নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চারুশিল্পী , লেখক

শাহ আজিজ

চারুশিল্পী , লেখক

শাহ আজিজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বেচ্ছায় নিলাম করোনার টিকা

২৯ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:৪০


এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবার কাছেই বহুল আকাঙ্ক্ষিত করোনাভাইরাসের টিকা বা ভ্যাকসিন। চীনের তৈরি ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চলছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে। অনেকেই স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অংশ নিচ্ছেন এই টিকার পরীক্ষায়, যাঁদের মধ্যে আছেন কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশিও। তাঁদেরই দুজন লিখেছেন করোনা ভ্যাকসিন নেওয়ার অভিজ্ঞতা।
১১১১
চিকিৎসকের সংশয় ভুল প্রমাণ করেছি: শাহাদাত হোসেন

ভ্যাকসিন ট্রায়ালে অংশ নিচ্ছি শুনে সবাই নিরুৎসাহিত করল। পরিবারের সদস্যরা তো বটেই, কর্মস্থল থেকে পরিচিত মহল—সবার এক কথা, কেন বাপু এসব! সবার মানা অগ্রাহ্য করেই হাজির হয়েছিলাম টিকাকেন্দ্রে। কিছু শারীরিক পরীক্ষার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক সংশয় প্রকাশ করে জানালেন, আমি ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে পারব না। বিপত্তির কারণ, আমার শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষমতা স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা কম।

মনটা ভেঙে গেল। চিকিৎসকদের বললাম, অনেক আগে থেকেই আমি এই সমস্যার ব্যাপারে অবগত, যদিও কখনো কোনো অসুস্থতা অনুভব করিনি। ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এক চিকিৎসক এসে আমার কথা শুনলেন। তিনি রক্ত পরীক্ষার ফলাফল দেখে জানালেন, আমার আপত্তি না থাকলে ভ্যাকসিন দেওয়া যাবে।আমার থাকবে আপত্তি! এক বাক্যেই অনুমতি দিলাম। গত ২৭ জুলাইয়ের কথা সেটা। সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি শহরে শেখ খলিফা মেডিকেল হাসপাতালের একটি অস্থায়ী টিকা প্রদান কেন্দ্রে ভ্যাকসিন গ্রহণ করলাম। চীনা প্রতিষ্ঠান সিনোফার্মের করোনার টিকা নিয়ে তো কম কথা হচ্ছে না। আমি এর দিন দশেক আগে স্থানীয় একটি পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারি, করোনার ভ্যাকসিন গ্রহণের জন্য স্বেচ্ছাসেবক সংগ্রহ করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। আগ্রহী হয়ে অনলাইনে একটি ফরম পূরণ করে আবেদন করলাম।

২৩ জুলাই স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ডাক পড়েছিল। প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ভ্যাকসিন গ্রহণের ছাড়পত্র পাই। ২৭ জুলাই দুপুরে টিকা প্রদানের তারিখ নির্ধারিত হলো। কাজ থেকে ঘণ্টাখানেকের ছুটি নিয়ে টিকাকেন্দ্রে চলে যাই। সেখানে পৌঁছে বাড়িতে ফোন করি। চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায় আমাদের বাড়ি। পরিবারের সবাই গ্রামেই থাকেন। আমি ১০ বছর এ দেশে বসবাস করছি। বর্তমানে স্থানীয় একটি বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় প্রতিনিধি। ফোন পেয়ে স্ত্রীর কণ্ঠে ক্ষোভ ঝরে পড়ল, ‘শেষ পর্যন্ত চলেই গেছ? কী আর করা!’ভারতের কেরালার একজন চিকিৎসক আমার শরীরে টিকা দিলেন। তাঁর নামটি ঠিক মনে নেই। টিকা নেওয়ার মুহূর্তটি স্মরণীয় করে রাখতে ছবি তুলতে চাইলাম। তবে ডাক্তার বারণ করলেন। তিনি আমার বাঁ হাতে ইনজেকশন দিলেন। এরপর ৩০ মিনিট পর্যবেক্ষণে রাখা হলো। সে সময় কিছু নির্দেশনা দেওয়া হলো। কোনো শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে তা ডায়েরিতে লিখে রাখতে বললেন। খাওয়াদাওয়া কিংবা চলাফেরায় কোনো বিধি-নিষেধ নেই। তবে তিন মাসের আগে দেশ ত্যাগ করতে পারব না। এ ছাড়া ভ্যাকসিন গ্রহণের পর জ্বর, ব্যথা, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্টসহ সাময়িক কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে।

টিকা নিয়ে কর্মস্থলে ফিরে আসি। অন্যান্য দিনের মতোই স্বাভাবিকভাবে সব কাজ করে বাড়ি ফিরি। পরের দিন হাতে বেশ ব্যথা হয়েছিল। সাধারণ ব্যথানাশক ওষুধ খেয়েই তা সেরে গেছে। এ ছাড়া আর কোনো সমস্যা দেখা দেয়নি। প্রতিদিনই চিকিৎসকেরা আমার খোঁজ নিতেন।

গত ১৮ আগস্ট দ্বিতীয় ধাপের টিকা নিয়েছি। এবারও শারীরিক কোনো সমস্যা হয়নি। মানসিকভাবেও একধরনের স্বস্তি বোধ করছি। সত্যি বলতে ভ্যাকসিন নিতে তেমন ভয় লাগেনি। কারণ, এই দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা খুবই উন্নত। বড় কথা, মানুষের কল্যাণে মহৎ একটি কাজ করার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইনি। আমি না করলে আরেকজন মানুষই তো এই কাজ করত—এই চিন্তা করেই সব দ্বিধা দূর করে টিকা নিয়েছি।

দ্বিতীয় টিকা গ্রহণের পর আরব আমিরাতের স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে আমাকে একটি ধন্যবাদসূচক সনদ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ৬০০ দিরহামের গিফট ভাউচারসহ বেশ কিছু উপহার দিয়েছে তাঁরা। আর আগামী এক বছর আমার যেকোনো ধরনের চিকিৎসার ব্যয় সরকারিভাবে বহন করার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে।

২২২২
ভালো আছি, সুস্থ আছি: মোহাম্মদ মোস্তফা

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সেরে উঠেছি, নিজের কাছেই এটা অবিশ্বাস্য মনে হয়। স্বাদহীন, গন্ধহীন দুনিয়াটা মনে হতো অনর্থক। এখনো মনে পড়ে, সেরে ওঠার মাস দেড়েক পর বন্ধুদের সঙ্গে প্রথম দেখা হলে, ভগ্নস্বাস্থ্য দেখে অনেকে চিনতেই পারেনি আমাকে। রমজান মাসের সেই অভিজ্ঞতা আমার জীবনযাপনে পরিবর্তন এনেছে। ভাবতে শিখিয়েছে ভিন্নভাবে।

তাই যখন শুনলাম, সংযুক্ত আরব আমিরাতে চীনের উদ্ভাবিত করোনার টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হবে, একমুহূর্ত দেরি করিনি খোঁজ নিতে। দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগের বিজ্ঞপ্তি দেখে অনলাইনে ফরম পূরণ করি। আমার উৎসাহ দেখে মা-বাবা সংশয় প্রকাশ করবেন ভেবেছিলাম। কিন্তু করলেন উল্টোটা। সেই উৎসাহে আমার ছোট ভাই মোহাম্মদ মর্তুজাও নাম নিবন্ধন করাল।মা–বাবা আমাদের প্রতিটি কাজে এভাবেই পাশে থাকেন। তাঁরা চট্টগ্রাম থেকে এ দেশে এসেছেন কয়েক দশক আগে। আমাদের দুই ভাইয়ের জন্ম ও বেড়ে ওঠা এখানেই। আমি স্নাতক করেছি যুক্তরাজ্যের হারিয়ট-ওয়াট বিশ্ববিদ্যালয়ের দুবাই ক্যাম্পাসে। বর্তমানে ব্যবসা করছি।

অনলাইনে নিবন্ধনের কিছুদিন পর আমাকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য নির্বাচন করা হয়েছে জানিয়ে বার্তা পাই। ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী সুস্থ মানুষদের পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আমার বয়স ২৬ বছর। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ পুরো শরীর পরীক্ষা করাল। শারীরিক পরীক্ষায় আমি উতরে গেলাম। চিকিৎসকদের কথা ইতিবাচক। তাঁরা সবাই অনুপ্রেরণা জোগালেন।

২৭ জুলাই আমার ডাক পড়ল। নির্দিষ্ট টিকাকেন্দ্রে হাজির হলাম। ধাপে ধাপে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করল। এরপর একটি কামরায় নিয়ে জিজ্ঞেস করল, আমার কোন হাত বেশি সক্রিয়? বললাম, ডান হাত। যে হাত দিয়ে বেশি কাজ করতে হয়, সে হাতে টিকা দেওয়া হবে না। একজন চিকিৎসক আমার বাঁ হাতে সুচ প্রবেশ করলেন। সংশয়হীন গৌরববোধ হলো ভেতরে-ভেতরে। মনে হলো আমিও ইতিহাসের অংশ। যে টিকার অপেক্ষায় পুরো দুনিয়া, এমন একটি টিকার পরীক্ষায় নিজেকে যুক্ত করতে পারার মতো মহৎ কাজ আমি কখনো করেছি বলে মনে পড়ে না।টিকা নিয়ে আধঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখল। ছবি তোলায় কড়াকড়ি বলে মুহূর্তটা মনের ক্যামেরায় তুলে রাখতে হলো। পরবর্তী দিনে ভালো–মন্দসহ স্বাস্থ্য জটিলতার বিষয় তাদের জানানোর জন্য একটি নোটবুক দিল। সেখানে সংরক্ষণ করতে থাকলাম করোনার টিকা নেওয়ার দিনলিপি।

আমার কোনো শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়নি। তাই ২৩ আগস্ট ডাক পরে দ্বিতীয় ধাপের টিকা নেওয়ার জন্য। এ পর্বেও নিয়ম মেনে টিকা নিয়েছি। প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখছি চিকিৎসকদের সঙ্গে। কর্তৃপক্ষ এভাবে কয়েক মাস পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়া চালাবে।

এরই মধ্যে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রশংসাপত্র দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এ তো শুধু এক পাতা কাগজ নয়, যেন গর্বের স্মারক। আমার ছোট ভাইও পেয়েছে প্রশংসাপত্র। আমরা দুজনই ভালো আছি, সুস্থ আছি।

সংগৃহীত

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:৫৫

চাঁদগাজী বলেছেন:


ভালো কাজ।

২৯ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:০৫

শাহ আজিজ বলেছেন: বাস্তবে একজনের কাছ থেকে জানতে চাইছিলাম তাদের কি অবস্থা হয় বা আছে ।

২| ২৯ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:০১

নেওয়াজ আলি বলেছেন: ল্যানসেটের প্রতিবেদন-
বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি লাগামহীন হতে পারে l Click This Link

২৯ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:১০

শাহ আজিজ বলেছেন: দেশে মানুষের শৃঙ্খলাবোধ একদম নেই ।

সরকার কিই ই বা করতে পারে ।

হাস্পাতাল পরিস্থিতি কেমন তা ৫ মাস ধরে জেনেছি । আক্রান্তরা ঘরেই চিকিতসা নিচ্ছেন । ডাক্তাররা খুশি রোগীর সংস্পর্শে যেতে হচ্ছে না । মানুষের অর্থ দরকার খাদ্যের জন্য তাই তারা সব নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কাজে যাচ্ছে । এক্ষত্রে সংক্রমন বাড়ছে এবং পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাড়ায় কিছুই বলা যাচ্ছেনা ।

৩| ২৯ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:০৬

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: শাহাদাত হোসেন ও মোহাম্মদ মোস্তফার জন্য শুভ কামনা থাকলো। শাহাদাত হোসেন কি করোনা আক্রান্ত ছিলেন?

যাই হোক, তারা কল্যাণকর ইতিহাসের অংশ হয়ে গেলেন।

২৯ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:১২

শাহ আজিজ বলেছেন: হ্যা , তিনি করোনা থেকে সেরে উঠেছেন । এথেকে জানা গেল সেরে ওঠা মানুষদের টিকা নিতে হবে ।

৪| ২৯ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:১০

চাঁদগাজী বলেছেন:

লেখক বলেছেন, " বাস্তবে একজনের কাছ থেকে জানতে চাইছিলাম তাদের কি অবস্থা হয় বা আছে । "

-টিকার সাইড এপেক্ট ধরা পড়তে বহু সময় লাগবে; অনেকের বেলায় সাইড এপেক্ট অধরা থেকে যেতে পারে।

২৯ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:৪১

শাহ আজিজ বলেছেন: হ্যা এটাই মুল বিষয় । এদের কম বয়স টিকে গেছে , বুড়োদের কি হয় কে জানে ।

৫| ২৯ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:৪৩

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: টিকা গ্রহনকারীরা ভাল মনের মানুষ।

২৯ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:৪৬

শাহ আজিজ বলেছেন: আমরা প্রায় বাস্তব অভিজ্ঞতা পাচ্ছি ।

৬| ৩০ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:১৮

রাজীব নুর বলেছেন: মনে হচ্ছে ভ্যাকসিনের দোড়্গড়ায় পৌঁছে গেছি!!

৩০ শে আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১২

শাহ আজিজ বলেছেন: যেদিন প্রথম পুশ হবে সেদিন আস্থায় আনব ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.