নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চারুশিল্পী , লেখক

শাহ আজিজ

চারুশিল্পী , লেখক

শাহ আজিজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছয়দিন মন্দির ও একদিনের মসজিদ ।। হিন্দু - মুসলিম সহযাত্রা

১৭ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৫:৫১

দুটি ভিন্ন ধর্মের ঈশ্বর অনুরাগী মানুষেরা একই ছাদের নিচে আলাদা সময় নির্ধারিত প্রার্থনা করছে গত ৫ টি শতাব্দী ধরে। হিন্দুরা তাদের পুজা অর্চনা করে ছয়দিন আর মুসলমানেরা শুক্রবার তাদের নামাজ আর বিশেষ করে জুম্মার একত্রিত নামাজ আদায় করে।অযোধ্যা বিতর্কে একটি সমাধান সাজেশন হিসাবে অধিকাংশ ভারতীয়র চোখের আড়ালে থাকা গিরিমঠ নামের ছোট্ট জায়গা যা বাগালকোট জেলার কামাথাগি গ্রামে অবস্থিত । বাগালকোট ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত । সম্প্রতি সময়ে ডেক্কান হেরালড এই তাৎপর্যপূর্ণ প্রার্থনাগৃহের খবর দিয়েছে তাদের পত্রিকায় । তারা গিরিমঠের এই প্রক্রিয়ায় অযোধ্যার সমাধান কামনা করেছেন ।
এবার আসুন ঠিক কিভাবে এই অভাবনীয় ঘটনা ঘটেছিল তা জানি ।
আদিল শাহ ২ একদিন এই পথে যেতে নামাজের সময় হয়ে গেলে দেহরক্ষীদের আদেশ দিলেন উপযুক্ত জায়গা খুজে নিতে । রক্ষীরা পাশেই একটা উপযুক্ত জায়গা পেল কিন্তু বাদ সাধল সেখানে যোগাসনে ধ্যানমগ্ন মারালু শঙ্কর দেভালু , আল্লামা প্রভুর অনুসারী । দেভালুর কঠিন ধ্যান ভাঙ্গার চেষ্টা ব্যার্থ হলে রক্ষীরা দেভালুকে উঠিয়ে অন্য জায়গায় সরিয়ে দেবার উদ্যোগ নিতেই সেখানে হাজির আদিল শাহ । তিনি রক্ষীদের সরিয়ে নিজেই বসে রইলেন দেভালুর ধ্যান ভাঙ্গার অপেক্ষায় । ধ্যান ভাঙ্গলে দেভালুর দেওয়া লম্বা ভাষণে জ্ঞ্যান , প্রজ্ঞ্যা পারমিতায় মুগ্ধ আদিল শাহ ওখানেই একটি যৌথ প্রার্থনা গৃহ গড়ার ঘোষণা দেন । আদিল শাহ একটি চুক্তিপত্রে সাক্ষরও করেন যার তাম্রলিপি ঘোড়সওয়ার দিয়ে ধর্মযাজকের কাছে পৌঁছে দেন । ব্যাস এটাই শুরু । গত পাচশ বছর ধরে কোন বিবাদ ছাড়াই স্থানীয় হিন্দু ও মুসলিমরা এটাকে মন্দির ও মসজিদরুপে ব্যাবহার করছে । সপ্তাহের ছদিন হিন্দুরা এটাকে তাদের মন্দির হিসাবে ব্যাবহার করে এবং শুক্রবার ইবাদতের জন্য ছেড়ে দেওয়া হয় মুসলিমদের জন্য । এই প্রার্থনা গৃহের বাইরের দেওয়ালে শিব , নন্দী ও গনেশ দেবতার মুরাল প্রতিকৃতি এবং ভিতরে দেভালু,আদিল শাহ ও আদিল শাহ্‌র স্ত্রীর প্রতিকৃতি আকা আছে । বিভিন্ন ধর্মের লোকেদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববন্ধন, ঐক্য ও সমতা আনার প্রচেষ্টার জন্য আদিল শাহ্‌র যথেষ্ট সুনাম রয়েছে ।
মুল নাম ইবরাহিম আদিল শাহ -২ । ১৫৫৬-১৬২৭ পর্যন্ত বাহমানি সুলতানদের আদিল শাহ রাজ্যের পঞ্চম রাজা হিসাবে কর্ণাটক ও আশপাশের কিছু এলাকা নিয়ে শাসন করেছেন । তিনি “জগতগুরু বাদশাহ” হিসাবে বেশি পরিচিত । তার লেখা বেশ কিছু কিতাবও আছে যেখানে সরস্বতী ও গনপতির প্রশস্তি গাওয়া হয়েছে ।আদিল শাহ্‌ একজন গানের ভক্ত ছিলেন এবং মাঝে মধ্যেই যন্ত্রী ও গায়কদের নিয়ে আসর বসাতেন । নিজেও কিছু যন্ত্র বাজানোতে পারদর্শী ছিলেন ।মনে হচ্ছে তিনি সুফিবাদি ও নিজামুদ্দিন আউলিয়ার অনুসারী ছিলেন । হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে সেতুবন্ধনের একটি প্রচেষ্টা আদিল শাহ এর লেখার মধ্যে প্রতিফলিত। তার রচিত বইএর মধ্যে কিতাব ই নব রস(নবম রস) উল্লেখযোগ্য।এই কিতাব খুললেই প্রথম শিক্ষার দেবী সরস্বতীর প্রশস্তি পড়ে নিতে হয় । কিতাবটিতে আদিল শাহ রচিত ৫৯ টি কবিতা এবং ১৭ টি বিভিন্ন লেখা আছে ।
গিরিমঠে রথযাত্রা হয় গনেশ পুজার চারদিনের দিন।যদি তা শুক্রবারে পড়ে তবে রথযাত্রা হয় পিছাতে হয় নয় এগিয়ে দিতে হয়।মুসলমানেরা এই রথযাত্রায় প্রচুর অর্থদান করে থাকে । আদিল শাহের তৈরি নিয়ম কানুনে এখনো পর্যন্ত এই প্রার্থনা গৃহ চলছে । তার তৈরি আদেশনামার তাম্রলিপি কোটেকালের দেশাই পরিবারের কাছে সংরক্ষিত আছে ।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৩৬

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: প্রার্থনাতো হয় হৃদয় থেকে।

স্থান একটি বাহ্যিকতা মাত্র। দিল কাবারে যে চিনেছে ঐ ইটের কাবার কি দাম আছে.. ভাববাদি গানে যেমন বলা হয়......এইরকম আরকি!!!

বিষয়টা আগ্রহোদ্দিপক! বিস্ময়কর এবং ভাবনারতো বটেই।

১৭ ই জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩৭

শাহ আজিজ বলেছেন: যথেষ্ট ভাববার বিষয় । আমি খুব অবাক হয়েছি ওটা পড়ে । তারপরও একটি ছোট্ট জায়গা আছে যেখানে মানুষ ধর্ম নিয়ে একে অপরের উপর চড়াও হয়না ।

২| ১৭ ই জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫০

ঢাকাবাসী বলেছেন: এটা ব্যাতিক্রম, উদাহরণ নয়।

১৭ ই জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৪

শাহ আজিজ বলেছেন: হ্যাঁ , এটা ব্যাতিক্রম বটে । তবে কেউ উদাহরন নিয়ে এটার নব্য সংস্করণ শুরু করলে আমি আপনি কিছুই করতে পারব না । আমার নিজস্ব বিধি বিধান ঠিক চলছে কিনা এটা মুখ্য বিষয় তবে অপরের অহিংস কার্যক্রম ফেলে দেবনা একেবারে ।

৩| ১৮ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৪:২৪

অনন্য দায়িত্বশীল আমি বলেছেন: ধর্মে কি সহযাত্রা হয়?

কারো মূর্তি ছাড়া প্রার্থনাই হবে না পক্ষান্তরে কারো মূর্তি থাকলেই প্রার্থনা হবে না। তাহলে.....?

১৮ ই জুন, ২০১৪ রাত ৮:২৬

শাহ আজিজ বলেছেন: এটা খুবই বিতর্কের বিষয় । যারা ওই ছবি অঙ্কিত মসজিদে নামাজ পড়ে তারাই তাদের অনুভুতি ও যুক্তির কথা বলতে পারবে ভালো করে। আমি নিজে সুফিবাদের ধারায় সৃষ্টিকর্তার বন্দনা করি । বহু মত বহু পথ সেই সৃষ্টি থেকে । আমরা কারো বিশ্বাসে বাধাও দেইনা না দিতে দেই আমাদের মতকে । পৃথিবীর সবচে দুটি সাংঘর্ষিক ধর্মের এই সহবস্থান আমায় মুগ্ধ করেছে । ব্যাস এর মধ্যে বাহাস করবেন না ।

৪| ২০ শে জুন, ২০১৪ রাত ৮:৪৪

মরণের আগে বলেছেন: এই রকম আদিলসাহ আমরা আর চাইনা , যারা স্রষ্টা থেকে অর্পিত ধর্মের পরিবত্তন আনার চেষ্টা করে।

আপনার লিখার স্টাইল আমার খুব পছন্দ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.