নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চারুশিল্পী , লেখক

শাহ আজিজ

চারুশিল্পী , লেখক

শাহ আজিজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ব্রিটেনেও চাঁদাবাজি !! বাদ রইল আর কি????

১২ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ২:২০

রমজান এসেছে। ব্রিটেনের বাঙালি আর পাকিস্থানী পাড়ায় জমে উঠেছে লিল্লাহ তোলার ধোম। রাস্তায় বেরুলে যেন অন্য এক চিত্র। যেন বাংলাদেশে কিংবা হয়ত পাকিস্থানের(পাকিস্থানে যাই নি) মতো চাঁদার থালা হাতে নিয়ে শহরের বিশেষত এশিয়ান এলাকায় ঘোরছে আর সালাম শব্দটি উচ্চারন করে করে আল্লাহ্র ওয়াস্তে সাহায্যের আবেদন করছে। আলখেল্লায় পরিবেষ্ঠিত এ মানুষগুলোকে মনেই হয়, এরা কোন কাজ করে না। ঐ এক কাজ তাদের। সরকারের পাউন্ড খায় আর বিশেষত মহিলাদের সামনে গিয়ে ধরে তাদের থালা কিংবা প্লাস্টিকের বাল্টিটি। পাকিস্থানে কিংবা বাংলাদেশে মসজিদ করবে, বাংলাদেশে মুসলমান শিশুদের সহযোগীতা দেয়া হবে প্রভৃতি শব্দ দিয়ে ঘোর ধরানোর চেষ্টা চলছে এখন ব্রিটেনের মুসলিম অধ্যূষিত এলাকাগুলোতে। আফ্রিকার শিশুরা পানির জন্যে তির তির করে মরছে। খাদ্য নেই। জন্মের পর থেকেই যারা এইডস আক্রান্ত । এদের জন্যে মানবতার ডাক নেই। শুধু মুসলমান শব্দটা এরা বিক্রি করছে যত্রতত্র। রাতে টিভি খোললে আরেক বাৎসরিক চমক। প্রতিটি চ্যানেলে উপচে পড়েছে মোল্লা-মৌলভীদের দল। বাংলাদেশে না হয় চাঁদা তোলতে মোল্লা-মৌলভীদের ন্যূনতম ওয়াজ করতে হয়। এখানে সে সময়টুকুও নেই । শুধু ‘মাশাল্লাহ’ আর ‘আল্লাহুআকবার’ ধ্বণিতে পাচটা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত চাদা তোলার ধুম। পাচটি বাংলা টিভি চ্যানেলের প্রায় সব কটাতেই। এ ছাড়া রমজান মসের শুরুতেই এসেছে আরেকটি বাংলা চ্যানেল। ঘোষনা দিয়েই এসেছে, তারা শুধু চ্যারিটি এ্যপিলকেই প্রাধান্য দেবে।

বিস্ময়কর সত্যি হলো টিভি চ্যানেলগুলোকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে চাঁদাসংগ্রহে এখন নতুন মাত্রা পেয়েছে। কোমলমতি শিশুদের ব্যবহার করছে কোন কোন চ্যারিটি সংগঠন। ষ্টুডিওতে একজন শশ্রুমন্ডিত লোক বসলেন, আল্লাহর ওয়াস্থে সাহায্য চাইলেন। তার পাশে বসা থাকে শিশুরা। এদের আতœীয়-স্বজন এই ছেলেদের দেখে গর্বভরে এদের সাথে কথা বলেন এবং দুর কোন শহর থেকে তার স্বজনেরা তার জন্য চাঁদা পাঠান ইথারের মধ্যি দিয়ে। ভাবতে বিস্ময় লাগে যে মেয়েদের পর্দার ভেতরে থাকার জন্যে নিরন্তর নসিহত করা হয়, সেই নারীরাই তাদের প্রধান টার্গেট। মা-বোন বলে আল্লারর রাস্তায় এদের দান-খয়রাত করার জন্যে উদ্বুদ্ধ করা হয়। আর রাত জেগে মধ্যরাতে ঐ মহিলাদের ডাক আসে ফোনে। মহিলাদের কন্ঠে তখন সুমধুর সুর ‘আমি দিলাম একশত কিংবা পঞ্চাশ পাউন্ড’। অথচ ঐ মহিলাদের অধিকাংশই কোন জব কিংবা চাকুরী করে না। ছেলে-মেয়েদের অনুদানের পাউন্ডগুলোরই একটা অংশ মূলত দিয়ে দেয়া হয় এই পূণ্যময়(!) কাজে। ব্রিটেনের সময় অনুযায়ী শিশুরা সন্ধ্যা হবার আগেই(সন্ধ্যা নামে পৌনে দশটায়) বিছানায় গিয়ে ঘুমাবার কথা, সেখানে আমাদের টিভি‘র হুজুরেরা এই শিশুদের ডাক প্রত্যাশা করেন ফোনে। একটাবারের জন্যেও তারা বলেন না ‘তোমরা ঘুমিয়ে পড়ো’। আসলে অর্থটা এতই গুরুত্ব নিয়ে এসেছ যে, সেখানে ধর্ম হলো ঢাল, শিশুরা হলো আবেগের জায়গা---সব মিলে অদ্ভুদ এক ঢং চলছে ব্রিটেনের বাংলা টিভি চ্যানেলগুলোতে এখন রমজানের এই সময়ে।

দেশের বিভিন্ন জায়গায় মাদ্রাসা হচ্ছে, মসজিদ হবে এর জন্যে সদগা নিতে তারা আসে নাসারার দেশে। সরকারের অনুদানের পাউন্ড কিংবা রেষ্টুরেন্টের মদ বিক্রির প্রচলিত ‘হারাম’ পাউন্ডগুলো নিয়ে বাংলাদেশের এই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ফুলে-ফেপে তোলার জন্যে আসছেন কাঠমোল্লার দল। তারা নিয়েও যাচ্ছে অর্থ। তবে এখন কিছুটা হলেও ভাটা হয়েছে। টাকা উঠে আগের তুলনায় কম। তবুও তাদের ক্ষতি নেই। টিভি চ্যানেলকে স্লটের ভাড়া দেবার পর যাই উঠে তা-ইতো লাভ। সুতরাং রমজানের প্রতিটি দিনই এই একই কথা ‘মাশাল্লাহ’ আর ‘আল্লাহু আকবার’। আর কমিউনিটি থেকে লাখ লাখ পাউন্ড খসিয়ে নেয়া।

চ্যারিটির নাম নিয়ে কারো কারো নিজস্ব নামে একাডেমী করা হয়েছে। পরিবারে বিভিন্ন সদস্যদের নামে করা হয়েছে বিভিন্ন চ্যারিটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির নামের পূর্বে কিংবা পরে দেয়া হয়েছে ইসলাম কিংবা আরবী কোন শব্দের আবরণ। কেউ আবার মাদ্রাসার পাশাপাশি চিকিৎসা কেন্দ্র গড়ার নাম নিয়ে ব্যবসা জুড়ে বসেছেন। এই চিকিৎসা কেন্দ্রে গরীবদের চিকিৎসা করা হবে ইত্যাদি বলে বসে পড়েন চাঁদা সংগ্রহে। বাংলাদেশের মৌলবাদী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে এখানে গজিয়ে উঠেছে বিভিন্ন চ্যারিটি প্রতিষ্ঠান। এছাড়া ঐ এদেরই নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কিছু ধর্মীয় আবরণের প্রতিষ্ঠান। এগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন উচ্চারিত হচ্ছে। জাতীয় কারিকুলামের পাশাপাশি ইসলামকে ঢুকিয়ে দিয়ে মৌলবাদ কিংবা উগ্রপন্থার চর্চা করা হচ্ছে এই ব্রিটেনে। বার্মিংহামের কয়েকটি ইসলামিক স্কুল ইতিমধ্যে এরকম অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে। বাঙালি পাড়ার কবি নজরুল স্কুলও এখন উগ্র মৌলবাদীদের দখলে। স্থানীয় প্রশাসন ও অভিভাবকরা মিলে এই স্কুলকে বাাঁচানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। মূলধারার গণমাধ্যমে এ নিয়ে খবর প্রকাশিত হচ্ছে।

দিনের পর দিন মৌলবাদী চক্র যেন মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে এই ব্রিটেনে। ইসলামিক স্কুলগুলোর নামে যা করা হচ্ছে তাতে কি ছাত্র-ছাত্রীদের খুব উৎসাহি করা হচ্ছে শিক্ষার প্রতি ? আজ স্কুলগুলোর নামে যে প্রচার কিংবা প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে সারা দেশব্যাপী, এতে করে কি স্কুলগুলোর ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের অন্যভাবে ভাবছে না ? কেউ না বললেও স্কুলগুলোর প্রতি এই স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী ছাড়া অন্যান্য অভিভাবক কিংবা কিংবা মাতা-পিতার ভিন্ন মনোভাব তৈরী হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে এসব প্রপাগান্ডার পর ছাত্র-ছাত্রীরাও নিজেদেরকে একটা নির্দিষ্ট গন্ডির ছাত্রই ভাবতে থাকবে। এতে করে ঐ স্কুলগুলোর ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষায়ও আসছে একটা স্লথ গতি কিংবা ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে উৎসাহহীনতা এসে যেতেই পারে। এতে করে ছাত্র-ছাত্রীরা আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে ছাত্র-ছাত্রীদের একটা দ্বন্ধও সৃষ্ঠি হওয়া অস্বাভাবিক নয়। অথচ এই স্কুলগুলোর জন্যেও চাঁদা তোলা হচ্ছে। ধর্মের নাম নিয়ে এই স্কুলগুলোকে অনেকটা গ্রামার স্কুলের আদলে গড়ার চেষ্টা চলছে। আর গ্রামার স্কুল মানেই অর্থ অর্থাৎ মোটা অংকের ফিস দিয়ে প্রতিবছর ছাত্র-ছাত্রীদের নতুন ক্লাসে যাওয়া। এ হিসেবে ইসলামী ব্যবসাটাও রমরমা।

স্থানীয় চ্যারিটি সংগঠগুলোর নেতৃত্ব দেয় চৌকষ মৌলবাদীরা। তারা অর্থ তোলে । বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করেছি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুনীরা ব্যবহৃত হচ্ছে এসব চ্যারিটিতে। ক‘দিন থেকে দেখছি চৌকষ জিন্স পরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া বাঙালি তরুনীরা আসে আমাদের কাছেও । সিরিয়ায় সাহায্য করবে, চ্যারিটি আপিল করবে। সহযোগীতা চায় তারা । ওদেরকে কিছু বলার থাকে না। ওদের যখন আমি দেখি, তখন আমার মনে পড়ে লন্ডনের আরেক বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুনী রুশনারা চৌধুরীর কথা, যে এখন জেলের অভ্যন্তরে। উগ্র মৌলবাদ অন্তরে পোষন করে যে তার স্থানীয় এমপিকে হত্যা করতে ছুরি বসিয়েছিলো। ইদানিং সিরিয়া-ইরাক প্রভৃতি দেশের আতœঘাতি খুনোখুনি নিয়ে অর্থ তোলার ধুম পড়েছে। কিন্তু আমরা জানি না এই অর্থ যায় কোথায় ? ইরাক কিংবা সিরিয়া মূলত: মুসলমানদের আতœঘাতি বিভেদ। এই বিভেদে যুদ্ধে জড়াচ্ছে ব্রিটিশ মুসলমান তরুনরা। এসব যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের মাঝে ব্রিটিশ- বাঙালি তরুনদের নামও উঠে আসছে বার বার । ব্রিটিশ-বাঙালিরা কখনো সুদানের আল শাবার সংগঠনের সাথে একাতœ হয়ে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালাচ্ছে, আবার সিরিয়া-ইরাকে কোনো একটা গ্রুপের হয়ে লড়ছে । মরছে। অথচ দুটো গ্রুপই মুসলমান। উগ্রপন্থি হিসেবে তাই ব্রিটেনের মূলধারার গণমাধ্যমে ব্রিটিশ বাঙালিদের নামও এখন পাকিস্থানীদের মতোই উচ্চারিত হচ্ছে প্রতিদিন। স্বাভাবিকভাবেই তাই প্রশ্ন আসে চ্যারিটির নাম নিয়ে সংগ্রহ করা এই অর্থ যাচ্ছে কোথায় ? সিরিয়া-ইরাকের নাম নিয়ে তোলা অর্থ কি আসলেই যাচ্ছে যুদ্ধাক্রান্ত মানুষগুলোর সেবায়? ব্রিটেনের সাধারন মানুষ সিরিয়া-ইরাকের যুদ্ধ দেখে, শিশুদের অসহায়ত্ব দেখে, তাই চাঁদা দেয়। এভাবেই বাংলাদেশের জন্যেও পাউন্ড সংগ্রহ করা হচ্ছে। পাউন্ড সংগ্রহ করা হোক, কিন্তু আমাদের ভেবে দেখতে হবে তার কত শতাংশ যাচ্ছে অর্থ সংগ্রহকারীর পকেটে আর কত শতাংশই যাচ্ছে প্রকৃত কাজে। না-কি প্রকৃত অর্থে সব টাকাই শেষ পর্যন্ত ব্যবহৃত হচ্ছে কোন উগ্র সংগঠন পরিচালনায় ? পবিত্র রমাজানের চাঁদা তোলার মাসে ব্রিটেনের বাঙালি কমিউনিটিকে এ কথাগুলো অবশ্যই ভাবতে হবে। কারন আমাদের আবেগকে ব্যবহার করে পবিত্র ধর্মকে ব্যবহার করে কেউ ব্যক্তিগতভাবে লাখো-কোটি টাকার মালিক হোক কিংবা উগ্র-ধর্মান্ধরা প্রসারিত হোক কিংবা জঙ্গীরা ছড়িয়ে পড়–ক দেশে দেশে---- তাতো আমরা হতে দিতে পারি না।
ফারুক যোশীর ব্লগ থেকে

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৫:১১

ম.র.নি বলেছেন: লেখাটা শেয়ার করার মানে কি? এ ব্যাপারে আপনার সাথে কথা বলে কোন লাভ হবে?ব্লগার জোশীর লেখাটা বিদ্বেষমূলক এবং অতিরন্জিত।তার প্রতিটা লাইনের কথার সুন্দর ব্যাখা আছে যা আপনাকে বলে লাভ নেই।

ব্লগার জোশী যা বলেনি, অনেক লোকের সমাগম মার্কেট প্লেসে বড় বড় সাউন্ড বক্সে মাইক্রোফোন দিয়ে গলা ফাটায়া জিসাস ক্রাইস্টের কথা প্রচার করা হয়।রাস্তায় দাড়িয়ে পথের মানুষদের ভদ্রভাবে ধরে ধরে তাদের ব্যান্ক ডিটেইলস নেয়া হয় যাতে নিয়মিত তার ব্যন্ক থেকে ছোট এ্যামাউন্ট ঐ সব চ্যারাইটিতে জমা হয়।অন্যতম ব্যাস্ত রাস্তায় মিছিলের মতো করে হরে রামা হরে কৃষ্না করে।এসব উগ্রতা ও চোখে দেখে না?

ব্লগার জোশী কি কানা?

২| ১২ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৫:৩১

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ব্রিটেনেও চাঁদাবাজি?
না, সত্যিই আর কিছু বাদ নেই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.