেকি কোন প্রলেপ নেই, মিথ্যে কোনো আশ্বাস বিশ্বাসের আলাপন নেই। এখানে পুরোটাই শুদ্ধ, পুরোটাই পূর্ণ ভালোবাসা।
সন্ধ্যাবেলায় আনুশাকে নামিয়ে দিয়ে চলে আসলো ফরহাদ। দুলাল বিশ্বাসের সাথে দেখা করবে আজ। অনেক দিন ধরে মনের মাঝে জমে থাকা অশান্তি, ব্যথা, জমাট বাঁধা বিষণ্নতা কি পারবে দুলাল বিশ্বাস দূর করে দিতে?
জিম্মি ঘটনার ছয় দিন পরে
কায়েস রিমনের কেবিনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় পিছন থেকে কারও ডাক শুনল।
“এই যে শুনছেন?”
কায়েস পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে মোসলেম সাহেব। কায়েস সালাম দিয়ে বলে, “আমাকে বলছেন?”
মোসলেম সাহেব কায়েসের দিকে এগিয়ে এসে বললেন, “হ্যাঁ আপনাকে বলছি। আপনি তো এই কেসের তদন্তে আছেন, না?”
“জি, স্যার।”
“আমি আমার ছেলেকে নিয়ে যেতে চাচ্ছি। ওর যা চিকিৎসা বাসায় করাব।”
কায়েস বিনয়ের সুরে বলল, “স্যার, মাফ করবেন। এভাবে আসলে নিয়ে যাওয়াটা উচিত হবে না। আপনার ছেলে এখানে সম্পূর্ণ নিরাপদ আছেন। আপনিও থাকতে পারছেন। কোনো সমস্যা নেই। আমাদের তদন্তের কাজে ওনাকে আর দিন কয়েক থাকতে হবে।”
মোসলেম সাহেব রাগী গলায় বললেন, “আপনাদের তদন্তের জন্য এখন যদি ছয় মাস লাগে, আমার ছেলে এখানে ছয় মাস কেবিনে পড়ে থাকবে?”
“স্যার, ছয় মাস কেন লাগবে? আর আমি স্যার বলিনি, তদন্ত যতদিন আপনার ছেলেকে ততদিন আমরা এখানে রাখব।”
“তাহলে বলেছেনটা কী?”
“তার জবানবন্দির একটা ব্যাপার আছে। এই ঘটনার পিছনে কে, তা জানার জন্য ফরহাদ সাহেবের সাক্ষ্য স্যার খুবই জরুরি।”
মোসলেম সাহেব গলার স্বর আরও উঁচু করে বলেন, “আপনি কি চাচ্ছেন আমি এই ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহেবকে ফোন দেই? আপনি জোর করে আমার ছেলেকে আটকে রেখেছেন, এই ব্যাপারে কমপ্লেইন করি?”
“স্যার, আপনার ক্ষমতা অনেক। আপনি তা করতেই পারেন। আমরা এখানে কাউকে আটকে রাখিনি। এখানে কেউ অপরাধী না। সবাই ভিক্টিম। অপরাধীকে খুঁজে বের করতে হলে, ওনাদের সাক্ষ্য খুবই জরুরি।”
“আপনি সাক্ষ্য নিতে চাইলে বাসায় গিয়েও নিতে পারেন। ও তো আর পালিয়ে যাচ্ছে না।”
“আমি ওনাদের এখনই ছাড়তে চাচ্ছি না, কারণ ওনাদের বাহিরে বের হওয়াটা ঝুঁকিপূর্ণ, তাই।”
মোসলেম সাহেব নাছোড়বান্দা। তিনি বলে যান, “ফরহাদের সিকিউরিটি আমি দেখব।”
কায়েস একটা হাসি দিলো, “স্যার মাফ করবেন। আমার পক্ষে সম্ভব না। আপনি প্লিজ হেল্প করুন আমাদের এই ব্যাপারে। আপনি দেশের একজন এমপি। আপনি যদি এখন ফরহাদ সাহেবকে নিয়ে যান, বাকিরাও একই কাজ করতে চাইবে। আমরা তখন বাধাও দিতে পারব না। বাধা দিলে কথা উঠবে, আপনি এক্সট্রা সুবিধা নিয়েছেন। মাঝখান থেকে আমাদের তদন্ত দীর্ঘ হবে। আপনার নামেও নানা নেগেটিভ কথাবার্তা ছড়িয়ে যাবে। সামনে নির্বাচন। বুঝতেই পারছেন।”
মোসলেম সাহেব শীতল দৃষ্টি ছুড়ে কায়েসের দিকে তাকিয়ে রইল। পুলিশ সাহেব খুব কৌশলে মোসলেম সাহেবকে কথার মারপ্যাঁচে জড়িয়ে ফেলল। মোসলেম সাহেব কিছুটা শান্ত হয়ে বললেন, “আচ্ছা। আপনি আপনার কাজ করুন। তবে অবশ্যই অতি দ্রুত। আর আমি আমার ছেলের সাথে থাকব সবসময়।”
“ধন্যবাদ স্যার। আর আপনি থাকতে পারেন, আমাদের কোনো আপত্তি নেই।”
কায়েস বলে হাঁটা শুরু করল। “চলুন ফরহাদ সাহেবের কেবিনে যাই।”
মোসলেম সাহেব কায়েসের সাথে চলে আসল ফরহাদের কেবিনে। ফরহাদ শুয়ে আছে বিছানায়। কায়েস আসতেই উঠে বসল। মোসলেম সাহেব কায়েসকে পরিচয় করিয়ে দিলেন, “উনি এই কেসের তদন্তে আছেন। তুমি বাবা একটু ওনাকে হেল্প কর।”
কায়েস ফরহাদের দিকে তাকাল, উচ্চতা পাঁচ ফুট আট নয় হবে, গায়ের রং হালকা শ্যামলা, একই রকম মাঝারি গড়নের শরীর। কায়েস হাত বাড়িয়ে দিল ফরহাদের দিকে, “ইমরুল কায়েস।”
ফরহাদ হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বের করল। হাতে ব্যান্ডেজ। কায়েস হাত সরিয়ে বলল, “সর্যি। হ্যান্ডশেক করতে হবে না, ঠিক আছে।”
ফরহাদ আবার ব্যান্ডেজ করা হাত চাদরের নিচে নিয়ে নিলো।
“আমি কিছু প্রশ্ন করব আপনাকে। একটু সাহায্য করবেন, বুঝতেই পারছেন আপনাদের সাহায্য ছাড়া অপরাধীকে খুঁজে পাওয়া জটিল হবে।”
ফরহাদ আস্তে আস্তে বলে, “অবশ্যই সাহায্য করব।”
“আপনার বয়স?”
“আটাশ।”
“পেশা?”
“বেকার। আপাতত কিছু করি না।”
পাশ থেকে মোসলেম সাহেব বলেন, “ওর কেন কিছু করতে হবে? ও আমার ব্যবসা দেখবে।”
কায়েস মোসলেম সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলে, “স্যার, আমি জানি এটা। তাও শুধু নিয়ম মাফিক আমার প্রশ্নগুলো করছি। প্লিজ স্যার ওনাকে উত্তর গুলো দিতে দিন।”
মোসলেম সাহেব চুপ হয়ে গেলেন। সিট ছেড়ে উঠে বললেন, “আচ্ছা, আপনারাই কথা বলেন তাহলে। আমি বাহিরে দাঁড়িয়ে আছি।”
“ধন্যবাদ স্যার। এটা ফরহাদ সাহেবের জন্যও সুবিধা হবে। উনি কোন দ্বিধা ছাড়াই সব বলতে পারবেন।”
মোসলেম সাহেব বেরিয়ে আসলেন। কায়েস প্রশ্ন করে যায়, “আপনি ওখানে কীভাবে গেলেন? মানে আপনাকে যিনি ওখানে আটকে রেখেছিলেন আপনি তাকে চিনেন?”
“না, আমি চিনতাম না। সেদিনই তার সাথে আমার প্রথম দেখা।”
“কী কারণে? কোথায় দেখা করেছিলেন?”
ফরহাদ ধীরে ধীরে উত্তর দেয় একটু বড় দম নিয়ে, “আমার অনেক দিন ধরেই কিছু মানসিক সমস্যা দেখা যাচ্ছিল। আমার চারপাশের সবাইকে প্রচণ্ড বিরক্ত লাগছিল।”
ফরহাদ ছোট করে নিঃশ্বাস ছাড়ে।
“আপনার কষ্ট হচ্ছে কি কথা বলতে?”
“না না, আমি ঠিক আছি। কয়েকজন সাইকিয়াট্রিস্ট দেখিয়েছি কাজ হয়নি। এরপর কয়েকজনের কাছ থেকে এক জ্যোতিষীর নাম শুনলাম। ভাবলাম তার কাছে যাই। তার চেম্বার গ্রিন রোড।”
কায়েস হুট করে কথাটা শুনে, ফরহারকে জিজ্ঞেস করে, “দুলাল বিশ্বাস নাম?”
ফরহাদ অবাক হয়ে তাকায় কায়েসের দিকে, “হ্যাঁ। আপনি তাকে চিনেন?”
কায়েস অল্প করে হাসে, “না, ওভাবে না। গতকাল আর কী চিনলাম ওনাকে।”
“আচ্ছা। তো তার ওখানে গিয়ে দেখি, ওনার চেম্বার বন্ধ। বিশাল বড় এক ব্যানার টানানো ওনার ছবিসমেত। ব্যানারের নিচে একটা খাতা রাখা। সেখানে লেখা, জ্যোতিষীর অবর্তমানে এখানে আপনার নাম ও যোগাযোগের নাম্বার দিয়ে যান। আমি আমার নাম আর নাম্বার দিয়ে আসলাম।”
“ওনার কোনো সহযোগী বা অন্য কেউ ছিল না?”
“না, বন্ধ ছিল একদম চেম্বার। আমাকে দুইদিন পরেই কল করেন দুলাল বিশ্বাস। আমার সমস্যার যাবতীয় শুনেন। আমাকে বলেন, তার চেম্বারে কিছু ঝামেলা আছে, আপাতত তিনি আমার সাথে ওনার বাসায় দেখা করতে চান। সেক্ষেত্রে টাকা বেশি লাগবে। আমি রাজী হয়ে গেলাম।”
“আপনি একাই দেখা করতে গেলেন?”
“হ্যাঁ, কারণ নামকরা জ্যোতিষী, তার প্রতি আমার বিশ্বাস ছিল।”
“তারপর?”
“তার বাসা ছিল তেজগাঁও। তেজগাঁও এতো বড় এলাকা, তার তেজগাঁওয়ের কোথায় বাসা আমি বুঝব কী করে? উনি আমাকে বাসার পুরো ঠিকানা দেন না। আমাকে বলেন, রাত সাড়ে এগারটার দিকে রানারের গলির কাছে আসতে। আমি ওদিকে কয়েকবার গিয়েছি। রানারের গলি আমি চিনি। আমি ওখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি।”
কায়েসের কপালে চিন্তার ভাঁজ দেখা দিচ্ছে। হয়ত এমন কিছু শুনতে চাচ্ছে কায়েস, যা আসলে কায়েস শুনতে চায় না মন থেকে।
ফরহাদ বলে, “গলিতে পৌনে বারোটার দিকে একটা প্রাইভেট কার আসে। ঐ গলি সবসময় অন্ধকার। প্রাইভেট কার এসে থামে আমার সামনে। ভিতর থেকে একজন বলে, উনি দুলাল বিশ্বাস। আমি চটজলদি প্রাইভেট কারে উঠে পড়বার জন্য এগিয়ে যাই। আমার মাথায় কেন যেন এটা ছিল না, এতো রাতের বেলা একজন মানুষ কেন চিকিৎসার জন্য ডাকবে? দিনের বেলা সমস্যা কোথায়? আমি গাড়িতে উঠতেই, দুলাল বিশ্বাস আমার নাক বরাবর একটা সজোরে ঘুসি বসিয়ে দেন। আমার নাক মুখে ক্লোরোফর্মের রুমাল চেপে ধরেন। আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। যখন জ্ঞান ফিরল আমি তখন একটা অন্ধকার রুমে বন্দী।”
কায়েস যা আশঙ্কা করেছিল তাই ঘটেছে। ফরহাদের ছিনতাইকারীও এখানে আছে। হাসপাতালের বেডে। ব্যাপার গুলো জটিলতায় আটকে যাচ্ছে। কায়েস উঠে দাঁড়িয়ে বলে, “আপনি নিশ্চিত আপনাকে দুলাল বিশ্বাসই আটকে রেখেছিলেন?”
“নিশ্চিত নয়, তবে ধারণা করতে পারি।”
“আপনার হাতে এই যে আঘাতের চিহ্ন, এগুলো কীভাবে হল?”
“অন্ধকার রুমে মাঝে মাঝেই ও আসত। শুধু আমার মাথার উপর ছোট একটা লাইট জ্বলত। সে আলোয় চেহারা বুঝতে পারতাম না। এসে একটা কাগজ সামনে দিত। নানা রকম উদ্ভট প্রশ্ন থাকত সেখানে। সে প্রশ্নের সঠিক উত্তর না দিতে পারলেই, ঐ আলোও নিভে যেত। এরপর এই শাস্তি পেতাম।”
“আপনাকে যে কিডন্যাপ করেছিল, আর যে রুমে আসত, দুজন কি একই ব্যক্তি?”
ফরহাদ আবার একটু ঘন ঘন শ্বাস ফেলে। হয়ত নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। তাও বলে যায়, “হয়ত এক। আমি চেহারা না বুঝতে পারলেও, এতোটুকু জানি ঐ লোকের হাইট পাঁচ ফুট সাড়ে আট নয় হবে। অত মোটাও না, আবার ঠিক শুকনাও না।”
কায়েস ছোট ডায়েরিতে কিছু একটা লিখতে লিখতে বলে, “আপনাদের যে পাঁচ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে, পাঁচ জনের উচ্চতাও পাঁচ ফুট আট-নয়, পাঁচ জনেরই শরীরের রং হালকা শ্যামলা, পাঁচ জনেরই মাঝারি গড়নের শরীর।”
ফরহাদ অবাক দৃষ্টি ছুড়ে কায়েসের দিকে তাকিয়ে রইল। শূন্য দৃষ্টিতে অবিশ্বাসের ছাপ।
কায়েস লেখা শেষ করে ফরহাদের দিকে এগিয়ে এসে বলেন, “আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনাকে একটা মজার ব্যাপার বলা হয়নি। আপনার তথ্য মতে আমার দুলাল বিশ্বাসকে ধরে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত। আমি এখন তাকেই জিজ্ঞাসাবাদ করতে যাচ্ছি, এইতো পাশের কেবিনেই। ওনাকেও আপনাদের সাথে উদ্ধার করা হয়েছে।”
ফরহাদের ঘোর যেন কাটছে না। হতভম্ভ চেহারা বলে দিচ্ছে প্রচণ্ড মাত্রায় বিস্ময়াপন্ন হয়েছে। কায়েস আর কোনো শব্দ না করে বের হয়ে আসলো ফরহাদের কেবিন থেকে।
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই জুন, ২০২৫ সকাল ১০:৫১
রাজীব নুর বলেছেন: সাউথ ইন্ডিয়ান মুভি খুব বেশি দেখছেন নাকি?