নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চারুশিল্পী , লেখক

শাহ আজিজ

চারুশিল্পী , লেখক

শাহ আজিজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

শুভ জন্মদিন ডঃ জাফরুল্লাহ

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১০:১৪



আমি প্রথম গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র দেখি বাসে বসে সাভার- নয়ারহাটের মাঝামাঝি নিচু জায়গায় তিনশেড , চারিদিকে চাষের জমি । খুবই গরিবি হাল ছিল গনস্বাস্থ্যের । তাকে দেখতাম চারুকলায় আসতে । তার ছোট ভাইটির সাথে সখ্যতা গড়ে উঠল । তার বোন ভর্তি হল আমাদের এক বছরের জুনিয়র । আস্তে ধীরে সেই গণস্বাস্থ্য হু হু করে বেড়ে উঠল । তিনি সবসময়ই শাসকদের সন্দেহ , তুচ্ছ , তাচ্ছিল্যর শিকার হয়েছেন । কিছুদিন আগে তার পেজে দেখলাম মুক্তিযুদ্ধে কিভাবে যোগ দিলেন তার বয়ান দিয়েছেন । তক্কে তক্কে ছিলাম তার লেখা ছেপে দেব । আজ তার ৭৯ তম জন্মদিন । শুভ জন্মদিন জাফরুল্লাহ সাহেব ।

# ১৯৭১ এ লন্ডন থেকে কলকাতা এসে প্রথম সপ্তাহে যা দেখলাম :
ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনসে রাতে কলকাতা দমদম বিমানবন্দরে পৌঁছলাম। উৎসাহ ও উত্কণ্ঠা নিয়ে ট্যাক্সি করে সোজা বাংলাদেশ হাইকমিশনে। ধারণা ছিল যুদ্ধ যখন চলছে, তখন নিশ্চয়ই সারা রাত কমিশন খোলা, সবাই ব্যস্ত, কর্মচাঞ্চল্যে ভরপুর। পৌঁছে চমকে দেখলাম হাইকমিশন নীরব নিষ্প্রভ। অনেক চেষ্টার পর খবর পৌঁছালাম পাকিস্তানের ডেপুটি হাইকমিশনার বর্তমানে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হোসেন আলীর কাছে। তিনি আমাদের কথা শুনে বিরক্ত মনে বললেন, আপনারা কষ্ট করে কেন এসেছেন, থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা নেই। যান রাতটা নিকটবর্তী লিটন হোটেলে কাটান, তাদের এয়ারকন্ডিশন রুম আছে। ধাক্কা খেলাম, এয়ার কন্ডিশন রুমে আরাম-আয়েশে থাকার জন্য তো আমরা লন্ডন থেকে কলকাতায় আসিনি। হাইকমিশনের মেঝেতে শয়ন ব্যবস্থা করলে বেশি খুশি হতাম। এসি হোটেলে অর্থ ব্যয় না করে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সে টাকা ব্যয় তো সঠিক কাজ।
পরের দিন অনেকের সঙ্গে দেখা হলো— বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্র, রাজনৈতিক কর্মী। সবার একই কথা, তারা ভয়ানক কষ্টে আছেন, আহার-বাসস্থানের ব্যবস্থা নেই; একই প্রশ্ন, ‘প্রাণের তাগিদে আমরা দেশ ছেড়েছি, আপনারা কেন এসেছেন?’ কেউ কেউ বললেন, বিদেশে যাওয়ার জন্য আমরা সাহায্য করতে পারব কিনা?
দেখা হলো ব্যারিস্টার মওদুদ, আমিরুল ইসলাম ও প্রবাসী সরকারের পররাষ্ট্র সচিব মাহবুবুল আলম চাষীর সঙ্গে। চাষী আমাদের নিয়ে গেলেন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের কার্যালয়ে ৮ নং থিয়েটার রোডে। প্রথমে সাক্ষাৎ করালেন কর্নেল (অব) মুহম্মদ আতাউল গনি ওসমানীর সঙ্গে। ছাত্রজীবনে তার সঙ্গে একবার পরিচয় হয়েছিল। তিনি ১৯৬২-৬৩ সালে রাওয়ালপিণ্ডি থেকে ঢাকা এসেছিলেন পূর্ব পাকিস্তানি ছাত্রদের সামরিক বাহিনীতে যোগদানে উৎসাহিত করার জন্য। তিনি সিলেটি ভাষা ভালো বলেন, আলাপনে বাংলার চেয়ে ইংরেজি বেশি বলেন।
আমরা লন্ডন থেকে এসেছি শুনে হাত বাড়িয়ে বললেন, ‘ওয়েলকাম ইয়ং ম্যান। হাউ ইজ লন্ডন নাও এ ডেইজ, হাউ ইজ তাসাদ্দুক? গ্যানজেস কেমন চলছে? সিলেটিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন, আমার কথা বলবেন, সকল সিলেটবাসী আপনাদেরকে সাহায্য করবে অকাতরে।’ তিনি আমাদের নিয়ে গেলেন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের কাছে। তখন তিনি গভীর চিন্তায় মগ্ন। বসতে বলেই জিজ্ঞেস করলেন, ‘বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী কেমন আছেন? বাঙালিদের বিভেদ, দলাদলি কীভাবে সামাল দিচ্ছেন? বাম রাজনৈতিক দলগুলো চৌধুরী সাহেবের সঙ্গে আছে তো? যুদ্ধ চলছে, দেশ পাকিস্তানি বাহিনীর হাত থেকে পুরো মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চলবে। নিজেরা গিয়ে দেখুন, বিলেতের প্রবাসী বাঙালিদের সংঘবদ্ধভাবে সাহায্য করতে বলবেন। বিলেতের ডাক্তারদের তো অনেক আয়।’
তিনি আরো বললেন, ‘যুদ্ধ চলছে যশোর ক্যান্টনমেন্ট, আগরতলা সীমান্তে, নিজেরা গিয়ে দেখেন। প্রস্তুতি চলছে গেরিলা যুদ্ধেরও, মুক্তিবাহিনী সত্বর দেশের অভ্যন্তরে আক্রমণ শুরু করবে।’ তাজউদ্দীন সাহেবের বক্তব্যে আমরা আশান্বিত হলাম। বুঝলাম, যোগ্য লোকের হাতে নেতৃত্ব আছে। এখানে নিশ্চয়ই বিলেতের মতো দলাদলি নেই। ভুল ভাঙল কয়েক দিন পরে।
পরের দিন গেলাম যশোর সীমান্তে। ক্যাপ্টেন হাফিজ যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন, যদিও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রচণ্ড চাপে যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে পিছু হটে ভারতীয় সীমান্তে আশ্রয় নিয়েছেন কিন্তু ক্লান্তি বা হতাশার চিহ্ন নেই। অধিকতর উদ্যমে পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসা ছাত্র ও শ্রমিকদের রণকৌশল শেখাচ্ছেন। ক্যাপ্টেন হাফিজ নিজের জন্য কিছু চাইলেন না। বললেন, ‘তরুণ গেরিলাদের কাপড়চোপড় ও খাদ্য দিয়ে সাহায্যের চেষ্টা করুন।’
সেখান থেকে ফিরে দেখা হলো কাজী জাফর ও মেননের সঙ্গে। মেননের ভাই সাদেক খান বললেন, ‘যুদ্ধ দেখতে হলে আগরতলা যান, সেখানে খালেদ, জিয়া, শফিউল্লার নাগাল পাবেন, দেখবেন বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইপিআর ও পুলিশ কীভাবে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে, তরুণ গেরিলারা প্রস্তুতি নিচ্ছে ঢাকা আক্রমণের জন্য।’
সাদেক খান খুব ভালো ছাত্র ছিলেন। ম্যাট্রিক, ইন্টারমিডিয়েটে প্রথম হয়েছিলেন। সার্বক্ষণিক কমিউনিস্ট কর্মী হয়ে অনিয়মের কারণে যক্ষ্মা আক্রান্ত হন এবং কয়েক বছর লেখাপড়া বন্ধ রাখেন। পরে কিছুদিন অভিনয়ে ও চলচ্চিত্র নির্মাণের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পরবর্তীতে ব্যবসায়ে অত্যন্ত সফল হয়েছিলেন।
আমরা বোকার মতো সরল মনে কলকাতা পুলিশের কাছে আগরতলা ও আসাম যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করি। দুদিনের মধ্যে অনুমতি পেয়ে যাব আশ্বাস দিলেও চারদিনেও অনুমতিপত্র না পাওয়ায় বিষণ্ন হয়ে পড়ি। আমাদের দুঃখের কথা শুনে সাদেক ভাই বললেন, ‘বোকামি করেছ, পুলিশের কাছে কেন গিয়েছ, কখনো তোমরা অনুমতি পাবে না। নাম বদলিয়ে টিকিট কেটে সোজা আগরতলা চলে যাও। সেখানে খালেদ মোশাররফের সাক্ষাৎ পাবে।’ সাদেক খান এজেন্টের মাধ্যমে মি. জেড চৌধুরী ও মি. মবিন নামে টিকিটের ব্যবস্থা করে দিলেন।
সপ্তম দিনে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনসে কলকাতা থেকে আগরতলা। পূর্ব পাকিস্তানের মহকুমা শহরের চেয়েও ছোট। হোটেলের সন্ধানে শহরের প্রবেশপথে প্রথম দেখা হলো ছাত্রলীগ নেতা শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে। ছাত্রজীবনে আমি ছাত্র ইউনিয়ন করতাম বলে মনির সঙ্গে সম্পর্ক ভালো ছিল না। তাই একটু শঙ্কিত হয়ে তাকাতেই মনি বললেন, ‘ডাক্তার, আমি জানতাম আপনি আসবেন, কমিউনিস্টরা লন্ডনে বসে থাকবে না।’ হাসিমুখে ভালো ব্যবহার করলেন। জিজ্ঞেস করলেন কলকাতায় কার কার সঙ্গে দেখা হয়েছে।
‘প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ’ বলার সঙ্গে সঙ্গে ফজলুল হক মনি হঠাৎ রেগে গেলেন। বললেন, ‘কোথাকার প্রধানমন্ত্রী? কে তাকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছেন? প্রতারক তাজউদ্দীন, নিজে নিজেকে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করে ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে দেখা করেছেন। আওয়ামী লীগের ভেতরে লুকিয়ে থাকা কমিউনিস্ট।’ আমরা হতভম্ব হয়ে গেলাম। ভাবলাম যুদ্ধের সময় যদি এরূপ বিভেদ থাকে, ভবিষ্যতে কী হবে? নিশ্চয়ই তাজউদ্দীন সাহেবের জীবনটা সুখের হবে না। স্বাধীনতা উত্তরকালে তা-ই প্রমাণিত হয়েছিল। ‘কৃতঘ্ন’ শব্দটা অন্য ভাষায় নেই। ষড়যন্ত্র থেমে ছিল না। যুদ্ধকালীন ভারতীয় কর্তৃপক্ষ মনির সহায়তায় প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের অজ্ঞাতে বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স (বিএলএফ) সৃষ্টি করেছিল মুক্তিযোদ্ধাদের সমান্তরাল অন্য একটি বাহিনী হিসেবে।
দেখা হলো চট্টগ্রামের এমআর সিদ্দিকী সাহেবের সঙ্গে। তিনি ওই রাতে তাদের সঙ্গে আগরতলা সার্কিট হাউজে আমাদের থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন। পরের দিন ভোরেই রওনা হলাম দুই নম্বর সেক্টরের উদ্দেশে, মেলাঘরের পথে। সাক্ষাৎ হলো মেজর খালেদ মোশাররফ, মেজর জিয়া, শফিউল্লাহ, মীর শওকত আলী ও অন্যদের সঙ্গে। যুদ্ধে ফিল্ড হাসপাতালের প্রয়োজনীয়তা বুঝিয়ে বলার পর খালেদ বললেন, ‘আমার ডাক্তারের প্রয়োজন নেই। আমার প্রয়োজন অস্ত্র এবং বুলেট অ্যান্ড বুলেটস। আপনারা লন্ডন ফিরে গিয়ে আইআরএর সঙ্গে যোগাযোগ করুন। আমাদের জন্য রাতে দেখা যায় এরূপ বাইনোকুলার, ছোট ডুবুরি যান মিডগেট এবং ছোট ছোট অস্ত্র জোগাড় করে পাঠান। চেকোশ্লোভাকিয়ায় অল্প মূল্যে স্বয়ংক্রিয় ছোট অস্ত্র পাওয়া যায়।’
কয়েক দিনের মধ্যে আহত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বেড়ে গেলে মেজর খালেদ তার মত বদলাতে বাধ্য হন। দুই মাসের মধ্যে গড়ে ওঠে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর দেহরক্ষী হাবুল ব্যানার্জির আনারস বাগানে ৪৮০ বেডের ‘বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল’। প্রবাসী সরকারের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ প্রাথমিকভাবে কিছু অর্থ সাহায্য করেছিলেন। বেশির ভাগ খরচ ও সব যন্ত্রপাতি পাঠিয়েছিল লন্ডনস্থ বিডিএমএ। হাসপাতাল তৈরির মূল কৃতিত্ব ডা. মবিনের। এ হাসপাতালে ২২ অক্টোবর মাথায় গুলিবিদ্ধ মেজর খালেদ মোশাররফ প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছিলেন, পরে স্থানান্তর হয়েছিলেন লক্ষে ৗতে, ভারতীয় সেন্ট্রাল কমান্ডের বড় মিলিটারি হাসপাতালে।
বিডিএমএ থেকে অন্য চার চিকিৎসক— ডা. কাজী কামরুজ্জমান, বরকত আলী চৌধুরী, আলতাফুর রহমান ও মাহফুজ অক্টোবরে ভারতে এসে বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসেবা দেন। বিজয়ের প্রাক্কালে বিলেত থেকে আসেন ডা. মোশাররফ হোসেন জোয়ারদার, যার ঢাকায় শিশু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ ছিল। ডা. বরকত চৌধুরী বর্তমানে অসুস্থ, আলজেইমার রোগে আক্রান্ত, ডা. কাজী কামরুজ্জমান বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় ঢাকায় মগবাজারস্থ কমিউনিটি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ স্থাপন করেছেন। ডা. মাহফুজ একজন বিশেষজ্ঞ রেডিওলজিস্ট হিসেবে বিলেতে অবসর জীবন যাপন করছেন। তিনি বাংলাদেশের এনআরবি ব্যাংকের একজন উদ্যোক্তা পরিচালক। ডা. আলতাফ লন্ডনে অবসর জীবন যাপন করছেন। মধ্যে মধ্যে বেড়াতে দেশে আসেন। #

পরের লেখা পেলে ছেপে দেব ।

মন্তব্য ৪৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৫২

রাজীব নুর বলেছেন: অনেক কিছু জানা হলো।

২| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৫৩

স্থিতধী বলেছেন: তাজউদ্দীন আহমেদ কে নিয়ে লেখা প্রত্যয় জসীমের একটি বইতে পড়েছিলাম কিভাবে ব্যারিস্টার আমীরুল ইসলামের একটি অত্যন্ত বুদ্ধি দীপ্ত গুটিবাজী ভারতে তাজউদ্দীন আহমেদকেই প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হয়ে থাকতে সহায়তা করে । কেননা শেখ মনি ও খন্দকার মোস্তাক মিলে তাকে প্রায় বাধ্য করে ফেলেছিলেন প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে নেমে গিয়ে সেটার নেতৃত্বের ভার শেখ মণি ও খন্দকার মোস্তাক কে দিয়ে দিতে । কিন্তু ভারতের প্রচার যন্ত্র মারফত আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে যাতে তাজউদ্দীনের নামট-ই ঘোষিত হয়ে যায় তাঁর জন্য বুদ্ধি খাটান ব্যারিস্টার আমীরুল । ফলে পরবর্তীতে প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হন মণি, আর খন্দকার মোস্তাক নাকি তখন আচমকা মক্কাতে গিয়ে ওমরাহ্‌ করার খায়েস করে, তাঁর সেই খায়েশ দমান তাজউদ্দীন আহমেদ।

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:৩০

শাহ আজিজ বলেছেন: বাঙালি ভয়াবহ দলাদলিতে লিপ্ত সকল বিষয়ে । আমি সাধারন মানুষকে দেখেছি একত্রিত হয়ে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে দাড়াতে । কিন্তু ক্ষমতা লোভী নেতারা কে কিভাবে কোথায় কি কি পদ বাগাবেন তাই নিয়ে ব্যাস্ত । আমি সন্মান করি যারা সন্মুখ সমরে লড়েছেন ।

৩| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৫৫

চাঁদগাজী বলেছেন:


১৯৭১ সালের কোন মাসের কোন সপ্তাহে তিনি কলকাতা এলেন?

আগর তলায় সবার সাথে দেখা হওয়ায়, ২ নং সেক্টর ও ১ নং সেক্টর নিয়ে গোল বেঁধে গেছে লেখায়: মেজর খালেদ মোশারফ ছিলেন ২ নং'এর সেক্টর কমান্ডার; মেজর জিয়ার সাথে যখন আগরতলায় দেখা হয়েছিলো, তখন তিনি কি ১ নং সেক্টরের কমান্ডার, নাকি তিনি তখন শুধুমাত্ট 'যেড-ফোর্সের' কমান্ডার সেটা বর্ণনা থেকে থেকে বুঝা যাচ্ছে না। মেজর জিয়া আগরতলা যেতেন অস্ত্র আনার ব্যাপারে, কিন্তু সেটা উনার সেক্টরের ছিলো না।

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ৯:৪৫

শাহ আজিজ বলেছেন: ওনার লেখা অবিকল ছাপা হয়েছে । ভিতরের আলোচনা সংক্ষিপ্ত হওয়াতে বোঝা মুশকিল যে ১ না ২ সেক্টরে ??

৪| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৫৮

চাঁদগাজী বলেছেন:



@স্থিতধী,

বইতে অনেক কিছু পড়েছেন, ভালো; কিন্তু চিন্তা করে দেখেছেন কি ভারতীয় মিডিয়া ও বাংগালীদের সিদ্ধান্তে কি প্রবাসী সরকারের প্রাইম মিনিষ্টার ঠিক করা হয়েছে?

৫| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১১:০৩

চাঁদগাজী বলেছেন:


তাজউদ্দিন সাহেব, উনার কেবিনেট, বাংগালী কুটনীতিবিদরা জানতো না, যুদ্ধ কিভাবে চলছে, কোথায় কি হচ্ছে! উনারা ভেবেছিলেন যে, উনাদের কলকাতায় উপস্হিতির কারণেই দেশ স্বাধীন হয়ে গেছে! লোকগুলো বেকুবের হাড্ডি ছিলো, যাঁরা ১১ সেক্টরে যুদ্ধ করেছিলেন ও দেশের ভেতরের মানুষ প্রানপণে পাকিদের রুখেছেন, তারা জানতেন এই ৯ মাসে কি ঘটেছে, কিভাবে পাকিরা পালানোর পথ খুঁজেছে! স্হলপথে যোগাযোগ থাকলে পাকী সৈন্যরা সিভিলিয়ান পোশাক পরে পালিয়ে যেতো।

৬| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১১:০৭

চাঁদগাজী বলেছেন:



মনি ইডিয়ট ছিলো, সে আমাদের পুরো মুক্তিবাহিনীর নামে অভিযোগ করেছিলো যে, এগুলো বামপন্হি; জেতার পর, দেশ নকসালদের হাতে চলে যাবে; জন্মগতভাবে ইডিয়ট ছিলো মনি; ইন্দিরা গান্ধী তখন ভারতের নকসাল নিয়ে বিরাট সমস্যায় ছিলেন, মনিদের ভুল তথ্যে উনি কিছু ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ইডিয়টদের নিয়ে বিেলএফ গঠনের অনুমতি দেন।

৭| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১১:১১

চাঁদগাজী বলেছেন:



জাফরউল্লাহ সাহেবের বিরাট অবদান ছিলো; কিন্তু এঁদের সমস্যা হলো, এঁরা অবদানের বিনিময়ে অনেক বেশী পেতে চান, বাকী ১৮ কোটীর জন্য ভাবেন না।

৮| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১১:১৩

স্থিতধী বলেছেন: @ চাঁদগাজী সাহেব

প্রতিরোধ যুদ্ধের সে প্রথম প্রহরে কি কোন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আমাদের প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী ঠিক করা সম্ভব ছিলো? দৃশ্যত তখন ৭০ এর নির্বাচনে জয়ী বাঙালিদের নেতা শেখ মুজিবর রহমান কোন সুস্পষ্ট যুদ্ধকালীন নেতৃত্বের গাইডলাইন দিয়ে যান নাই, যতদূর জানি । যদিও মৌখিকভাবে শেখ মণি তখন নাকি দাবি করেছিলেন যে তাঁর মামা যুদ্ধের দায়িত্ব ওনার কাঁধেই দিয়ে গেছেন। ইন্দিরা গান্ধীর সাথে সাক্ষাত করে তাকে কনভিন্স করে ভারতের মাটিতে মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেইনিং করানো সহ সেখানে প্রবাসী সরকার গঠণের প্রধান উদ্যোক্তা হিসেবে তাজঊদ্দীন আহমেদের কথাই জানি । আপনার বিবেচনায় সেসময়ের প্রধান নেতৃত্ব কার হাতে থাকা উচিৎ ছিলো এবং সেটা কিভাবে নির্ণয় করা যুক্তিযুক্ত ও বাস্তব সম্মত হতো বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে সেরকম পরিস্থিতিতে ?

৯| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১১:১৭

স্থিতধী বলেছেন: চাঁদগাজী সাহেব বলেছেন; যাঁরা ১১ সেক্টরে যুদ্ধ করেছিলেন ও দেশের ভেতরের মানুষ প্রানপণে পাকিদের রুখেছেন, তারা জানতেন এই ৯ মাসে কি ঘটেছে, কিভাবে পাকিরা পালানোর পথ খুঁজেছে! স্হলপথে যোগাযোগ থাকলে পাকী সৈন্যরা সিভিলিয়ান পোশাক পরে পালিয়ে যেতো।

১১ সেক্টরে মুক্তিযোদ্ধা ও বাঙালি সেনারা খালি হাতে বা বাঁশ হাতে লড়াই করেন নাই। ওনাদের হাতের অস্ত্রগুলো কারা কি প্রক্রিয়াতে যোগাড় করে দিলো?

১০| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১১:২১

চাঁদগাজী বলেছেন:



@স্থিতধী ,

মনে হচ্ছে, আপনি অনেক থিওরী কপচাচ্ছেন; আসলে কি ঘটেছিলো উহা আপনি কি জানেন? যদি আপনার বয়স ৬৬ বছরের কম হয়ে থাকে, আপনার জানার কথা নয়।

১১| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১১:২৫

চাঁদগাজী বলেছেন:


@স্থিতধী ,
আপনি বলেছেন, "১১ সেক্টরে মুক্তিযোদ্ধা ও বাঙালি সেনারা খালি হাতে বা বাঁশ হাতে লড়াই করেন নাই। ওনাদের হাতের অস্ত্রগুলো কারা কি প্রক্রিয়াতে যোগাড় করে দিলো? "

-আপনার শিশুসুলভ কথা সারা বছরেরও শেষ হবে না। আপনি যা বুঝেন সেটা নিয়ে থাকেন; যুদ্ধের সময় বয়স কতো ছিলো?

১২| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১১:২৭

চাঁদগাজী বলেছেন:



বাংলাদেশ জাফর উল্লাহ সাহেবকে যেসব সুযোগ দিয়েছেন, তিনি আজকেও জাতিকে সাহায্য করতে পারতেন; কিন্তু উনি বেগম জিয়ার নাম মুখে এনে, একঘরে হয়ে গেছেন।

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:৩৭

শাহ আজিজ বলেছেন: নিজের কোয়ালিফিকেশন সন্মন্ধে নিজেরই হয়ত আস্থা ছিল না ।

১৩| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৩১

সোহানী বলেছেন: শুভ জন্মদিন ডঃ জাফরুল্লাহ। আপনার মতো মানুষগুলোকে এদেশে খুব দরকার।

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ৯:৩৩

শাহ আজিজ বলেছেন: একজন মানুষ ভাল সম্ভাবনা ছেড়ে লন্ডন থেকে কলকাতা চলে এলেন । বুকের পাটা আছে । ধন্যবাদ।

১৪| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৩৩

স্থিতধী বলেছেন: @ চাঁদগাজী সাহেব

আমি জানি না বলেই তো আপনার কাছে জানতে চাচ্ছি যে তখন আমাদের মুক্তিযোদ্ধা ও সেনাদের জন্য অস্ত্র ও অন্যান্য যুদ্ধের লজিস্টিকাল সাহায্য কি প্রক্রিয়ায় এসেছিলো সারা বাংলাদেশে? আপনি নিশ্চয়ই বলতে চাচ্ছেন না যে বাংলার ঘরে ঘরে তখন আক্ষরিকভাবে শেখ মুজিবের ডাকে রাইফেল গোলা বারুদ ম্যানুফেকচার করা হচ্ছিলো ? আপনি চিটাগাং এর ১ নং সেক্টরে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবেই জানি, তাহলে অন্তত সেই ১ নং সেক্টরেই কিভাবে সব কিছু ম্যানেজ করা হয়েছে সেকথাটা আপনার নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই জানাতে তো সমস্যা নেই কোন! কেউ তো কোন বাধা দেয়নি।

বাংলাদেশ জাফর উল্লাহ সাহেবকে যেসব সুযোগ দিয়েছেন, তিনি আজকেও জাতিকে সাহায্য করতে পারতেন; কিন্তু উনি বেগম জিয়ার নাম মুখে এনে, একঘরে হয়ে গেছেন।

আপনিও কি এক ঘরে হয়েছেন ? তাহলে আপনার তো নিদেন পক্ষে জাতিকে জানানো উচিৎ যে তখন কিভাবে সব কিছু ম্যানেজ হল? সেটা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে আপনার সেই প্রশ্ন কে শিশু সুলভ কেন মনে হচ্ছে? প্রশ্ন কে কৌতূহল কেন মনে হচ্ছেনা? সাক্ষী হিসেবে আপনি ই না হয় জানান যে কিভাবে সব কিছু হচ্ছিলো সে সময়ে?

১৫| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৩৫

স্বামী বিশুদ্ধানন্দ বলেছেন: শুভ জন্মদিন এই অসাধারণ মানুষটির জন্য।

চাঁদগাজী আওয়ামী প্রেমে এতই অন্ধ হয়ে পড়েন যে জাফরুল্লাহর মতো একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিকের বাংলাদেশের যুগান্তকরী ঔষধনীতি প্রণয়ন বা গণস্বাস্থ্যের অলাভজনক সেবাগুলো মহৎ কর্মগুলো তার চোখে পড়ে না।

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ৯:৩৫

শাহ আজিজ বলেছেন: উপযুক্ত , যোগ্য মানুষদের মুল্যায়ন করা উচিত ।

১৬| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৫৫

স্থিতধী বলেছেন: @ চাঁদগাজী সাহেব

আমার মন্তব্যে আমাদের দেশের মুক্তিযোদ্ধা , দেশে থাকা জনতা বা সেনাদের ক্রেডিট কেড়ে নেওয়ার মতো কিছু খুজে পেয়েছিলেন কি ? নাকি আমি পোস্টের প্রসঙ্গে তাজউদ্দীন আহমেদের নাম কিংবা শেখ মণির নাম নেওয়াতে আপনার ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে ? নাকি কিভাবে ৭১ এ যুদ্ধকালীন প্রধান নেতৃত্ব তখন তৈরি করা সম্ভব ছিলো, আপনাকে করা সেই প্রশ্নটা? কোনটা?

আপনি যুদ্ধের পরে যোদ্ধা হিসেবে চাকরিবিহীন, অর্থকষ্টে থেকেছেন বলে ব্লগে ইঙ্গিত দিয়েছেন, আমার পরিবারেও মুক্তিযোদ্ধা আছেন, একই বাস্তবতার মধ্য দিয়ে ওনাকেও যেতে হয়েছে । সেটার জন্য ২০২০ এ তাজউদ্দীন বা শেখ মুজিবকে শুধু ব্লগে এসে গালাগালি দিয়ে গেলেই আমাদের সকল অতীত ও বর্তমান শুধরে যাবে কিনা জানি না।

মাঠের মুক্তিযোদ্ধারা যদি মাঠ পর্যায়ের যুদ্ধের যোগান যন্ত্র, প্রতিরোধ সব কিছু কিভাবে হয়েছিলো সে ইতিহাস পরবর্তী প্রজন্মের কাছে না জানিয়ে যায় তাহলে সেটারও দায় পরবর্তী প্রজন্ম কে নিতে হবে? আপনি পরবর্তী প্রজন্ম কে থিউরি কপচানো প্রজন্ম বলে গাল দিলেই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সঠিক জায়গায় পৌঁছে যাবে কি?

আপনি ইতিহাস যখন মাঠ পর্যায়ে দেখেছেন, তবে সেই ইতিহাসটা লিখেও যান। আমার মনে হচ্ছেনা সেটা নিয়ে আপনাকে ব্লগে কেউ বাধা দিতে যাচ্ছে।

১৭| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১২:৫০

মেহেদি_হাসান. বলেছেন: শুভ জন্মদিন ডঃ জাফরুল্লাহ। এই অসাধারণ মানুষটি
সম্পর্কে অনেক কিছু জানা হলো, আপনাকে ধন্যবাদ স্যার।

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ৯:৩৭

শাহ আজিজ বলেছেন: ইউ আর ওয়েলকাম । আমি গতিসম্পন্ন মানুষদের অনুসরন করতে পছন্দ করি ।

১৮| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১২:৫৫

চাঁদগাজী বলেছেন:


@স্থিতধী ,

ভারত থেকে অস্ত্র পেতে কিছুটা সময় লেগেছে; তবে, ফ্রন্ট-ফাইটারেরা প্রথম ২/৩ সপ্তাহের মাঝে প্রচুর অস্ত্র পেয়েছেন; গেরিলাদের ভুল অস্ত্র দিয়েছিলেন সেক্টর কমান্ডারেরা: গেরিলারা বেশীর ভাগই পেয়েছিলেন ষ্টেনগান, গ্রেনেড ও থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল; আসলে, ওদের দেয়ার দরকার ছিলো লং-রেইন্জের অটো রাইফেল, পিস্তল, গ্রেনেড-লান্চার, মর্টার-লান্চার। ফ্রন্টে-ফাইটারেরা প্রয়োজনীয় বা তার চেয়েও সব অস্ত্র পেয়েছিলেন ১ নং সেক্টরে।

১৯| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১২:৫৯

চাঁদগাজী বলেছেন:



@স্বামী বিশুদ্ধানন্দ ,

জাফর উল্লাহ সাহেব আমার পছন্দের মানুষ, ঠিক যেভাবে তাজউদ্দিন সাহবে, কিংবা শেখ সাহেব; সমস্যা হলো, এরা সবাই নিজের অবদানের চেয়ে বেশী পেয়েছেন, এবং নিজেরটা ঠিক রেখে বাকীদের কথা ভুলে গেছেন।

২০| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১:১০

নেওয়াজ আলি বলেছেন: ১৩ ডিসেম্বর বিকালে মুক্ত হয়েছে কুমিল্লা, একটা এম-৮ হেলিকপ্টারে ব্রিগেডিয়ার গুপ্তের ত্তত্বাবধানে একটা ভারতীয় সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে কুমিল্লা পৌঁছাই আমি, শেখ কামাল, জেনারেল ওসমানী আর মুক্তিবাহিনীর চিফ অব স্টাফ জেনারেল এমএ রব। বিশ্রামের জন্য কুমিল্লা সার্কিট হাউজে পৌঁছে সবাই হতভম্ব। ওসমানী সাহেবকে হাত বাড়িয়ে ‘রিসিভ’ করছেন কয়েকজন ভারতীয় বাঙালি। একে একে তারা পরিচয় দিলেন, ‘আমি মুখার্জি, আইএএস, আমি গাঙ্গুলি আইপিএস ইত্যাদি।’ বললেন,

-কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে গতকাল এখানে পৌঁছেছি কুমিল্লা মুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা শহরের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপত্তা দেয়ার জন্য।

১৬ ডিসেম্বর সকালে ব্রিগেডিয়ার গুপ্ত জানালেন, আজ ঢাকায় পাকিস্তান সেনারা আত্মসমর্পণ করবে। আশ্চর্য, ওসমানী সাহেব একবারে চুপ, কোনো কথা বলছেন না।

জেনারেল ওসমানীর এডিসি, শেখ মুজিবুরের বড় ছেলে শেখ কামাল আমাকে বলল,

-স্যার কখন রওনা হবেন তা তো বলছেন না। জাফর ভাই, আপনি যান, জিজ্ঞেস করে সময় জেনে নিন। অধীর আগ্রহে আমরা সবাই অপেক্ষা করছি।

আমি জিজ্ঞেস করায় ওসমানী সাহেব ইংরেজীতে বললেন,

- ঢাকার পথে রওনা হওয়ার জন্য কলকাতা থেকে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন সাহেবের কোনো নির্দেশ পাইনি।

-আপনাকে অর্ডার দেবে কে? আপনি তো মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক।’ আমি বললাম।

- যুদ্ধক্ষেত্রে আমি সর্বেসর্বা কিন্তু মূল আদেশ আসে মন্ত্রিসভা থেকে প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমদের বরাতে।

বিষন্ন মনে বললেন জেনারেল ওসমানী।

তিনি আসন্ন ঢাকা পতনের সংবাদ জানেন এবং প্রবাসী সরকারের নির্দেশের অপেক্ষা করছেন। সঙ্গীদের আমাদের অস্থিরতা দ্রুত বাড়ছে আর বাড়ছে। শেখ কামাল বারবার আমাকে দিচ্ছে আবার ভালো করে বুঝিয়ে বলে ওসমানী সাহেবকে রাজি করাতে, ঢাকা রওনা হওয়ার জন্য।

ঘণ্টাখানেক পরে জেনারেল ওসমানী অত্যন্ত বেদনাতাড়িত কণ্ঠে বললেন,

-আমার ঢাকার পথে অগ্রসর হওয়ার নির্দেশ নেই। আমাকে বলা হয়েছে পরে প্রবাসী সরকারের সঙ্গে একযোগে ঢাকা যেতে, দিনক্ষণ তাজউদ্দীন সাহেব জানাবেন। গণতন্ত্রের আচরণে যুদ্ধের সেনাপতি প্রধানমন্ত্রীর অধীন, এটাই সঠিক বিধান।

তিনি ব্রিগেডিয়ার গুপ্তকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন,

- সিলেটের কী অবস্থা?’

- সিলেট ইজ ক্লিয়ার। ব্রিগেডিয়ার গুপ্ত জানালেন

- তাহলে চলুন আমরা সিলেট যাই, সেখানে গিয়ে আমার বাবা মায়ের কবর জিয়ারত করব, শাহজালালের পুণ্য মাজারে আমার পূর্বপুরুষরা আছেন।’

জেনারেল ওসমানী শেখ কামালকে ডেকে সবাইকে তৈরি হতে বললেন। আধা ঘণ্টার মধ্যে হেলিকপ্টার উড়লো আকাশে, নিরুপদ্রব যাত্রা সিলেটের পথে। পরিষ্কার আকাশ। প্লেনের যাত্রী জেনারেল ওসমানী ও তার এডিসি শেখ কামাল, মুক্তিবাহিনীর চিফ অব স্টাফ জেনারেল এমএ রব এমএনএ, রিপোর্টার আল্লামা, ব্রিগেডিয়ার গুপ্ত, ভারতীয় দুই পাইলট এবং আমি। কেউ কথা বলছে না, সবাই নীরব।

অতর্কিতে একটি প্লেন এসে হেলিকপ্টারের চারিদিকে চক্কর দিয়ে চলে গেল। হঠাৎ গোলা বিস্ফোরণের আওয়াজ, ভেতরে জেনারেল রবের আর্তনাদ, পাইলট চিত্কার করে বলল,

-উই হ্যাভ বিন অ্যাটাকড।

রবের ঊরুতে গোলার আঘাতের পর পরই তার কার্ডিয়াক এরেস্ট হলো। আমি এক্সটার্নাল কার্ডিয়াক ম্যাসাজ দিতে শুরু করলাম। পাইলট চিৎকার করে বললো,

-অয়েল ট্যাংক হিট হয়েছে, তেল বেরিয়ে যাচ্ছে, আমি বড়জোর ১০ মিনিট উড়তে পারব’ বলে গুনতে শুরু করল ওয়ান, টু, থ্রি…টেন…টুয়েন্টি…থার্টি…ফোরটি…ফিফটি…নাইন সিক্সটি-ওয়ান মিনিট গান,

এভাবে পাইলট মিনিট গুনছে, উদ্বিগ্ন চিন্তিত পাইলট। ধীরস্থিরভাবে পাইলটের আসনে বসা অন্য পাইলট। ওসমানী সাহেব লাফ দিয়ে উঠে অয়েল ট্যাংকের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে চিৎকার করলেন, ‘জাফরুল্লাহ্, গিভ মি ইয়োর জ্যাকেট।’ আমার গায়ে দামী একটি শখের জ্যাকেট ,সেই জ্যাকেটটা ছুড়ে দিলে ওসমানী সাহেব ওটা দিয়ে ওয়েল ট্যাংকের ফুটা বন্ধের চেষ্টা করতে থাকলেন। ইংরেজীতে বললেন,

-ভয় পেয়ো না বাছারা, আমি সিলেটকে আমার হাতের তালুর মত চিনি।

যে বিমানটি থেকে নিখুঁতভাবে হেলিকপ্টারের অয়েল ট্যাংকারে গুলি ছোড়া হয়েছিলো তা পাকিস্তানের ছিলোনা এটা নিশ্চিত। পাকিস্তানের সব বিমান কয়েক দিন আগে ধ্বংস হয়েছে কিংবা গ্রাউন্ডেড করা হয়েছে। তাই আক্রমণকারী বিমানটি ভারতীয় হবার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশী, গোলা ছুড়ে সেটা হয়তো গুয়াহাটির পথে চলে গেছে।

জেনারেল ওসমানী চিৎকার করে নিচে একটা জায়গার দিকে আঙুল দেখিয়ে বললেন,

-এখানে নামো। শত্রুর গুলির স্বাদ নেয়ার জন্য আমাকে প্রথম নামতে দাও, যদি কোনো শত্রু এখনো থেকে থাকে।

এই বলে তিনি তরুণের মতো হেলিকপ্টার থেকে লাফ দিয়ে নামলেন।

হঠাৎ গ্রামবাসী এসে ওসমানী সাহেবকে ঘিরে ধরল— ‘দুষমন আইছে রে বা দুষমন আইছে, দুষমনরে ধর।’ পর পরই ভালো করে তাকিয়ে দেখে হঠাৎ চিত্কার করে উঠল,

- আমাদের, কর্নেল সাব রে বা।

গ্রামবাসী জেনারেল ওসমানীকে ঘিরে নাচতে শুরু করল।

জনতার বিজয় উল্লাসে যেন জেনারেল রবের ঘুম ভাঙল, তিনি চোখ খুলে তাকালেন, সবার মুখে হাসি।

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ৯:২৯

শাহ আজিজ বলেছেন: এই অংশ পরে দিতে চেয়েছিলাম । কিন্তু আপনি মজা মেরে দিলেন । ধন্যবাদ ।

২১| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১:৪২

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: এক সময় ওনাকে ভাল লাগতো,এখন লাগে না,মানুষ বদলায় হয়তো উনিও বদলে গেছেন আমার দৃষ্টিতে।

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ৯:৩৯

শাহ আজিজ বলেছেন: কিছুটা তো বদলেছে । কৃতি মানুষদের রাজনীতিতে যেতে নেই ।

২২| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৩:০৩

চাঁদগাজী বলেছেন:


"মুক্তিবাহিনীর চিফ অব স্টাফ জেনারেল এমএ রব। "

যুদ্ধের শুরুর দিকে ইনি কর্ণেল ছিলেন (বৃটিশ বাহিনীর ); লোকটা বড় মনের ছিলেন না; যুদ্ধের মাঝখানে আমাকে এক ব্যাপারে প্রশ্ন করেছিলেন, "তুমি কি ছাত্রলীগ কর?"
আমি বলাম, "না"।
তিনি হতাশ হয়ে গেলেন।

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ৯:৪০

শাহ আজিজ বলেছেন: আপনিও লেখা শুরু করুন ।

২৩| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:০৫

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: রাজনীতিতে যোগ না দিলে দেশকে আরও অনেক কিছু দিতে পারতেন এবং কিছু মানুষ ওনার সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করতো না।

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:১৭

শাহ আজিজ বলেছেন: সহমত । তার যে ব্যাসিক ছিল তাই দিয়ে বেশ উচুতে থাকতেন । কেন তিনি স্কুল না পেরুনো খা জিয়ার সাথে গাঁটছড়া বাধলেন মাথায় আসে না ।

২৪| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:৩৪

রাজীব নুর বলেছেন: আসসালামু আলাইকুম।
পোষ্টে আবার। কে কি মন্তব্য করেছে সেটা জানতে।
ধন্যবাদ। ভালো থাকুন।

২৫| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:৪২

আমি সাজিদ বলেছেন: জন্মদিনে তাঁকে শুভেচ্ছা। কে কোথায় যোগ দিল না দিল সেগুলোর সমালোচনা আমরা এখন শুধুমাত্র এই রাজনৈতিক পরিবেশের সাপেক্ষে করছি যা মোটেও নিরপেক্ষ নয়৷ একদিন জাফরউল্লাহ সাহেবের মুখে শুনতে চাই কেন তিনি অনেকবার জামায়াতকে টেনে নিলেন পাশে? উনার রাজনৈতিক অবস্থান ডান আর বামের মাঝে। তবে এই সময়ের সমাজ বিজ্ঞান পড়া দেশ চালানো আমলার যুগে উনি অনন্যসাধারণ। মানতেই হয়।

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:২৫

শাহ আজিজ বলেছেন: এরা নিজেরাই এক একটি ইন্সটিটিউশন । এরা খামোখা কম মেধা বা মেধাহীনদের পেছনে না ছুটলেই পারেন ।

২৬| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:৫৩

আমি সাজিদ বলেছেন: দুঃখিত আমার এভাবে বলা উচিত হয়নি, ২৫ - এ । আমলাতন্ত্রের প্রতি বীতশ্রদ্ধ থেকেই এমন বাক্য লিখলাম বোধহয়। পাওয়ার প্র‍্যাকটিসকে অন্য চোখে দেখি।

২৭| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:২৭

তারেক ফাহিম বলেছেন: এ ধরনের পোস্ট আরো আশা করছি।
অনেক তথ্যবহুল।

মন্তব্য-প্রতিত্ত্যরে অনেক অজানা কিছু্ জানা হল।

ধন্যবাদ।

২৮| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:৪৯

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: আপনার মতো মানুষগুলোকে এদেশে খুব দরকার। শুভ জন্মদিন ডঃ জাফরুল্লাহ।

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৩

শাহ আজিজ বলেছেন: ধন্যবাদ

২৯| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:১৮

আমিন রবিন বলেছেন: আপনার নিজের পোসট কোথায়? ৭১ নিয়ে লিখবেন বলেছিলেন।

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪৮

শাহ আজিজ বলেছেন: একাত্তর নিয়েত বই আছে আমার একখানা । পোস্টে সংগ্রহ করার ঠিকানা দেওয়া আছে ।

৩০| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৪১

আতিকুররহমান আতিক বলেছেন: আমার একজন প্রিয় মানুষ ওনি। ওনার সমন্ধে জানানোর জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ৯:৫১

শাহ আজিজ বলেছেন: কর্নেল ওসমানী আপামর সাধারন মানুষের প্রিয় ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.