নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চারুশিল্পী , লেখক

শাহ আজিজ

চারুশিল্পী , লেখক

শাহ আজিজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মেট্রোরেল গাঁথা

০৫ ই মে, ২০২৫ সকাল ১০:০৬





কোন দেশে কত সময় চলে মেট্রোরেল, যাত্রীরা চান ঢাকায় আরও বেশিক্ষণ চলুক।


মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে ভোর ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত মেট্রোরেল চলে। পশ্চিমা দেশগুলোর অনেক শহরে চলে সারা রাত। তবে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় মেট্রোরেল বন্ধ হয়ে যায় অনেক আগে।

ঢাকায় এখন মেট্রোরেল উত্তরা থেকে প্রথম ছাড়ে সকাল ৭টা ১০ মিনিটে। রাতে ওই স্টেশন থেকে সর্বশেষ ট্রেন ছাড়ে ৯টায়।

মতিঝিল থেকে প্রথম ট্রেন চলাচল শুরু হয় সকাল সাড়ে ৭টায়। আর এই স্টেশন থেকে সর্বশেষ ট্রেন ছাড়ে ৯টা ৪০ মিনিটে। এই ট্রেন উত্তরা উত্তর স্টেশনে পৌঁছায় রাত ১০টা ২০ মিনিটে।

দেখা গেছে, শেষ ট্রেনটি চলে যাওয়ার পরও ঢাকার রাস্তায় অনেক যাত্রী থাকে। তাদের চলাচল করতে হয় লক্কড়ঝক্কড় বাসে অথবা চড়া ভাড়া দিয়ে অটোরিকশায়। কেউ কেউ ছিনতাইয়ের ভয় নিয়েও ব্যাটারিচালিত রিকশায় দূরের পথে যান। যানজট ও যাত্রীর চাপ কমে যায় মূলত রাত ১১টার পরে। যাত্রীদের কেউ কেউ বলছেন, মেট্রোরেল অন্তত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চালানো উচিত। এতে মানুষ উপকৃত হবে।

দেশের সুপরিচিত একটি ব্র্যান্ডের পান্থপথের বিক্রয়কেন্দ্রে চাকরি করেন একজন নারী। তাঁর বাসা মিরপুরের পল্লবিতে। তিনি বলেন, মেট্রোরেল চালুর পর তাঁর চলাচলে স্বাচ্ছন্দ্য এসেছে। একটু বেশি খরচ হলেও তিনি নিরাপদে মেট্রোরেলে চলাচল করেন। কিন্তু প্রায়ই রাতে বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ করে এবং বেচাকেনার হিসাব শেষ করতে দেরি হয়। তখন আর মেট্রোরেল ধরতে পারেন না।

ওই নারী আরও বলেন, কারওয়ান বাজার থেকে রাতে বাসে ওঠা কঠিন। মেট্রোরেলের সময় যদি আরেকটু বাড়ত, তাহলে অনেক সুবিধা হতো।মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে জনপ্রিয় গণপরিবহন মেট্রোরেল। দেশটিতে রেলসেবা পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট এমআরটিডটকমডটএমওয়াই থেকে জানা যায়, সেখানে ভোর ছয়টায় মেট্রোরেল চলাচল শুরু হয়। ব্যস্ত সময়ে চার মিনিট বিরতিতে ট্রেন চলে। বাকি সময়ে সাত মিনিট বিরতি থাকে।

মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি অব মালয়ার আইন ও উদীয়মান প্রযুক্তি বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক মুহাম্মদ এরশাদুল করিম বাংলাদেশের নাগরিক। তিনি কুয়ালালামপুরে বাস করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মালয়েশিয়ায় মানুষ সাধারণত খুব ভোরে ওঠেন। এ কারণে রাতে ঘুমান তাড়াতাড়ি। সেখানে ৯টার পর বেশির ভাগ রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, রাত ১২টা পর্যন্ত মেট্রোরেল চলে বলে বেশিসংখ্যক মানুষ সুবিধাটি নিতে পারেন।

ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে মেট্রোরেলের যাত্রা শুরু হয় ২০০২ সালে। এ শহরে এখন মেট্রোরেলের লাইনের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মোট ১২। দৈনিক ৮০ লাখের কাছাকাছি যাত্রী পরিবহন করে দিল্লি মেট্রো। দিল্লি মেট্রোরেল ভোর ৫টা থেকে শুরু করে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলাচল করে।

ভারতের আরেক গুরুত্বপূর্ণ শহর মুম্বাইতেও ভোর ৫টা থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল করে। তবে কলকাতায় মেট্রোরেল চলে সকাল ৭টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত। কলকাতায় মেট্রোরেলের লাইন ৪টি এবং ৫০টিরও মতো স্টেশনে ট্রেন থামে। তাদের নেটওয়ার্ক আরও সম্প্রসারণের কাজ চলমান আছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কসহ বড় শহরগুলোয় ২৪ ঘণ্টাই মেট্রোরেল চলাচল করে। লন্ডন মেট্রো বা টিউব সাপ্তাহিক ছুটির দিন টানা চলে। অন্য দিনগুলোয় ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলাচল করে। জার্মানির বার্লিন মেট্রোরেল চলে ২৪ ঘণ্টাই।

ইউরোপের শহরগুলোর মধ্যে প্যারিসে মেট্রোরেলের যাত্রী বিপুল। এই শহরে ভোর সাড়ে ৫টা থেকে মেট্রোরেল চলাচল শুরু করে। রাত একটার পর তা বন্ধ হয়। সাপ্তাহিক ছুটির দিন আরও বেশি সময় মেট্রোরেল চলাচল করে।

জাপানের টোকিওতে ভোর ৫টা থেকে শুরু হয়ে মধ্যরাত পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল করে। থাইল্যান্ডের ব্যাংকক শহরের মেট্রোরেল চালু হয় ভোর সাড়ে ৫টায়। চলে মধ্যরাত পর্যন্ত। চীনের বেইজিংয়ে ভোর ৫টা থেকে শুরু করে রাত ১১টা পর্যন্ত মেট্রোরেল চলে। চীনারাও খুব ভোরে ওঠে, রাতে ঘুমায় আগেভাগে।

চলাচলের এই সময়সূচি পাওয়া গেছে সংশ্লিষ্ট শহরে মেট্রোরেল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট থেকে।

ঢাকায় মেট্রোরেল পরিচালনাকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য বলছে, কর্মদিবস ও শনিবার ঢাকায় দিনে ১৫ ঘণ্টার মতো চলাচল করে। শুক্রবার চলে বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত, অর্থাৎ মোট ৬ ঘণ্টা ৪০ মিনিট। শুরুর এবং শেষের ট্রেনগুলোতে শুধু স্থায়ী পাসধারী যাত্রীরা চলাচল করতে পারেন। একক যাত্রার টিকিট বিক্রি হয় না।

ঢাকায় মেট্রোরেলের যাত্রা শুরু হয় ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। শুরুতে মাত্র চার ঘণ্টা চলাচল করত। যাত্রা সীমাবদ্ধ ছিল উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত। পর্যায়ক্রমে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের চলাচল সম্প্রসারণ হয়েছে। চলাচলের সময়ও বাড়ানো হয়েছে ধীরে ধীরে।

এখন ব্যস্ত সময়ে (পিক আওয়ারে) আট মিনিট ও কম ব্যস্ত সময়ে (অফ পিক আওয়ার) ১০ মিনিট বিরতি দিয়ে মেট্রোরেল চলাচল করে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে দুই ট্রেনের মাঝের বিরতি আরও বেশি।

মেট্রোরেল প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, এই গণপরিবহন ভোর ৬টা থেকে রাত ১২টার আগপর্যন্ত সেবা দেবে। তবে চালুর দুই বছর চার মাস পেরিয়ে গেলেও মেট্রোরেল প্রস্তাবিত সময় অনুযায়ী চলাচল শুরু হয়নি।

মেট্রোরেল পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত সূত্র বলছে, উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চালু মেট্রোরেলের লাইনটি ঢাকার সবচেয়ে ব্যস্ততম পথ। প্রকল্প নেওয়ার সময় তাই অগ্রাধিকার দেওয়া হয় এই পথ। মেট্রোরেল চালুর পর এর প্রভাব স্পষ্ট। বাসের চেয়ে ভাড়া অনেকটা বেশি হলেও বিপুলসংখ্যক মানুষ মেট্রোরেলে চলাচল করছেন। দিনে মেট্রোরেল ব্যবহার করে চার লাখের মতো মানুষ।

মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রকল্প নেওয়ার সময় বলা হয়েছিল ব্যস্ত সময়ে (পিক আওয়ার) মেট্রোরেল প্রতি সাড়ে তিন মিনিট পরপর চলবে। তবে সেটা ২০৩৫ সাল নাগাদ চাহিদা তৈরি হবে। কিন্তু মেট্রোরেল পুরোপুরি চালুর আগেই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে যাত্রী বেশি উঠছেন। বলা হয়েছিল, উত্তরা পর্যন্ত চালু হলে মেট্রোরেলে দৈনিক পাঁচ লাখ যাত্রী চলাচল করবেন। আর সক্ষমতা আছে পৌনে সাত লাখ যাত্রীর। যাত্রী চাহিদা বৃদ্ধির ফলে পুরোদমে মেট্রোরেল চালালে এখনই পূর্ণ সক্ষমতার কাছাকাছি অর্জন করা সম্ভব।

মেট্রোরেলের ২৪ সেট ট্রেন রয়েছে। প্রতিটি সেটে কোচ ছয়টি করে। ট্রেন ও কোচের সংকট নেই। রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত মেট্রোরেল চালাতে জনবলের অভাবের কথা বলে থাকে কর্তৃপক্ষ।

ডিএমটিসিএল জানিয়েছে, এখন তাদের ১ হাজার ২৪ জনের একটি জনবলকাঠামো রয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ৪০০–এর বেশি লোকবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তবে নানা ধরনের প্রশিক্ষণ ও চলাচলের অভিজ্ঞতার ফলে কর্মীদের দক্ষতা বেড়েছে। ফলে বিদ্যমান লোকবল দিয়েই সেবা আরও বাড়ানো সম্ভব।এখন দিনে ২৩৪ বার মেট্রোরেল চলাচল করে। চাইলে অনায়াসে এই সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব। পাশাপাশি রাতে শেষ ট্রেনের সময়সীমাও বাড়ানো যায়। চাইলে বিদ্যমান কর্মীদের কিছুটা বাড়তি কাজ (ওভারটাইম) করিয়ে সহজেই বেশি সময় ও বেশি ট্রেন চালানো সম্ভব।

জানতে চাইলে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফারুক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ট্রেনের সংখ্যা এবং রাতে সময় আরও বাড়ানোর বিষয়টি তাদের সক্রিয় বিবেচনায় আছে। তবে ট্রেন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত জনবলের কিছুটা ঘাটতি আছে। তিনি বলেন, নতুন জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। জনবলের প্রশিক্ষণের ওপরও জোর দেওয়া হয়েছে। দ্রুতই কিছু ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জানান তিনি।

ঢাকার উত্তরা থেকে মতিঝিল হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেল নির্মাণ করা হচ্ছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকায়। মোট দৈর্ঘ্য ২১ কিলোমিটারের কিছু বেশি। মতিঝিল থেকে কমলাপুর অংশের নির্মাণকাজ চলছে। চালু হওয়ার কথা চলতি বছরের শেষের দিকে।

আরও পাঁচটি মেট্রোরেল লাইন ২০৩০ সালের মধ্যে নির্মাণের কথা রয়েছে। এখন দুটি নতুন লাইনের কাজ প্রাথমিক পর্যায়ে। ২০৩০ সালের মধ্যে আসলে কয়টি মেট্রোরেল লাইন চালু করা যাবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে। তবে চালুর পরই জনপ্রিয়তা পেয়েছে উত্তরা-মতিঝিল পথটি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনগণের করের টাকায় বিপুল ব্যয়ে নির্মিত এই গণপরিবহন যত বেশি ব্যবহার করা হবে, তত তা কাজে লাগবে।

জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে বলেন, মেট্রোরেল একটি পাবলিক সার্ভিস (গণসেবা)। এটি পরিচালনার ক্ষেত্রে সরকারি অফিস কনসেপ্ট (ধারণা) থেকে বেরিয়ে যাত্রীবান্ধব হওয়া দরকার। প্রয়োজনে জনবল নিয়োগ দিয়ে বাড়তি সময় মেট্রোরেল চালাতে হবে। ঢাকার মতো একটি জনবহুল শহরে আরও বেশি সময় মেট্রোরেল চালানোর সুযোগ আছে।





প্রথম আলো

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই মে, ২০২৫ সকাল ১০:২৬

রাজীব নুর বলেছেন: মেট্রোরেলের সময় বাড়ানো উচিৎ।
সকাল সাতটা থেকে রাত ১১ করা উচিৎ।

০৬ ই মে, ২০২৫ সকাল ১০:৩৭

শাহ আজিজ বলেছেন: সারা রাত চললেও সমস্যা নেই । পৃথিবীর কোথাও কোথাও গ্যাপ দিয়ে সারা রাত চলে ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.