নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শাহজাহান হোসেন আহমেদ, কবিতা, অকবিতা।

শাহজাহান আহমেদ

• ধুমপানের বদ অভ্যাসটা সামান্য আছে। ( ঈদে চাঁন্দে আর কি) •মানুষের সাথে মিশতে ভাল লাগে। তবে সবার সাথে না। যাদের মাথায় সামান্য পরিমান হলেও গিলু নামের বস্তুটি আছে তাদের সাথে। • গান শুনতে ভাল লাগে। প্রিয় শিল্পিঃ প্রিতম আহমেদ। কুমার বিশ্বজিৎ। চন্দনা মজুমদার। আইয়ুব বাচ্চু। প্রয়াত সন্জিব চৌধুরী। • বই পড়তে ভালবাসি। যে কোন বই। গল্প উপন্যাস কবিতা সব কিছু। রাতের বেলায় ঘুমোতে যাওয়ার আগে ভুতের গল্প পড়ে ভয় পেতে ভাল লাগে। •রাত জাগতে ভাল লাগে। দু চোখে প্রচণ্ড ঘুম এবং সীমাহিন ক্লান্তি নিয়েও মাঝে মাঝে সারা রাত জেগে থাকি।

শাহজাহান আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার শিক্ষক। পুলিশ এবং মরিচের গুড়া।

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:১৫

ছোটবেলার কথা। তখন ক্লাস সিক্স অথবা সেভেনে পড়ি। আমাদের ইংরেজি শিক্ষক ছিলেন আলী আজম স্যার। ছাত্রদের পিটানোর জন্য তিনি ছিলেন স্কুল বিখ্যাত। যেদিন তাঁর মন মেজাজ খারাপ থাকত সেদিন কোন কারণ ছাড়াই ছাত্র ছাত্রীদের গনপিটুনি দিত। ক্লাসে ঢুকেই যে কোন একজনের দিকে আঙুল উচিয়ে ধরে একটা প্রশ্ন করত। যাকে প্রশ্ন করা হত মূহুর্তেই তার মুখ শুকিয়ে যেত। সাথে সাথে অন্য সকলের বুকেও টিপ টিপ করে হাতুরির পেটানোর শব্দ বাজতে থাকতো। কারণ একই প্রশ্ন একে একে সবাইকে করা হবে। স্যার যেইসব প্রশ্ন করত সেইসব প্রশ্ন কেউ ইহজীবনে শুনা দূরের কথা পরজনমেও শুনবে কিনা সন্দেহ ছিল। স্যারের প্রশ্নের উত্তরও কেউ দিতে পারতনা এটাই ছিল স্বাভাবিক। ক্লাস সেভেনের ছাত্র হয়েও ইংরেজির সাধারণ নলেজটা নাই দেখে স্যার আশাহত চোখে কিছুক্ষন আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকতেন। তারপর গম্ভির কন্ঠে ঘোষনা করতেন- এই ক্লাসে যারা আছে তারা সবাই গাদা। তারপর বলতো 'আমি যদি একটা গরুকেও পড়াতাম তারাও এতদিনে ইংরেজিতে কথা বলা শিখে যেত।'

(লোকমুখে শুনা তিনি নাকি মাঝে মাঝে স্কুলের মাঠে বেধে রাখা গরুদের সাথেও ইংলিশে কথা বলতো। অনেক মজার মজার কাহিনী আছে ওনাকে নিয়ে। সে সব অন্য কোনদিন আলোচনা করা যাবে। তাছাড়া এই রচনাটা কোন মজার কাহিনীর জন্য লেখা না।)



যাহোক, তেমনি একটা অশুভ দিনের কথা বলি। স্যার ক্লাসে এসে তাঁর স্বভাবমতো একজনকে পড়া ধরল। সে পারলনা। তারপর পাশের জনকে। সেও পারলনা। একে একে সবাইকে দাড় করালো। তারপর স্যারের গম্ভির কন্ঠের ভাষণ। ভাষণ শেষে ক্লাসে ঝড় উঠল। সবার পিঠেই ডাবল বেতের প্রহার চলল কিছুক্ষন।



স্যারের বেদম প্রহারের পর হঠাৎ করেই আমার এক বন্ধু প্রতিবাদি হয়ে উঠল। টিফিন পিরিয়ডে আমাকে তার পরিকল্পনার কথা জানাল। যেভাবেই হোক এই অন্যায় অত্যাচারের প্রতিশোধ নিতে হবে।

আমি অবাক হয়ে বললাম ' পাগল হইছছ? আমি এর মধ্যে নাই। পারলে তোর প্রতিশোধ তুই নে।'

বন্ধু আমাকে অভয় দিল। বলল' আরে বোকা প্রতিশোধ কি আমরা এখনি নেব নাকি।'

'তাহলে কখন নিবি?'

'যখন আমরা বড় হব তখন।'

'তাইলে আমি রাজি।'

কাঠাল গাছের ডালে পা ঝুলিয়ে বসে বসে দুই বন্ধু চিন্তা করতে লাগলাম-প্রতিশোধটা নেব কিভাবে? বন্ধু প্রস্তাব দিল 'আমরা যখন বড় হব তখনতো আমাদের গায়ে অনেক শক্তি হবে তখন আমরা রাস্তায় স্যারকে একা পেলে আক্রমন করে বসব। আমরা দুইজনের সাথেতো স্যার একা পারবেনা!'

আমি বাধা দিলাম। ওনি আমাদের শিক্ষক। ওনার গায়ে হাত তোলা যাবেনা। প্রতিশোধেরর বিকল্প কৌশল বের করতে হবে। হঠাৎ আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এল। স্যার প্রতিদিন টিফিন পিরিয়ডে স্কুলের পাশের বুট-মুড়ির দোকানে বসে বুট-মুড়ি খায়। আমরা বড় হয়ে স্কুলের পাশে একটা বুট-মুড়ির দোকান দেব। যখন স্যার আমাদের দোকানে বুট-মুড়ি খেতে আসবে তখন আমরা তাঁর মুড়িতে পাথরের টুকরা মিশিয়ে দেব! বন্ধুর কাছে আমার প্রস্তাব দিতেই বন্ধু রাজি হয়ে গেল।



প্রতিশোধের পরিকল্পনা ঠিকঠাক করে আমরা কাঠাল গাছ থেকে নেমে আসলাম। ক্লাসে ফিরে আসছি এমন সময় দেখলাম স্যার দোকানে বসে বসে বুট-মুড়ি খাচ্ছে। আমাদের চোখে চোখ পরতেই হাত ইশারায় কাছে ডাকল। স্যার আমাদের ডাকছে দেখে আমার বন্ধু আমাকে একা রেখেই দিল দৌড়। আমি কাঁপা কাঁপা পায়ে স্যারের পাশে গিয়ে দাড়ালাম। স্যার বলল 'মুড়ি খাবি?'

আমি মাথা নাড়লাম। খাবনা। স্যার তবুও দোকানদারকে দুই টাকার মুড়ি, দুই টাকার বুট এবং দুইটা পিয়াজুর অর্ডার দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল 'বস। বসে আরাম করে খা।'

আমি স্যারের পাশে বসে মুড়ি খাচ্ছি। স্যার আমার পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বলছে' আজকে তোদের অনেক বেশি মেরে ফেলেছি। তাইনা রে? আর কখনো যদি পড়া না পারিস আরো বেশি মারব। কথাটা যেন মনে থাকে।'

স্যারের কথায় কেমন যেন একটু মমতার ছোয়া ছিল আমার চোখে পানি এসে গেল। চোখের পানি নাকের পানি মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল। সেই পানি মিশ্রিত নোনতা মুড়ি চিবোচ্ছি আর স্যারের প্রতিটা কথায় মাথা নাড়ছি।

মুড়ি খাওয়া শেষে এক দৌড়ে স্কুলে এসে আমার বন্ধুকে খুঁজে বের করে বললাম' আমরা স্যারের উপর কোন প্রতিশোধ নেবনা। স্যার আসলে খুব ভাল মানুষ।'

বন্ধু আমার কথার তীব্র প্রতিবাদ জানাল। বলল আমি নাকি স্যারের কিনে দেওয়া বুট-মুড়ি খেয়ে মত পাল্টিয়ে ফেলেছি। আমি তার সাথে না থাকলেও সে একা একা বুট-মুড়ির দোকান দেবে এবং স্যারের মুড়িতে পাথরের টুকরা দিবে। এটাই তার শেষ কথা। আমিও আমার শেষ কথা তাকে বলে দিলাম। আমি বড় হয়ে পুলিশ হব। তারপর তাকে থানায় ধরে নিয়ে যাব।



অনেকদিন পর বুঝতে পেরেছিলাম কেন স্যার বিনা কারণে আমাদেরকে প্রহার করতো। কারণটা অবশ্যই অর্থনৈতিক। শিক্ষকদের যে বেতন তা দিয়ে সংসার চালানোটা তাঁদের জন্য কষ্টকর হয়ে যেত। তারা ভদ্রভাবে জীবন যাপন করতে গিয়ে পারতোনা অন্য কোন কাজ করতে। সংসারে অভাব লেগেই থাকতো। অভাব থেকেই বদমেজাজ...!



আজ যখন দেখি আমার শিক্ষকেরা তাদের ন্যায্য দাবী আদায়ের জন্য শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে অপমানিত হচ্ছে। যখন দেখি পুলিশের নির্যাতনে আমার শিক্ষক মারা যাচ্ছে। যখন দেখি আমার প্রিয় স্যারের চোখে মরিচের গুড়া ছুড়ে অন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। তখন তাদের জন্য কিছু করতে না পারার লজ্জায় মাথা নত হয়ে আসে।

আমরা কী পারিনা আমাদের শিক্ষকদের পাশে দাড়িয়ে তাদের জন্য প্রতিবাদ করতে?



শাহজাহান আহমেদ

01-15-13

(Troy-Michigan)

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:৪৬

ভবঘুরে জীবন বলেছেন: খুব ভালো লিখেছেন ভাইয়া, অসাধারন

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:৫৮

শাহজাহান আহমেদ বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:৫০

মোহাম্মেদ তারেক হোসাইন বলেছেন: শাহজাহান ভাই, আপনার ফেসবুকের ফ্রেন্ড তারেক বলছি,.।।। লেখাটা ফেসবুকে দেখেছি.। কপি পেস্ট করবো( যদি মাইন্ড না করেন)

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:৫৯

শাহজাহান আহমেদ বলেছেন: আচ্ছা।

৩| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:৫৬

নিম গাছ বলেছেন: প্রতিবাদ করে কিছু হবে না, এরজন্য প্রতিরোধ গড়ে তোলা দরকার। ভাবতে পারেন আজকের দিনে ১০০ টাকা বাড়ি ভাড়া, ১৫০ টাকা চিকিৎসাভাতা!! আর নন এমপিওদের কথা কি বলব।

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:০০

শাহজাহান আহমেদ বলেছেন: হুম... প্রতিবাদ করে কিছু হবে না, এরজন্য প্রতিরোধ গড়ে তোলা দরকার। ভাবতে পারেন আজকের দিনে ১০০ টাকা বাড়ি ভাড়া, ১৫০ টাকা চিকিৎসাভাতা!! আর নন এমপিওদের কথা কি বলব।

ঠিকই বলেছেন ভাই।

৪| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:০৩

আিম এক যাযাবর বলেছেন: আসলেই আমাদের দেশের শিক্ষকদের যে বেতন তা দিয়ে সংসার চালানোটা তাঁদের জন্য কষ্টকর।

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:০১

শাহজাহান আহমেদ বলেছেন: হুমম। ধন্যবাদ।

৫| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:২৩

তামীম বলছি বলেছেন: +

মর্মস্পর্শী লেখা। ভাল লাগল।

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:০২

শাহজাহান আহমেদ বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.