নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রতি যুগে একদল সত্যের অনুসারী থাকে। আমি সে দলে আছি।

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া)

সকল মানুষের মধ্যে কিছু কিছু ভুলত্রুটি আছে যা মানুষ নিজে বুঝতে পারে না, সেই ভুলগুলো ধরিয়ে দেয়া এই অধমের দায়িত্ব

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রবাসীর, ভালোবাসার ঋণ শোধ!

১৬ ই জুন, ২০১৬ সকাল ৯:৪০



সত্যের ছায়া: ইতিহাস-ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ জনপদ শরিয়তপুর। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে নানা কারণে সেই ঐতিহ্যে ঘাটতি দেখা দেয়। বাসিন্দাদের মধ্যে ছিল দারিদ্র আর বেকারত্ব। কিন্তু এখন ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে শরিয়তপুরের দৃশ্যপট। মাত্র একযুগ আগে যেখানে ছিল কুঁড়েরঘর এখন সেখানে উঠছে আলিশান দালানকোঠা। বদলে যাচ্ছে অবকাঠামো। আর এর সবই সম্ভব হয়েছে ইতালি-ইউরোপসহ প্রবাসীদের কারণে। তারা নিজেদের উন্নয়নের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন জাতীয় অর্থনীতিতে। পাঠাচ্ছেন বিশাল পরিমাণ প্রবাসী রেমিটেন্স।

এই বদলের নেপথ্য কারিগর প্রবাসী বাংলাদেশীরা। বিশেষ করে ইতালি ও ইউরোপ প্রবাসীরাই বদলে দিয়েছেন শরীয়তপুরের দিগন্ত। শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় এখন গ্রামের নামও হয়েছে বিভিন্ন দেশের নামে। যেমন নড়িয়া উপজেলার কয়েকটি গ্রামের নাম হয়েছে ইতালি পাড়া। মহল্লার নাম হয়েছে সিঙ্গাপুর মহল্লা। বাড়ির নাম হয়েছে জাপানি বাড়ি। আর ভবনের নাম হয়েছে ফ্রান্স ভিলা।
আর প্রবাসী মানুষ বাড়ার ইতিহাসও বেশি পুরনো নয়। বিগত ১৫ থেকে ২০ বছরের মধ্যে এসেছে এই পরিবর্তন। আগে ইউরোপ বা ইতালিতে ভিসা পাওয়া এত জটিল ছিল না। কোনো গ্রামে একজন গেলে তিনি আরও কয়েকজনকে নিয়ে গেছেন। এভাবেই ইউরোপ প্রবাসীর সংখ্যা বেড়েছে শরীয়তপুরে বিশেষ করে নড়িয়া, সখিপুর, ডামুড্যা এলাকায়।

আগে যার ঘরে দু’তিনটি মেয়ে ছিল, তার দুশ্চিন্তায় ঘুম হতো না। কিন্তু এখন সেই দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। এখন যাদের ঘরে যত বেশি সুন্দরী মেয়ে আছে তাদের মর্যাদা তত বেশি। ভালো বংশের সুন্দরী মেয়ে হলে প্রাথমিকে পড়ার সময়েই প্রবাসীরা আংটি পরিয়ে যাচ্ছে। মেয়ের বাবা বিয়ে দিতে না চাইলেও পাত্রপক্ষ নাছোড়বান্দা। তারা আংটি পরিয়ে মেয়ের জন্য ৫ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে রাজি হচ্ছে। এছাড়াও পাত্রপক্ষ নিজ উদ্যোগে পাত্রীর বাড়িঘর মেরামত করে দিচ্ছে। পাত্রীর বাবাকে মোটা অংকের পণ দিচ্ছে। এভাবেই পরিবর্তন এসেছে শরীয়তপুরের গ্রামে-গঞ্জে।




সিলেটের গোলাপগঞ্জ কিংবা কানাইঘাটের মতো ধীরে ধীরে অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে শরীয়তপুরেরও। আগে যেখানে ছিল নাড়া-ছনের কুঁড়েঘর, এখন সেখানে তিনতলা-চারতলা ভবন হয়েছে। আগে যারা রিকশা চালাতেন তারা এখন বিশাল অট্টালিকার মালিক। বেড়েছে জমির দাম। উন্নত হয়েছে গ্রামের হাটবাজার ও রাস্তাঘাট। এমনও গ্রাম আছে যেসব এলাকায় ধান ক্ষেতের মধ্যেই দেখা গেছে বিশাল অট্টালিকা। সেখানে হয়তো যাওয়ারও তেমন কোনো রাস্তা নেই। । কিন্তু সবচেয়ে ব্যতিক্রম নড়িয়া উপজেলা। নড়িয়া উপজেলা সম্পর্কে অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইতিহাস-ঐতিহ্য সমৃদ্ধ জনপদ নড়িয়ায় মোগল সেনাপতি মান সিংহের বিজয় তোরণ রয়েছে। ইতিহাসের বিখ্যাত রাজা চাঁদ রায়-কেদার রায়ের স্বাধীন রাজধানী ছিল নড়িয়া। বিশিষ্ট সুফি সাধক হজরত জান শরীফ সুরেশ্বরীর (রহ.) সমাধিস্থল সেখানে। সুদূর মোগল আমল থেকে এ জনপদের অতীতের সে সুখ্যাতি আজও বিদ্যমান রয়েছে।
। ঢাকার মাত্র ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে হলেও অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুত্ এবং গ্যাস সঙ্কটসহ নানা কারণে শরীয়তপুরে শিল্পায়ন ও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। এ অবস্থায় বিগত আশির দশক পর্যন্ত শরীয়তপুর ছিল দেশের অন্যতম দারিদ্র্যপীড়িত জেলা। কিন্তু নব্বইয়ের দশক থেকে শরীয়তপুরের মানুষ প্রবাসে যেতে শুরু করেন। তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় চিত্র বদলাতে থাকে শরীয়তপুরের। হারানো অতীত গৌরব ফিরিয়ে আনার জন্য নয়, বরং জীবন ও জীবিকার তাগিদে উপজেলার অর্ধলক্ষাধিক নারী-পুরুষ ইউরোপীয় দেশগুলোতে অবস্থান করছে। যার অধিকাংশই ইতালিতে রয়েছে। বর্তমানে বিদেশি রেমিট্যান্স আয়ের দিক দিয়ে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় উপজেলা হিসেবে নড়িয়ার খ্যাতি সর্বত্র। ইউরোপীয় দেশগুলোতে বাংলাদেশের শরীয়তপুর জেলার নামের চেয়ে বেশি পরিচিত হয় নড়িয়া উপজেলার নামে। তেমনিভাবে নড়িয়া উপজেলার অধিবাসীরাও প্রবাসী দেশের প্রতি কৃতজ্ঞতাস্বরূপ নিজ এলাকার অনেক গ্রামেরই পুরনো নাম মুছে ইউরোপীয় দেশের নামে পরিচিত হচ্ছে। তেমনি একটি গ্রাম ইতালি পাড়া। রয়েছে সিঙ্গাপুর মহল্লা, জাপানি বাড়ি, ফ্রান্স ভিলা ইত্যাদি।

জানা গেছে, প্রবাসী যারাই গেছেন তারা প্রথমে আপন ভাই, চাচাতো-মামাতো-ফুফাতো ভাই ও ভগ্নিপতিদের প্রথমে সেখানে নিয়ে যান। এরপর নিয়ে যান প্রতিবেশীদের। এভাবেই দিন দিনে বাড়ছে প্রবাসীর সংখ্যা। আগে যারা ইউরোপে পাড়ি জমাতে পেরেছেন তাদের অনেকেই এখন প্রতিষ্ঠিত। সেই সঙ্গে উন্নত হয়েছে অবকাঠামো ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার। আর এসব কারণে ডুবন্ত বিল কিংবা হাওরের মধ্যেও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সুরম্য অট্টালিকা।

। শরীয়তপুরের সখিপুর থানার সোহেলকান্দি গ্রামের জনৈক মেসবাউদ্দিনের কথাই বলা যায়। আশির দশকে এলাকায় কামলা হিসেবে পরিচিত মেসবা, তার মা ও স্ত্রীসহ সবাই কামলা খাটতেন। অন্যের জমিতে কাজ করেই নিদারুণ কষ্টে চলত তাদের সংসার। তিনবেলা কখনই পেটপুরে খাওয়া হয়ে ওঠেনি তাদের। আধুনিক জীবনধারা কী—সে সম্পর্কে কোনো ধারণাই ছিল না দিনমজুর মেসবার পরিবারের। কিন্তু ধীরে ধীরে সে অবস্থার পরিবর্তন হয়। দিনমজুর মেসবা কোনো এক মাধ্যমে নিজের যত্সামান্য কৃষিজমি বিক্রি করে এবং নিজের ভিটেমাটি মহাজনের কাছে বন্ধক রেখে দুবাই যান। এখন দিন ফিরেছে সেই দিনমজুর মেসবার। কুঁড়েঘরের স্থলে এখন উঠেছে পাকা ঘর। বাড়িতে বসেছে সোলার প্যানেল। রয়েছে বিদ্যুত্। এসেছে রঙিন টেলিভিশন। এখন ফ্রিজসহ আধুনিক জীবনযাপনের অনেক উপকরণই রয়েছে মেসবার ঘরে। ভালো স্কুল-কলেজে পড়ছে তার ছেলেমেয়েরা। মেসবার মতো অসংখ্য প্রবাসী আছেন সখিপুরের বিভিন্ন গ্রামে।
প্রবাসী দেশের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কয়েকটি উপজেলাকে ছাড়িয়ে এখন জেলা শহরেও পড়েছে। শরীয়তপুর জেলা শহরে গেলেও দেখা যায় সেখানকার টাওয়ার নামগুলো প্রবাসী দেশের প্রতি ভালোবেসে রেখেছে। যেমন চৌরাস্তার সৌদি ভিলা, মধ্য শহরের কারিয়া হাউজ, কোরিয়া গার্ডেন ইত্যাদি।

নড়িয়া তাদের অনেকেরই পেশা ছিল কৃষক, জেলের মতো কষ্টের কাজ। আগে তাদের কেউ কেউ নদীতে মাছ ধরতেন, জমিতে বদলা খাটতেন, জমি চাষ করতেন, বর্গা চাষী ছিলেন কিংবা খেজুর গাছ কেটে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তাদের কর্ম প্রচেষ্টায় নড়িয়া উপজেলা একটি সমৃদ্ধ উপজেলা হিসেবে বাংলাদেশের মানচিত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে|

তবে পিছিয়ে রয়েছে জেলার গোসাইরহাট উপজেলাটি। সেখানে প্রবাসীর সংখ্যা অতি নগন্ন।যারা গেছেন তারা বিভিন্ন সময় দালালের মাধ্যমে গেয়ে আবার প্রত্যারিত হয়েছে। অনেকে ভিটে মাটি খুইয়ে নিংস্ব হয়ে বসে আছেন। অনেক বেকার বিদেশে যেয়ে নিজের ভাগ্য বদলাতে ইচ্ছুক কিন্তু দালালদের খপ্পরের ভয়ে তারা সেপথে এগুচ্ছেন না।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই জুন, ২০১৬ সকাল ৯:৫৭

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: এভাবে এগিয়ে যায় জনপদ। এগিয়ে যায় দেশ!

এ ব্যাক্তি উদৌগেই সাফল্যের গল্প।

আমাদের সরকার যদি পরিসংক্যানের উন্নতির সূক না দিয়ে সত্যিকারের এই রকম প্রবাস প্ররণের উদ্যোগ নিত-আরও অনেক এগিয়ে যেত দেশ প্রকৃত ভাবেই।
অথচ স্রেফ বাড়াগম্বরে প্রবাসে দরজা গত এক দশক ধরে প্রায় বন্ধ!

নড়িয়ার সফলকারিগরদের প্রতি রইল অভিনন্দন।

১৬ ই জুন, ২০১৬ সকাল ১১:২০

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: সালাম,
...........দাদা আপনার মত ব্লগার বর্তমানে আরো বেশি প্রয়োজন।
ধন্যবাদ,
......... মন্তব্য করার জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.