![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
• ধুমপানের বদ অভ্যাসটা সামান্য আছে। ( ঈদে চাঁন্দে আর কি) •মানুষের সাথে মিশতে ভাল লাগে। তবে সবার সাথে না। যাদের মাথায় সামান্য পরিমান হলেও গিলু নামের বস্তুটি আছে তাদের সাথে। • গান শুনতে ভাল লাগে। প্রিয় শিল্পিঃ প্রিতম আহমেদ। কুমার বিশ্বজিৎ। চন্দনা মজুমদার। আইয়ুব বাচ্চু। প্রয়াত সন্জিব চৌধুরী। • বই পড়তে ভালবাসি। যে কোন বই। গল্প উপন্যাস কবিতা সব কিছু। রাতের বেলায় ঘুমোতে যাওয়ার আগে ভুতের গল্প পড়ে ভয় পেতে ভাল লাগে। •রাত জাগতে ভাল লাগে। দু চোখে প্রচণ্ড ঘুম এবং সীমাহিন ক্লান্তি নিয়েও মাঝে মাঝে সারা রাত জেগে থাকি।
(১)
মারুফ স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষা করছে। সাথে তঁার বন্ধু সেলিম। প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছে বাহিরে। মারুফ বসেছে ওয়েটিং রুমের জানালার পাশে। জানালার একটা কাচ ভাঙা। কিছুক্ষণ পর পর বৃষ্টির ঝাপটা এসে তঁার মুখে পড়ছে। বৃষ্টির ঝাপটা মুখে পড়তেই মারুফ 'উ হু হু' বলে শব্দ করছে। সেলিম কয়েকবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মারুফের দিকে তাকিয়েছে।
'এমন করছিস কেন?'
'কী করছি?'
'একটু পর পর এরকম "উ হু হু " শব্দ করছিস কেন?'
'শীত লাগছে তো।'
'শীত লাগলে জানালার পাশ থেকে সরে বস।"
'জানালার পাশে ভালো লাগছে। যখন বৃষ্টির ঝাপটা আসে তখন মিষ্টি একটা গন্ধ এসে নাকে লাগে। ব্যাপারটা খুব ইণ্টারেস্টিং। কেমন যেন সাবান সাবান গন্ধ'
'কী যে আজগুবি কথা বলিস। বৃষ্টির ঝাপটা থেকে সাবানের গন্ধ আসবে কোথা থেকে।জানালার পাশে কদম গাছ আছে। কদম গাছ থেকে কদম ফুলের গন্ধ আসে।'
মারুফ মুগ্ধ হয়ে গেল। 'আরে তাইতো! কদম ফুলের যে এমন মিষ্টি গন্ধ আছে, তা-ই তো জানতাম না। আচ্ছা, এমন কোন সাবান কি আছে যেটাতে কদম ফুলের গন্ধ পাওয়া যায়?'
সেলিম ভ্রু কুঁচকে ফেলল। 'এখানে সাবানের কথা আসল কেন?'
' আসল, কারণ যদি এমন কোন সাবান থাকে, যেটাতে কদম ফুলের গন্ধ আসে, সেই সাবান দিয়ে আমি গোছল করতাম।'
সেলিম চুপ করে গেল। মারুফের আজব আজব কথা শুনতে ভালো লাগছে না। বিরক্ত লাগছে।
'সেলিম'
'হু'
'ঘুম পাচ্ছে?'
'না।'
'আমারতো ঘুম পাচ্ছে। দে, একটা সিগারেট দে। সিগারেটে লম্বা লম্বা কয়েকটা টান দিলে ঘুম কেটে যাওয়ার কথা। চা খেতে পারলে মন্দ হয়না।'
'ওয়েটিং রুমে সিগারেট টানবি কেমন করে? দেখছিস না নো স্মোকিং সাইন।'
'তাহলে চল বাইরে গিয়ে সিগারেট টেনে আসি। বৃষ্টি কমেছে। আরে চল না।'
সেলিম নিতান্ত অনিচ্ছায় বসা থেকে উঠল। এমন সময় আকাশে বিদ্যুৎ চমকালো। সেই আলোয় তঁারা দেখতে পেল একটা বারো-তেরো বছরের বাচ্চা ছেলে ওয়েটিং রুমের দরজার কাছে বসে আছে। ছেলেটার সামনে একটা কলসি উবু করা। আকাশে বিদ্যুৎ চমকানোর সাথে সাথে ছেলেটা কলসিতে আঘাত করল।
ছেলেটার আঙুলে সম্ভবত আংটি আছে। আংটির আঘাত এ্যালমোনিয়ামের কলসিতে টুং করে একটা শব্দ হল। মারুফ চমকে উঠল। কিছুক্ষণ নিরব থেকে ছেলেটা আবার কলসিতে আঘাত করল। যতবার আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, ছেলেটা ততোবারই কলসিতে আঘাত করছে। বাহিরে বৃষ্টি নেই। কিন্তু আকাশে এখনো মেঘ আছে। যে কোন মূহুর্তে বৃষ্টি নামতে পারে। সেলিম সিগারেট ধরিয়ে মারুফের দিকে প্যাকেটটা বাড়িয়ে দিল।
এমন সময় বৃষ্টি নামল। ছেলেটা মনে হয় বৃষ্টির জন্যই অপেক্ষা করছিল। বৃষ্টি নামার সাথে সাথে সে তঁার কলসিতে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে শুরু করল।
বৃষ্টির শব্দ ছাড়িয়ে কলসির আঘাতের শব্দটা কানে এসে লাগছে। সেলিমের মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। সবকিছুতে মেজাজ খারাপ হওয়া সেলিমের অভ্যাস। শুধু সেলিম নয়, ওয়েটিং রুমে বসে থাকা অনেকেই বিরক্তি নিয়ে ছেলেটির দিকে তাকাচ্ছে।
এভাবে অনেকক্ষণ ছেলেটা কলসিতে আঘাত করার পর কলসির শব্দের মাঝে হঠাৎ একটা ছন্দ নিয়ে এল। মারুফ এগিয়ে গিয়ে ছেলেটির পাশে দাড়াল। সে কলসিতে আঘাত করে যেতেই লাগল। মারুফ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। সামান্য একটা কলসির শব্দে যে এমন মধুর সুর থাকতে পারে, তাঁর জানা ছিলনা।
মারুফের পাশে এসে সেলিম দাড়াল। তাদের দেখাদেখি আরো অনেকে এখন ছেলেটাকে ঘিরে দাঁড়িয়েছে। বাহিরে প্রচণ্ড বৃষ্টি। কিন্তু বৃষ্টির শব্দ শুনা যাচ্ছেনা। সবাই তাঁর কলসি-সংগীতে মুগ্ধ। ছেলেটা কলসির সুর নিয়ে খেলা করছে। কিছুক্ষণ পর পর সুরটা উঠানামা করছে। এবার সে গানে টান দিল।
"এক নজর দেখিতে মানুষ আইব রে।
মানুষ আইব রে....
দেহখঁাচার অচিন পাখি,
উইড়া যেদিন যাইব রে
এক নজর দেখিতে মানুষ আইব রে।"
মারুফ ছেলেটার কলসি সংগীতে যেমন মুগ্ধ হয়েছে, তাঁর গানে তার চেয়ে আরো বেশি মুগ্ধ হয়ে গেল। মারুফের ইচ্ছা করছে আজ সারা রাত এখানে দাঁড়িয়ে থেকে ছেলেটার গান শুনে। কিন্তু তা বোধ হয় সম্ভব না। কিছুক্ষন পরেই ট্রেন চলে আসবে। স্টেশনের মাইকে একটু পর পর ঘোষনা দিচ্ছে।
'চট্রগ্রামগামী কর্ণফুলী এক্সপ্রেস
ইমামবাড়ি স্টেশন অতিক্রম করেছে।'
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১:৩৩
উর্ণনাভ বলেছেন: কর্ণফুলী এক্সপ্রেস
ভাই এর চেয়ে ভালো কোন ট্রেন ব্যবহার করতে পারতেন
ভালো লিখেছেন