নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রতি যুগে একদল সত্যের অনুসারী থাকে। আমি সে দলে আছি।

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া)

সকল মানুষের মধ্যে কিছু কিছু ভুলত্রুটি আছে যা মানুষ নিজে বুঝতে পারে না, সেই ভুলগুলো ধরিয়ে দেয়া এই অধমের দায়িত্ব

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিধর্মীর সাথে আমার প্রথম পরিচয়।

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০৪


১৯৯৪ সাল। আমি প্রাইমারী স্কুলে ছোট ওয়ানে (বর্তমানে যেটাকে শিশু শ্রেণি বলা হয়) ভর্তি হয়েছি। আমাদের এলাকাটি ছিলো প্রত্যন্ত অঞ্চলের। এখানকার দিনের মতো তখন খুব কম বাবা-মা স্কুলে গিয়ে সন্তানদের ভর্তি করতেন। শিশুদের স্কুলে ভর্তি হওয়ার সময় হলে বাবা মা শুধু মুখে "স্কুলে যা…. স্কুলে যা" বলেই দায়িত্ব শেষ করতেন। ছোটরা বড়দের দেখাদেখি স্কুলে যেত। শিক্ষকগণ বছর শেষে উপস্থিত ছাত্র-ছাত্রীর চেহারা দেখে নাম জিঙ্গেস করতেন, তারপর হাজিরা খাতায় নাম উঠাতেন। তাই আশি বা নব্বই দশকে স্কুল ভর্তি হওয়া ছাত্র-ছাত্রীদের বয়স বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীদের বয়সের তুলনা কিছুটা বেশি। তবে আমি মোটামুটি ঠিক বয়সে স্কুলে ভর্তি হতে পেরেছি। সেটা সম্ভব হয়েছে আমার পিঠাপিঠি বড় দু্ই ভাই সে সময় একই স্কুলে পড়ার কারণে ।

ছোট ওয়ানে পড়ার সময় একদিনকার ঘটনা। স্কুলের মাঠে রাস্তার পাশে আমি আর আমার সহপাঠি সুজন একে অপরের দিকে দুষ্টামি করে বালি ছুঁড়াছুড়ি করছি। হঠাৎ বালির কিছু অংশ আমার চোখে সরাসরি আঘাত করে। আমি চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠি। আমার চিৎকার শুনে বড় ভাই কারণ জিঙ্গেস করলে কাঁদতে কাঁদতে সুজন কে দেখিয়ে দেই। এবার বড় ভাই সুজনের দিকে তেড়ে গেলেন এবং তাকে একটি থাপ্পর মাড়লেন। বড় ভাইয়ের থাপ্পর খেয়ে সুজনও কাঁদতে শুরু করে। সুজনের কান্না দেখে আমার কান্না কিছুটা থেমে গেছে। আমি শান্তনা পেয়েছি, বড় ভাই তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছেন। কিন্তু সুজনের কান্না চলতে থাকে। এমন সময় রাস্তার পাশ দিয়ে আমার মামা সম্পর্কের একজন তাকে কান্নার কারণ জিঙ্গেস করলে সে আমাকে দেখিয়ে দেয়। তখন মামা সম্পর্কের সে লোকটা কিছুটা তাচ্ছিল্য সূরে বলে, তোর মত দুই চার জন হিন্দুর বাচ্চা মারলে কি আসে যায়, তুই কাঁদলেই বা কী! যা.. যা. হেড স্যারের কাছে নালিশ কর। কিন্তু সুজন সেদিন নালিশ করতে পারেনি। হয়ত ছোট ছিলো বিধায় নালিশ করার সাহস ও পদ্ধতি তার জানা ছিলোনা। কিন্তু সেদিনকার ঘটনায় আমার ছোট্ট মনে খুব কম্পন সৃষ্টি করেছে। হিন্দু মারলে কি যায় আসে, হিন্দু....।

বড় ভাই রাতের বেলা মায়ের কাছে উক্ত ঘটনা খুলে বললেন, মা সমস্ত ঘটনা শুনে বড় ভাইকে বকা দিলেন। বললেন তাকে মারা ঠিক হয়নি। ভবিষ্যৎে মারতেও নিষেধ করলেন। তারপর বললেন, পোলাপানে পোলাপানে মারামারি করলে বড়দের জিদ দেখাতে নেই। কারণা তারা পোলাপান। তারপর মা বড় ভাইয়ের গালে আলতু চেপে বললেন তুইও তো পোলাপান। আমি হঠাৎ মাকে ‘হিন্দু’ কী..জিঙ্গেস করলে মা অবাক হয়ে যান। তারপর আমার উত্তরে মা বললেন, হিন্দু হলো আমাদের থেকে ভিন্ন একটি ধর্ম, একটি ভিন্ন ধর্মালম্বী সম্প্রদায়। আমরা মসজিদে নামাজ পড়ি, তারা মন্দিরে পূজা করে। আমরা পানি খাই, তারা জল খায়। এবার আমি বললাম, মা জল কি? মা উত্তর দিলন জল হলো পানি। তাহলে তারা জল খায় কেন? জল খাওয়া দরকার তাই খায়। তুমি যে বললে পানি খায়। এবার মা বললেন বড় হয়ে বুঝবি কেন জল খায়। এখন তবে ঘুমাও। তারপর মা তাদের পরিবারের সাথে আমাদের পরিবারের দীর্ঘদিনের সম্পর্কের কথা বললেন। বাবা তাদের দোকান থেকে হাটবারে মিষ্টি কিনে আনেন সে কথাও বললেন। আমার নানার দোকানের সাথে সুজনের দাদার মিষ্টি দোকান ছিল।

সুজনের সাথে সেই থেকে পথচলা, বিধর্মীর সাথে প্রথম পরিচয়। সেই পরিচয় বন্ধুত্বের নিয়মে বাঁধা পড়েছে। সে আমার বেস্ট ফ্রেন্ডদের মধ্যে একজন। আমাদের বন্ধু সার্কেলদের মধ্যে অন্যতম। এখনো প্রতিনিয়ত সুজন ঘোষের কাপড় দোকানে সকাল কিংবা বিকালে আড্ডা বসে। লোকাল বন্ধুদের অনেকেই সেই আড্ডায় যোগ দেয়। আমারা অনেকে শহরে থাকার কারণে সেই আড্ডায় যোগ দিতে পারিনা। কিন্তু কাছে পেলে সুজন তার ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক সব কথাই আমার কাছে খুলে বলে। তার জন্য পরিবার থেকে এক বছর ধরে মেয়ে চাওয়া হচ্ছে। কিন্তু যে মেয়ে তার পছন্দ হচ্ছে সে মেয়ের পরিবার তাকে ফিরিয়ে দিচ্ছে। তার নাকি একটাই দোষ, তারা আমাদের এলাকায় অনলি ওয়ান ফ্যামিলির লোক, তাদের নাকি আলাদা সমাজ নাই। তাদের ঘরে মেয়ে বিয়ে দিতে তুলনামূলক উচ্চ ঘোষ পরিবার অনীহা। তাইতো সে.. সেদিন দুঃখ করে বলেই ফেলল, দো্স্ত আমরা হলাম সংখ্যালঘুদের মধ্যে সংখ্যা লঘু পরিবার। সংখ্যালঘু শব্দটি একটি আপেক্ষিক শব্দ।

“সংখ্যালঘু শব্দটি আপেক্ষিক শব্দ” কিভাবে ব্যাখ্যা করব সেদিন আমি বুঝতে পারিনি। ।

ছবিঃ আমি নিজে ড্রয়িং করেছি।

মন্তব্য ২১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০৯

রাজীব নুর বলেছেন: সহজ সরল ভাষায় সুন্দর করে লিখেছেন।

আমার কাছে সবাই মানুষ। কোনো ধর্মই আমার কাছে বড় নয়।

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০৮

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: আমরা সবাই মানুষ। আমাদের প্রত্যেকের নাগরিক এবং রাষ্ট্রীয় অধিকার রয়েছে। তবে ধর্মের ক্ষেত্রে সবার স্বাতন্ত্রবোধ আছে। সবাই সবার ধর্মের ক্ষেত্রে আলাদা। তবে প্রত্যেক ধর্মের প্রতি আমাদের সহনশীলতা ও রেস্পেক্ট ধাকা জরুরী।

২| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:১৯

রোকনুজ্জামান খান বলেছেন: আমাদের বাড়িতে মোট চার ঘর হিন্দু আর আমরা দুই ঘর মুসলিম। আমি জন্মের পর থেকেই দেখে আসতেছি আমাদের মাঝে কোন বিরোধ নেই। ধর্ম ভিন্ন হলেও আমরা পারস্পরিক। সুজন ভাইয়ের প্রতি শুভ কামানা রইলো। যেন তারাতারি তার বিয়েটা হয়ে যায়।

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৭

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: আসলে হিন্দুদের নিয়ে আমাদের ভুল ধারণা আছে। অনেকের ধারণা হিন্দুরা শুধু সংখ্যালঘু নির্যাতনের কারণে আমাদের দেশ ছেড়ে ইন্ডিয়া চলে যাচ্ছে। এই ধারণা আংশিক সত্য হলেও বাকিটা সম্পূর্ণ ভুল। কেননা এতে তাদের দেশ প্রেম প্রশ্নের মুখে পরে।

মাইগ্রেশন একটি আদিমতম প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া কিছু অনুঘটকের কারণে হয়ে থাকে, তারমধ্যে জীবন ধারণের সহজ লভ্যতা,নিরাপত্তা, উন্নত জীবনের নিশ্চয়তা, ফুড সাপ্লাই চেইনের ভারসাম্যতা এবং ধর্মীয় তীর্থ স্থানের টান ইত্যাদি অন্যতম। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভারত থেকে বিগত দশকে বিভিন্ন দেশে কোটি কোটি হিন্দু নাগরিক মাইগ্রেশন হয়েছে।

৩| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:২০

চাঁদগাজী বলেছেন:


আমাদের গ্রামে হিন্দু পরিবারের সংখ্যা ছিলো বেশী; ফলে, স্কুলে যাবার অনেক আগের থেকেই হিন্দু বাড়ীতে যাওয়া-আসা ছিলো, পুজা-পার্বনে খাওয়াদাওয়া ছিলো, কোনভাবে আলাদা বলে মনে হয়নি।

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:০৪

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: আমাদের ওয়ার্ডে মাত্র এক ঘর হিন্দু পরিবার। সে পরিবারের প্রধান কর্তা হলেন শম্ভু ঘোষ। শম্ভু ঘোষের দাদা নদী ভাঙ্গার কবলে পড়ে আমাদের এলাকায় বসত গড়েন। এখন শম্ভু ঘোষের তিন ছেলে। জন সংখ্যা বাড়ছে।

৪| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:২২

নেওয়াজ আলি বলেছেন: সুন্দর উপস্থাপন ,বেশ ভালো ।

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:০৫

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: উৎসাহমূলক মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ। আপনার গায়ের জামাটা হেব্বি লাগছে।

৫| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:২৯

মানবিক_মানব বলেছেন: বিধর্মী শব্দের অর্থ যার ধর্ম নেই।
হিন্দুদের কি ধর্ম নেই?
অনুগ্রহ করে বিকল্প শব্দ চয়ন করুন।

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:০৬

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: এখানে বিধর্মী দ্বারা আমি অন্য ধর্মের লোক বুঝিয়েছে। অর্থাৎ বিপরীত ধর্মী লোক। পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ।

৬| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:৪৩

রাজীব নুর বলেছেন: আমার মন্তব্যের উত্তর দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:০৬

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: ফিরতী মন্তব্যের জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ ভাই।

৭| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:৪৬

আহমেদ জী এস বলেছেন: শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) ,




অসাম্প্রদায়িক একটি লেখা।

একটা সময় ছিলো যখন সব ধর্মের লোকেরা একে অপরের কাছাকাছি ছিলো - বিভেদ ছিলোনা কোনও। ছিলো আত্মীয়ের মতো - বন্ধুর মতো। হায়, সেদিন আর নেই!

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:০৯

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: হিন্দু মুসলমান সহ-অবস্থান উপমহাদেশে হাজার বছরেরও অধিক সময়ের। মাঝে মধ্যে রাজনৈতিক ও জাতিগত কিছু সমস্যা হয়েছিলো তবে তা সাময়িক। তবে এখানকার অবস্থা ভিন্ন।

ধন্যবাদ।

৮| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:৩৮

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
লেখা ও ছবি সুন্দর হয়েছে।

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:১৬

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: ধন্যবাদ মাইদুল ভাই।

৯| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:০৩

বুলবুল ৩৩৩ বলেছেন: গল্পটি সুন্দর কিন্তু গল্পের নাম সুন্দর হয়নি বলে আমার ধারনা। বিধর্মী বলতে বুঝানো হয় যার ধর্ম নেই। আপনার বন্ধু সুজনের তো ধর্ম আছে তাহলে বিধর্মী বলাটা বোধহয় যুক্তিযুক্ত হয়নি।

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:১৭

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: যা হউক আপনার মন্তব্য বুঝলাম। মতামত রাখার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।

১০| ২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:২৩

মানবিক_মানব বলেছেন: শ্রদ্ধেয় ব্লগারবৃন্দ,
অনুগ্রহ করে আমার ব্লগে ঘুরে আসুন।
আমার ১ম পোস্ট ২০১৩-১৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সংঘটিত ধর্ষণের পরিসংখ্যান বিষয়ক।

১১| ২১ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৫:৫৪

তারেক ফাহিম বলেছেন: শাহাদাৎ ভাই, কেমন আছেন?
আপনাকে অনেক দিন পর দেখলাম; হয়ত ব্লগে আমি অনিয়মিত বিধায়।

প্রাইমারী স্কুলে আমারও অনেক হিন্দু ফ্রেন্ড ছিল, যাদেরকে হারিয়ে ফেললাম।

আমার বেলায় যার সাথে পরিচয় পর্বে ঝগড়া কিংবা মনমালিন্য হয়, তারাই আমার কেন জানি প্রিয় হয়ে উঠে :)

সুখ পাঠ্য।

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১০:২৭

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: ভাই ভালো আছি। দেরিতে উত্তর দেওয়া জন্য দুঃখিত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.