নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চারুশিল্পী , লেখক

শাহ আজিজ

চারুশিল্পী , লেখক

শাহ আজিজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বই দেকতি যাবেন ?

২২ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৪৫





আমাদের কিষানরা ফাল্গুন মাসে বড় গহনার নৌকায় ধান নিয়ে খুলনা আসত । এরপর ধানের বস্তা শ্রমিকরা ঠেলা গাড়িতে করে এনে আমাদের গোলায় উঠাতো । ওইদিন সন্ধ্যায় আমাদের কিষান দুজন বই দেখতে যেত । বই খুলনার স্থানীয় ভাষা । সিনেমার সরল অর্থ বই । ৬০ দশকে তিনটি সিনেমা হলের একটিতে রহিম বাদশা- রুপবান ধরনের সিনেমা চলত । এরা সন্ধ্যার শোতে ঢুকে রাত ৯টায় বাসায় ফিরত । এরপর রাতে একেবারে সামনের ঘরে দুজন গল্প করত আমার সাথে । যেসব কাহিনী বলত তা আমার মাথায় ঢুকত না । আমি সিনেমার বড় ব্যানার দেখি কিন্তু মৌলভি সাহেবের ছেলে তাই বই দেখতে গেলে ইজ্জত থাকেনা বলেই এসব প্রসঙ্গ উঠত না । ওরা পরদিন খালি নৌকা নিয়ে ফেরত যাবে । কিষানদের মাতবর হামিদ ভাই থেকে যেত । হামিদ ভাই আবার পরদিন বই দেখত । বাবার খুব প্রিয় মানুষ হামিদ । বই দেখার বিষয় আমার চতুর বাবা মৌলভি সাহেব বুঝতেন কিন্তু কেন তিনি কিছু বলতেন না আমার মাথায় আসত না । প্রতি বছর এমনটি হতো । বাবা হামিদের সাথে ফিস ফিস করে কিছু গোপন কথা বলতেন । তিনি গ্রামের বিষয়আশয় নিয়ে কথা বলতেন । আমার বোন বলত আমার বড় ভাই কি পরিমান ধান ক্ষেতেই বিক্রি করেছে তার হিসাব নিত । তিনি খুব বেপরোয়া ছিলেন । ট্রেনে কলকাতা যেতেন বই দেখতে । সারা দিন তিনটি বই দেখে রাতের ট্রেনে খুলনা আসতেন । গ্রামে রটে যেত কি কি বই দেখা হল আর বাকিরা সবাই সন্ধ্যার আসরে বসে হুক্কা টানত আর হামিদের জবানীতে বইএর পুরো কাহিনী শুনত । দুঃখের জায়গা বয়ানের সময় এক দুজন কেঁদে ফেলত । ধান উঠলে এদের অনেকেই সাহস করে খুলনা আসত বই দেখতে । তারা রাতে বই দেখে লঞ্চ ঘাটে ঘুমাত । ভোরের লঞ্চে আবার গ্রামে ফিরত । বড় সাহেব মানে আমার বড় ভাইয়ের কলকাতা গিয়ে বই দেখার কাহিনী চাউর হতো এবং সুচিত্রা সেন বা আমাদের কবরীকে গ্রামের মহিলারা মুখস্ত করে ফেলত ।
৬৭ সালে কোরবানির বা ইদের পরে আমার মা জননী আমার হাতে তিনটি টাকা দিলেন এবং বললেন পার্কের পাশে যে সিনেমা হল আছে সেখানে গিয়ে সিনেমা দেখবে এবং টিকেট এনে আমাকে দেবে , অন্য সিনেমা হলে একদম না । আমরা দুভাই জামা ভাজ করে বালিশের নিচে দিলাম যাতে ক্রিজ পড়ে । দুপুরে খেয়েই দৌড় । তিন টাকার মধ্যে সিনেমা , রিকশাভাড়া আর বাদাম খরচ । রিকশা ভাড়া কুড়ি পয়সা , সিনেমা ১০ আনা আর বাদাম কুড়ি পয়সা । আমরা হলে ঢুকেই একদম সামনের সারিতে বসলাম । টর্চ ওয়ালা লোক এসে বলল এখানে না , আরও পিছনে তোমাদের সিট । সিনেমা শুরু হল । নায়ক নায়িকা কিসসু নেই খালি হাজি সাহেবরা ছুটা ছুটি করছে কাবা ঘর ঘিরে । ভীষণ বেদনাহত আমরা ঘুমিয়ে পড়লাম । ধাক্কায় উঠে গেলাম । একজন বলছে বাকি ঘুম বাসায় গিয়ে ঘুমাইও , সিট ছাড়ো । আমার ছোটটি বলল সে এখানে আরেকটু ঘুমাবে । টেনে হিঁচড়ে ভিড় ভেঙ্গে বেরিয়ে এলাম । বাসায় মার হাতে টিকেট সমর্পণ । রাতে খাবার সময় মেঝ ভাই জিজ্ঞেস করলেন কি সিনেমা দেখলি ? মন খারাপ করে বললাম খানা এ খোদা । তিনি হাসতে হাসতে বললেন আমি পাকিস্তানী সিনেমা দেখেছি । হাড় জ্বলে গেল । তিনি এও জানালেন আমাদের সিনেমা হলের সামনে থেকে মানুষের ফেলে যাওয়া টিকিটের অংশ বাবাকে বুঝ দিয়েছে । খাওয়া বন্ধ করে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম ।

জীবন বড়ই বেদনার ।

মন্তব্য ২৩ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (২৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৯:১৫

মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: আপনারা কত কষ্ট করেই না সিনেমা দেখেছেন!! আমাদের সবকিছু হাতের মুঠোয় থাকা সত্ত্বেও আগের মতো ভালো সিনেমা পাই না।পোস্ট পড়ে ভালো লাগলো।

২২ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৯:২১

শাহ আজিজ বলেছেন: ৬০ এর দশকে সিনেমা দেখা মোটেও ভাল অভ্যাস ছিল না । তারপরও বাবা অনুমতি দিলেন । বাবা চলে গেলেন ৭০ এ । স্বাধীনতার পরে মন ভরে সিনেমা দেখেছি , প্রায় সবই ইংলিশ ছবি ।

২| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৪৩

এইচ তালুকদার বলেছেন: আমার মা কে আমিই প্রথম সিনেমা দেখতে নিয়ে যাই বসুন্ধরা স্টার সিনেপ্লেক্স এ ২০১৪ সালে। মুভিটা ছিলো সাদ্দামের দুষ্ট পোলা উদে হুসেন এর জীবনী নির্ভর ছবি ডেভিলস ডাবল। যুদ্ধের দৃশ্যের বিকট আওয়াজ সহ্য করতে না পেরে আমার মা দশ পনের মিনিট পরই হল ছেড়ে চলে আসেন। আর কোন দিন হলে যেতে চাননি এমনকি আয়নাবাজি মুভির টিকিট এনে দেবার পরেও না।

২২ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১০:০৪

শাহ আজিজ বলেছেন: হা হা হা !:#P

৩| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১০:০০

মুজিব রহমান বলেছেন: স্যরি!

আমরা আরো স্বাধীনতা ভোগ করেছি।

২২ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১০:০৫

শাহ আজিজ বলেছেন: বাবা মারা যাবার পর পূর্ণ স্বাধীনতা পেয়েছিলাম । ভোগ করেছি বেদম ভাবে ।

৪| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৫২

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: খুলনার সব কটা হলেই সিনেমা দেখেছি,৬৪টির আগে পরে। পিকচার প্যালেস ভাল হল ছিল।পুরনো স্মৃতি ভালই লাগে।

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ৯:১০

শাহ আজিজ বলেছেন: পিকচার , উল্লাসিনি , সোসাইটি আর পড়ে এলো বৈকালী । সব ভেজে খেতাম । পিকচারে ইংলিশ মুভি ভাল আসত ।

৫| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৫৬

রাজীব নুর বলেছেন: এযুগের ছেলেমেয়েরা ভাগ্যবান। আমিও ভাগ্যবান।

৬| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ২:০৬

আমি সাজিদ বলেছেন: উনিই সেই বিখ্যাত অভিনেতা রহমান? আপনার স্মৃতিকথা পড়ে ভালো লাগলো।

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ৯:১৩

শাহ আজিজ বলেছেন: হ্যা সেই বিখ্যাত রহমান । এক্সিডেন্টে পা ভেঙ্গে নাকাল । দিনাজপুরে শেষদিনগুলো কাটিয়েছেন ।

৭| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৩:৫০

সোহানী বলেছেন: হায় হায় সিনেমা দেখা নিয়েতো বিশাল সিনেমা। তবে আপনাদের হজ্ব দেখার সিনেমা দেখা অভিজ্ঞতা শুনে হাসছি। আহারে!! আপনার ভাইতো দেখি এটিএম সামসুজ্জামান B-)

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ৯:০৭

শাহ আজিজ বলেছেন: পুরাই , মুরগির ঠ্যাং ভাতের নিচে লুকিয়ে রাখত । আমাদের খাওয়া শেষ হলেই দাত কেলিয়ে বের করে হাসত আর রানে রসিয়ে রসিয়ে কামড় দিত , গা জ্বলে যেত বাকি দু ভাইয়ের ।

৮| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২০ ভোর ৫:৫১

কবিতা ক্থ্য বলেছেন: আপনি কি এখন খুলনা থাকেন?

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ৯:০৩

শাহ আজিজ বলেছেন: ঢাকায় স্থায়ী , খুলনায় বাড়িঘর ।

৯| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:৩৬

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
আহা ! বই দেখতে সেকি কস্ট। আর এখন হাতের মুঠোয়, চাইলেই দেখা যায় দেখিনা । ভাল লাগেনা। অনেকদিন পর গতকাল উত্তরের সুর নামে সুন্দর একটি বাংলা মুভি দেখলাম।

সময় সব বদলে দেয়।

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:৪৭

শাহ আজিজ বলেছেন: আমারও নেট ফ্লিক্স আছে কিন্তু ইচ্ছা করেনা । মিউজিক ভিডিও খুব ভাল লাগে । চারিদিকে এতো এতো মুভি যে পর্দার মুভি আর ভাল লাগে । হুমায়ুনের বই ভাল লাগত । চঞ্চলের ছবি দেখি মনোযোগ দিয়ে ।

১০| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:৫৮

তারেক ফাহিম বলেছেন: স্কুল ফাঁকি দিয়ে জীবনে ০৩ বার প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে সিনেমা দেখলাম।

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:০০

শাহ আজিজ বলেছেন: আমি ভাল ছাত্র ছিলাম বলে এইসব চিন্তা করতে সাহস করতাম না ।

১১| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:৩৫

মনিরা সুলতানা বলেছেন: আমার ছোট বেলায় আমার চাচাতো বোন দুলাভাই যখন ঢাকা বেড়াতে আসতেন, আমার বড় বোন কে নিয়ে এমন বই দেখতে যেতেন । আপনার স্মৃতি কথা ভালো লাগলো।

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:৪১

শাহ আজিজ বলেছেন: সেই সময় বই দেখা একটা দারুন ব্যাপার ছিল ।

ধন্যবাদ ।

১২| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:২৭

হাসান রাজু বলেছেন: আমার মা, বাবা শুক্রবার বিকেলে বসে ১/১ঃ৩০ ঘণ্টা সিনেমা দেখতেন বিটিভি তে। আমরা ও বিকেলে খেলা দেখতে চলে যেতাম। ১৯৯৯ সালের দিকে একদিন রাতে বসে টিভিতে স্টার মুভিজ টাইপের কোন চ্যানেলে Terminator 2: Judgment Day দেখছিলাম। মা ও অনেকক্ষণ দেখলেন এবং একসময় সিনেমায় আটকে গেলেন। সিনেমা শেষ হওয়ার আগে একসময় উঠে চলে গেলেন বেশি রাত গিয়েছে বলে।
আশ্চর্য হলাম পরদিন যখন জানতে চাইলেন "শেষ কি হল?" আসলে উনার সাথে এই ব্যাপারটা যায় না। তারচেয়ে বড় কথা হল, উনি পুরো সিনেমাটা বুঝেছেন। B:-)

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:৫১

শাহ আজিজ বলেছেন: বয়স বিষয় না । আগ্রহ আসল ব্যাপার । তবে বয়েসের সাথে সাথে পছন্দ বদলায় । আমি অনেক বয়স্ক মানুষকে দেখেছি চলতি হাওয়ায় আনন্দ নিতে , এটাই স্বাভাবিক ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.