নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাঝে মাঝে ভাবি আমি তো সাধারন একজন , হাজার মানুষের মধ্যে আমার কোন বিশেষত নেই। হাজার মানুষ না ধরলাম শত মানুষ ধরলাম তারপর ভাবলাম নাহ্‌ আমার কোন বিশেষত নেই। আর দশ টা পাঁচ টা মানুষের মত আমি অতি সাধারন। নিজের অজান্তেই সিধান্ত নিলাম কিচ্ছু একটা করি সাধারন থেকে

আসাদ শাহীন

সপ্নটা অনেক বড় , কিন্তু দিনকে দিন সপ্ন গুলো ফিকে হয়ে যাচ্ছে ।

আসাদ শাহীন › বিস্তারিত পোস্টঃ

পতিতা,পতিতালয় এবং পতিতা বৃত্তির ইতিহাস

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:২১

পতিতাদের অসংখ্য নামে ডাকা হতো ইতিহাসের
আদিকাল থেকেই ॥ যেমন - দেহপসারিণী, বেশ্যা,
রক্ষিতা, খানকি, উপপত্নী, জারিণী,
পুংশ্চলী,অতীত্বরী, বিজর্জরা, অসোগু,গণিকা ইত্যাদি।
তবে কামসুত্র গ্রন্থের লেখক 'বাৎস্যায়ন' পতিতাদের ৯
টি ভাগে ভাগ করেছেন, তা হলো - "বেশ্যা বিশেষ
প্রকরণ - ‘কুম্ভদাসী, পরিচারিকা, কুলটা, স্বৈরিণী,
নটি, শিল্পকারিকা, প্রকাশ বিনষ্টা,
রূপজীবা এবং গনিকা—এই কয়টি বেশ্যা বিশেষ
[কামসুত্র : চতুর্থ ভাগ – ষষ্ঠ অধ্যায় - ২৪]"
ঋগবেদের প্রথম মণ্ডলের ১২৬ তম সূক্তের পঞ্চম
ঋকে আছে - "সুবন্ধবো যে বিশ্যা ইব ব্রা অনস্বন্তঃ শ্রব
ঐযন্ত পূজা"
ইতিহাসবিদ, 'মরিস ভিন্টারনিৎসের'
মতে এখানে যে "বিশ্যা" শব্দটি আছে তার থেকেই
নাকি "বেশ্যা" কথাটির উৎপত্তি।
George Ryley Scott তার (A history of prostitution from
antiquity to the present day) 'পতিতা বৃত্তির ইতিহাস'
নামক বইয়ে পতিতাবৃত্তির সংজ্ঞা দিয়েছেন এভাবে -
"পতিতা অর্থাৎ বেশ্যারা হলো সেই সমপ্রদায় ভুক্ত
নারী যারা পুরুষকে যৌন সুখ ভোগ করাতে নিজেদের
দেহ দিয়ে - জীবিকা অর্জন করে।"
তবে জর্জ রালি স্কট তার বইতে,আরো এক শ্রেনির
পতিতার কথা বলেছেন, যারা অর্থ ছাড়াই পুরুষদের
সাথে যৌন সম্পর্ক করে তাদেরকে তিনি Amateur
Prostitutes অর্থাৎ ‘পেশাহীন পতিতা’ বলে অভিহিত
করেছেন।
পতিতাবৃত্তির উৎপত্তি সৃষ্টির আদিকাল থেকেই॥ পুরাণ,
রামায়ণ, মহাভারতে প্রচুর অপ্সরার উল্লেখ পাওয়া যায়॥
যেমন – উর্বশী, মেনকা, তিলোত্তমা, ঘৃতাচী,
সুকেশী,সরলা, বিদ্যুৎপর্ণা, সুবাহু – এরকম অনেক স্বর্গ
বেশ্যার নাম আমরা পাই।
বাংলা ডিকশোনারী মতে অপ্সরা অর্থ - স্বর্গের
বারাঙ্গনা বা বেশ্যা; সুরসুন্দরী। [সং. অপ্ + সৃ + অস্ =
অপ্সরস্ = অপ্সরা]।
"মহাভারতে উল্লেখ আছে যে,একজন বেশ্যা ভাল
প্রকৃতির হলে উচ্চতর জীবনে পুনর্জন্ম লাভ করতে পারে।
এই জীবিকা সম্বন্ধে বৌদ্ধ ধর্মেরও একই মত। (তথ্যসুত্র:
বাংলা পিডিয়া)"॥ মহাভারতের যুগে এমন জনা পাঁচেক
বিখ্যাত মুনি ঋষির নাম উল্লেখ করা যায়,
যাঁরা 'স্বর্গবেশ্যা' দেখে কামার্ত হয়ে তাঁদের
সঙ্গে যৌন মিলন করেছিলেন। বিশ্বামিত্র, শরদ্বান,
ভরদ্বাজ, ব্যাস, বশিষ্ঠ, পরাশর, দীর্ঘতমা – এরাই
হলো সেইসব মুনি ! মহাভারতের যুগে অপরাপর সম্মান
জনক বৃত্তি গুলির মধ্যে পতিতা বৃত্তিই ছিল অন্যতম।
রাজদরবারে ও বিবিধ রাজকীয় অনুষ্ঠানে পতিতাদের
উপস্থিতি ছিল অপরিহার্য। ঐ কারণেই বিশিষ্ট
প্রত্নতত্ত্ববিদ ও নৃতত্ত্ববিদ ডঃ অতুল সুর লিখেছেন –
‘মৈথুন ধর্মটাই সেকালের সনাতন ধর্ম ছিল’ (দেবলোকের
যৌনজীবন,পৃঃ ৬২)। বাংলা ডিকশোনারী মতে মৈথুন
অর্থ ; রতিক্রিয়া, রমণ, স্ত্রী-পুরুষের যৌন সংসর্গ। [সং.
মিথুন + অ]।
'আইয়্যামে জাহেলিয়া' যুগে আরবে পতিতাবৃত্তি সহ
আরো অনেক খারাপ কাজ চালু ছিল॥ ইতিহাসবিদ
পি.কে হিট্টি বলেন,'মহানবী (সাঃ) এর আবির্ভাবের
একশ বছর আগে আইয়্যামে জাহিলিয়া শুরু হয়।' ঐ
যুগে ইমরুল কায়স,তারাকা আমর,লবীদ,যুহায়ে নামক
কবি অশ্লীল কবিতা রচনা করতো। এ
ব্যাপারে মাওলানা আকরাম খাঁ তার
বইয়ে লিখেছেন,'পুংমৈথুন,স্ত্রীমৈথুন এবং পশু মৈথুন
তাদের ভিতর প্রচলিত ছিল এবং তা তারা স্বাভাবিক
হিসেবে বিবেচনা করত।'
"পতিতা বৃত্তির আরো সরস বিবরণ পাওয়া যায়
'বাৎস্যায়ন' আমলে এবং তার লেখা কাম সুত্র বইয়ে॥
'বাৎস্যায়ন' তাঁর বাল্যকাল কেটেছিল এক বেশ্যালয়ে।
এবং সেখানে তাঁর মাসি কাজ করতেন। ঐখান থেকেই
তিনি কামকলা সংক্রান্ত জ্ঞান লাভ করেছিলেন।
[ তথ্যসুত্র: Ascetic of Desire,Sudhir Kakar, Overlook
Press,2000]"
ঐ সময় পতিতাবৃত্তি এবং যৌনতা খুব স্বাভাবিক
এবং সন্মানিত বিষয় ছিল।
কামসুত্রের ০৬ - ভার্যাধিকারিক (৩.১)এর ৫৩ নম্বর
শ্লোকে আছে - "স্বামী যাহাকে প্রচ্ছন্ন
ভাবে কামনা করে, তাহার সহিত স্বামীর সঙ্গম
করিয়া দিবে ও গোপন করিয়া রাখিবে।।৫৩।।"
এই শ্লোক থেকেই বোঝা যায় অনাচার কেমন
পর্যায়ে ছিল। তাছাড়া বাৎস্যায়নের সময় বেশ্যারা আর
পাঁচটা সাধারণ মেয়েদের মতো বিয়ে,সন্তান জন্মদান,
ঘর-সংসার করতো বেশ্যা বৃত্তিকে ত্যাগ না করেই।
কিন্তু বিয়ের পর প্রথম একটা বছর স্বামী ছাড়া অন্য
কোনো পুরুষের সঙ্গে যৌনমিলন করা নিষিদ্ধ ছিল।
বিয়ের এক বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর
বেশ্যা বৃত্তিতে আর কোনো বাধা ছিল না।
অ্যাথেন্সের আইন প্রণেতা ও কবি সোলোন (খ্রি.পূ.
৬৩৮-খ্রি.পূ. ৫৫৮)
প্রাচীন গ্রিকের - যিনি তৎকালীন গ্রিকের সাতজন
জ্ঞানী লোকের একজন হিসাবে গণ্য হতেন, খ্রিস্টপূর্ব
ছয় শতকে এথেন্সে প্রথম বেশ্যালয় স্থাপন
করেন।"ইতিহাসের জনক হিসাবে খ্যাত হিরোডেটাস এর
লেখায় 'পবিত্র বেশ্যাবৃত্তির' প্রচুর উদাহরণ
পাওয়া যায়। যেটি প্রথম শুরু হয়েছিল ব্যাবিলনে।
সেখানে প্রত্যেক নারীকে বছরে অন্তত একবার
করে যৌনতা, উর্বরতা ও সৌন্দর্যের
দেবী আফ্রোদিতির মন্দিরে যেতে হত
এবং সেবা শুশ্রূষার নমুনা হিসাবে নামমাত্র
মূল্যে যৌনসঙ্গম করতে হত অন্যদের সঙ্গে। তাদের বাধ্য
করা হতো যৌনসঙ্গম করতে। [তথ্যসুত্র: Cf. Herodotus, Book
I, para 199]"
"বহু আগে থেকেই প্রাচীন গ্রিসের এথেন্স ও
রোমে পতিতা বৃত্তি চালু ছিল। এমনকি অনেককে বাধ্য
করা হতো পতিতাবৃত্তি করতে। ইউস্তিয়ানের
স্ত্রী রোমক সম্রাজ্ঞী থেওডেরো প্রথম
জীবনে বেশ্যা ছিলেন। পৃথিবীতে প্রথম
বেশ্যাবৃত্তি পেশার মতো লাইসেন্স বা নিবন্ধন
দেওয়া ও কর ধার্য করা হয় রোমান আমলেই। [তথ্যসুত্র:
Thomas A. McGinn, The Economy of Prostitution in the
Roman World,2004]"
চীনে পতিতাবৃত্তির ইতিহাস সুপ্রাচীন।
'Fang Fu Ruan' তার লেখা 'Sex in China' বইয়ে লিখেছেন,
[Ying-chi is the first independent prostitutes in Chinese
history.]। অর্থাৎ 'Ying chi' চীনের ইতিহাসে প্রথম
স্বাধীন পতিতা। তার খদ্দের ছিল, উচ্চ শ্রেনির
ব্যাক্তিবর্গ। এছাড়া চিনে Tang (তাং) রাজবংশ
একটি নির্দিষ্ট এলাকায় বেশ্যাবৃত্তি চালু করেছিল।
পরবর্তী Shang (সাঙ) রাজবংশ বিভিন্ন স্থান
থেকে পতিতাদের সংগ্রহ করে 'হাঙ চৌ'
শহরে বসবাসের ব্যবস্থা করে ফলে সেখানে বড় মাপের
পতিতালয় তৈরি হয়। [ তথ্যসুত্র: Sex in China;Fang Fu
Ruan; Springer Science & Business Media,31-Oct-1991]
"প্রথম মৌর্য সম্রাট চন্দ্রগুপ্তের (খ্রিষ্টপূর্ব ৩২১
থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ২৯৭) কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র
থেকে পতিতা ও পতিতা বৃত্তি সংক্রান্ত ভারতবর্ষের
চিত্র পাওয়া যায়।
কৌটিল্যর আরেক নাম ছিল চাণক্য। তিনি প্রাচীন
ভারতের রাষ্ট্রবিজ্ঞান গ্রন্থ 'অর্থশাস্ত্র' - এর
রচয়িতা। আর কৌটিল্যের সময় দেহব্যবসা শিল্পের
পর্যায়ে উন্নীত হয়,যে শিল্পের নাম ছিল বৈশিক কলা।
ঐ সময় দেহব্যবসা ছিল সন্মানিত পেশা।
জ্ঞানী লোকেরা এ শিল্পের চর্চা করতেন
এবং শিক্ষা দিতেন। [তথ্যসুত্র: কৌটিল্য : প্রেম ও
নৈতিকতা, ড. প্রতাপ চন্দ্র, কলকাতা, ২০০০]"
আরো এক ধরনের পতিতাবৃত্তি চালু ছিল ভারতে -
(Sacred prostitution) ভক্তিমূলক পতিতাবৃত্তি। অর্থাৎ
পতি বা পত্নী ব্যতীত অন্য কারও সাথে পবিত্র বা ধর্মীয়
উদ্দেশ্যে যৌন মিলন। এ ধরনের
কাজে যে ব্যাক্তি জড়িত থাকেন
তাকে বলে দেবদাসী। দেবদাসী মন্দির সেবিকা। বর্ধিত
অর্থে মন্দিরের বারাঙ্গনা,দেহোপজীবিনী বা গণিকা।
এখনো গোপনে ভারতের অনেক
মন্দিরে দেবদাসী প্রথা চালু আছে॥
এছাড়া "উত্তর ভারতে জিপসি সম্প্রদায়ের
মধ্যে মেয়ে শিশুকে পতিতা বানানোর এক ধরনের
প্রথা ছিল। বিহার ও উত্তর প্রদেশে ছিল নায়েক,পশ্চিম
ভারতের গুজরাটে দেহে ও বর্ণের
পতিতা এবং দাক্ষিণাত্যে ছিল মোহর নামক উপজাতীয়
পতিতা। [তথ্যসুত্র: দৈনিক আজাদি ৪মে - ২০১৩]"
আর এইসব কারণেই মধ্যযুগ থেকেই পতিতার প্রসঙ্গ ও
পরিচয় সাহিত্যে পাওয়া যায়। "পঞ্চদশ
শতাব্দীতে বিদারের রাজসভায় রচিত হয় গ্রন্থ 'লজ্জত
উন নিসা' (একটি ভারতীয় কামোদ্দীপক উপাখ্যান)॥
যা ঐ যুগেরই বিদ্যমান কামোদ্দীপক রচনা গুলির একটি।
[ তথ্যসুত্র: Lazzat Un Nisa,translated by Jane Fine,Classex
Books,2002]"
সপ্তম শতকের রাজা হর্ষবর্ধনের সভাকবি ছিলেন
বানভট্ট। বানভট্ট তাঁর "কাদম্বরী"
গ্রন্থে লিখেছেন,সেকালে বেশ্যারাই দেশের
রাজাকে স্নান করাত। এমনকি রাজার পরনের সব
পোশাক বেশ্যারাই পরিয়ে দিতো। "নবম
শতকে 'কুট্টনীমত' গ্রন্থ লিখেছিলেন কাশ্মীরের
মন্ত্রী ও কবি 'দামোদর গুপ্ত'। 'বিকরবালা' নামের এক
বৃদ্ধা বেশ্যার উপদেশ নামা নিয়েই মুলতো 'কুট্টনীমত'
গ্রন্থ লেখা। বাৎসায়নের কামসূত্রের মতোর 'কুট্টনীমত'
একটা কামশাস্ত্র গ্রন্থ॥" এছাড়া মহাকবি কালিদাসের
মহাকাব্য গুলিতেও বেশ্যা নারীর উল্লেখ আছে।
দোনা গাজির- সয়ফুল মুলক বদিউজ্জামাল, আবদুল
হাকিমের- লালমতি সয়ফুল মুল্লুক, শুকুর মাহমুদের-
গুপীচন্দ্রের সন্ন্যাস -- এইসব কাব্য পুথিতে বেশ্যা-
সংস্কৃতির সরস বিবরণ দেওয়া রয়েছে।
বৃটিশ আমলের পরিসংখ্যান
দেখলে বোঝা যাবে কি অবস্থা ছিল ঐ সময়।
"১৮৫৩ তে কলকাতা শহরে ৪০৪৯ টি বেশ্যাগৃহ ছিল
যাতে বাস করছিলেন ১২,৪১৯ জন যৌনকর্মী। ১৮৬৭
তে ছিল ৩০,০০০ জন॥ ১৯১১ সালের
আদশুমারি অনুযায়ী ১৪২৭১ জন। ১৯২১ সালের আদম
শুমারিতে অনুযায়ী ১০,৮১৪ জন যৌনকর্মী ছিল
কলকাতায়। [তথ্যসুত্র: দেবাশিস বসু, 'কলকাতার
যৌনপল্লী', সুধীর চক্রবর্তী সম্পাদিত ,বার্ষিক সংকলন
৫,২০০১]"
কিন্তু প্রকৃত সংখ্যা হয়তো আরো বেশী হবে। "কলকাতায়
খুবই রমরমা ছিল বেশ্যাদের জগৎ। গৃহস্থের বাড়ির
পাশে বেশ্যা, ছেলেদের পাঠশালার পাশে বেশ্যা,
চিকিৎসালয়ের পাশে বেশ্যা, মন্দিরের পাশে বেশ্যা।
[তথ্যসুত্র: বিনয় ঘোষ, কলকাতা শহরের ইতিবৃত্ত,১৯৯৯, পৃ.
৩০২-০৩]"
"বিশেষ করে রামবাগান, সোনাগাছি, মেছোবাজার,
সিদ্ধেশ্বরীতলা, হাড়কাটা, চাঁপাতলা, ইমামবক্স
এগুলো ছিল বেশ্যাদের আখড়া॥ [তথ্যসুত্র: বিশ্বনাথ
জোয়ারদার, পুরনো কলকাতার অন্য সংস্কৃতি,২০০৯, পৃ.
৩৪-৩৮]"
"এমনকি কিছু পতিতা শহরে প্রকাশ্য রাজপথে নৃত্য
পর্যন্ত করতো। সাধারণ মানুষ পুলিশের কাছে আবেদন
করা সত্ত্বেও এর কোনো প্রতিকার হয়নি। কারণ
কলকাতার পুলিশ ধনীদের তৈরি বেশ্যালয়
গুলোতে হস্তক্ষেপ করতে সাহস পেত না। শুধু মাত্র
দ্বারকানাথ ঠাকুর কলকাতার একটি এলাকাতেই
তেতাল্লিশটি বেশ্যালয়ের মালিক ছিলেন। [ তথ্যসুত্র:
সতীশচন্দ্র চক্রবর্তী সম্পাদিত, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের
আত্মজীবনী,১৯৬২,পৃ.৩৫৮-৬০]"
আসলে ঐ সময় নৈতিকতা নিয়ম কানুন ছিল
বলে মনে হয়না কিংবা এমনো হতো পারে ধর্মীয় কোন
কারণ আছে॥ হিন্দুরা মনে করে,বেশ্যারা এই সমাজ
কে নির্মল রাখে॥ আর সেই কারণেই দুর্গা পুজার সময়
বেশ্যার দরজার মাটি অপরিহার্য। [Maa Durga is
considered to be incomplete without the soil from prostitutes
door steps.] "দূর্গা পুজার সময় দশ ধরনের মাটি প্রয়োজন
হয়। তার মধ্যে বেশ্যার দরজার মাটি অপরিহার্য।
[তথ্যসুত্র: কালিকা পুরাণোক্ত দুর্গাপূজা পদ্ধতি, প্রবীর
কুমার চট্টোপাধ্যায়,কলকাতা,পৃষ্ঠা ৭২,৮৬,১০৮,১২৭]
এবং সানন্দা পত্রিকা ১৮ এপ্রিল ১৯৯১ পৃষ্ঠা ১৯]"
:
আসলে নারীদের সবসময় ভোগের পন্যই মনে করা হয়েছে,
ইংরেজ আমলেও এর ব্যতিক্রম ছিল না। সমাজের
নেতৃস্থানীয় খ্যাতিমান ব্যক্তিবর্গের কেউ কেউ এই
নৈতিক স্খলন থেকে মুক্ত ছিলেন না।
"বেশ্যাবাজি ছিল বাবু সমাজের সাধারণ ঘটনা।
নারী আন্দোলনের ভারত পথিক রাজা রামমোহন রায়ের,
রক্ষিতা ছিল॥ এমনকি ঐ রক্ষিতার গর্ভে তাঁর
একটি পুত্রও জন্মে ছিল। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর
পতিতা সুকুমারী দত্তের প্রেমে মজেছিলেন। সাহিত্যিক
মীর মোশাররফ হোসেন নিয়মিত বেশ্যা পাড়ায় যেতেন
তা তিনি নিজেই তার ডাইরিতে লিখে গেছেন॥
মরমি কবি হাসন রাজা, কথা শিল্পী শরৎচন্দ্র
চট্টোপাধ্যায় নিয়মিত পতিতালয়ে যেতেন। [ তথ্যসুত্র:
অবিদ্যার অন্তঃপুরে, নিষিদ্ধ পল্লীর অন্তরঙ্গ কথকতা;
ড. আবুল আহসান চৌধুরী : শোভা প্রকাশ]" রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুরও পতিতালয়ে যেতেন। নিষিদ্ধ পল্লীতে গমনের
ফলে রবীন্দ্রনাথের সিফিলিস আক্রান্ত হওয়ার খবর তার
জীবদ্দশাতেই ‘বসুমতী’ পত্রিকাতে প্রকাশিত হয়েছিল।
যাইহোক এইরকম আরো অনেকেই আছে তাদের কথা আর
নাইবা লিখলাম। "শুধু তাই নয় সেই সময় ইংরেজ
সৈন্যরা মাত্রাতিরিক্ত পতিতালয়ে যেতো। যার
ফলে ১৮৬০ সালে ইংরেজ সৈন্যদের মধ্যে ৬০% এর
বেশী যৌনরোগে আক্রান্ত হয়ে পরে। তাই ইংরেজ
সরকার ১৮৬৪ সালে পাশ করালেন - (Cantonment Act)
আইন। সেনা ছাউনি গুলোতে ইংরেজ সৈন্যদের জন্য
তৈরি হল আলাদা বেশ্যালয়, সেখানে যেসব
বেশ্যারা আসতেন তাঁদের রেজিস্ট্রি ভুক্ত করে পরিচয়
পত্র দেওয়া হত। যৌনরোগ থেকে তাঁদের মুক্ত রাখার
জন্য ‘লক হসপিটাল’ নামে বিশেষ হাসপাতাল স্থাপন
করা হয় প্রধান সেনা ছাউনিতে।
[তথ্যসুত্র: Dr. Ashwini Tambe - "The Elusive Ingenue:A
transnational Feminist Analysis of European Prostitution in
Colonial Bombay]"
জেমস টেলরের,"A Sketch of the Topography & Statistics of
Dacca"
(কোম্পানি আমলে ঢাকা) বইয়ের তথ্য মতে - অষ্টাদশ
শতাব্দীর প্রথমার্ধেও ঢাকা শহরে সংগঠিত
আকারে পতিতা বৃত্তির অস্তিত্ব ছিল। উল্লেখ্য
যে জেমস টেলর
(১৮২৫ থেকে ১৮৩৫) ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির
অধীনে ঢাকায় সিভিল সার্জন হিসেবে নিয়োগ ছিলেন।
"১৯০১ সালের, সরকারি হিসাব মতে, ঢাকায় পতিতার
সংখ্যা ছিল ২১৬৪ [দৈনিক ডেসটিনি,৪
জানুয়ারি ২০১০]"
তবে "যশোর শহরে পতিতা বৃত্তির ইতিহাস রয়েছে ৫শ’
বছরের। মোঘল সম্রাট আকবরের শাসনামল থেকেই যশোর
শহরে চলে আসছে পতিতাবৃত্তি। ব্রিটিশ যুগে যশোর
শহরের তিনটি স্থানে পতিতালয় ছিল॥ কলকাতার
জমিদার মনমত নাথ রায়
ঘোড়া গাড়ি করে প্রতি শনিবার আসতেন ফুর্তি করতে।
আর সে সময়ে তাকে মেয়ে সাপ্লাই দিতো চাঁচড়া রায়
পাড়ার ব্রাহ্মণ পরিবার থেকে। [(যশোর ইনফো)
এবং বেনজিন খানের লেখা বই 'প্রকাশিত গদ্য'।]"
দেশে বর্তমান যৌনকর্মীর সংখ্যা ৭৪,০০০ (মানব জমিন-
২১ ডিসেম্বর ২০১৪)। যাদের ৫ শতাংশ হোটেলে, ৪১
শতাংশ ভাসমান ও ৫৪ শতাংশ যৌন পল্লীতে অবস্থান
করছেন। (বাংলা নিউজ, ২০/১২/২০১৪)। Guardian
পত্রিকায় 9 January 2008 এ একটা প্রতিবেদন ছাপা হয় -
'I'm just here for survival' (আমি শুধু বেঁচে থাকার জন্য
এখানে আছি) এই শিরোনামে। সেখানে বলা হয়
দৌলদিয়া বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পতিতালয়
এবং সেখানে ১৬০০ এর অধিক পতিতা আছে,
গড়ে প্রতিদিন ৩০০০ পুরুষ সেখানে দৈহিক সম্পর্ক
করতে যায়।
তবে চিন্তার বিষয় এইযে, "প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ২০০
থেকে ৪০০ নারী ও শিশু বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়
পাকিস্তানে। অপরদিকে ১০ থেকে ১৫ হাজার মানুষ
প্রতি বছর ভারতে পাচার হচ্ছে। [অপরাধ বিজ্ঞান
পরিচিতি, ড. বোরহান উদ্দিন খান,পৃ- ২৭৯]"
এবং এইসব পাচারকৃত নারীদের বাধ্যতামূলক
পতিতাবৃত্তি,অশ্লীল ছবি নির্মাণ ও
ভিক্ষাবৃত্তিতে ব্যবহার করা হয়।
'আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)' এর তথ্য মতে,
এখনো প্রায় ৪০ হাজার বাংলাদেশী পাকিস্তানের
পতিতালয়ে রয়েছে। আর কলকাতার পতিতালয়ের ১৪%
নারী বাংলাদেশী। 'কলকাতার
সোনাগাছি পতিতালয়ে প্রায় ৪ হাজার
বাংলাদেশি মেয়ে রয়েছে। (যায়যায়দিন)।'
আসলে পাচারকৃত মহিলাদের বাধ্য করা হয়
পতিতাবৃত্তিতে আর ঐ কারণেই ভারতের
পতিতালয়ে এতো বাংলাদেশি নারী॥ 'বর্তমান
ভারতে দুই মিলিয়ন পতিতা আছে (BBCnews 10 December
2009)॥' যদিও ভারতের আইনে ১৯৫৬ (১৯৭৮ ও ১৯৮৬
সালে সংশোধিত) এই আইন অনুসারে দেহব্যবসা ও
পতিতালয় পরিচালনা করা দণ্ডনীয় অপরাধ। তারপরও
প্রকাশ্যে এবং গোপনে পতিতাবৃত্তি চলছে এমনকি বর্তমানে অনেক
উচু পদের লোকজন ও জরিত এর সাথে॥ উদাহরণ
হিসেবে - "[ভারতে আয়কর কর্মকর্তার
বাড়িতে মিনি পতিতালয়। বাংলাদেশ প্রতিদিন,০৪
জুলাই,২০১৪]"
‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া’ Dec 6, 2014 তারিখে 'Forensic lab
finds love cheats in 98% cases' এই
শিরোনামে একটা সংবাদ ছাপা হয়॥ "সেখানে উল্লেখ
করা হয় - গুজরাটে প্রতি বছর বহু সংখ্যক পুরুষ পিতৃত্ব
নির্ণয়ের জন্য ডিএনএ টেস্ট করার আবেদন করে।
গান্ধী নগরের ডিরেক্টরেট অব ফরেন্সিক সায়েন্সের
ডিএনএ পরীক্ষা বিভাগে বছরে প্রায় ২৫০টি এ ধরনের
মামলা আসে। তার মধ্যে ৯৮ শতাংশ ক্ষেত্রেই
দেখা যায় যে, তার পরিবারের সন্তানটির আসল
পিতা পুরুষটি নয়,অর্থাৎ সন্তানটি অবৈধ সম্পর্কের
ফসল।"
তাহলে বুঝুন কি অবস্থা ঐখানে! অবৈধ সম্পর্কের স্বর্গ
রাজ্য গুজরাট। আবার অনেক মুসলিম
দেশে পতিতাবৃত্তি নিষিদ্ধ থাকলেও আরবের অনেক
দেশের ধনীগনের রক্ষিতা রাখার ইতিহাস অনেক আছে॥
বর্তমানে আরবদের যৌনতার কাহিনী জানতে,Shereen El
Feki এর লেখা 'Sex and the Citadel' নামের
বইটা পড়ে দেখতে পারেন॥
বাংলাদেশের সংবিধানের ১৮(২) অনুচ্ছেদে ‘পতিতা’
বৃত্তিকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। প্রেমের অভিনয়
করে অথবা চাকুরী দেওয়ার কথা বলে সহজ সরল
মেয়েকে ঠান্ডা মাথায় ডেকে নিয়ে নিষিদ্ধ
পল্লীতে বিক্রী করে দেওয়ার খবর পত্রিকার পাতায়
মাঝে মাঝেই দেখা যায়॥ আবার অত্যাধিক দারিদ্রের
তাড়নায় ক্ষুধার জ্বালা মেটাতেও এ পেশা বেছে নেয়
কিছু সংখ্যক মেয়ে। তবে সবচেয়ে অবাক হয়েছিলাম,
'Women who pay for sex' শিরোনামে BBC
তে একটা সংবাদ পড়ে॥ সেখানে উল্লেখ করা হয়েছিল
ইউরোপ আমেরিকার অনেক দেশে মেয়েরা Sex করার
জন্য ছেলেদের টাকা দেয়॥ এমনকি অনেক হোটেল
আছে যেখানে পুরুষ যৌনকর্মী পাওয়া যায়
এবং মেয়েরা টাকা দিয়ে তাদের সাথে Sex করে॥
তবে কি এই ধারণা করতে পারি পতিতাবৃত্তির ধরন
পাল্টে যাচ্ছে! হয়তো এমন একটা সময় আসবে যখন
পতিতালয়ে মেয়েরা নয় ছেলেরা থাকবে।
Havocscope Black Market ওয়েব সাইটের (May 31, 2014)
তথ্যমতে পৃথিবীতে পতিতার সংখ্যা '১৩৮২৮৭০০'।
বাস্তবে এর চেয়ে আরো অনেক বেশী হবে। আর আমাদের
দেশের কতগুলো হোটেলে যে মধুচন্দ্রিমা চলে তার
কোনো হিসেব নেই॥ আর এভাবে যুগের পর যুগ, শতাব্দির
পর শতাব্দি, সহস্রাব্দের পর সহস্রাব্দ
ধরে চলে আসছে পতিতাবৃত্তি। এই সমাজ পতিতা তৈরির
কারখানা আর আমরা হলাম তার কারিগর।
:
:
উপরোক্ত লেখাটি লেখতে আরো যেসব বইয়ের সাহায্য
নিয়েছি তা হলো -
(1) Murphy Emmet (1983).Great Bordellos of the World.
Quartet Books.
(2) PK Sing, 'Brothel Prostitution in India' 2004.
(3) S.N Sinha and N.K. Basu: 'History of Prostitution in
India',1994.
(4) Mc Ginn,'The Economy of Prostitution'.
(5) নগেন্দ্রনাথ বসু,বঙ্গের জাতীয় ইতিহাস, দ্বিতীয়
খন্ড, কলকাতা।
(6) বেশ্যা পাড়ার পাঁচটি দুর্লভ সংগ্রহ।
সম্পাদনা করেছেন, মৌ ভট্টাচার্য।
(7) বিনয় ঘোষ, কলকাতা শহরের ইতিবৃত্ত,১৯৯৯।
( পৃথ্বীরাজ সেন,বাবু কোলকাতার বিবি বিলাস।
(9) দুর্গাপদ চট্টোপাধ্যায়,সংস্কৃত সাহিত্যে বারাঙ্গনা।
---------------

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:১০

প্রামানিক বলেছেন: নারী আন্দোলনের ভারত পথিক রাজা রামমোহন রায়ের,
রক্ষিতা ছিল॥ এমনকি ঐ রক্ষিতার গর্ভে তাঁর
একটি পুত্রও জন্মে ছিল। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর
পতিতা সুকুমারী দত্তের প্রেমে মজেছিলেন। সাহিত্যিক
মীর মোশাররফ হোসেন নিয়মিত বেশ্যা পাড়ায় যেতেন
তা তিনি নিজেই তার ডাইরিতে লিখে গেছেন॥
মরমি কবি হাসন রাজা, কথা শিল্পী শরৎচন্দ্র
চট্টোপাধ্যায় নিয়মিত পতিতালয়ে যেতেন। [ তথ্যসুত্র:
অবিদ্যার অন্তঃপুরে, নিষিদ্ধ পল্লীর অন্তরঙ্গ কথকতা;
ড. আবুল আহসান চৌধুরী : শোভা প্রকাশ]"

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও পতিতালয়ে যেতেন। নিষিদ্ধ পল্লীতে গমনের
ফলে রবীন্দ্রনাথের সিফিলিস আক্রান্ত হওয়ার খবর তার
জীবদ্দশাতেই ‘বসুমতী’ পত্রিকাতে প্রকাশিত হয়েছিল।

অনেক তথ্যবহুল পোষ্ট।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.