নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কাঁচা হাতের লেখা

দ্বন্দ্ব হোক আদর্শিক, সংঘাত হোক বুদ্ধিবৃত্তিক- বাকি সব যুদ্ধ হারিয়ে যাক দূর-বহুদুর, আলোকবর্ষ দূর

শাফী আব্দুল্লাহ

কোনো একদিন মানুষ হবো। আশায় আছি....

শাফী আব্দুল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

তোমরা যারা কলেজে উঠছো

২১ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৯:১৯





'ওরা বড় হবে চড়বে গাড়ি

আর আমি কাটবো ঘাস'



এটা আমার জাতীয় সংগীত। বর্তমানে ঘাস কর্তনে আমি দেশে-বিদেশে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছি। স্কুলজীবন ছিল লক্ষ্যহীন। কারণ তখন আমার ঘাস কাটা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান ছিলনা। আলোকিত সেই পথ খুঁজে পেয়েছি কলেজে ভর্তি হওয়ার পর। ঘাস কাটার অফুরন্ত সুযোগ এবং কচি কচি সবুজ ঘাস আমার জীবন পাল্টে দিয়েছে। ফার্স্ট ইয়ারে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে ঘাস কেটে সুনাম কুড়িয়েছি। পরিবার ভাবলো, সুষ্ঠুভাবে ঘাস কাটার জন্য ছেলের বায়ু পরিবর্তন করা প্রয়োজন। পরিবারের এই যুগোপযোগী সিদ্ধান্তের ফলশ্রুতিতে সেকেন্ড ইয়ারে যশোর এম এম কলেজে যেয়ে কৃতিত্বের সাথে ঘাস কেটেছি। স্বপ্ন দেখি একটি 'ঘাস কাটা বেশিপানি লিমিটেড' গঠন করার।



এই লেখাটি মূলত তাদের জন্য যারা বিভিন্ন সরকারভুজায়ত্ত মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি হতে যাচ্ছে। কচি কচি সবুজ ঘাসময় জীবনে তাদের স্বাগতম।













২. নতুন জীবনের শুরু



কলেজে আমার প্রথম দিন। ফুলবাবু সেজে বাসা থেকে বের হলাম। কলেজে পৌঁছাতেই একদল ভবিষ্যৎ সরকারপ্রধানদের মুখনিঃসৃত লাল গোলাপ দ্বারা ভালবাসায় সিক্ত হলাম। আমি আপ্লুত ! ক্লাসে ঢুকলাম। আহা, এতো সুখ আমার কপালে লেখা ছিল ! যাদের দেখার জন্য প্রতিদিন সাইকেলে প্যাডেল মারতে মারতে ক্লান্ত হয়ে যেতাম, আজ তারাই পাশে বসে আছে। আমি কি স্বপ্ন দেখছি ?



ঘোর কাটতে না কাটতেই ক্লাসে স্যার এসে ঢুকলেন। রসায়ন ক্লাস। ভালো তো, ভালো না ? চারিদিকে রস, আবার ক্লাসও রসায়ন। স্যারটারও কি গোলগাল, কিউট-কিউট, টইটুম্বুর চেহারা। এতো রস রাখি কোথায় ? স্যার নাম ডাকছেন, কথা বলছেন, পড়াচ্ছেন। কিন্তু আমি তখন অন্য এক জগতে হারিয়ে গিয়েছি। চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি ক্যান্টিনের সামনে স্লো মোশনে কারো ওড়না উড়ছে, ঠাণ্ডা বাতাস তাকে ছুঁয়ে মিষ্টি একটা গন্ধ নিয়ে আমার দিকে ছুটে আসছে। আকাশটা লাল লাল লাগে, গাছের পাতা নীল নীল লাগে। রঙ-বেরঙের ঘাস নিচে। আমি ওড়নাওয়ালির দিকে তাকিয়ে ঘাস কাটছি তো কাটছি, কাটছি তো কাটছি....



হঠাৎ স্যার বললেন, 'জিলা স্কুলের কে কে আছো ?'

আমরা দাঁড়ালাম।

'এদের দেখে রাখো। এরপরে এদের আর ক্লাসে পাবেনা। পুকুরপাড়ে আর গাছতলায় এদের পাওয়া যাবে।'



শুনে তো আমাদের মাথায় নষ্ট। স্কুলের অপমান ! কত্তবড় সাহস !

একদিকে অপমান, অন্যদিকে মহৎ কাজের ডাক- ঘাস কাটার ডাক। তাই আমরা বেরিয়ে পড়লাম। আমরা ছড়িয়ে পড়লাম - গাছতলায়, পুকুরপাড়ে, কমন রুমে, মুক্তমঞ্চের পেছনে, অমুক মামার চায়ের দোকানে।

শুরু হল আমাদের নতুন জীবন।

শুরু হল ঘাস কাটা।





৩. কোচিং বা স্যার নির্বাচন



এবার একটু জ্ঞানের কথায় আসা যাক। সরকারভুজায়ত্ত মহাবিদ্যালয়গুলোতে ক্লাস করে কখনোই পরিপূর্ণ প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভভ হয়না। তাই আমাদের ছুটতে হয় বিভিন্ন স্যারের কাছে কিংবা কোচিং-এ। একে 'ছুটা বুয়া'র কাজের সাথে তুলনা করা যায়। ছুটা বুয়া যেমন একবাড়িতে কাপড় ধুয়েই অন্য বাড়িতে ছুটে যায় ঘর ঝাড়ু দিতে। সেটা শেষ করেই পাশের বাসায় ছোটে রান্না করতে। তেমনি আমাদেরও কখনো পদার্থ, কখনো রসায়ন আবার কখনো গণিত পড়তে হুটহাট করে ছুটে বেড়াতে হয়।



স্যার নির্বাচনের ক্ষেত্রে অনেকেই অনেক বুদ্ধি দেয়। অমুকের কাছে গেলে উনি ফুঁ বোতলে ভরে দিবেন। সেই বোতল বাসায় এনে ছিপি খুলে ফুঁ মাথায় ঢাললেই সব পড়া হয়ে যাবে - সব মুশকিল আসান হয়ে যাবে। এসব কথার কোন বেল নাই। নো বেল উইথ কদবেল। প্রথম কয়েক মাস সব স্যার বা কোচিং-এ দুই-একদিন করে ঘুরে দেখতে হবে। আমি একে বলি 'চেখে বেড়ানো।' মনের মত চেখে বেড়িয়ে তারপর নিজেকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে কার কাছে পড়ে সবচেয়ে ভালো লাগছে। অবশ্য অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্যার নির্বাচন নিজেদের চেয়ে ক্লাসের সুন্দরী মেয়েদের উপরেই বেশি নির্ভর করে !





৪. ‘পেরেম পেরেম’ ভাব



আবার গল্পে ফিরে আসি। কলেজে কিছুদিন ক্লাস করার পর দেখতে পেলাম আমার কাঁধে ব্যাগ আছে কিন্ত হাতে কারো হাত নেই। মুখবাজি, আড্ডাবাজি পুরোদমে চলতো কিন্তু চোখে চোখে কথা বলার মত কেউ নেই। খেয়াল করে দেখলাম বন্ধুদের ফোনবুকে বিভিন্ন পাখির মোবাইল নাম্বার সেভ হওয়া শুরু হয়েছে। সালিম আলীও বোধহয় কোন পাখির পারসোনাল মোবাইল নাম্বার নিতে পারেননি! যায় হোক, আমার ভেতরের পাখিপ্রেম জাগ্রত হয়ে উঠলো।



শুরু করলাম পাখির জন্য সার্চ দ্য খোঁজ। একটা পেয়েও গেলাম।

“দুই চোখে তার আহা রে কি মায়া

কলেজ পুকুরে পড়লো কন্যার ছায়া”



কিন্তু কন্যা ভুল করে ফেললো। আমার আগেই অন্য কাউকে মনের লিজ দিয়ে দিয়েছিল সে। আমার আর কারো সাথে রাতের আকাশে তারা গোনা হলো না। গৃহত্যাগী জোছনা রাতে কারো হাত ধরে হারিয়ে যেতে পারলাম না।



স্কুলজীবনের প্রেম সাধারণত একমাত্রিক। মুঠোফোননির্ভর প্রেম হয় সেটা। কলেজ জীবনে প্রেমে নতুন মাত্রা যোগ হয়। ‘ঘোরাঘুরি’ মাত্রা। এসব না করতে পারলে কলেজ জীবন পূর্ণতা পাই না। তাই এই দ্বিমাত্রিক প্রেম এবং পড়াশুনার মাঝে সাম্যাবস্থা তৈরি করতে হবে। সম্মুখ এবং পশ্চাৎমুখী বিক্রিয়ার হার সমান না হলে কপালে দুঃখ আছে। এবার অনেকে জিজ্ঞেস করবে, ভাই, আপনার তো কিছুই হইলো না। আপনি এসব ক্যামনে জানেন ? উত্তর হচ্ছে- ভাইয়া, আমি ডিম পাড়িনা। কিন্তু অমলেট কিভাবে বানাতে হয় তা মুরগীর চেয়ে ভালো জানি।



৫. কলেজের পরীক্ষা



হাফ ইয়ারলিতে ম্যাথ পরীক্ষার আগে এক্কেবারে শর্ট সাজেশন পেয়েছিলাম। পরীক্ষার আগে একদিন ছুটি ছিল। প্রথম দিন ভাবলাম, অল্প কয়েকটা অঙ্ক, একরাতেই হয়ে যাবে। করবো করবো ভাব আনতে আনতে পরীক্ষার দিন চলে আসলো। ভোরে উঠে তাই একটা কাগজে সব সূত্র লেখা শুরু করলাম। ঐদিন ছিল আমার জন্মদিন। নয়টার দিকে বাসায় এক বন্ধু আসলো। লাফালাফি, ফালাফালি শুরু হয়ে গেলো। কলেজে গেলাম। পরীক্ষা শুরু হবার পর পকেটে হাত দিয়ে দেখি কাগজটাই আনতে ভুলে গিয়েছি ! ভেতর থেকে কেমন যেন দার্শনিক দার্শনিক ভাব উথলে উঠলো। কি হবে লিখে ? কি লাভ এই সব করে ? দুই দিনের জীবন। আসা আর যাওয়ার খেলা। তাই হল থেকে বের হয়ে গেলাম।



এরকমই হয় কলেজের পরীক্ষাগুলো। ‘পরীক্ষা’ কথাটা বদনাম হয়ে যায় কলেজে এসে। এক্ষেত্রে মনে রাখা উচিত, অংশগ্রহণই মূল কথা ! তাই পরীক্ষা দিয়ে যেতে হবে। তবে প্ল্যান হওয়া উচিত এরকম – যেহেতু পরীক্ষার কয়েকদিনে সব পড়ে ফেলা সম্ভব হয়না তাই অন্তত কিছু অংশ এমনভাবে পড়ে রাখতে হবে যাতে পরবর্তীতে ঐ অংশ নিয়ে আর কোন ঝামেলা পোহাতে না হয়। সেটা হোক ৫টা অধ্যায়, তবুও তো শেষ হল কিছু।







৬. কলেজের দুই বছরে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি



কলেজে ওঠার পরেই মুরব্বিরা বলতে শুরু করে, এই দুই বছর তোমাদের জীবন গঠনের সময়। যেই বীজ বুনবে এই সময়ে, তাই আজীবন তোমাকে ফসল দেবে…. প্রভৃতি গাঁজাখুরি উপাখ্যান। তাদের বলো, গো হোম আঙ্কেল/আন্টি, ইউ আর ড্রাঙ্ক। ভাইরে সারাজীবন যদি গঠন করে যাও তাহলে ভাঙবে কখন? ভাঙাভাঙিরও প্রয়োজন আছে। আমরা নিয়ম ভাঙবো, ইতিহাস বদলাবো, সমাজ পাল্টাবো। শুরু থেকেই আমাদের ভেতর ভর্তি পরীক্ষার জুজু ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, যা ভেঙে ফেলে আমাদের আত্মবিশ্বাস।



ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রে মূল কথা হচ্ছে স্ট্রাটেজি। ‘সব খাবো’ নীতি বাদ দিয়ে চোখ বন্ধ করে ভাবো, তুমি মারা গিয়েছো। তোমাকে নিয়ে সবাই কথা বলছে, তোমার জন্য কাঁদছে। এবার ভাবো, তুমি কি শুনতে চাও ? অমুক ডাক্তার খুব ভালো ছিল, নাকি অমুক ইঞ্জিনিয়ার খুব ভালো ছিল নাকি অন্য কিছু। যা শুনতে পাবে, যা দেখতে পাবে, যা তোমার মন বলবে – তাই হওয়ার চেষ্টা করো।



যারা ইঞ্জিনিয়ার হতে চাও তারা মনে রেখো, বুয়েটে ৬০০ মার্কের পরীক্ষা হয় কিন্তু চান্স পাওয়ার জন্য ২৮০-৩০০ পাওয়াই যথেষ্ট। আর ৪০০ মত পেলে মোটামুটি নিশ্চিতভাবেই বলা যায় তোমার যে বিষয় ইচ্ছা তাই পাবে। অনেকেই ভাবে বুয়েটের প্রশ্ন মঙ্গলগ্রহ থেকে আসে। মনে রেখো, চান্স পাওয়ার জন্য সব পারা লাগেনা। আর কোন পরীক্ষায়ই দশ-বিশ ভাগের বেশি প্রশ্ন কঠিন আসেনা। ওগুলো বাদে বাকিগুলো পারলেই চান্স কেন, মোটামুটি সামনের দিকেই থাকা যায়।



যারা ডাক্তার হতে চাও তারা বায়োলজি একটু মনোযোগ দিয়ে পড়। আর সাধারণ জ্ঞানের জন্য চেষ্টা করো নিয়মিত পত্রিকা পড়ার। তাহলেই তুমি অন্যদের চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকবে।



আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি এবং ম্যাথের ছোট ছোট অঙ্কগুলো তাড়াতাড়ি করার চেষ্টা করো। এখানে বড় প্রশ্ন আসার সুযোগ নেই। ব্যাপার হচ্ছে কে কত দ্রুত করতে পারে। আমাকে একজন বলেছিল যে, যদি ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করতে চাও তাহলে নিজের ক্যালকুলেটরকে এমনভাবে চিনতে হবে যতটা একজন স্ত্রী পঁচিশ বছর সংসার করার পর তার স্বামীকে জানে।



মনে রাখবে, ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করার মন্ত্র হচ্ছে “You have to know what you have to know.”



যায় হোক, এ ব্যাপারে আমার বেশি বলা সাজেনা কারণ আমি নিজেই এখনো ভালো কোথাও চান্স পাইনি। তবে যা লিখলাম তা অনেক সফল মানুষের সাথে কথা বলার পর লিখছি। ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে পলাশ ভাইয়ের (EEE, BUET) চমৎকার একটা লেখা আছে। লেখাটির লিঙ্ক শেষে দিয়ে দিলাম।









আর কয়েকদিন পরেই তোমাদের কলেজ জীবন শুরু হচ্ছে। এতটুকুই বলবো, ক্লাস শুরুর আগের দিনও তোমরা বুঝতে পারবেনা কি অদ্ভুত সময় তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। যে যায় বলুক, আমার কথা হচ্ছে জীবনটা উপভোগ করতে হবে। গুটিয়ে নয়, চুটিয়ে বাঁচো ! খেলো, নাচো, গল্পের বই পড়ো, গান গাও – যা ইচ্ছা করো। আর প্রেম ? প্রেম চলতে থাক, মানুষের মন জ্বলতে থাক !!!



ঠিক করো, তুমি কি হতে চাও। তারপর ভাবো, তুমি সঠিক রাস্তায় আছো কিনা। যদি সামনে রাস্তা না পাও তাতে কোন সমস্যা নেই। পথ পথিকের সৃষ্টি করেনা, পথিকই পথের সৃষ্টি করে। তাই এগিয়ে যাও। ঘাস কাটার জব মার্কেট আমার মত উজবুকেরা স্যাচুরেটেড করে ফেলেছে। তাই এদিকে আর তোমাদের আসার দরকার নেই। ঘাস আমরাই কাটতে থাকি। তোমরা আলোকিত হও। তোমরা নতুন কিছু করো। দুমড়ে-মুচড়ে দাও এই নষ্ট সমাজের সব কুসংস্কার।



শুধু মনে রেখো, পৃথিবীতে প্রত্যেকটা মানুষই জিনিয়াস। কিন্তু তুমি যদি একটা মাছকে তার গাছে ওঠার সামর্থ্যের উপর বিচার করো তাহলে আজীবন সে নিজেকে শুধু অপদার্থই ভেবে যাবে। তাই কাউকে অসাধারণ কিছু, নতুন কিছু করতে দেখলে তাকে উৎসাহ দাও, তার প্রশংসা করো। আর যায় হোক, তাকে ছোট করোনা, উপহাস করোনা। তোমার কান্না সবার হাসির খোরাক হোক, কিন্তু তোমার হাসি যেন কারো কান্নার কারণ না হয়।



সবার সেকেন্ড ডিফারেন্সিয়াল নেগেটিভ হোক।





পলাশ ভাইয়ার লেখাটির লিঙ্ক-

Click This Link

















মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.