![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যা শিখেছি, সেখান থেকেই কিছু বলার ও করার চেষ্টা করি
একটাসময় আত্মহত্যা আমাদের সমাজের জন্যে ছিল দুর্ঘটনা। সময় এবং পরিবেশের অবনতির সাথে সাথে তা বিবর্তিত হয়ে দাড়ালো সামাজিক ব্যাধীতে। আর এখন তা পরিনত হয়েছে ব্যাধিজনিত অভ্যেসে। সেটা কিরকম? আজ থেকে বিশ বছর আগেও কেউ আত্মহত্যা করলে সেটা নিয়ে ব্যাপক একটা হুড়োহুড়ি হতো। এরপর যখন ঘটনাটা বাড়তে লাগলো তখন মানুষের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে কিছুটা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হলেও এতটা আলোড়ন তুলতো না। কিন্তু এখন বিষয়টি এতটাই ভয়াবহভাবে স্বাভাবিক ঘটনায় পরিনত হয়েছে যে, কিছু একটা ঘটলেই মানুষ আত্মহত্যা করে। আর আমাদের কাছে এর গ্রহনযোগ্যতাটা এরকম যে, মেঘ ডাকলে বৃষ্টি হবে এটাইতো স্বাভাবিক। খুব ছোটখাটো বিষয়েই এখন আত্মহত্যার মত ভয়ংকর ঘটনা ঘটছে। কিন্তু বিষয়টা মোটেই স্বাভাবিক নয়। যেমন, টিজিং এর শিকার, প্রেমে ব্যার্থতা, পরীক্ষায় ফেল এমনকি বাবা মা বকা দিলেও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। এগুলো সবগুলোই কষ্টদায়ক বিষয় সত্য। কিন্ত এর কোনোটিই কি জীবনাবসানের মত চরম সিদ্ধান্ত নেয়ার কারন হওয়ার যোগ্যতা রাখে? অবশ্যই নয়। এক্ষেত্রে আমি বলবো জীবনের সাথে যুদ্ধ করার মনবলের সল্পতাই মূলত এই সামান্য বা অসামান্য কারনে আত্মহত্যার মূল কারন। পাশাপাশি মানসিক এককেন্দ্রীকতা বা হীনমন্যতাও বড় কারন। এরসাথে পারিপার্শিক পরিবেশতো রয়েছেই।
এখন দেখার বিষয় এই কারনগুলোর পেছনের কারন কি এবং এর থেকে উত্তোরন কিভাবে সম্ভব। নিজেকে নিজের গন্ডির আস্তাকুরে শেষ করে দেয়ার প্রধান সূত্রপাত হয় পারস্পরিক যোগাযোগের অভাব থেকে। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে বিশেষ করে বাবা-মার সাথে সুসম্পর্কের অভাব এখানে অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। বাবা-মারা যখন সন্তানের জন্যে বন্ধুর ভূমিকায় অবতির্ণ হতে পারেননা তখনই বাড়তে থাকে সন্তানের একাকীত্ব। সন্তান যখন তার সমস্যাগুলোকে কাছের প্রথম মানুষগুলোর সাথে শেয়ার করতে পারেনা তখনই তার ভিতরে দানা বাধতে থাকে হীনমন্যতা যা পরবর্তী পরিপক্ক জীবনে গিয়েও বজায় থাকে। এরপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে উপযুক্ত শিক্ষার অভাব, সুস্থ সঙ্গের অভাব যেখানে সরল আলাপচারিতা সম্ভব এধরনের পারিপার্শিক বিষয়গুলো ধীরে ধীরে একজন মানুষকে নিজের মধ্যে বন্দী করে ফেলে। এধরনের সমস্যাগুলো থেকে মুক্ত করতে প্রথমেই প্রয়োজন বাবা-মার যথাযত সচেতনতা। পরবর্তীতেই আসবে শিক্ষকদের শিক্ষক যোগ অবিভাবকের দ্বায়িত্ব পালন করা। একটি নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত প্রতিটি মানুষ তার জীবনের অনেক বড় একটি অংশ তার শিক্ষকদের সাথে কাটায়। এখান থেকেই মূলত সামাজিক মূল্যবোধ এবং পরবর্তী জীবনের চলার দর্শনগুলোর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়। তাই একজন শিক্ষকের দ্বায়িত্ব শুধু পাঠ্য জ্ঞান দান করা না, অনেক অপাঠ্য জ্ঞানও তাকে বিতরন করতে হবে।এছাড়া স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজন সাইকোথেরাপিস্ট বা মনোরোগবিশেষজ্ঞ নিয়োগ করা। পাশাপাশি থানা পর্যায়ের প্রতিটি সরকারী হাসপাতালেও একজন করে মনোরোগবিশেষজ্ঞ নিয়োগ করা যেতে পারে যারা প্রতিনিয়ত এই বিষয়গুলোর দিকে খেয়াল রাখবেন। এটা ঠিক, যে দেশে পর্যাপ্ত ডাক্তারেরই সল্পতা সেখানে মনের ডাক্তার এতটা সহজলভ্য করাটা কিভাবে সম্ভব। এক্ষেত্রে আমি বলবো, ধরে নেই সম্ভব না, কিন্তু শুরু করাটাতো সম্ভব। একটা আত্মহত্যাও যদি প্রতিহত করা যায় তবেকি সেটা আমাদের অর্জন নয়?
আমাদের মধ্যে একটি ভুল ধারনা রয়েছে যে মনোবিজ্ঞানী বা মনোচিকিৎসকের সরনাপন্ন শুধুমাত্র পাগল হলেই হতে হয়। এই ধারনাটি অনেক উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তির মধ্যেও রয়েছে। মনোচিকিৎসক যদি পাগলের চিকিৎসাই করতেন তবেতো তাকে পাগলচিকিৎসক বলা হতো। যেমন ক্যান্সারের চিকিৎসককে বলা হয় ক্যান্সার স্পেশালিস্ট। আমরা শাররিকভাবে সুস্থ থাকার জন্যে যদি স্বাস্যবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারি তবে মানসিকভাবে সুস্থ বা স্বাভাবিক বা চিন্তামুক্ত থাকতে কেন মনোচিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারবো না। মানুষের সকল কাজই তার মন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তাই নিজের স্বার্থেরই আমরা অবশ্যই মন নিয়ে ভাবতে পারি। এখানে চক্ষুলজ্জ্বার কিছু নেই।
সর্বশেষে বলব, আত্মহত্যা প্রতিহত করার বিষয়টি নিয়ে ভাবা প্রতিটি সচেতন নাগরিক মাত্রই দায়িত্ব। একবার ভাবুন, একটি আত্মহত্যা প্রতিহত করছেন মানে আপনি একটি মৃত মানুষকে জীবিত করছেন।
০৮ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৩
শাহীদুল বলেছেন: যথার্থই বলেছেন, একাকিত্ব বিষন্বতার মাঝে আরো ডুবিয়ে দেয়। এক্ষেত্রে কাছের মানুষগুলো সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করতে পারে সাহস যুগিয়ে। সেটা যদি মিথ্যে সাহসও হয় তবু তার প্রয়োজন আছে এই বিশেষ সময়টাতে
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৫:৪৬
মৃদুল শ্রাবন বলেছেন:
আইসোলেটেট কোন মানুষ যদি ডিপ্রেশনে ভুগে তবে এই সম্ভবনাটা অনেকাংশে বেড়ে যাই। তাই যখন কেউ আত্মহত্যা করবে এই কথা বলছে তাকে কখনোই একা রাখা ঠিক না। তাকে যতটা পারা যাই বাইরের জগতে ব্যস্ত করতে হবে।