নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চারুশিল্পী , লেখক

শাহ আজিজ

চারুশিল্পী , লেখক

শাহ আজিজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

তারা ভরা সুন্দরবন

২৪ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:২৯



দুপুরের খাবার বিকেলে খেলাম ট্রলারে বসে । নৌকা , ট্রলার , জাহাজের রান্না একটু আলাদা মজা হয় । সহ বন সংরক্ষকের ট্রলারে আমি অতিথি । দুটি বেড দিয়ে সাজানো ঘর , লাগোয়া টয়লেট । নলিয়ান ফরেস্ট ষ্টেশনে থামলাম । এখানে জেলে আর জঙ্গলে অনুমোদিত কাঠুরেদের ভিড় বেশি । নিরাপত্তার জন্য ধারে কাছের অনেকেই ফরেস্ট ষ্টেশনে নৌকায় রাত কাটায় । রেঞ্জাররা এসে আলাপ সালাপ করে খোজ খবর নিয়ে গেল । আমাদের সাথে আরও দুটি ট্রলার যোগ হয়েছে । সন্ধ্যা নামলো এবং খানিক বাদে আমরা আবারো যাত্রা শুরু করলাম । অন্ধকারে কি অপূর্ব দৃশ্য শিবসা নদীতে । হাজারো হারিকেন জ্বলছে নদীতে ছোট নৌকায় । এরা জোয়ার এবং ভাটা দুই স্রোতে চিংড়ি পোনা ধরবে । শিবসার স্রোত খুব বেশি গতিময় । ট্রলারে দাড়িয়ে অসাধারন দৃশ্য দেখছি আমি একা । বাকিরা প্রতিনিয়ত জংগলে আসে নতুন চারা গাছের গননা করতে ।আমি যা দেখছি তা ওদের কাছে ডাল ভাত । নিরাপত্তার জন্য সাথের দুই ট্রলারে চারটি থ্রি নট থ্রি রাইফেল আর অগনিত গুলি । এরা বৃক্ষশুমারি করে কেটে সাফ হওয়া বনে । জি পি এস দিয়ে নিজেদের অবস্থান নির্ণয় এবং সাথে থাকা ম্যাপ দিয়ে ইতিমধ্যে জরিপ করা জায়গায় নতুন গজানো গাছের হিসাব লিখে দাতা প্রতিষ্ঠানের জন্য । ২০ বছরে এই গাছ বড় হবে । আমি দুইতিন দিন এদের সাথে ঘুরব , দেখব জঙ্গলকে একেবারে ভেতর থেকে । শিবসায় এদিকে আসিনি আগে । জানুয়ারি মাসের শীতকাল কিন্তু সুন্দরবনে চলতি পানিতে বা রানিং ওয়াটারে কিন্তু শীত নেই । ডাঙ্গায় বেদম শীত অনুভুত হয় । আমরা যেখানে পৌছুলাম সেখানে প্রায় আলোহীন একটা পৃথিবী । আমরা পারে না ভিড়িয়ে নোঙ্গর করলাম । তিনটি ট্রলার একসাথে বেধে ফেলল সবাই মিলে। টর্চের আলোয় দেখলাম ফরেস্ট ষ্টেশন আর আশপাশেই অনেক বড় বড় নৌকা । এরা সারা দিন পরিশ্রমী বলে সন্ধ্যায় খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে । রাতের রান্না চলছে । পাশের বোটে উঠলাম ওদের থাকার ব্যাবস্থা দেখতে । এক ট্রলারে চারজন করে ঘুমায় । এবার ওরা আমায় সবিনয় অনুরোধ করল আমি যেন মাংস খেতে চাই । হ্যা মুরগী খাব তো ! না ওরা অন্য কিছু বুঝাতে চাইছে । আমি বললেই ওরা জঙ্গলে ঢুকবে এবং তারপর-------- । আমি অ্যাসিস্ট্যান্ট ফরেস্ট কনজারভেটরের কেবিনের দিকে তাকালাম । উনি নিশ্চয়ই আমার আনা আজকের পত্রিকা আর ম্যাগাজিন পড়ছেন । ওরা বলল উনি কোন ব্যাপার নয় , আপনি বললেই হবে । ওরা হরিন শিকার করবে আমার নামে এবং রাতে ভোজ হবে। আমার বৃক্ষ এবং বিপদসংকুল প্রাণীদের উপর ন্যাস্ত দায়িত্বের কথা মনে পড়ে গেল । আমি ওদের না উচ্চারন করলাম । ওরা চুপচাপ যারযার বিছানায় শুয়ে পড়ল , মন খারাপ করে। ওরা যদি না জানিয়ে আমাকে না জড়িয়ে শিকার করে নিয়ে আসত সেটা ভিন্ন ব্যাপার ছিল ।
খাবার সারভ হল । খেয়ে দেয়ে বাইরে গিয়ে একটা বিড়ি ধরালাম । এত ঘুটঘুটে অন্ধকার যে চারিপাশের কোথায় কি আছে একদম বোঝা যায় না । ট্রলার ম্যানকে জিজ্ঞাসা করলাম আজকের তিথি কি । ও বলল আজ অমাবশ্যা । আকাশের দিকে তাকিয়ে স্তম্ভিত আমি । আশপাশে কোন বিদ্যুৎ না থাকায় বা নগরের অবস্থান নেই বলে আকাশ পুরো ধরা দিয়েছে আমার সামনে । এত তারা, রজতশুভ্র ! না গুনেও শেষ হবেনা । ছোট বড় মাঝারি সব তারাই আছে । শীতের এইসময়ে ধরিত্রী একটু উত্তরমুখী থাকে , আমি কি সৌভাগ্যবান আজ । মিল্কিওয়ে ভাবটা একদম পরিস্কার । মহাজগতের শেষ প্রান্ত অশেষ যেন । কত তারা এখানে ? কে দেবে আমার প্রশ্নের উত্তর । শাহিন সাহেব কেবিন ছেড়ে বেরিয়ে আমার মত আকাশে তাকালেন । আমি শিশিরে ভিজে যাওয়া মুখ মুছলাম কেবিন থেকে তোয়ালে এনে । শাহিন সাহেব কেবিনে ঢুকতে ঢুকতে বললেন এই শিশিরপাত চোখে দেখা যায়না । বিপদ হচ্ছে এটা মাথায় বসে ঠাণ্ডা লেগে গেলে জ্বর মাস্ট । আসলেও তাই , প্রতি তিন চার মিনিটে আমার মুখ চোখ ভিজে যাচ্ছে শিশিরপাতে , অদৃশ্য অথচ আকাশ কি পরিস্কার । ভ্যানগগ চলে এলো দৃশ্যপটে । তিনি উত্তর গোলার্ধে আরও ভাল বিশাল আকাশ দেখেছিলেন বলেই বিখ্যাত ছবি একেছিলেন । এই দেখার একটা কৌশল আছে । ভ্যানগগ তার ভেতরে বিশাল এক জনপদকে সেঁধিয়ে নিয়ে দেখেছিলেন বলেই তার স্টারি নাইট সকলকে আকর্ষণ করেছিল । তিনি অডিয়েন্স বুঝতেন , তাদের মেজাজ বুঝতেন । এই বুঝতে পারাটা একজন শিল্পীর সার্থকতা । সুন্দরবন থেকে আকাশে জানুয়ারি মাসে মিল্কিওয়ের প্যাচ ভীষণ আলাদা রকম । ওটা একসময় আঁধারে হারিয়ে গেছে । কয়েক কোটি তারা দৃশ্যমান । এদের কোথাও কি জীবন নেই । মুখ মুছছি আর ভাবালুতায় আচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছি । ঘাড় ব্যাথা শুরু হল । ভাবলাম বালিশ এনে শুয়ে দেখি । ট্রলারম্যান পাশেই দাড়িয়ে । সে বুঝে ফেলল আমার মতিগতি । বলল স্যার আপনি অভ্যস্ত না , জ্বর হয়ে যাবে । শেষ দেখা দেখে কেবিনে ঢুকে শুয়ে পড়লাম । ঘুম আসার আগ পর্যন্ত মন জুড়ে আকাশের মিল্কিওয়ের শেষ প্রান্ত জেগে রইল ।


মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:৪২

আমি সাজিদ বলেছেন: দেড় বছর আগে ট্যুরে একেবারে কটকা পর্যন্ত গিয়েছিলাম। না না, আলোর কোল পর্যন্ত। মংলার পর ফোনের নেটওয়ার্ক যখন নেই হয়ে গেল আমাদের দলের সে কি উল্লাস! রাতের সুন্দরবনে এক অন্যরকম মায়া আছে। আপনার ভ্রমনের সময়টা খুবই উপযুক্ত ব্লগার।

পোস্টে ভালো লাগা জানিয়ে গেলাম।

২৪ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:০০

শাহ আজিজ বলেছেন: আলোর কোল সাগরের তীরে । বন এবং সাগর দুটোই দেখা যায় । আমি গেছি ২০০০ সালের জানুয়ারি মাসে ।

২| ২৪ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:০৭

শেরজা তপন বলেছেন: সুন্দরবনে আমাবস্যার রাতে ওই শীতের ঝকমকে আকাশে লক্ষ কোটি তারার ভীড়ে অন্য জাগতিক সুখ অনুভুত হয়।
ভাল লাগল আজিজ ভাই

আমি ছিলাম একবার সাতদিন!

২৫ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১:০৪

শাহ আজিজ বলেছেন: খুব ভাল । লিখে ফেলুন ভ্রমন কাহিনী ।

৩| ২৪ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:৫১

সাহাদাত উদরাজী বলেছেন: কবে যে এমন দেখার দিন আসবে!

২৫ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১:০০

শাহ আজিজ বলেছেন: আগামি জানুয়ারিতে প্লান করে ফেলুন ।

৪| ২৫ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:১৯

রাজীব নুর বলেছেন: কটকা, দূবলার চর, হিরন পয়েন্ট গিয়েছি বেশ কয়েকবার। দারুন লেগেছে।

তবে সবচেয়ে বিরক্ত লাগে দীর্ঘক্ষন পানির উপরে থাকতে হয়।

২৫ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১:০৩

শাহ আজিজ বলেছেন: হুম তা ঠিক ।

৫| ২৫ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:২৭

চাঁদগাজী বলেছেন:


দেখতে গিয়ে, নৌকা থেকে মাছ ধরা যায়?

২৫ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১:০২

শাহ আজিজ বলেছেন: হ্যা যায় । ক্ষেপলা জাল ব্যাবহার করতে পারবেন ।

৬| ২৫ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ২:২৬

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: গাজী ইস্টিমার থেকে কয়েক বার ছিটে ফোটা দেখেছি, ঐ পর্যন্তই।যখন সুযোগ ছিল তখন ইচ্ছা ছিল না এখন ইচ্ছা আছে কিন্ত সুযোগ নেই।এমন করে যে কত কিছু হারিয়েছি।

২৫ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ১০:০১

শাহ আজিজ বলেছেন: এখন টুরিস্ট জাহাজ আছে । বেশ ভাল আয়োজন ।

৭| ২৫ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ২:৩২

নেওয়াজ আলি বলেছেন:
সুন্দর ভবিষ্যতে হয়তো আর সুন্দর নাও থাকতে পারে

২৫ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ৯:৫৮

শাহ আজিজ বলেছেন: সুন্দরবন সীমানা বাড়ছে । বরিশাল , পটুয়াখালীর দিকে বেড়েছে । সমুদ্র ভরে চর বাড়ছে । আমিতো মনে করি বঙ্গোপসাগরে যে চর পড়ছে তার সুষ্ঠু ব্যাবস্থাপনা থাকলে দেশের ভুমির পরিমান দ্বিগুণের বেশি বাড়বে ।

৮| ২৫ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৪:৩৪

ৎঁৎঁৎঁ বলেছেন: ঘোর আমাবস্যায় সুন্দরঅরণ্যে তারার সমুদ্র! আহা! খুব চমৎকার লিখেছেন, আমি কিছুটা আপনার অভিজ্ঞতার ভাগ পেলাম।
হরিন না খবার জন্য বিশেষ ধন্যবাদ!

২৫ শে আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৪

শাহ আজিজ বলেছেন: ধন্যবাদ । হরিন খাওয়া ছেড়েছি তখন যখন চিত্রা হরিন বিপজ্জনক হারে কমছে । শিশু বয়েসে খেয়েছি যখন নিষেধাজ্ঞা ছিল না এবং প্রাণীর প্রতি দায়িত্ববোধ জাগেনি ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.