নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রতি যুগে একদল সত্যের অনুসারী থাকে। আমি সে দলে আছি।

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া)

সকল মানুষের মধ্যে কিছু কিছু ভুলত্রুটি আছে যা মানুষ নিজে বুঝতে পারে না, সেই ভুলগুলো ধরিয়ে দেয়া এই অধমের দায়িত্ব

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাড়ির বড় কর্তা।।

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:০৭


সব সময় মন ভালো থাকে না। রাজ্যের চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকলে পার্কে গিয়ে চুপচাপ বসে থাকি। মাঝে মাঝে বাদাম কিনে চিবাতে থাকি। বাদাম চিবাতে ভালো লাগলেও খোসা ছাড়াতে তীব্র বিরুক্তি চলে আসে। তখন ভাবি, পাশে যদি কেউ থেকে বাদামের খোসা ছাড়িয়ে দিত তাহলে মন্দ হতনা। কিন্তু সে কপাল কি আমার আছে? পার্কে গেলে আমার তরুণ-তরুণীদের ফিসফাস শুনতে খুব ইচ্ছে হয়। তারা পরস্পর এমনভাবে কথা বলে যেন পাশের লোকটটিও তা শুনতে পায় না। এটা কিভাবে সম্ভব, তা আমার কাছে এক ধরণের রহস্য।

বাড়ির কর্তা ব্যক্তিদের মাঝে মাঝে রাগ করতে হয়, তা না হলে কর্তা ব্যক্তিদের আসল মোজেজা প্রকাশ পায়না। পরিবারের সদস্যদের নিকট সহজে সমীহ আদায় করা যায়না। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, ইদানিং পরিবারের সদস্যদের সাথে রাগ করার কোন ক্ষেত্র পাইনা। সবাই কেমন জানি ভালো মানুষের মত আচরণ শুরু করেছে। মা নিয়মিত বাত-ব্যাথার ঔষুধ গিলেন। গিন্নি একজন আদর্শ গৃহিনী। বাচ্চাগুলো নিয়মিত স্কুল যায়, নিজ ইচ্ছাতেই হোমওয়ার্ক করে। ছোট ভাইটা আড্ডা-ফাজলামি ছেড়ে নিয়মিত পড়া-লেখায় অধিকতর মনোযোগী হয়েছে। আগে বিভিন্ন কারণে নিজে প্রতি নিজের রাগ হত কিন্তু সেটা এখন আর করতে পারিনা! সময় খারাপ থাকলে স্বর্ণ ধরলে ছাই হয় কিন্তু সময় ভালো থাকলে ছাই ধরলে স্বর্ণ হয়ে যায়। এই পরিবর্তণে আমি অবাক! ফলে রাগারাগির চর্চায় ভাটা পড়েছে। তাই নিজের ভিতর হম্বিতম্বি চলে আসলেও হা-হুতাশ করে মরতে হয়। অত্যান্ত কে একজন রুল ব্রেক করুক। যেন আমার রাগারাগির চর্চাটা নিয়মিত করতে পারি।

আজ পার্কে বসে আছি। মন কিছুটা খারাপ। সাথে বাদাম কিনে নিয়েছি কিন্তু খেতে ইচ্ছে করছেনা। অফিসে সামান্য একটা বিষয় নিয়ে আত্মীয় সাথে বড় ধরণের ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। বিষন্ন মনে চারপাশ তাকিয়ে দেখছি কে কি করছে। অনেকে হাঁটহাটি করে ওজন কমাচ্ছে, কেউ কেউ ম্যারাথন দৌড়াচ্ছে। এরা সম্ভবত ডায়াবেটিস রোগী। সেক্টরের পার্কে এটা কমন জিনিষ। ছোট ছোট বাচ্ছারা খেলাধূলা করছে। একজন বাবাকে দেখলাম তার দুটি বাচ্ছার সাথে ব্যাট দিয়ে খেলছে। বাবার দায়িত্ব হলো বলকে ছুঁড়ে মারা (বোলিং করা)। ছেলে দুটি কিছুক্ষণ পর পর পালাক্রমে ব্যাট করছে। বাবা শুধু বোলিং করেই যাচ্ছেন; এখানে ছেলে এবং বাবাদের মাঝে স্পষ্ট পার্থক্য ধরা পড়েছে। আমার ইচ্ছে করছে তাদের সাথে খেলায় যোগ দিতে। কিন্তু এ ধরণের ইচ্ছা অপ্রাসঙ্গিক। তাই তাদের খেলা উপভোগ করা ছাড়া দ্বিতীয় কোন গন্তব্য নেই।

হঠাৎ লোকটির ফোন আসলো। দেখে মনে হলো জরুরি ফোন। ছেলেদের সাথে খেলার ইতি ঘটাবে। কিন্তু ছেলেরা খেলায় মজে যাওয়ার কারণে খেলা ছাড়তে ইচ্ছুক নয়। তারা চায় বাবা আরো খেলুক। ছোট ছেলেটি বাবাকে খেলার জন্য বায়না ধরছে। বাবা বাধ্য হয়ে বাসায় ফোন দিলেন। মনে হলো বাসা পার্কের কাছাকাছি হবে। অগাত্য আমাকে কাছে পেয়ে বলে গেলেন, তার আম্মু আসা পর্যন্ত যেন দেখে রাখি। এটা আমার কাছে বিগ চান্স। তাদের সাথে খেলায় যোগ দিলাম। তারাও অপ্রত্যাশিত সঙ্গী খেলোয়ার পেয়ে খুশি। আমি তাদের কে বল করছি। তারা একেকটা বল সীমানা ছাড়া করছে। আমি মার খাওয়া বোলার।

কিছুক্ষণ পর ছেলেদের মা’ আসলেন। এসে আমার সাথে খেলতে দেখে কিছুটা অবাক হয়েছেন। সম্ভবত আমাকে দেখে তিনি অবাক হয়েছেন। আমি যে হয়নি তা নয়। এই যে শিলা! এ অনাকাঙ্খিত দেখা। যার সাথে জীবনে আর দেখা হবেনা বলে জানতাম সে আমার চোখের সামনে। জিঙ্গেস করতে ইচ্ছে করছে ‘কেমন আছো’? কিন্তু সে কি আমার প্রশ্নের উত্তর দিবে?
শিলা তার ছেলে দুটিকে বলল;
-চল বাসায় যাবে।
-না আমরা চাচ্চুর সাথে খেলব।
-তাহলে আমি তোমাদের রেখে চলে যাব।
-তুমি যাও, চাচ্চু আমাদের কে দিয়ে আসবে।

শিলা চলে যায়নি। পার্কের এক পাশে দাঁড়িয়ে মোবাইল টিপসে আর মাঝে মাঝে ফুলের ছবি তুলছে। আমার ভিতর এক প্রকার দ্যাহ সৃষ্টি হয়েছে। অনিশ্চয়তা স্বত্বেও বলের ডেলিভারী জোড়ে হচ্ছে। ছেলেরা আগের মত বল সীমানা ছাড়া করতে পারছেনা। আমাকে বলল, চাচ্চু আস্তে বোলিং কর। আমি যথা সম্ভব পেশি শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে বল করে যাচ্ছি। মাঝে মাঝে মুখ দিয়ে উচ্চারণ করছি; এটা বাউন্সার, এটা ইয়ূরকার, এটা অফ স্টাম্পের বাইরের বল, এটা লেগ স্টাম্পের, পারলে এবার সীমানা ছাড়া কর।

সন্ধ্যা হয়ে গেছে। মনের ভিতর ভাইব্রেশনের কারণে এখন আর ছেলেদের সাথে খেলতে ইচ্ছে করছেনা। কিন্তু ছেলেরা চাচ্ছে আজান দেয়া পর্যন্ত খেলি। তাদের কে বললাম আজ তবে থাক; আগামীকাল খেলব। তোমরা চাইলে বাদাম খেতে পারো? ছেলরা উত্তর দিলো খাবে। আমি তাদের কে পূর্বের কেনা বাদাম এনে দিলাম। ততক্ষণে শিলা এসে বলল; অপরিচিত লোকের দেয়া কিছু খায়না বাবারা। ছেলে দুটি আমাকে বাদাম ফিরিয়ে দিল। আমি বাদাম হাতে দাড়িয়ে রইলাম। শিলা চলে যাচ্ছে। সাথে তার বাচ্ছা দুটিও। তাদের চলে যাওয়া পথ চেয়ে রইলাম, আর ভাবলাম, সত্যিই আমি অপরিচিত, আমি তাদের কে? আমি শিলার কে? কেউ না! ভাবনায় ছেদ পড়ল মোবাইলের রিংটনে। বাসা থেকে মা ফোন করেছে, আমার স্ত্রী মায়ের সাথে কথা কাটাকাটি করে রাগ করে বসে আছে। কে জানি বলেছে, আমি শিলার সাথে পার্কে ডেটিং মারছি! নিশ্চয়ে এটা হাসিবের কাজ! সে আমাকে পার্কে খেলতে দেখেছে। ঢাকা শহরে সে ছাড়া শিলার সাথে পূর্বে আমার সম্পর্ক ছিল তা কেউ জানেনা। হায়রে.. বন্ধু, তোকে ভালোবাসি বেশি, তাই তুই জ্বালাসও বেশি। এদিকে আমার ছোট ছেলেটি দুষ্টুমি করতে গিয়ে খাট থেকে পড়ে হাত ভেঙ্গেছে। তাকে ডাক্তার খানা নিতে হবে। ফোন রেখে বাসার দিকে রওনা হলাম। কিছুক্ষণ পর আবার ফোন বেজে উঠল, রিসিভ করতেই ছোট ভাইয়েরর বন্ধু নোমানের গলা ভেসে উঠল, সে জানালো তরিকুল (আমার ছোট ভাই) মোটর সাইকেল চালাতে গিয়ে এক্সসিডেন্ট করেছে। আঘাত গুরুতর। বর্তমানে হাসপাতালে আছে। আমি ত্রি-সংকটে পড়েছি। সুখে থাকলে ভূতে কিলায়। আর কখনো রাগ দেখানোর ইচ্ছা প্রকাশ করব না। আমি বাড়ির কর্তা, কর্তাদের আবার রাগ কিসের। এখন আমাকে বিপদ মোকাবেলা করতে হবে। আমি এখন কার উপর রাগ করব!

কেউ আমারে মাইরালাস না ক্যারে?

মন্তব্য ১৫ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:২৬

চাঁদগাজী বলেছেন:



এটা ঘটেছে, নাকি আপনি গল্প লেখার চেস্টা করলেন? এতগুলো ঘটনা কি ২/১ ঘন্টার মাঝে ঘটতে পারে?

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:২৯

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: সময় খারাপ হলে অনেক কিছুই সম্ভব, তখন ছায়াও লাথি মারে। (এটা গল্প)।।।

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:২১

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: ঘটনাটি ঘটেছে ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন ব্যক্তির মধ্যে। এটা স্বাভাবিক, জগৎে পার সেকেন্ডে কত ঘটনা ঘটছে!

২| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:৩০

মনিরা সুলতানা বলেছেন: সুখে থাকলে ভূতে কিলায় !!!
সত্যি ই মাঝে মাঝে সুখে থাকতে ভূতে কিলায় ; লেখায় ভালোলাগা ।

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:৩২

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: সুখে থাকলে মানুষের স্বভাবত তার মন মেজাজ চেঞ্জ হয়ে যায়।

ধন্যবাদ আপু।

৩| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:৫১

জাহিদ অনিক বলেছেন: ততক্ষণে শিলা এসে বলল; অপরিচিত লোকের দেয়া কিছু খায়না বাবারা। - কি নিদারুণ অবহেলা!!!


সত্যি আপনারে কেউ মাইরালায় না ক্যারে!!

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:১৪

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: ধন্যবাদ।

পাঠ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

৪| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:২২

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: উত‌রে গে‌ছে...

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৫২

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: ধন্যবাদ

৫| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫২

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: এক প্রকার ভাল লাগলো।

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৫৩

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: ভাল লেগেছে জেনে আমারো ভাল লাগল।

কৃতজ্ঞতা জানবেন।

৬| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৫৩

কথাকথিকেথিকথন বলেছেন:




সুন্দর দৈনন্দিন গল্প । শিলার গল্পটা নতুন মাত্রা এনেছে, বিশেষ করে ডেটিং করার ব্যাপারটা !!

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৫৪

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: বিশ্লেষণ মূলক মন্তব্যের জন্য বিশেষ ধন্যবাদ।

শুভ কামনা জানবেন।

৭| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:৫৬

নাঈম জাহাঙ্গীর নয়ন বলেছেন: ভাই, শেষ লাইনটাতে হাসিয়ে দিলেন! নয়তো মনোমুগ্ধকর লেখাগুলো বেশ মনোযোগ কেড়েছিল। বিষণ্ণতা ভরা কথাগুলো হৃদয় ছোঁয়া
খুব ভালো লাগলো ভাই। আপনার ছেলে ও ভাইয়ের জন্য শুভকামনা রইল

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:৫৩

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

ভালবাসা জানবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.