নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যেই মুহূর্তে লাইন দুটো মনে মনে পড়ছেন , সেটা আর পাবেন না।হেসে দিন, ভালো থাকুন ।

পেজা তুলো

নিজের ব্যাপারে কিছু বলুন , এর থেকে কনফিউজিং আর কি আছে ?

পেজা তুলো › বিস্তারিত পোস্টঃ

যন্ত্র

০৮ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ১:৩৪


সুলতান সাহেব বরাবরই রাশভারী গম্ভীর মানুষ । পরিবারের বড় সন্তান হওয়ার সুবাদে তাকে অনেক ছোট থাকতেই অনেক বুড়ো হয়ে যেতে হয়েছিল। পাঁচ বোন, তিন ভাইয়ের বিরাট সংসার এর হাল ধরতে ধরতে তার বাবা ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলেন বোধহয়। বেচারা বাবা, রেলের সামান্য টিকেট চেকার, ক্লান্ত হয়ে , অনেক অনেক অপূর্নতা নিয়ে ধুম করেই এক ফাল্গুনের ভর দুপুরে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেলেন। বলাবাহুল্য, এরপর সুলতান সাহেব সব কিছুর বোঝা এক কাঁধে নিয়ে হাঁটতে শুরু করলেন। তার এই স্বভাবসুলভ গাম্ভীর্যের কারনেই হয়তো তার ছোট ভাই বোনরা তাকে এড়িয়ে চলতো আর স্কুল কলেজেও কোন বন্ধু বান্ধব জুটতো না। অবশ্য এজন্য যে তিনি খুব ব্যাথিত ছিলেন , তাও বলা যায় না।

সুলতান সাহেবের আসলে কোন কিছু নিয়েই আক্ষেপ নেই। ভাবলেশহীন , নির্লিপ্ত মানুষ একজন। নিজের তৈরি করা গন্ডীর বাইরে তিনি কখনোই যাননি এবং নিঃসন্দেহে সেটা চিন্তা করাও উনার একটি অপ্রিয় কাজ। অফিসের সবাই যখন এক্সেল শিটে ডাটা ইনপুট করে, তখনও তিনি কেবল ক্যালকুলেটরে আঙ্গুল চালিয়েই স্বস্তি বোধ করেন । তার মানে আবার এটাও না যে উনার পার্ফরম্যান্স আশানুরূপ নয়। এই বীমা অফিসের একজন দায়িত্বশীল হিসাবরক্ষক হিসেবে তিনি গত ১৩ বছর যাবত কাজ করে আসছেন। যেদিন আশালতা নামের একজন মারাত্মক সুন্দরী মেয়ের সাথে তার বিয়ে হয়, তার পরদিন ও তিনি ঠিক একই সময়ে অফিসে এসেছেন। এমনকি মাস ছয়েক আগে, যেদিন তিনি অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ সেই ৫ লাইনের চিঠি টা হাতে পান, সেদিন ও অফিস থেকে নির্ধারিত সময়ের ১ মিনিট আগেও বের হননি।

চিঠিটা পড়ার সাথে সাথেই কেন যেন তার মুখস্ত হয়ে গিয়েছিল। তাকে লেখা আশালতার প্রথম ও শেষ চিঠি।
“ চলে যাচ্ছি। কোন অনুভূতি নেই। মানুষকে ছেড়ে যেতে অনুভুতির প্রয়োজন হয়, যন্ত্রকে ছাড়তে গেলে হয়না। মেয়েটা ও থাকলো। আমার অগোছালো জীবনে, ওকে টানতে সাহস পেলাম না।”
আশালতা।

চিঠি পড়ে সুলতান সাহেবের মনে হয়েছিল , আহা বেচারী, তার জন্য একটা অগোছালো জীবন বেছে নিতে বাধ্য হল। পড়ে অবশ্য জানতে পেরেছিলেন, যে তার ক্লাসমেট নাজমুল হাসান লতার জীবন গোছাতে সাহায্য করার জন্য তার সাথেই ছিলেন। যতদূর জানেন, তারা সুদূর জার্মানি পাড়ি দিয়েছে । কাজেই আর কোন চিন্তাই রইলো না এ ব্যাপারে। তবে উনার ৩ বছরের মেয়ে তুতুল কে বড় করতে যে তাকে বেগ পেতে হবে, সেটা নিয়ে তার কোন সন্দেহ ছিল না। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে, কিভাবে যেন তুতুল এই পরিবর্তনের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিল। সারাদিন ঘরের বাঁধা কাজের মহিলার সাথে লক্ষী মেয়ে হয়ে থাকে সে। খেয়ে দেয়ে চুপচাপ বসে বসে টিভি দেখে অথবা আঁকিবুঁকি করে। আর একটা অস্বাভাবিক কাজ তুতুল করে, যেটা সুলতান সাহেবের সাথে কেউই কোনদিন করেনি। হ্যা, সবার এড়িয়ে চলা সেই মানুষটা কি করে যেন তুতুলের পৃথিবী হয়ে গেল। কিভাবে যেন তুতুল বুঝে গেল, এই চুপচাপ , মাথা নিচু করে থাকা মানুষটা তাকে ছেড়ে কখনই যাবেনা। মনোযোগ দিয়ে বসে বসে তার সব আঁকিবুঁকি দেখবে আর মৃদু স্বরে বলবে, বাহ !
ওদিকে সুলতান সাহেব ও নিজের পরিবর্তিত আচরন নিয়ে নিজের কাছেই বেশ বিব্রতবোধ করেন। এই যেমনঃ তিনি জানেন, বাসার দরজায় দাঁড়িয়ে বেল চাপলেই ছোট ছোট পা ফেলে একজন অস্থির হয়ে ছুটে আসে আর দরজায় ঠোঁট লাগিয়ে জিজ্ঞেস করে- বাবা আত্তো ? নিতান্তই স্বাভাবিক একটা ঘটনা, কিন্তু কেন জানি তার কাছে এটা অন্যরকম লাগে। এমনকি এই ঘটনাটার জন্য তিনি এতই মুখিয়ে থাকেন যে ইদানিং চারটা বাজলেই তিনি উশখুশ করতে থাকেন বাসায় ফেরার জন্য। নিজেকে যে তিনি এ ব্যাপারে শাসাননি তা না , কিন্তু ঘন্টা খানেক পরেই আবার পাশের ডেস্কের শোভন কে ডেকে ইউটিউবে ভিডিও দেখার নিয়ম শিখেছেন। যদিও তিনি ইন্টার্নেট নির্ভর মানুষদের অলস ভাবতেন কিন্তু তিনি যখন সত্যি সত্যিই ইউটিউবে ঘেঁটে তুতুলের প্রিয় পুতিন (পুডিং) রান্না করা শিখে ফেললেন তখন তার মনে হল, “নাহ, এই জিনিস দেখি আসলেই কাজের”। অথবা, খবর দেখা ছাড়া যে টিভিতে আরো কিছু দেখা যায় সেটাই যে মানুষ টা বুঝতেন না , সেই এখন দিব্যি তুতুলের সাথে বসে কার্টুন দেখেন। শুধু দেখেনই না , তার তো মনে হয় কার্টুনের চরিত্রগুলো আসলে তার বাসার মানুষই। যদিও একটু বেশি লাফালাফি করে, কিন্তু মানুষ হিসেবে আসলে ওরা বেশ ভালো !
সুলতান সাহেব অবশ্য আরও একটা কঠিন সত্য আবিস্কার করেছেন সেদিন । সেদিন মানে, যেদিন অফিসের বাৎসরিক মিটিং শেষে বাসায় ফিরে তুতুলের হাতে স্নাক্সের বক্সটা দিলেন আর কি। ফাইভ স্টার হোটেলের দামী দামী খাবারে ঠাসা বক্সটা খুব যত্ন করে বাসায় নিয়ে এসেছিলেন।
যখন তুতুল ছোট ছোট হাতে চামচ ধরে সুলতান সাহেব কে খাইয়ে দিচ্ছিলো ,ঠিক তখনই সুলতান সাহেব বুঝলেন যে আসলে তিনি যন্ত্র নন। যন্ত্রের চোখে তো পানি আসেনা।
তুলতুলে দুটো হাত যখন তার গাল ছুয়ে সেই পানি মুছে দিচ্ছিল, তিনি আরো ও বুঝলেন, পৃথিবীটা সুন্দর! বেঁচে থাকাটা অত্যন্ত আনন্দদায়ক একটা ব্যাপার!


মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ২:৪৩

এম এস আরেফীন ভুঁইয়া বলেছেন: সুলতান সাহেবের আসলে কোন কিছু নিয়েই আক্ষেপ নেই। ভাবলেশহীন , নির্লিপ্ত মানুষ একজন। নিজের তৈরি করা গন্ডীর বাইরে তিনি কখনোই যাননি এবং নিঃসন্দেহে সেটা চিন্তা করাও উনার একটি অপ্রিয় কাজ।



ভাল লাগল ।

০৯ ই জুন, ২০১৬ সকাল ১০:৩৪

পেজা তুলো বলেছেন: :) ধন্যবাদ !

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.