নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চারুশিল্পী , লেখক

শাহ আজিজ

চারুশিল্পী , লেখক

শাহ আজিজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

রস কদম ২ ।। না মিটিতে আশা-------

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৪:৪৮

নমি বেশ অবাক হইয়া খেয়াল করিল তাহার গুণমুগ্ধ ভক্ত ও সদ্য সংযোজিত বান্ধবী কাম প্রেমিকা রিকশাওয়ালাকে বলিল ‘মামা এইবার বাম দিকে যান’।নমি বেশ আশ্চর্যবোধ করিল ও তাহার নতুন প্রেমিকার বংশগতি ও লতিকা লইয়া ভাবিতে লাগিল । এই মেয়েটির সহিত যদি তাহার সম্পর্ক স্থায়ী করিতে হয় তবে তাহার বাড়ির লোকজন ফোড়ন কাটিয়া বলিবে ‘ওরে নমি আর কোন রাস্তা খুজিয়া পাইলি না হতভাগা, শেষমেশ রিকশাওয়ালার ভাগ্নিকে বধু বানাইয়া লইলি’। মা কপাল চাপড়াইয়া হা হুতাশ করিতে করিতে বলিবেন ‘এও কি আমার কপালে ছিল’।
নাহ , ব্যাপারটি পরিষ্কার করিয়া লইতে হইবে।
আবারো ফার্গি মানে ফারজানা কহিল ‘মামা বামে রাখুন’।
রিকশা ভাড়া মিটাইয়া তাহারা পার্কে মানে রবীন্দ্র সরোবরে প্রবেশ করিল ।
রবীন্দ্র সরোবর আর রবীন্দ্র নাই, ইহা এখন তাপস সরোবর হইয়া গিয়াছে । গেল পয়লা বৈশাখে বন্যার গানের টানে এখানে আসিয়া দেখে তাপস বক্তৃতা করিতেছে ও আরেকদল যাত্রার গায়ক গায়িকা গোপালগীতিকা পরিবেশন করার প্রস্তুতি লইতেছে । নির্মম শোকাঘাতে নমির মস্তক ঘূর্ণন দিয়া সরোবরে গড়াইয়া পড়িতেছিল । উপস্থিত চ্যাংড়া পোলাপাইন তাহাকে চ্যাংদোলা করিয়া রাস্তা পর্যন্ত আগাইয়া দিতে দিতে জিজ্ঞাসা করিতেছিল ‘ভাই কি সকালে সিদ্ধি একটু বেশী টানিয়াছেন’? নমি মাথা নাড়াইয়া না সুচক ইঙ্গিত করিয়া দীর্ঘশ্বাস ছাড়িয়া কহিল ‘গোপালগীতির মাধুর্যে আমি জ্ঞানহারা হইয়া যাইতেছিলাম , ভাই তোমার পকেট হইতে একটা বিড়ি দাও, টানিয়া সুস্থ হই’। চ্যাংড়া দামী বেনসন নিজেই অগ্নিসংযোগ করিয়া তাহাতে দুটি দীর্ঘ সুখটান মারিয়া পরে নমিকে দিলো । নমিও টান মারিয়া ধুয়া উদগীরন করিতে করিতে তাহাকে ধন্যবাদ দিয়া জিজ্ঞাসা করিল ‘ভাই তোমার পরিচয় কি’? ‘আমি আক্ক্যাইচ্ছা,বত্রিশ নাম্বারের ক্যাডার, রায়ের বাজার বস্তিতে বসবাস করিয়া থাকি’। ‘ভালো ভালো, উন্নতি হউক তোমার’। আক্ক্যাইচ্ছা দ্রুত অনুষ্ঠানে ঢুকিয়া গেল ও বলিয়া গেল বেনসন ,বিরিয়ানি,চা ও কিছু ক্যাশের মর্যাদা রক্ষার্থে প্রতিটি গানের পর জোরে সশব্দে তালিয়া বাজানো তাহাদের কাজ।
ফার্গি নমিকে লইয়া একটি আলোকিত স্থানে বসিয়াছে ।
নমি চাহিতেছিল কোন আঁধার কোনে ঠাই লইবে । ফার্গির প্রেমবোধ ও চেতনা লইয়া হিসাব কষিতে লাগিল নমি। নমির প্রস্ততিমুলক চুম্বন চিত্রমালার কবিতাখানি আবৃত্তির ইচ্ছা থাকিলেও পরিবেশ প্রতিকুল অর্থাৎ চারিদিক ফুচকা ও চটপটির গাহাকরা ছড়াইয়া ছিটাইয়া রহিয়াছে। একটু আঁধারি জায়গা পাইলে নমি তাহার ঠোটের উষ্ণতা হ্রাস করিয়া লইতে পারিত । সে একটি সিগারেটও ধরায় নাই পাছে কটু গন্ধ চুম্বনে অবরোধ সৃষ্টি করে। ফার্গি দুই প্লেট ফুচকার অর্ডার করিল । নমির চোখ জলাশয়ের কোনে আঁধারের দিকে । বেশ কিছুকাল সে এই এলাকা মাড়ায় না। ফার্গি প্রস্তাব করিয়াছিল বোট হাউস এ যাওয়ার কিন্তু একটি জটিল কারনে নমি ঐ বা এই তামাম এলাকায় প্রবেশ করেনা ।
এইরকম এক গুনমুগ্ধ ভক্তের সহিত অন্ধকারে ঝোপের আড়ালে চুম্বন বিনিময় ও ইত্যাদি করিলে পর ভক্ত নমির হাত ধরিয়া ধানমণ্ডি ব্রিজের ঠিক মাঝামাঝি জায়গায় গিয়া আচম্বিতে এক খানি ঠ্যাং রেলিং এর উপর দিয়া কহিল তুমি আমাকে নষ্ট করিয়াছ , এখন যদি আমাকে বিবাহ না করো তাহা হইলে আমি নিচের পানিতে ঝাপ দিয়া আত্মহনন করিব। কি বিপদ ! নমি তাহাকে বোঝাইতে চাহিল ------ কিন্তু বিধি বাম ! ভক্ত কাদিয়া ফোঁপাইতে ফোঁপাইতে কহিল লোক সমাজে আমি কি করিয়া মুখ দেখাইব ? নমি কহিল আরে, আমি তুমি ছাড়া আর কেঁউ ওখানে ছিলোনা , সমাজতো দুরের কথা বৃক্ষ দলও চক্ষু মুদিয়া নিদ্রায় আচ্ছন্ন ছিল। ভক্ত অনড় । নমি জলে সাতার দিতে না পারিলেও প্রেম সায়রে ভালই সাঁতরাইতে পারে। নমি গম্ভীর ভাব লইয়া জিজ্ঞাসা করিল এখন কি করিতে হইবে? ভক্ত ঠ্যাং নামাইয়া নমির হাত জুৎসই ভাবে ধরিয়া কলাবাগানের দিকে হাটিতে থাকিল । ভক্ত জানে কবিরা ক্রীড়াবিদ না হইলে কি হইবে , হাত ছাড়াইয়া যে দৌড় দিবে তাহাতে উসাইন বোলট ও লজ্জা পাইবে । তাহারা দোতালায় কাজী অফিসের বেঞ্চে বসিল । ভিতরে বিবাহ চলিতেছে , দালালেরা মানে ভুয়া সাক্ষীরা ইহাদের ইরাদা জানিয়া লইল । নমি হিসাব করিল তাহার কাধব্যাগে কয়খানা লিখিত ছড়া , সাদা খাতা ও কলম ছাড়া আর কিছুই নাই । সে বেশ উৎফুল্লের সহিত ব্যাগটি ভক্তের হাতে সপিয়া কহিল ‘হাত মুখ ধুইয়া ফ্রেশ হইয়া আসি’। দালালকে সবিনয়ে কহিল টুপি আছে কিনা ! টুপি মিলিল । উহারা বাথরুম দেখাইয়া দিলো । ভক্তের আস্থা অর্জনের জন্য তাহার নিকট চিরুনি চাহিল।
নাহ বাথরুমের এদিক দিয়া ভাগিবার কোন রাস্তা নাই। বাথরুমে ঢুকিয়া ছিটকিনি আটকাইয়া দেখিল বাথরুমের বন্ধ জানালাটি বেশ নড়বড় । জানালা খুলিয়া দেখিল শিক এক খানা নাই । পাশেই পাইপ নামিয়া গিয়াছে । কসরত করিয়া , হাত ছুলিয়া , কনুই ছিঁড়িয়া বাগানে মলের ট্যাঙ্কির উপর ল্যান্ডিং করিল । দেয়াল ডিঙাইতে কসরত করিল প্রচুর । তাহাতে হাঁটু ছিলিয়া গেল । চিকন গলি হইতে বড় গলি ও শেষে পান্থপথের রাস্তায় ঊর্ধ্বশ্বাসে ----- ফার্গির ধাক্কায় সম্বিত ফিরিল , ‘কি ভাবিতেছ?’
‘কই না ----কিছুনা ---এমনই –।
‘কবিতা রচনা করিতেছ ?
হ্যা, অনেকটা তাই ------- যদি তোমাকে শুনাইতে পারিতাম--- ধন্য হইয়া যাইতাম ।
‘শোনাওনা------!
এখানে জমিবে না , ভিতরে নিরিবিলি গ্যালারীতে কণ্ঠ দরাজ হইবে ।
আচ্ছা ফুচকা খাইয়া লই।
নমি আশার আলো দেখিতে পাইল ।
তাহারা গ্যালারীর পথ ধরিয়া জলাশয়ের কাছে চলিয়া আসিল । আরও কিছু জুটি ঘনিষ্ঠ
হইয়া বসিয়া রহিয়াছে। তাহাদের কেহ কেহ রামলীলায় ব্যাস্ত । সঞ্জয় বনশালি বড় ইমানদার লোক , নমি ভাবিল , না হইলে এই যুবক যুবতীরা ঢালিউডের বিজলী খাম্বার নিচে জীবন কাটাইত ।
একটি মিষ্টি ঘ্রান ফার্গির শরীর হইতে আসিতেছিল প্রথম থেকেই , এখন প্রকট হইয়াছে।
‘শোনাও তোমার কবিতা’ ।
নমি বিব্রত ভাবে কহিল স্ক্রিপ্ট এই অন্ধকারে দেখা যাইবেনা এই জন্য একটি পুরনো মুখস্ত কবিতা পড়ি ।
‘আচ্ছা পড়ো’ ফার্গির কণ্ঠে মাধুর্য ঝরিয়া পড়িল ।
‘সবুজ বনানীরে চুমিছে আঁধার
নিজ বুকে জড়িয়ে লোমশ হস্তে,
অমাবস্যা তারে করেছে নির্লজ্জ---------
‘আরে তাইতো’ , ফার্গি চারিদিকে তাকিয়ে বলে উচ্ছ্বাসে-----।
নমি মনে মনে বলিয়া উঠিল লাইনে আসার লক্ষন সুস্পষ্ট হইতেছে।
নমি আবার ‘ আমি তুমি বসে রই নিরব নিথরে- কপাট হীন জানালা পাশে ---------‘।
নমি দুটো হাত বাড়াইয়া দ্যায় ফার্গির দিকে , ফার্গি তাহার হাত দিয়া দুহাত ধরিয়া গভীর দৃষ্টিতে নমির দিকে তাকাইয়া ---------।
নমি বা হাতে মাঝের ব্যাগটি পাশে সরাইয়া আবার বলিয়া ওঠে ‘ এসো তবে করি অবগাহন আধারেতে বনানীরে ভালবেসে’------------।
নমি ঈষৎ আকর্ষণ করিলে বিনা বাক্যব্যায়ে ফার্গি কাছে আগাইয়া আসে ।
নমি দুইহাতে ফার্গির দুই গাল চাপিয়া ধরিয়া বলে ‘চাতক পাখী অপেক্ষায় থাকে বৃক্ষ কোটরে চাতকীর তরে হাজার বছর ধরে’ । নমির ঠোট দুটো অগ্রসরমান ফার্গির ঠোটের দিকে----মাত্র কয়েক ইঞ্চি দূরে---
একটা বিকট আওয়াজে এলাকা প্রকম্পিত হইল । পাশের জুটিরা আর্ত চিৎকার শুরু করিয়া আপন আপন রামকে বগলদাবা করিয়া সকল কাম ও লীলা সিঁড়িতে ত্যাগ করিয়া উত্তরমুখী গেটপানে ছুটিতে লাগিল । চটপটি দোকানের দিকে ঘন ধোঁয়া নজরে আসিতেছে , প্লেট গ্লাস ভাঙ্গিবার আওয়াজ পাওয়া যাইতেছে এবং পুনরায় আরেকটি বুম ম ম ম ম ! ফার্গি এইবার চিৎকার করিয়া কহিল ‘নমি চলো দৌড়াই’ ।
ফার্গি কাঁপিতেছে ------ নমি উঠিয়া সবাই যে পথে দৌড়াইতেছে সেই দিকে দৌড় শুরু করিল। গতি শ্লথ করিল কারন ফার্গি তাহাকে অন্ধের মতো আষ্টেপৃষ্টে জড়াইয়া ধরিয়াছে । আবারো পশিমের রাস্তায় বিস্ফোরণ ----- ফার্গির হাতের চাপ ও কম্পন বাড়িয়া গেল । বোমা আরও কটা ফাটিলে ফার্গিকে দুই হাতে তুলিয়া লওয়ার সুবর্ণ সুযোগ আসিবে। অবশ্য এক্ষন দ্রুত ভাগিতে গিয়া ওর শরীরের নরম অংশ নমির কাছে ঈদের বোনাস তুল্য লাগিতেছে । বোমা ফাটিলে কি হইবে নমি জাতে মাতাল তালে ঠিক, সে খুব পুলকিত বোধ করিতেছে । যতক্ষন বোমা চলিবে ততক্ষন ফার্গি তাহাকে ঝড়ে পড়া শুভ্র মরালের মতো জড়াইয়া থাকিবে । কাদের মোল্লার ফাঁসী না হইলে বোমা ফুটিত না । তাহার বেহেস্ত কামনা করিল নমি ।
তাহারা ব্রিজে পা রাখিবার আগে নমি ফার্গির গাল টানিয়া দুইখানি চুম্বন দানিয়া কহিল ভয় কি প্রিয়ে আমি থাকিব তোমার সহিত সর্ব সময়। চারিদিক ফাঁকা , ওপর প্রান্তে একগাদা পুলিশ লাইন ধরিয়া বন্দুক উচাইয়া সতর্ক ভাবে আগাইতেছে । একজন পুলিশ জিগাইল ইনি কি আহত হইয়াছেন? নমি কহিল ‘মানসিক আঘাত তবে শরীর সুস্থ’। পিছনের অফিসার পুছিল এ্যাম্বুলেন্স লাগিবে কিনা? নমি কহিল একটু সেবা যত্ন পাইলে ভালো হইয়া যাইবে।
ব্রিজের শেষ মাথায় কোমরে এক হাত দিয়া এক অফিসার ওয়াকি টকিতে বাৎচিত করিতেছে ।
তাহাকে অতিক্রম করিতে গিয়া হটাত ডাক পড়িল ‘নমি’ !!!!!!!!
গম্ভীর ডাকে হতচকিত নমি তাহাকে জড়াইয়া ধরা ফার্গিকে বা হাত দিয়া ধাক্কা মারিয়া দ্রুত খালাস করিল এবং চট করিয়া মাথা নিচু করিয়া মিশরীয় ভাস্কর্যের মতো স্থানু হইয়া অস্ফুট স্বরে বলিল “খালু” ।
নমির খালু মিট মিট হাসিতেছে আর একবার নমি ও একবার বালিকার দিকে দেখিতেছে।।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৪

বটের ফল বলেছেন: B-)) B-)) B-)) B-)) B-)) B-)) B-)) B-)) আপনার রসবোধ অসাধারন। দারুন মজা পেয়েছি।

২| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৯

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: নমি, নমি ;)

বটের ফল বলেছেন:আপনার রসবোধ অসাধারন। দারুন মজা পেয়েছি।

আমরাও কি না বলতে পারি :) :):)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.