![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
খাওয়া শেষ করে হোটেলেই
কিছুক্ষণ গল্প গুজব চলল।। এরপর
খাবারের বিল দিয়ে আমরা
হোটেল থেকে বেরিয়ে পরলাম।।
হোটেল থেকেই দেখা যাচ্ছিল
রোদ অত্যাধিক বৃদ্ধি পেয়েছে।।
বাইরে এসে যথারীতি রৌদ্রের
প্রকট আলোরণই প্রত্যক্ষ করতে হল।।
সূর্যের তাপ যেন বাধা মানছে না।।
দ্রুত হেঁটে আমরা নৌকার কাছে
পৌছালাম।।এবার আর কেও নৌকার
ছাদে বসার সাহস করল না।।সবাই
একে একে নৌকার ছাউনির
ভিতরে প্রবেশ করল।। ছাউনির
ভিতরটা তের জন মানুষ বসার জন্য
অপ্রতুল হলেও সবাই কিছুটা জায়গা
নিয়ে বসে পরল।। সাধারণত দুপুরের
খাবারের পরে শরীরের ক্লান্তি
প্রকাশ পায়।। এই অদ্ভুত কারনেই সবার
মুখেই স্পষ্ট একটা ক্লান্তির ছাপ
লক্ষ্য করা গেল।। আমার মধ্যে যে
ক্লান্তিটা প্রকাশ পাচ্ছে না,তা
নয়।।বরং ক্লান্তি হয়ত আমার মধ্যেই
তখন বেশি।। সারারাত ঘুম না
হওয়ায় চোখ ভেঙে ঘুম আসতে
লাগল।। ইঞ্জিনের পাশে সামান্য
একটু জায়গাতে কোনোরকমে শুয়ে
পরলাম।। ইঞ্জিনের প্রকট শব্দ যেন
কানে এসে বিঁধতে শুরু করল।। আমার
অন্যান্য সঙ্গীদের মধ্যে কেও কেও
গল্প করছে,কেও বা নিজের
ক্যামেরা বা মোবাইলে
সারাদিনে তোলা টাঙ্গুয়ার রূপ
দেখায় ব্যস্ত।। এরই মধ্যে কখন যে
ঘুমিয়ে পরেছি বুঝিনি।।
কতখন ঘুমিয়েছি বুঝিনি তবে খুব
বেশি সময় না।। হটাৎ ঘুম ভাঙল
কিসের যেন আওয়াজে।। ঘুম
ভাঙতেই বুঝতে পারলাম নৌকা
স্থির।। ভিতর থেকে বাইরে দেখা
যাচ্ছিল না তাই ভাবলাম হয়ত
আমরা পাড়ে পৌছে গেছি।। কিন্তু
না,ছাউনি থেকে বের হতেই আমার
ভুল ভাঙল।। বের হয়ে দেখলাম
টাঙ্গুয়ার মাঝেই নিচের মাটিতে
একটা বাঁশ গেঁথে নৌকাকে স্থির
করা হয়েছে।।অর্থাৎ পানি এখানে
খুব বেশি গভীর না।। হটাৎ এই
যাত্রা বিরতির কারন বুঝতে বেশি
সময় লাগল না।। রাসেল ভাই এবং
মেহেদী ভাইকে পানিতে
দেখেই বুঝতে পারলাম এই যাত্রা
বিরতির কারন জলকেলি ছাড়া আর
কিছুই নয়।। সাঁতার খুব ভালভাবে না
জানলেও এই গভীরতায় গোসল করার
ক্ষমতা আমার আছে।।তাই কিছু না
ভেবেই জামা টা খুলেই ঝাপ
দিলাম টাঙ্গুয়ার শীতল জলে।।
টাঙ্গুয়ার পানি যখন আমার সমস্ত
শরীরকে সিক্ত করেছে তখন মনে হল
টাঙ্গুয়া যেন আমাকে তার বুকে
টেনে নিয়েছে পরম মমতায়।।
প্রায় আধাঘণ্টা চলল আমাদের
জলকেলি উৎসব।।এরপর সবাই একে
একে নৌকায় উঠে জামা কাপড়
পরিবর্তন করে ভেজা জামা কাপড়
নৌকার ওপরে বিছিয়ে দিয়েছি
শুকানোর জন্য।।নৌকা ততক্ষণে
চলতে শুরু করেছে।। গোসলের পর সেই
ক্লান্তির ছাপটা আর কারও মুখেই
দেখা গেল না।।এখন আমাদের
যাত্রা সকালে দেখা সেই
মেঘালয় পর্বতের পাদদেশে।। সুর্য
তখন পশ্চিম আকাশে হেলে
পরেছে।।সূর্যের প্রখরতাটাও অনেক
কম।।সকলেই তাই নৌকার উপরে বসে
বিকালের শান্ত পরিবেশে
টাঙ্গুয়ার রূপ উপভোগ করতে
লাগলাম।।বিকালে টাঙ্গুয়ার রূপ
সকাল কিংবা দুপুরের রূপের চেয়ে
অনেকটাই আলাদা।।সকালের মত
কর্মব্যস্ততা এখন আর নেই।।পরিবেশ
অনেক বেশি শান্ত।। টাঙ্গুয়ার বুকে
নৌকার সংখ্যাও হটাৎ যেন কমে
গেছে।।মাঝে মাঝে দুই একটা
নৌকা দেখা যাচ্ছে।।
তখন টাঙ্গুয়ার দুই দিকে লোকালয়
দেখা গেলেও তা বেশ দূরে।।
বিকালের স্নিগ্ধতায় পানির
রঙটাও আকাশের রঙের মত নীলাভ
হয়ে গেছে।।এই স্নিগ্ধতা যেন
সকলের মনকেই তখন গ্রাস করেছে ।।
সকলে যেন নিজের মনের সাথেই
নিজে কথা বলছে।।
অদ্ভুত এক নীরবতার মাঝে সুর্য কখন
যে পশ্চিম দিগন্তের কাছে পৌছে
সূর্যাস্তের আভাষ দিচ্ছে বুঝতেই
পারিনি।।
সূর্যাস্ত যে এত সুন্দর হতে
পারে তা কল্পনাতেও আমি কখনো
ভাবিনি।। টাঙ্গুয়ার বুকে ডুবন্ত
সূর্যের প্রতিচ্ছবি দেখে মনে হচ্ছে
একই সাথে দুইটি সূর্য পরস্পর মিলিত
হচ্ছে।।আকাশকে মনে হচ্ছে কোন
ক্যানভাসে শিল্পীর তুলিতে আঁকা
আলো ছায়ার খেলা।।অপরূপ এবং
অবর্ণনীয় এই সৌন্দর্য।। এই সৌন্দর্যকে
শুধু উপভোগ করা যায়,বর্ণনা করা যায় না।।
এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে
সন্ধ্যার শেষ আলোতে আমরা একটি
গ্রামে পৌছালাম।। গ্রামটির নাম
ট্যাকের হাট।।এটিই ঐ দিনের মত
আমাদের গন্তব্য।। এই গ্রামটির
অবস্থান মেঘালয় পাহাড়ের ঠিক
নিচেই।। যেখান থেকে পাহাড় শুরু
হয়েছে সেখানেই বাংলাদেশের
ভূখণ্ড শেষ এবং ভারত শুরু।। নিচ
থেকে পাহাড়ের গায়ে অবস্থিত
ভারতীয় তিনটি দালান এবং
আদিবাসীদের বাসস্থান দেখা
গেল।।যাই হোক আমরা এখন যাচ্ছি
এই এলাকার চেয়ারম্যানের
বাড়িতে।।সেখানেই আমরা
থাকব।।তবে নৌকায়ও থাকার
ব্যবস্থা আছে।।
হোটেলে যাওয়ার পথে চোখে
পরল কিছু টিলা।। টিলার অপরে সবুজ
ঘাস যেন কেও সমান করে কেঁটে
রেখেছে।।দেখতে বেশ সুন্দর।। আরও
কিছুদূর এগোতেই চোখে পরল একটি
চূনা পাথরের লেক।।সাধারণত
এধরনের লেকের পানি গাড় সবুজ হয়
যা দেখতে খুবই মনোরম।।
কিন্তু সন্ধ্যার শেষ আলোতে এর পানি
যেন গাড় নীল রঙ ধারণ করেছে।।
অপরূপ এই লেকটি আমাদের মনকে
তার সৌন্দর্য দিয়ে সহজেই আচ্ছন্ন
করল।।এরপর পুনরায় আমরা এগিয়ে
গেলাম আমাদের গন্তব্যের দিকে।।
চেয়ারম্যানের বাড়িতে যখন
পৌছালাম তখন বাইরে রাতের
অন্ধকার নেমেছে।।বাড়িটি
দেখে বুঝতে পারলাম এটি মূলত
হোটেলের কাঠামোতেই তৈরি
করা হয়েছে।।সবার মধ্যে রুম ভাগ
করে দেয়া হল।।আমি আর মাসুদ আঙ্কল
এক রুমে।।আমাদের রুমে দুইটি খাট।।
নিদ্রাহীন রাত আর সারাদিনের
ঘোরাঘুরিতে আমি তখন অনেক
ক্লান্ত।। কোনোরকমে ফ্রেশ হয়ে
বিছানায় শুয়ে পরলাম একটু
বিশ্রামের জন্য।।কিন্তু কখন যে
ঘুমিয়ে গিয়েছি বুঝতে পারিনি।।
এবার ঘুম ভাঙল মাসুদ আঙ্কলের
ডাকে।। রাতের খাবারের সময়
হয়েছে।। অর্থাৎ রাত তখন ৯টার
বেশি।। একটা খাবার হোটেলে
খাওয়ার ব্যবস্থা করা হল।।খাবারের
তালিকা মুরগীর মাংস এবং ভাত।।
তালিকা ভাল হলেও মাংসে
অতিরিক্ত ঝাল।।এটা সম্ভবত এই
এলাকার মানুষের স্বভাব।।
অতিরিক্ত ঝালের ব্যপারটা দুপুরের
হোটেলেও লক্ষ্য করেছিলাম।।
খাওয়া শেষ করে এখন ঘুমানোর
পালা।।আমি আগে থেকেই ঠিক
করে রেখেছিলাম যে নৌকায়
ঘুমাব।।এটি হবে একদম নতুন এবং অনন্য
এক অভিজ্ঞতা।। ঠিক হল
আমি,রাসেল ভাই এবং মেহেদী
ভাই নৌকায় ঘুমাব,বাকিরা ঐ
বাড়িতে।। তাই খাবারের পরে
আমরা তিনজন চলে গেলাম ঘাটে
যেখানে আমাদের নৌকাটা
আছে।।আকাশে তখন পূর্ণ জ্যোৎস্না।।
এই জ্যোৎস্নার আলোতে নৌকার
ছাদে বসে কিছুক্ষণ গল্প গুজব চলল।।
রাতে জ্যোৎস্নার আলোতে
পানির অপর ভাসতে ভাসতে গল্প
করার অনুভূতিটা যে কতটা উপভোগ্য
তা শুধু সেই জানে যে এই অনুভূতিটা
উপভোগ করেছে।।এর পরেই হয়ত আমি
আমার জীবনের এক অনন্য অভিজ্ঞতা
অর্জন করব,মাঝিদের মত ভাসমান
নৌকায় রাত্রি যাপন করে।।।।।।
to be continued.........
২| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ২:০৮
shadatjitu বলেছেন: ধন্যবাদ।। আপনার উপদেশটিও মাথায় রাখব।। আগামীতে আরও ছবি স্মমৃদ্ধ ব্লগ লেখার চেষ্টা করব।।
©somewhere in net ltd.
১|
৩১ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১০:৪০
বোকামানুষ বলেছেন: ভাল লাগলো
তবে ছবি আরও বেশি হলে আরও ভাল লাগতো