![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যা শিখেছি, সেখান থেকেই কিছু বলার ও করার চেষ্টা করি
আমার ছোটভাই একদিন যে কোন একটা উপলক্ষ্যে আমাকে ধমকের সূরে বলেছিল, ' ভাইয়া, তোমার যত গুরুত্বপূর্ণ কাজই থাকুক, আজকের মধ্যে তুমি বাসায় আসবা'। বড় ভাই হয়ে ছোট ভাইয়ের ধমকে বিরক্ত হওয়াতো দূরের কথা, আমি আমার সকল ব্যস্ততা ফেলে ছোট ভাইয়ের এক কথায় ঘন্টাখানেকের মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা রওনা হয়ে গিয়েছিলাম। উপেক্ষা করতে পারিনি ছোট ভাইয়ের সেদিনকার শাসন। কারন সে শাসনে ছিল আবদার, ছিল ভালবাসা।
প্রিয়জনের শাসনগুলো অন্যরকম। যেন শাসিত হতেই বেশি আনন্দ। এ শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাধ্য সৃষ্টিকর্তা মানুষকে দেননি। এ শাসনের স্বাধীনতার চাইতে পরাধীনতাই যেন বেশি কাম্য।
বাসায় প্রতিদিন সকালে সকালে আম্মার অবিরাম ডাকাডাকিতে ঘুম ভাঙে। কখনোবা যদি ডাকাডাকি শুরুর আগে ঘুম ভাঙে, তবু ইচ্ছে করেই আম্মার ডাকাডাকির অপেক্ষায় থাকি। আম্মা কখন এসে কানের কাছে চিল্লাপাল্লা শুরু করবে আর তখন আমি বিছানা ছাড়বো। চিল্লাপাল্লায়তো বিরক্ত হওয়ার কথা। কিন্তু যদি সত্যিই তা হতাম, তবে কেন এ অপেক্ষা? কারন সে চিল্লাপাল্লায় থাকে অাল্লাদ।
দেরি করে বাসায় ফিরলে আব্বা যখন বকাবকি করে তখন বাইরে থাকার শত যৌক্তিক কারন থাকলেও তা জবাবদিহি করতে ইচ্ছে হয়না। চুপ করে বকা শুনে যাই। মনে হয় যেন, আব্বার বকাতেই আশির্বাদ ঝরে পড়ছে।
বড় বোন যখন ভাত মেখে ধমক দিয়ে বলে, 'খুবতো বড় হয়েছিস, তো খাইয়ে দিতে হবে কেন?' তখন মনে হয় আরো কেন ছোট হইনা? বড় হওয়ার গাম্ভীর্য তখন কোথায় যেন হারিয়ে যায়। কে জানে, হয়তো শাসনের উষ্ণতায় উবে যায়।
কাজে ভুল হলে যখন বড়ভাই এসে তুলাধুনা করে আবার কাজটা ঠিক করে দিয়ে বলে, ' ফাজিল, তোরে দিয়া কোন কাজটা হয়?' তখন সত্যি মনে হয়, এ অবহেলার পুরোটাই স্নেহ।
চরম বিপর্যস্ত মানসিক পরিস্থিতিতে যখন কাছের বন্ধুটি ভেঙে পড়তে না দিয়ে বরং বিপর্যস্ততার কারনকেই তুচ্ছ করে তুলে তখন তার কথার প্রতিবাদ করা যায় না। কারন সেখানে অবজ্ঞা থাকলেও থাকে শুভ কামনা।
স্বাভাবিক ক্ষেত্রে বিরক্তি, অবজ্ঞা বা বকাবকি হয়তো রাগের উদ্রেগ করে। কিন্তু এই নেগেটিভ আচরনগুলোই যখন কাছের মানুষগুলো করে তখন তা যেন প্রিয় মধুর হয়ে ওঠে।
ভালবাসার রূপ অনেক রকম। কখনো আদরে, কখনো শাসনে। তবে রূপ যেটাই হোক, ভালবাসা হয় মানুষে মানুষে, আত্মায় আত্মায়।
©somewhere in net ltd.