নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যেই মুহূর্তে লাইন দুটো মনে মনে পড়ছেন , সেটা আর পাবেন না।হেসে দিন, ভালো থাকুন ।

পেজা তুলো

নিজের ব্যাপারে কিছু বলুন , এর থেকে কনফিউজিং আর কি আছে ?

পেজা তুলো › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটা লাল নোট !

২৬ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১০:৩২

ভাদ্র মাসের কড়া রোদে চোখ ঝা ঝা করে নাজুর। মাথাটাও কেমন যেন করছে। সারা গায়ে দুলুনি।
দাঁড়িয়ে আছে পান/বিড়ির দোকানের কোনে। পাশ কেটে চলে যাওয়া ব্যাস্ত লোকটাকে থামাতে গিয়ে ধমক খেয়েছে এই মাত্র। কয়টা বাজে জানা খুব দরকার। লাঞ্চ টাইম শেষ হওয়ার আগেই ফ্যাক্টরিতে ঢুকতে হবে। মিলি আপা কেন যে সামনের ওই বিশাল বড় সমাজ কল্যান ভবনের পিছনের রঙচটা দুইতলা দালান থেকে বের হচ্ছেনা, বুঝতে পারছেনা ও।
দোকানের বেঞ্চিটাতে আলতো করে বসতেই দোকানি খেকিয়ে উঠলো, “ওই বেডি উট। এনু বউনের জাগা নাই , যাহ সর।“
অন্যসময় হলে নাজু ওকে খুব খারাপ একটা গালি দিয়ে দিতে পারতো নির্দ্বিধায় । নাজু এখানে কাজ নেয়ার পর অনেক নতুন নতুন গালি শিখেছে। মুখে বলতেও খুব একটা বাধে না আর এখন।
কিন্তু , ভয় ,জড়তা আর টেনশন ওকে আপাতত গালাগালির সাথে ইউজার ফ্রেন্ডলি হতে দিল না।
শরীরের দুলুনি বাড়তে বাড়তে যখন পায়ের নিচে মাটি কেপে যাচ্ছিল , ততক্ষণে ওর পরিচিত মিলি আপা চলে এসেছেন।
-চল , চল হাটা দে।আর ১০ মিনিটের মইধ্যে বেল পড়বো।
আফা, কি কইলো উনি?
-আরো ১০০০ লাগবো। অনেক বুঝাইছি। গাইল পারে।
বেতন পাইতে তো ম্যালা দিন অহনো। অস্পষ্ট স্বরে বললো। ভয়ে হাত পা কাপে নাজুর।
৩ মাস আগে গ্রাম ছেড়ে ঢাকা এসেছে। ১ মাস পথে ঘাটে থাকার পরে এই মিলি আপাই গার্মেন্টসে সুতা কাটার হেল্পারির চাকরী টা জুটিয়ে দিয়েছেন।
তার ও এক মাস পর বুঝতে পারে যে তার ভিতরে বাসা বানিয়েছে একটা উটকো ঝামেলা। হুম ঝামেলাই তো।
যার স্বামীর নিয়মিত হদিস থাকেনা, ৩ টা ছেলে মেয়ে চেয়ে চিন্তে বা চুরি করে একবেলার খাবার জোটালে ঈদের মত খুশি লাগে অথবা এলাকার সবার হাতে চোখে আদর নিয়ে বাচতে হয় তার জন্য এসব ঝামেলাই।
ওদিকে ফ্যাক্টরির ওয়েলফেয়ার ম্যাডাম বলেছে, পেটে বাচ্চা এলেই নাকি বের করে দেবে চাকুরী থেকে।
কি বিপদ!!!
সেদিনই এই দু কামরার ক্লিনিকে ছুটে এসেছিলো কাজ শেষ করে খোজ নিতে যে পেটের এই জঞ্জাল খালাস করতে কত লাগবে । দিন খন সব হিসাব নিকাশ করে ওখানকার ওই খাটাশ মহিলাটা বলেছিল ৫হাজার টাকার কথা। কত অনুনয় বিনয় করেছে মিলি আপা, তাও এক টাকা কমালো না ধাড়ী হারামিটা। বলে “ ফস্টি নস্টির সময় মনে থাকেনা? এখন এত ট্যাকার বাসনা মারাও ক্যান, হুম? “
খেয়ে না খেয়ে জমানো সেই টাকা নিয়েই এসেছিল আজকে এখানে। টাকার পরিমাণটা বেশি ছিল বলে একটু সময় লেগে গেল। পেটের ওই জিনিষটা নাকি এর মধ্যে আরো বড় হয়ে গেছে। এখন আরো ১হাজার বেশি লাগবে।
প্রচন্ড রাগ হয় নাজুর। মনে মনে গালি দেয় ।“দানা পানি তো প্যাডে ফালাইনা। কি খাইয়া বড় হস রে হারামজাদা”
এইসব ছাইপাঁশ ভাবতে ভাবতে ফ্যাক্টরিতে ঢোকে ওরা।ওকে দেখেই চেচিয়ে ওঠে লাইন চীফ।কি একটা বিশ্রী গালি দেয় যেন। গায়ে লাগে না নাজুর।
গা গোলানো অনুভূতি নিয়ে ছুটে যায় সিঁড়ির কোনায়। উগড়ে দেয় ভিতরে সব অস্থিরতা। নিথর নাজুর মাথার ভিতরে কেমন ফাকা একটা অনুভূতি ।সেখানে নেই কোন না পাওয়ার আক্ষেপ, জীবনের প্রতি কোন অভিযোগ ।
শুধু একটাই ছবি মাথায় ঘুরে বেড়ায়।
একটা লাল কাগুজে নোট। ১ এর পরে ৩টা শুন্য আঁকা থাকে যে কাগজে।
ওর সমূহ বিপদের এক মাত্র সমাধান!!!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.