![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোট্ট একটা সাধারন মানুষ আমি । লেখালেখি করা আমার পেশা নয় । মন তাড়া করে তাই লিখি আর কি । নিজেকে সব সময়েই বাস্তবতার মাঝে রেখেছি , কখনো কাল্পনিক , পরজাগতিক কিছুতে হারাতে দেই নি । তাই পরজাগতিক সম কিছুকে অবিশ্বাস করি । যেখানে পরজগতেই অবিশ্বাস সেখানে কাল্পনিক ঈশ্বর আর ঈশ্বরের প্রদত্ত ধর্মে কখনোই আস্থা নেই । অর্থাত্ আমি একজন নাস্তিক ।
বই মেলা এসে গেছে । লেখক , পাঠক ,
প্রকাশক সবাই এখন ব্যস্ত সময়
কাটাচ্ছে । ব্যস্ততায় আজ সারাদিন
কাটছে সকলের । ব্যস্তার পাশাপাশি
তাদের ভিতর আনন্দ বারবার ঝড় তুলে
যাচ্ছে । আর যারা নতুন লেখক তাদের
আনন্দ উপচে পড়ার উপায় ।
এত ব্যস্ততা আর আনন্দের মাঝে আমার
ভিতর এক ফোটা আনন্দ নেই , নেই কয়েক
সেকেন্ডের ব্যস্ততা । বলতে পারেন ,
নিশ্চই অলস সময় শুয়ে , বসে , খেয়ে
কাটাচ্ছি তাই ব্যস্ততা নেই । না , তা
কিন্তু নয় । আমার ব্যস্ততা নেই কারণ ,
এই বই মেলায় এখন আর প্রাণ নেই , নেই
সতেজ হাওয়া । ধর্মের দূষিত বায়ু নষ্ট
করে দিচ্ছে প্রতি নিয়ত আমাদের
প্রাণের বই মেলা উত্সবকে ।
হ্যাঁ , অনেক ধর্ম বিরোধী মুক্তচিন্তার
বিজ্ঞানভিত্তিক বই বের হবে । কিন্তু
তা টিকবে কতক্ষন ? ২ঘন্টা , ৩ঘন্টা
বড়জোর ২ কিংবা ৩দিন । এরপরেই ঐ
বইয়ের স্টলে যে স্টলে ধর্ম বিরোধী
বইটি সাজানো আছে সে স্টলে
ধর্মবাদীরা হামলে পড়বে । হামলে
পড়বে ধর্ম বিরোধী বইটি যে প্রকাশক
প্রকাশ করেছে আর যে লেখক লিখেছে ।
মৃত্যুর হুমকি দিবে । প্রকাশ ব্যানার
হাতে নারায়ে তাকবির বলে ধর্ম
বিরোধী বই লেখকের ফাঁসি দাবি করবে
। এতেও যদি কাজ না হয় তসলিমা
নাসরিনের মত ফতোয়া দিবে স্বেচ্ছায়
নির্বাসিত জীবনে প্রবেশ করতে । আর
এতেও যদি কাজ না হয় 'নারায়ে
তাকবির আল্লাহু আকবার' । পরদিন
সকালে খবর বেরুবে , অমুক লেখক
র্দূবৃত্তদের অস্ত্রের আঘাতে নিহত ।
কিন্তু এখানে কারা র্দূবৃত্ত ? প্রকাশ্য
যার ধর্মদের কাঁছা দিয়ে ঐ লেখকের
বিরুদ্ধে নেমেছে তাদের কি কারণে
র্দূবৃত্ত বলা হয় ?
আমরা বই মেলা আয়োজন করি ফেব্রুয়ারী
মাসকে স্বরণ করে । আরও সম্মান দিয়ে
যদি বলি তবে বলতে হবে ভাষা
শহীদদের স্বরণ করেই আমরা বই মেলা
আয়োজন করি । কিন্তু সে বই মেলায় যখন
একজন ধর্ম বিরোধী মুক্তচিন্তার
বইয়ের বিরুদ্ধে একটি ধর্মবাদী চক্র
প্রকাশ্য মাঠে নামে তখন কি করে
ভাবা যায় এই বই মেলা ভাষা
শহীদদের স্বরণে । কিংবা যখন একটি
ধর্ম বিরোধী বই ধর্মবাদীদের খুশি
করতে নিষিদ্ধ করে রাষ্ট্র তখন কি
করে বলব একুশের বই মেলা ? তখন তো
এমনিই মুখ দিয়ে বের হবে , এটা
ধর্মের বই মেলা ।
বাঙলাদেশ একাত্তরে যুদ্ধে করে মূলত
একটি অসাম্প্রদায়িক সেক্যুলার রাষ্ট্র
লাভের জন্য । ধর্মবাদী
পাকিস্তানীদের ধর্মের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
করে একটি সেক্যুলার রাষ্ট্রের জন্ম
হয়েছিল একাত্তরে । কিন্তু সেখানে
যখন ধর্মবাদীরা একটি সেক্যুলার
বইয়ের বিরুদ্ধে , সেক্যুলার লেখকের
বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করে তখন
নিঃসন্দেহে বলতে পারি এরা
ধর্মবাদী পাকিস্তানের বীজ বপনে
একধাপ এগুলো ।
বই মেলাতেই নিষিদ্ধ হয়েছিল
তসলিমা নাসরিনের লজ্জা বইটি ,
হুমায়ুন আজাদের নারী বই । এই বইগুলো
ধর্মবাদীদের উলঙ্গ করে নাকানী
চুবানী খাইয়েছিল । আর এর কারণেই
তসলিমাকে হতে হয় নির্বাসিত আর
হুমায়ুন আজাদকে খেতে হয় চাপাতির
কোপ । চাপাতির কোপ এবছরও খেয়েছে
দুজন লেখক । অভিজিত্ রায় আর অনন্ত
বিজয় । ধর্ম বিরোধী সেক্যুলার বই
লেখার অপরাধে ধর্মবাদীরা কাঁছা
মেরে এদের পিছু নিয়েছিল । এছাড়াও
আরেক ধর্ম বিরোধী লেখক সানিউর
রহমানকেও খেতে হয় ধর্মবাদীদের
চাপাতির কোপ । ধর্মের অন্যায়ে
বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ায় চাপাতির
আঘাত করে ধর্মবাদীরা । অল্পের জন্যে
বেঁচে যান লেখক সানিউর রহমান ।
গত বছরের বই মেলায় কুপিয়ে খুন করা
হয় অভিজিত্ রায়কে । রক্তস্নাত হয় বই
মেলা । এরপর খুন করা হয় অন্তত
বিজয়কে । সেক্যুলারিজম দিয়ে
ইসলামিস্ট টেরোরিজমকে নিপাতের
লক্ষ্যে যে সব লেখকই কলম ধরেছে সে
সব লেখককের লেখনি থামাতে উদ্ধত
হয়ে ইসলামিস্ট টেরোরিস্টরা ।
আজকালকার বই মেলায় সেক্যুলারিজমের
হাওয়া নেই । ধর্মের হাওয়ায় দূষিত ।
তাই বই মেলায় যাই না । বই মেলায়
গেলেই ধম আটকে যায় । দূষিত হাওয়ায়
যেমন আমার ধম আটকে যায় তেমন
ধর্মবাদীদের নারায়ের তাকবিরে
শব্দে আমাদের প্রাণের বই মেলে কেঁদে
উঠে । তাই অনেকটাই দূরে থাকি বই
মেলা থেকে ।
©somewhere in net ltd.