নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চারুশিল্পী , লেখক

শাহ আজিজ

চারুশিল্পী , লেখক

শাহ আজিজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ৬০ টাকা নিয়ে চট্টগ্রাম এসেছিলেন, আজ ৪৫টি কাচ্চি রেস্টুরেন্টের মালিক[/sb

১৩ ই জুলাই, ২০২৫ বিকাল ৪:৫২





শাহাবুদ্দীন তালুকদার ২০০১ সালে বাবার দেওয়া ৬০ টাকা নিয়ে বরিশাল থেকে চট্টগ্রাম এসেছিলেন কাজের সন্ধানে। তখন বয়স মাত্র ১৫/১৬ বছর।সেই শাহাবুদ্দীন তালুকদার এখন সমগ্র চট্টগ্রাম বিভাগে প্রসিদ্ধ ৪৫টি কাচ্চি বিরিয়ানির রেস্টুরেন্টের মালিক। তার ছোট অপর এক ভাইকে সাথে নিয়ে সমগ্র চট্টগ্রামে গড়েছেন কাচ্চি বিরিয়ানির সম্রাজ্য।

দুবেলা খাবার খরচের জন্য দৈনিক মাত্র ২৫ টাকার বিনিময়ে চট্টগ্রামের নিউমার্কেটে একটি টেইলারিং শপে কাজ শুরু করেন। সময় পেরিয়েছে মাত্র ২২ বছর।

বর্তমানে ৩৮ বছর বয়সী হাজী শাহাবুদ্দীন তালুকদার তার হার না মানা জীবনের গল্প শুনিয়েছেন রাইজিংবিডির কাছে।

হাজী মো. শাহাবুদ্দীন তালুকদার জানান, তার দেশের বাড়ি বরিশাল জেলার মুলাদি ইউনিয়নে। তার এক এক মামা চট্টগ্রামে টেইলার মাস্টার হিসেবে কাজ করতেন। সেই সুবাদে ১৫/১৬ বছর বয়সে চট্টগ্রামে এসে কোন কাজ শেখা বা কর্মজীবন শুরু করার পরিকল্পনা করেন। ২০০১ সালে তিনি বাবার কাছ থেকে মাত্র ৬০ টাকা নিয়ে চট্টগ্রামে চলে আসেন। চট্টগ্রামে এসে তিনি মামার সহায়তায় চট্টগ্রামের নিউ মার্কেটের সৌদিয়া বোরকা হাউজে নামের একটি দোকানে টেইলারিং কাজ শিখতে শুরু করেন। কোন ধরনের মাসিক বেতন ছাড়া দৈনিক খাবার খরচ বাবদ ২৫ টাকার বিনিময়ে সৌদিয়া বোরকা হাউজে টানা দেড় বছর কাজ শিখেন তিনি। এই দেড় বছর সময়ে শুধুমাত্র আলু ভর্তা আর ডাল দিয়েই ভাত খেয়ে কাটিয়ে দিয়েছেন মাসের পর মাস।

হাজী শাহাবুদ্দীন তালুকদার বলেন, টেইলারিং শপে কাজ শিখতে শিখতেই স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছিলাম। আমি ভাবতে শুরু করেছিলাম এই টেইলারিং-এর কাজ দিয়ে আমার কিছুই হবে না। আমাকে নতুন কিছু করতে হবে। দেড় বছর টেইলারিং শপে কাজ শেখার পর একই মার্কেটের ইরানী বোরকা হাউস নামের অপর একটি বোরকার দোকানে মাসিক ২৫০০ টাকা বেতনে চাকরি শুরু করি। এখানে কাজ করতে করতে বেতনও কিছু বৃদ্ধি পায়। কিছু টাকাও সঞ্চয় হয়।

এভাবে টানা ৬ বছর চাকরি করে নিজের কিছু সঞ্চয় আর স্বজনদের কাছ থেকে ধারকর্জ করে ২০০৮ সালে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ আখতারুজ্জামান সেন্টারে নিজেই একটি বোরকার দোকান শুরু করেন। এর তিন মাসের মাথায় চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজার এলাকায় কিং অব পরীস্থান নামক মার্কেটের নিচে একটি ছোট্ট বিরিয়ানির দোকান শুরু করেন। নাম দেন ‘হাজী বিরিয়ানি’। এক লাখ টাকা বিনিয়োগে শুরু করা হাজী বিরিয়ানির এই দোকান রীতিমতো কপাল খুলে দেয় হাজী শাহাবুদ্দীন তালুকদারের।

স্বাদের ভিন্নতা ও খাবারের বৈচিত্রতায় শাহাবুদ্দীনের বিরিয়ানির চাহিদা ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকায় ঢাকা থেকে ছোটভাই মিন্টু তালুকদারকেও নিয়ে আসেন চট্টগ্রামে। দুই ভাই মিলে শুরু করেন বিরিয়ানির ব্যবসা। সেই ২০০৮ সালের পর থেকে এই দুই ভাইকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। বছর বছর প্রসিদ্ধ আর সমৃদ্ধ হতে থাকে হাজী শাহাবুদ্দীনের বিরিয়ানির ব্যবসা। বর্তমানে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, কুমিল্লাসহ সমগ্র চট্টগ্রাম বিভাগে হাজী শাহাবুদ্দীন তালুকদার ও হাজী মিন্টু তালুকদারের রয়েছে ৪৫টি কাচ্চি বিরিয়ানির রেস্টুরেন্ট। এর মধ্যে চট্টগ্রাম নগরীতেই আছে ২২টি বিরিয়ানির রেস্টুরেন্ট।

হাজী শাহাবুদ্দীন তালুকদার ও হাজী মিন্টু তালুকদারের মালিকানাধীন মোট ৪টি ব্র্যান্ডে কাচ্চি বিরিয়ানির রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এগুলো হলো কাচ্চি ডাইন, কাচ্চির সম্রাট, হাজী বিরিয়ানি, হাজী কাচ্চি ঘর। ৪টি ব্র্যান্ড নামে অর্ধশত রেস্টুরেন্টে কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করে দিয়েছেন এই দুই ভাই।

তাদের রেস্টুরেন্টগুলোতে যেসব খাবার বিক্রি হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো কাচ্চি বিরিয়ানি, পোলাও, খিচুড়ি, আখনি বিরিয়ানি ইত্যাদি। এছাড়া বাদাম শরবত, বোরহানি, ফিরনি, জর্দাসহ নানা পদের খাবার রয়েছে রেস্টুরেন্টে।

একেবারে অভিজাত শ্রেণির মানুষদের পাশাপাশি সব শ্রেণিপেশার মানুষের খাবার ও পরিবেশ উপযোগী বিরিয়ানির রেস্টুরেন্ট গড়ে তুলেছেন হাজী শাহাবুদ্দীন তালুকদার। তার রেস্টুরেন্টগুলোতে দৈনিক ২শ থেকে ৩শ ডেক পর্যন্ত বিরিয়ানি তৈরি ও বিক্রি হয়। দিনের খাবার দিনেই বিক্রি হয়। বাসি কোনো খাবার বিক্রি করেন না তারা। বিক্রি অবশিষ্ট থাকলে সেগুলো দান করে দেন। এছাড়া তার প্রতিটি রেস্টুরেন্টের উদ্বোধন শুরু হয় এতিমখানার ছাত্রদের কাচ্চি বিরিয়ানিতে আপ্যায়নের মধ্যে দিয়ে।

তার এই সাফল্যের কারণ জানাতে গিয়ে হাজী শাহাবুদ্দীন তালুকদার বলেন, আমার সততা, কঠোর পরিশ্রম এবং স্বপ্নের প্রতি অবিচল থেকে কাজ করে যাওয়াই আমার শক্তি। আমি রাত-দিন পরিশ্রম করেছি। এখনো করে যাচ্ছি। এই পরিশ্রমের ফলে প্রতিমাসেই দেশের কোন না কোনস্থানে আমার নতুন রেস্টুরেন্ট উদ্বোধন হচ্ছে।

ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি জানান, দেশ ছাড়িয়ে দেশের বাইরেও হাজী বিরিয়ানি, হাজী কাচ্চি ঘর কিংবা কাচ্চির সম্রাটকে নিয়ে যেতে চাই। বর্তমানে দুবাইতে কাচ্চির সম্রাট চালু করার প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান।

ব্যক্তিগত জীবনে দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে তার। দুই ছেলেই মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছে। একমাত্র মেয়ে এখনো পড়াশোনা শুরু করেনি।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই জুলাই, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৫৩

কামাল১৮ বলেছেন: যে কোন কাজে মনোযোগের সাথে লেগে থাকলে এক সময় সফলতা ধরা দেয়।

১৩ ই জুলাই, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৫

শাহ আজিজ বলেছেন: জী , উত্তম প্রস্তাব ।

২| ১৩ ই জুলাই, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৫৫

কামাল১৮ বলেছেন: যে কোন কাজে মনোযোগের সাথে লেগে থাকলে এক সময় সফলতা ধরা দেয়।

১৩ ই জুলাই, ২০২৫ রাত ৮:০০

শাহ আজিজ বলেছেন: সত্যি

৩| ১৩ ই জুলাই, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২২

সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:




হাজী বিরিয়ানী থেকে অনেক খেয়েছি। সিলেটে কাচ্চি ডাইনের দুটি শাখা আছে। দারুণ স্বাদ!

আজ আপনার মাধ্যমে পুরো ইতিহাস জানা হলো। খুবই অনুপ্রেরণামূলক লেখা।

৪| ১৩ ই জুলাই, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২৩

সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:



আমার কাছে এক সময়ে ফখরুদ্দিনের কাচ্চি খুব মজা লাগতো! কিন্তু, এখন কেমন যেন হয়ে গিয়েছে! ভালো লাগে না।

১৩ ই জুলাই, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮

শাহ আজিজ বলেছেন: বাসার লাগোয়া অনলাইন বিরিয়ানি প্রথম প্রথম ভাল লাগত , এখন মনে হয় দুই নম্বরি কিছু খাচ্ছি ।

৫| ১৩ ই জুলাই, ২০২৫ রাত ৮:৩২

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: ৬০ টাকা দিয়ে এখন পসিবল ? আমার খুব শখ ছিলো restaurant দেয়ার । বাসা থেকে রাজি না । আমার কোনো শখ সহজে বাসা থেকে মেনে নিতে চায় না । খালি চাকুরি করো :(

বাসা্য ভয় পায় কারণ ১৪ জেনারেশন এর মাঝে কোনো বিজনেস মেন নাই। সবাই চাকুরি । আমাদের নাকি ডিএনএ তে চাকুরি লেখা আছে। :-B

এ লোকের থেকে তালিম নিতে হবে ।

১৩ ই জুলাই, ২০২৫ রাত ১০:০৯

শাহ আজিজ বলেছেন: আলহামদুলিল্লাহ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.