![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আজকে ঠাণ্ডাটা বেশ ভালই পড়েছে। ঢাকার এই বদ্ধঘরে বসে একটু স্মৃতিকাতর হয়ে যাচ্ছি।
শীতের সকাল। কনকনে ঠাণ্ডা আর বরফশীতল খেজুরের রস...আহা !...খেজুরের গাছ থেকে রস
পাড়ার দৃশ্য দেখতে পাওয়াটা একটু সৌভাগ্যের ব্যাপার।
ছোটবেলায় ভোরের আলো কোনোরকম ফুটবার পরেও বিছানায় শুয়ে থাকাটা ছিল রীতিমতো বড় ধরনের অপরাধ। বাড়ির গুরুজনেরা যে কখন ঘুম থেকে উঠত আল্লাহ্ই জানে। যাই হোক এত ভরে সূর্য মামার সাথে পাল্লা দিয়ে উঠেও দেখা যেত গাছি চাচা রস পাইড়া ফেলছেন। ঘন কুয়াশা আর প্রচণ্ড ঠাণ্ডা তাকে দমাতে পারে না কখনই। মাঝে মাঝে নিচ থেকে দাঁড়িয়ে তার গাছে উঠা আর রস পাড়া দেখতাম, তখন তার কষ্ট অনুভব করা ছাপিয়ে রস পাড়ার আনন্দটাই বেশি অনুভব হইত।
সপ্তাহে সাধারনত দুইদিন আমাদের খেজুর গাছে ঠিলা/ হাঁড়ি পাতা হইত। ঠিলা পাতা হইত বিকালবেলা আর পরদিন সকালে সেই ঠিলা ভরতি রস...উমম...। এই ঠিলার আকৃতি কিন্তু একই রকম ছিল না। কোন কোন গাছ ছিল বড়ই রসাল, যেনও একেবারে রসে টইটুম্বুর...সেটার জন্য বড় ঠিলা। আবার কোন কোন গাছ একেবারেই কৃপণ, সে তার নিজের রস প্রদান করতে একেবারেই নারাজ, সেই গাছের জন্য ছোট ঠিলা। রসালো গাছগুলো এতোই উদার ছিল যে সকালে ঠিলা ভরার পরেও সেখান থেকে রস পড়তে থাকতো টপটপ করে, তাই সেই গাছের নিচে জিহবা বের করে রসের ফোঁটার দাঁড়িয়ে থাকা পোলাপানের অভাব ছিল না। এটা যেন একটা খেলা...কার জিহবায় গাছ থেকে রসের ফোঁটা পড়ল সেটা নিয়ে বিরাট হৈ-হুল্লোড়। ঢিল মেরে ঠিলা ফুটো করে রস খাওয়া ও কারো কারো মহৎ কাজের অংশ ছিল।
রস পাড়া হয়ে গেলে শুরু হত রস পান পর্ব। এটার জন্য আয়োজন কম ছিল না। কখনো বাড়ির ছাদে কখনো উঠানে আর কখনোবা চুলার পিঠে। খেজুরের পাটিতে বসে রোদ পোহানো আর খেজুরের রসের গ্লাস সাথে একবাটি ঘরে ভাজা মুড়ি...। সেই মুড়ি খেজুর রসের গ্লাসের মধ্যে দিয়ে চুমুক দিয়ে রস খাওয়া, কি যে মজা !!
এতো খাতির করে রস খাওয়ানোর উদ্দেশ্য কিন্তু আরেকটা আছে, আসলে সেটাই প্রধান উদ্দেশ্য। রস মুড়ির সাথে আরেকটা জিনিস ছিল বাধ্যতামূলক, সেটা হচ্ছে বই-খাতা। আমারা ছাদে বা উঠানে বসে রস মুড়ি খাইতাম আর নিজ দায়িত্বে পড়ালেখা করতাম। মাঝে মাঝে মা আবিস্কার করতেন, আমরা নিজ দায়িত্বে পড়ালেখায় যথেষ্ট ফাঁকিবাজি করছি, সেজন্যই এবার চুলার পীঠে বসে রস মুড়ি খাওয়ার পদ্ধতি চালু হইল... এখানে রোদ পোহানোর পরিবর্তে আগুন পোহাও, রস মুড়ি খাও আর এবার মায়ের দায়িত্বে পড়ালেখা করো...এবার বোঝো ঠ্যালা । রান্নাঘরের চুলার পাশে আমাদের দুই ভাইবোনের খেজুর পাটি বিছিয়ে বসার যথেষ্ট পরিমান জায়গা ছিল, যা মনে হয় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে বানানো ।
কাচাঁ রস খাওয়া শেষ হলে বাকি রস কখনও জমা রাখা হতো রসের ক্ষীর বা রসের পিঠার জন্য। আর ক্ষীর বা রসের পিঠা বানানোর প্লান না থাকলে বাকি রস জ্বাল দিয়ে গুড়-পাটালি বানানোর কাজ চলতো, এই মহান দায়িত্ব পালন করতেন আমার দাদী। কতরকম গুড় হত...টানা গুড়, নারকেল পাটালী, সাধারন পাটালী আরও কতো কি...। টানা গুড় খুবিই আঠালো...আমরা টেনে টেনে খেতাম, নারকেল পাটালীতে পাটালী হবার পূর্বমুহূর্তে নারকেল দেয়া হতো, এটা ছিল আমার সবচেয়ে প্রিয়। তবে সবচেয়ে মজা ছিল মুড়ির মোয়া। কুড়মুড় কুড়মুড় করে সারাদিন খেয়ে বেড়াতাম। আরেকটা জিনিস পাওয়া যেত সেটা হল গুড়ের মটকা । এটা কিন্তু বাড়িতে বানাতে দেখিনি কখনো। আমার দাদাজান শীতকালে প্রতিদিন যখন বাজার থেকে ফিরতেন তখন আমাদের দুই ভাইবোনের জন্য গুড়ের মটকা নিয়ে আসতেন...এত মজা...।
এখন আমাদের খেজুর গাছগুলো অনেক বেশি কৃপণ হয়ে গেছে, তারা আর এখন উদারভাবে রস দেয় না। আমরা প্রকৃতির উপর বিরুপ হয়েছি আর প্রকৃতি তার প্রতিশোধ নিচ্ছে, আর এই খেজুর গাছ থেকে রস আহরণটা বড্ড কঠিন কাজ আর সেকেলে প্রথা। এটা এখনও ডিজিটাল এর আওতায় পড়ে নাই। আমরা যে খেজুর পাটালী খাচ্ছি তার প্রতিটি কনায় মিশে আছে গাছি ভাইদের কষ্টার্জিত রস আহরণ...।তাঁদেরকে স্যালুট...।
২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৩:০১
শাহীন ভোরেরআলো বলেছেন: ধন্যবাদ শামসীর...। মাঝে মাঝে লিখতে ভাল লাগে, হয়ত হয় না কিছুই।
©somewhere in net ltd.
১|
২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ দুপুর ২:৩৭
শ।মসীর বলেছেন: ওরে, তুমিও দেখি ব্লগে !!! স্বাগতম ।
এখন আমাদের খেজুর গাছগুলো অনেক বেশি কৃপণ হয়ে গেছে, তারা আর এখন উদারভাবে রস দেয় না। ঢাকায় শেষ কবে দেখছি কিংবা নিজে কিনে খাইছি ভুলেই গেছি। লিঝুম দ্বীপে গিয়ে খেয়েছিলাম।
কয়েকদিন আগে এক রিলেটিভের বাসায় গিয়ে খাওয়া হল অনেকদিন পর। গ্রামের বাড়ী থেকে আনা রসের পায়েস ।