নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রতি যুগে একদল সত্যের অনুসারী থাকে। আমি সে দলে আছি।

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া)

সকল মানুষের মধ্যে কিছু কিছু ভুলত্রুটি আছে যা মানুষ নিজে বুঝতে পারে না, সেই ভুলগুলো ধরিয়ে দেয়া এই অধমের দায়িত্ব

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন মা এবং তার সময়ের পরিক্রমা

১২ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:৫৬



আমার মা আমাকে ছোটকালে খুব মারতেন। আমাকে যেভাবে মেরেছেন অন্য ভাই বোনদের সেভাবে মারতেন না। এই মারার কারণে আমি তাকে জমের মত ভয় পেতাম। অপর দিকে বাবা আমাকে খুব আদর করতেন কিন্তু অন্য ভাইদের নিকট তিনি ছিলেন জমের মত। আমরা ছিলাম পাঁচ ভাই এক বোন।

আমি ছিলাম ভাইবোনের মধ্যে চারজনের ছোট। বড় সবাই কম বেশি মার সাথে নানু বাড়ি যেত। বড় আপা এবং ভাই নানু বাড়িতেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তারা যখন ছোট ছিল তখন মায়ের সাথে নানু বাড়িতে নাইওর যেত। সেখানে গিয়ে তারা বাবার টেরিটরি আওতার বাহিরে থাকার ফলে নানা রকম দুষ্টামিতে মেতে উঠতেন। কিন্তু আমরা ছোট দুই ভাই কখনো মায়ের সাথে নাওইর যেতে পারেনি। কারণ, সে সময় মায়ের বয়স হয়েছিল এবং এত বড় সংসার রেখে একদিন কোথাও যাওয়ার যো ছিলনা। অবশ্য নানু বাড়িতে বড় আপা কিংবা ভাইদের সাথে মাঝেমধ্যে বেড়াতে যেতাম। সেটি ছিল ভিন্ন ব্যাপার।

আমরা যখন বড় হচ্ছিলাম তখন বড় ভাই এবং আপা সেই সকল দুষ্টামির কথা আমাদের সাথে প্রায় মজা এবং উচ্ছাস নিয়ে বলতেন। এখনো ঈদেরছুটিতে সকলে এক হলে তাদের সেই দুষ্টামির কথা উঠে আসে। তারা যখন এই সমস্ত বিষয় আলোচনা করেন তখন মা' শিহরিত হন। তিনি যেন কুড়ি বাইশ বছরে ফিরে যান। তখন তিনি শৈশব ও কৈশর হাতরে ফিরেন।

মা' প্রায়ই আমাদের নিকট নানা বাড়ির গল্প করতেন। তার বেশিরভাগ ছিল কৈশর কালীন সময়ের। আমরা ভাইবোন সবাই এক সাথে তার গল্পগুলো গোগ্রাসে গিলতাম। আমি সবার থেকে একটু দূরে বসতাম। আমি তখন ভাবতাম তিনি হয়ত আমার অমনোযোগীতা দেখলে যেকোনো সময় চড় থাপ্পড় মারবেন।

একদিন তিনি আমাদের কে তার বিবাহ পরবর্তী ঘটনা বললেন।
বড় আপা তখন পেটে। রাতের বেলা বাবা বাজার থেকে অনেকগুলো ইলিশ মাছ কিনে এনেছেন। কিন্তু সেই সময়ের মানুষের বিশ্বাস ছিল রাত্রে বেলা গর্ভবতী মায়েরা ইলিশ কাটলে কিংবা খেলে শয়তানের আছর লাগে। এই কু-সংস্কার তিনি দাদী থেকে পেয়েছিলেন। দাদী পেয়েছিলেন বাবার দাদী থেকে। দাদী বড় নাতির মুখ দেখে ইতিপূর্বে বিদায় নিয়েছেন। তাই বাবা নিজ হাতে মাছ কাটলেন এবং অতপর সেখান থেকে দশ বারো পিচ মাছ ও ডিম ভেজে এনেছেন। এর আগে বাবা কখনো মাছ কাটা এবং রান্নাবান্না করেনি।

যখন তারা ভাত খেতে বসেছেন তখন বাবা বললেন,
-খেয়ে দেখ কেমন হয়েছে।
-না, খাওয়া যাবেনা, খেলে ওসুখ হবে।
-সমস্যা নেই। আল্লাহ্‌র নাম নিয়ে খাও।
মা কিছুতেই খেতে ইচ্ছুক ছিলেন না কিন্তু বাবার অত্যাধিক পীড়াপীড়িতে মাছের কিছু অংশ খেলেন। কিন্তু কি এক আশ্চর্য কারণে সকাল রাত্র থেকে তিনি পেটের ব্যথা অনুভব করতে থাকেন। সেই ব্যথা বাইশ দিন ভুগেছিলেন। তখন মায়ের পেটে বড় বোন ছিল তাই ঔষধ খেতে অনেক সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়েছে। সেদিনকার পর থেকে মা ইলিশ মাছ খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। যখনি আমরা ইলিশ পাতে নিয়ে খেতে বসতাম তখন মা'কে খেতে সাধলেও তিনি খেতেন না। আমাদের তখন মায়ের সেদিনকার বলা ঘটনা মনে পড়ে যেত। মা মাছ না খেলে বড় বোনের মুখটা কাল হয়ে যেত। বড় আপা ভাবতেন মায়ের মাছ না খাওয়ার পিছনে তিনি দায়ী! তাই বড় আপা আস্তে আস্তে ইলিশ মাছ খাওয়া ছেড়ে দিলেন।

কিছুদিন আগে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছি। সাথে আমার স্ত্রী আছে। আমি বড় আপাকে ফোন করলাম ভাগ্না ভাগ্নি সহ চলে আসার জন্য। তিনি আসলেন। আমি বাজার থেকে গরুর গোস্ত আর তাজা দেখে অনেকগুলো ইলিশ কিনে আনলাম। মা নিজ হাতে রান্না করেছেন। খাওয়ার সময় বড় আপা গরু গোস্ত খেলেও ইলিশ খাচ্ছেন না। মা অনেক সাধাসাধি করলেন, আমরাও সাধলাম কিন্তু তিনি খেলেন না। কারণ জিঙ্গেস করলে তিনি মায়ের দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে ছিলেন। তারপর মায়ের পূর্বেকার ঘটনা পুন:রায় আমাদের সাথে শেয়ার করলেন। শেষে বললেন, না খেয়ে শান্তিতে থাকা ভাল। মা যদি খায় তাহলে আমি খাব। পরক্ষণে মনে হলো মা নিজেও ত' খায়না। তাদের দেখাদেখি আমার গিন্নিও খাচ্ছেন না। আমি মা'কে খাওয়ার জন্য সাধাসাধি করলাম কিন্তু তিনি কিছুতেই খাবেন না। শেষে আমার জিদ বেড়ে গেলে বলি উঠি, তোমাদের পেটে এখন তো কেউ নেই তাহলে কেন খাচ্ছো না? আমার বলা শেষ হলে মা, বড় আপা, আমার স্ত্রী এবং অন্যরা এক সাথে খিলখিল করে হেসে উঠেন। মা কিছুটা লজ্জাও পেয়েছেন, তিনি আমার কাঁধে হাত রেখে বললেন, বাবা তুই এখন অনেক বড় হয়ে গেছিস। কিন্তু তোর মন মেজাজ সেই আগের মত আছে। বলা শেষ হলে তিনি আমার মাথায় হাত রেখে আদর করতে লাগলেন। আমি মায়ের হাতের পরশ পেয়ে কিছুক্ষণ চোখ বুজে রইলাম। কিন্তু কিছুক্ষণ পর মনে হলো, তিনি আমাকে সেই আগের মত মাইর শুরু করবেন। তাই হাতটি দূরে সরাতে বললাম, মা অনিশ্চা সত্ত্বেও মাথা থেকে হাত সরালেন। আমি যেন হাফছেড়ে বাছলাম। কিছুক্ষণ পর পুনরায় বললাম, মা বড় মামাকে আসতে বলোনা তোমাকে নাইওর নিতে আসার জন্য, তোমার সাথে আমরা নাইওর যাব। এবার সবাই আবারো এক সাথে হেসে উঠলাম। মা কিছুটা নড়েচড়ে উঠলেন, যেন তিনি আঠারো-বিশ বছ রে চলে গেলেন। নানা বাড়িতে গিয়ে সব কিছু দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু আমি ভাবলাম তিনি আমাকে দুষ্টামির জন্য মারবেন। আমি ছোটকালে অনেক দুষ্ট ছিলাম, সেজন্য তিনি মারতেন, হয়ত আজো মারবেন, কিন্তু বয়সের কারণে পারছেন না। কিছুক্ষণ পর আমার নিরবতা ভাংগে ভাগ্নির কথায়। সে সবাই কে অবাক করে দিয়ে বলল, নানু এবং মায়ের এই কু-সংস্কার আমি মানিনা, মানবো না।

আসলেই ঠিক তাই, যার কোন ভিত্তি নাই তা মানতে যাবে কেন! বংশপরম্পরায় এই কু-সংস্কারের অবসান হওয়ার দরকার। আজকের পোলাপান অনেক স্মার্ট। তোমাদের জন্য শুভ কামনা রইল। তোমাদের হাতেই আগামীর পৃথিবী।

ছবি: গুগল থেকে নিয়েছি।

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:১৪

চাঁদগাজী বলেছেন:


শৈশবের স্মৃতিই জীবনের সবচেয়ে প্রানবন্ত দিনগুলোর স্মৃতি

১২ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:২০

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: জি, প্রত্যেক টি মানুষের পারিবারিক প্রাণবন্ত শৈশব রয়েছে।

২| ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:২৮

প্রামানিক বলেছেন: দারুণ স্মৃতিচারণ, শৈশব কৈশরের অনেক ঘটনাই ভোলা যায় না। ঘটনা পড়ে আমার মায়ের অনেক কথাই মনে পড়ে গেল। ধন্যবাদ

১২ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:৪২

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন:
আমরা সবাই একান্নবর্তী পরিবারের সুখ দুখের সাক্ষী। কিন্তু বর্তমান সময়ে তা অতীত।

আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।।।

৩| ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:৫৭

শায়মা বলেছেন: মজার স্মৃতি!!!!


অনেক অনেক ভালো লাগা!

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:১০

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: আপনার মন্তব্যে বুঝতে পারলাম কিছুটা হলেও লিখতে পেরেছি।
ধন্যবাদ।।।

৪| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:২৭

অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য বলেছেন: ঘটনাটা কষ্টের হলেও ভালোবাসার চমৎকার একটা দৃষ্টান্ত পাওয়া গেলো।

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৭:৫৯

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।।
শৈশবের দিনগুলো সত্যি অনেক মজার এবং ভালোবাসাযুক্ত ছিল।

৫| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ২:৫০

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: জীবনের মধুরতম স্মৃতিগুলির একটা শৈশবের স্মৃতি

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৮:০১

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: আমাদের প্রত্যেকের গর্ব করার মত একটি শৈশব আছে।

৬| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৮ ভোর ৫:০৮

জাহিদ অনিক বলেছেন:
আপনার শৈশবের গল্প, মায়ের গল্প ও ইলিশ মাছের গল্প ভালো লাগলো শাহাদাৎ ভাই

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৮:০২

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।
আপনার মন্তব্যে সত্যিই অনুপ্রাণিত।

৭| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৮:৫২

আকিব হাসান জাভেদ বলেছেন: মায়ের সাথে শৈশব সেই স্মৃতি আমাকে ফিরে নিয়ে গেলো মায়ের ডাকা বাবু নামটাই। ভালো লিখেছেন।

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:৪৮

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

৮| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:৫৫

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো লাগলো আপনার শৈশব এর কথা। বেশ নষ্টালজিয়া'ইয় পরে গেলাম।
মা আপনাকে বেশি মারতেন কেন? দুষ্টমি কি বেশি করতেন?

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:২৪

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: ধন্যবাদ।

আমি অনেক দুষ্টামি করতাম।

৯| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:৩৮

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: মাঝে মাঝে শৈশব সৃতির জাবর কাটতে মন্দ লাগেনা।

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:৫২

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: জি, ধন্যবাদ।।।

১০| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৫

খায়রুল আহসান বলেছেন: খুব সুন্দর স্মৃতিকথা। তবে আপনার মায়ের আপনাকে মারধর করার ব্যাপারটা মনে হয় আপনার মনে নেতিবাচকভাবে গেঁথে আছে।

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৭:৪৪

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: বাবা মায়ের শাসন বারণ উপদেশ সন্তানের মধ্যে সারা জীবন প্রভাব বিস্তার করে। তবে মারধর বিষয়টি মনের মধ্যে গেঁথে থাকে, তা অনেক সময়য় নৈতিবাচক ক্রিয়া করে।


ধন্যবাদ।।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.