নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাঙা ডানার পাখির গান

http://100fanush.blogspot.com

ভাঙ্গা ডানার পাখি

চাই বলতে, শুনতে, শোনাতে। আকাশকে ছুতে চাই, মেঘের সাথে পাখা মেলতে চাই। চাই বদলাতে-নিজেকে, অপরকে।\n\nফেসবুকে আমাকে খুঁজে নিনঃ\n\nhttp://www.facebook.com/shahed.invictus\n\nemail: [email protected]\n\nBlogspot: 100fanush.blogspot.com\n\nফ্লিকারঃ\nhttp://www.flickr.com/photos/hell_is_my_heaven\n\nআমার রক্তের গ্রুপ এ পজেটিভ। কারও যদি রক্তের প্রয়োজন হয় আমার ফেসবুক ঠিকানায় যোগাযোগ করবেন দয়া করে।

ভাঙ্গা ডানার পাখি › বিস্তারিত পোস্টঃ

:::::::::::গল্পঃ বুমেরাং::::::::::::

০৯ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৩:৫৬

বুমেরাং

রহস্য গল্প লেখার একটা বড় সমস্যা হচ্ছে কয়েকটা গল্প লেখার পরেই মাথা থেকে প্লট হারিয়ে যায়। কিবোর্ড কোলে নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকার পরেও মনিটরে সাদা একটা পেজ ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না।



আমি ইদানীং এই সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছি। সামনে ঈদ। তিনটে পত্রিকার ঈদ সংখ্যায় লেখা দেয়ার জন্য রিকোয়েস্ট এসেছে। অথচ আমি এখনও শুন্য হাতে বসে আছি। এক সপ্তাহের মাঝে তিনটে গল্প লিখবো কিভাবে ভেবে পাচ্ছি না।



দুশ্চিন্তায় যখন আমার মাথার অবশিষ্ঠ চুলগুলোও সব ছিড়ে ফেলার উপক্রম, তখনই মাথায় একটা বুদ্ধি আসল। আরেকটু ভেবেচিন্তে প্ল্যানটাকে শানিয়ে নিলাম। তারপর নেমে পড়লাম কাজে। হাতে বেশি সময় নেই।



আশরাফুদ্দিন ওরফে আশু মিয়া আমার ছোট্ট বাসাটার নিচতলায় একটা দোকান চালায়। বৌটা বেশ সুন্দরী। চটক আছে চেহারায়, চোখে ইশারা। বাচ্চাকাচ্চা হয়নি এখনও। সিড়ি দিয়ে নামার সময় প্রায়ই চোখাচোখি হয়। আশরাফুদ্দিন সে তুলনায় একেবারেই ম্যাড়মেড়ে মানুষ। বৌটা খুব সম্ভব ওকে নিয়ে সুখী নয়।



মনে মনে আশু মিয়াকেই আমার গল্পের নায়ক হিসেবে ঠিক করে ফেললাম। বিকেলবেলা সিগারেট কিনতে গেলাম ওর দোকানে। কয়েকটা খুচরো কথা খরচ করলাম, গল্প জমে উঠতে দেরী হল না। কথায় কথায় আমাদের বাড়িওয়ালার বড় ছেলেকে নিয়ে ওর মনে হালকা সন্দেহ ঢুকিয়ে দিলাম। বললাম, তুমি তো সারাদিনই দোকান নিয়ে পড়ে থাকো। তোমার বৌ টা একা একা কি করে সে খবর রাখো?



বাড়িওয়ালার বড় ছেলেটা একেবারেই ঠান্ডা স্বভাবের। বাড়ি থেকে বের হয় না। সারাদিন ঘরে বসে থাকে। মাঝে মাঝে উচ্চ স্বরে কবিতা আবৃত্তির আওয়াজ শোনা যায়। পাগল টাইপের আর কি। ওকে নিয়ে সন্দেহ করাটা একেবারেই পাগলামীর পর্যায়ে পড়ে, কিন্তু মানুষের মনস্তত্ব নিয়ে চর্চা করাটা আমার অভ্যাস। লেখালেখি করতে গেলে এসবের দরকার আছে। জানি যে ওই সামান্য সন্দেহটাই যথেষ্ট। আস্তে আস্তে আশরাফুদ্দিন এর মনে ওই ছোট্ট সন্দেহের বীজটা মহীরুহ হয়ে উঠবে। সে তখন কি করে সেটাই আমার দেখার ইচ্ছা। কারণ তার উপর ভিত্তি করেই আমার গল্পের প্লট সাজাবো।



খুন টুন করে বসবে না তো আবার? নাহ। আশরাফুদ্দিনের মত নরম স্বভাবের মানুষের পক্ষে এ কাজ সম্ভব নয়। বড়জোর মারধোর করতে পারে। তবে খুন করলেই বা খারাপ কি? গল্পটা আরেকটু রগরগে হবে!



আপনারা হয়তো ভাবছেন, সামান্য গল্প লেখার জন্য এত ঝামেলার দরকার কি? দরকার আছে। আমার সমস্যা হচ্ছে আমি সত্যি কোন ঘটনা ছাড়া কাহিনী সাজাতে পারি না। গত ঈদে যে গল্পটা লিখে সবার বাহবা কুড়িয়েছিলাম সেটাও এই ভাবেই লেখা। ওইযে, ভিখারীদের খুন করে বেড়ায় এক পাগল খুনী?



ঠিক ধরেছেন। ওই খুনগুলো আমিই করিয়েছিলাম। পুলিশ আমার ববা আমআমার ভাড়াটে খুনীর কিচ্ছু করতে পারেনি। মগবাজারের এক উঠতি মাস্তানকে ধরে চালান করে দিয়েছিল। শুনে হাসতে হাসতে আমার পেট ফেড়ে যাওয়ার যোগাড়! বাংলাদেশের পুলিশ, সাইকো কিলার ধরার যোগ্যতা অর্জন করতে এদের আরও কয়েক যুগ লাগবে।



যাকগে, আসল কথায় আসি। যেমনটা ভেবেছিলাম তেমনই কাজ হল। সেদিন সন্ধ্যাবেলায় মাত্র একটা সিগারেট ধরিয়ে কিবোর্ডটা কোলে টেনে নিয়ে ভাবছি কি ভাবে শুরু করা যায়, এমন সময় নিচ তলা থেকে আশরাফুদ্দিনের বৌটার কান্নার আওয়াজ ভেসে এল। সেই সাথে আশু মিয়ার চেঁচামেচি।



মুচকি হাসলাম আমি। প্ল্যান মাফিকই কাজ হচ্ছে। আশরাফুদ্দিন তার বৌকে ধরে পেটাচ্ছে। প্রথম লাইন ইতোমধ্যে মাথায় চলে এসেছে। দ্রুত টাইপ করতে শুরু করলাম আমি।



বেশিদূর অবশ্য এগোতে পারলাম না। তার আগেই দরজায় দুমদাম করাঘাতের শব্দে চমকে উঠলাম। জিজ্ঞেস করলাম, কে?



স্যার, তাড়াতাড়ি দরজা খোলেন। আমার বৌটা কেমন জানি করতেছে। আপনি একটু আসেন!



চশমাটা চোখ থেকে নামিয়ে একটা পাঞ্জাবী গায়ে চড়ালাম। দরজা খুলতেই আশরাফুদ্দিনের বিহ্বল চেহারাটা চোখে পড়ল। আমাকে কোন প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়ে হাত ধরে টানতে টানতে তার ঘরে নিয়ে গেল।



ঘরে ঢুকেই প্রথমে যে জিনিসটা চোখে পড়ল সেটা হচ্ছে রক্ত। সারাঘরের দেয়ালে, মেঝেতে, ফার্নিচার, জানালার পর্দা-সব জায়গায় ছোপ ছোপ তাজা রক্তের দাগ। মনে হচ্ছে কোন বাচ্চা ছেলে রং এর বদলে পিচকারি তে রক্ত ভরে ইচ্ছেমত সারাঘরে ছিটিয়েছে।



মনে মনে খুশি হয়ে উঠলেও চেহারায় সেটা প্রকাশ পেতে দিলাম না। আশরাফুদ্দিনের দিকে তাকিয়ে আতঙ্কিত গলায় জিজ্ঞেস করলাম, হায় হায়! এ কি?



হাত তুলে কপালের ঘাম মুছলো আশু মিয়া। এতক্ষণে খেয়াল করলাম, ওর হাতটা রক্তে মাখামাখি।



আপনি ঠিক বলেছিলেন স্যার। আমি যখন থাকতাম না তখন মাগি পরপুরুষের সাথে ফষ্টিনষ্টি করত। দিয়েছি ওর শখ জন্মের মত ঘুচিয়ে!



কই তোমার বৌ? জিজ্ঞেস করলাম আমি।



আশরাফুদ্দিন খাটের দিকে এগিয়ে গেল। তারপর একটা পা ধরে হিড়হিড় করে টেনে বের করল ওর বৌ এর লাশটা। রক্তে মাখামাখি খন্ডবিখন্ড মাংশপিন্ডটা দেখে বোঝার উপায় নেই যে ঘন্টাখানেক আগেও এ ছিল সুন্দরী এক যুবতী।



আর বলবেন না স্যার, গলায় ছুরির একটা পোঁচ দিতেই আমার হাত ফসকে বেরিয়ে গেল। সারাঘরে দাপাদাপি করে এই অবস্থা করেছে। কি বিচ্ছিরি কান্ড! আফসোস ঝরে পড়ছে আশরাফুদ্দিনের গলায়। রাগ আরও বেড়ে গিয়েছিল, তাই কুপিয়ে এই অবস্থা করেছি। লাশটার দিকে হাত তুলে দেখালো সে।



কিন্তু তুমি আমাকে এখানে ডেকে নিয়ে এলে কেন? জানতে চাইলাম আমি।



রক্তমাখা মেঝেতে সাবধানে পা বাঁচিয়ে আমার দিকে এগিয়ে এল আশু মিয়া। হাসছে। কি করবো স্যার? মাথা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছিল। কি করবো কিছু বুঝতে না পেরে আপনাকে ডেকে এনেছি।



আমার মাথায় তখন ঘুরছে একটাই চিন্তা-পুলিশে খবর দিতে হবে। না হলে ঘটনা সামাল দেয়ার বাইরে চলে যাবে। বাইরে যাওয়ার জন্য ঘুরে দাড়ালাম আমি।



কোথায় যাচ্ছেন স্যার? পেছন থেকে ডাক দিল আশু মিয়া। পুলিশে খবর দেবেন?



থমকে গেলাম আমি। আমি...মানে... তোতলাতে শুরু করলাম।



পুলিশ তো আসবেই। তার আগে আমার আরও কিছু কাজ বাকি আছে। একটু দাড়ান। আশরাফুদ্দিনের কথা শেষ হতে না হতেই মাথায় প্রচন্ড আঘাত পেলাম আমি। চোখের সামনে হাজারটা তারা জ্বলে উঠল। আঁধার হয়ে আসল পুরো দুনিয়া।



**********



পুলিশের তীব্র হুইসেলের শব্দে আস্তে আস্তে জ্ঞান ফিরল আমার। ঘর অন্ধকার। মাথায় তীব্র ব্যাথা। নরম, ভেজা কিছু একটার উপর হাত পড়ল। সাথে সাথে সবকিছু মনে পড়ে গেল, ধড়মড় করে উঠে বসলাম।



পকেট থেকে সিগারেট লাইটারটা বের করে জালালাম। আগুনের আবছা আলোয় দেখলাম, আশরাফুদ্দিনের বৌয়ের লাশটা আমার পাশেই পড়ে আছে। আরেক পাশে পড়ে আছে একটা বারো ইঞ্চি ব্লেডের রক্তমাখা ছুরি। এটা দিয়েই খুন করা হয়েছে নিশ্চই।



কি ঘটতে চলেছে বুঝতে পেরে হাত পা ঠান্ডা হয়ে এল আমার। আশরাফুদ্দিন ওর বৌকে খুন করে আমাকে ফাঁসিয়ে দিয়ে গেছে। লাইটারের আলোয় দেখলাম পরনের পাঞ্জাবীটা রক্তে ভেজা। ছুরিটার দিকে তাকালাম। বাঁটে নিশ্চই আমার হাতের ছাপ পাওয়া যাবে!



কি করা যায় ভাবলাম। পালিয়ে যাব? সেটাই বুদ্ধিমানের কাজ। তড়াক করে উঠে দাঁড়িয়ে দরজা খুললাম। আর দরজা টা খুলতেই চোখে পড়ল একটা রিভলভারের লোলুপ নল। তাকিয়ে আছে আমার দিকে।

শালার বাংলাদেশের পুলিশ! আসল খুনীকে জীবনেও ধরতে পারল না।



মন্তব্য ১২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৪:৪৩

মোঃ মিথুন হাসান বলেছেন: পুলিশ ভুল করে হলেও আলটিমেটলি আসল খুনীকেই ধরেছে

০৯ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৫:০৫

ভাঙ্গা ডানার পাখি বলেছেন: ঠিক ধরেছেন :-)

২| ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪৩

স্বপ্নবাজ অভি বলেছেন: বেশ লাগলো !

০৯ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৮:৩১

ভাঙ্গা ডানার পাখি বলেছেন: ধন্যবাদ!

৩| ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৮:৪৮

রহস্যময়ী কন্যা বলেছেন: এটা কি হলো?? B:-) B:-)

১০ ই এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১১:৫০

ভাঙ্গা ডানার পাখি বলেছেন: পোয়েটিক জাস্টিস ;-)

৪| ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৯:১২

নিয়ামুলবাসার বলেছেন: ভালো লাগলো..আপনার গল্প পড়ে মনে হচ্ছে আমিও লিখতে বসে যাই.।

১০ ই এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১১:৫১

ভাঙ্গা ডানার পাখি বলেছেন: লিখুন না!! :-)

৫| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১১:০০

বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন: ব্যাফুক লাগছে।

১০ ই এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১১:৫২

ভাঙ্গা ডানার পাখি বলেছেন: ধন্যবাদ ধন্যবাদ!

৬| ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১:৪৪

হাসান মাহবুব বলেছেন: দারুণ হৈসে।

০৫ ই মে, ২০১৪ সকাল ১০:৫৯

ভাঙ্গা ডানার পাখি বলেছেন: ধন্যবাদ হামা ভাই! :-)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.