![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
• ধুমপানের বদ অভ্যাসটা সামান্য আছে। ( ঈদে চাঁন্দে আর কি) •মানুষের সাথে মিশতে ভাল লাগে। তবে সবার সাথে না। যাদের মাথায় সামান্য পরিমান হলেও গিলু নামের বস্তুটি আছে তাদের সাথে। • গান শুনতে ভাল লাগে। প্রিয় শিল্পিঃ প্রিতম আহমেদ। কুমার বিশ্বজিৎ। চন্দনা মজুমদার। আইয়ুব বাচ্চু। প্রয়াত সন্জিব চৌধুরী। • বই পড়তে ভালবাসি। যে কোন বই। গল্প উপন্যাস কবিতা সব কিছু। রাতের বেলায় ঘুমোতে যাওয়ার আগে ভুতের গল্প পড়ে ভয় পেতে ভাল লাগে। •রাত জাগতে ভাল লাগে। দু চোখে প্রচণ্ড ঘুম এবং সীমাহিন ক্লান্তি নিয়েও মাঝে মাঝে সারা রাত জেগে থাকি।
(১)
আমেরিকার প্রায় প্রতিটা স্টেটের প্রতিটা দোকানেই লটারি বিক্রয় করা হয়। এই লটারি চালু আছে পচিশ বছরের বেশী সময় ধরে। এখনো চলছে। জনগণও খুব আগ্রহ নিয়ে লটারি টিকেট কিনে। জনগণের আগ্রহের কারণ মূলত দুটি। এই লটারিটা কোন ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান না। লটারি থেকে প্রাপ্য মুনাফা এদেশের স্কুলগুলো পরিচালনায় ব্যয় হয়। আরেকটি কারণ হল পুরস্কারের অংকটা বিশাল। চল্লিশ,পঞ্চাশ মিলিয়ন থেকে শুরু হয়ে কয়েকশত মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত হয়ে থাকে!
দু-ধরনের লটারি টিকেট বিক্রয় হয় এখানে। স্ক্রেচ টিকেট এবং অনলাইন টিকেট। অনলাইন টিকেট হল কম্পিউরাইজড পদ্ধতিতে কয়েকটি রেনডম নাম্বার। এটা সপ্তাহে দু-দিন ড্র হয়। ড্রতে উঠা নাম্বারের সাথে টিকেটের নাম্বার মিলাতে হয়। যতটা নাম্বার মিলবে সে অনুপাতে পুরস্কারের অর্থ জিতবে। সবগুলো নাম্বার মিলে যাওয়া মানে প্রথম পুরস্কার। জেকপট। যদি কারো নাম্বার না মিলে তাহলে পরবর্তি ড্র থেকে প্রতিদিনই জেকপট বাড়তে থাকে। এমনও হয় একমাসেও কেউ জেকপট জিতেনা। স্বাভাবিক ভাবেই পুরস্কারের অর্থ কয়েকশত মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়।
আমি খুব বেশী লটারি কিনিনা। কারণটা অবশ্যই অর্থনৈতিক। তারচেয়ে বড় যে কারণ তা হল যখনি আমি লটারি টিকেট কিনব বলে সিদ্ধান্ত নেই, তখনি আমার কেন যেন মনে হয় প্রথম পুরস্কারটা আমিই পেয়ে যাব! প্রথম পুরস্কার মানে বিরাট কিছু। কয়েকশত মিলিয়ন ডলার! সাত শত, আট শত মিলিয়ন ডলার! এত ডলার দিয়ে আমি কি করব। (কথাটা কিন্তু আসলেই সত্য। খানিকটা হাস্যকরও। লটারি জেতার ভয়ে আমি লটারি কিনতে চাইনা!)
(২)
একবার লটারির জেকপট বেড়ে ৬০০ মিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকেছে। এই সপ্তাহেও যদি কেউ না জেতে তাহলে সেটা বাড়তেই থাকবে..। লোকজন লটারি কেনার জন্য প্রতিটা দোকানে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। একেক জন কয়েকশত ডলারের টিকিট পর্যন্ত কিনে ফেলছে। সবার মধ্যে একটা উৎসব-উৎসব ভাব। সবার মুখ হাসি-হাসি। একজন অন্যজনের জন্য শুভকামনা করছে। সেদিন আমিও উৎসাহী হয়ে দশ ডলারের টিকেট কিনেছিলাম।
দোকানদারটি ছিল আমার পরিচিত। আমার হাতে লটারির টিকেটটা দেওয়ার পর যথারিতি আমাকেও শুভকামনা জানাল। তারপর জিজ্ঞাস করল; লটারিতে জেকপট জিতলে আমি কী করব।
আমি চটপট জবাব দিলাম: আমার ইচ্ছা আমি জেকপট জিতলে দুটি কাজ করার চেষ্টা করব। প্রথম, আমাদের দেশের সরকার নিজ খরচে একটা বিশাল সেতু নির্মাণের ঘোষনা দিয়েছে। আমি আমার পুরস্কারের সমস্ত অর্থ সেই সেতু তৈরি করার জন্য সরকারকে দিয়ে দেব। আর দ্বিতীয় ইচ্ছাটা হল আমি এই ডলারগুলো দিয়ে এই পৃথিবীটাকে বদলে দেব।
দোকানদার মহিলাটি আমার প্রথম ইচ্ছার কথা হাসিমুখে শুনলেও দ্বিতীয় ইচ্ছা শুনা মাত্রই ভীষণ অবাক হল। বলল: সেটা কিভাবে?
আমি বললাম। "পৃথিবীতে এত বন্যা, খড়া, সুনামি সহ অসংখ প্রাকৃতিক দুর্যোগ কেন হয় তুমি জান?"
"না। আমি জানিনা।"
"এটা আসলে জলবায়ু পরিবর্তনের ফল। খুব দ্রুতই পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। যেই নিয়মে পৃথিবী চলার কথা সেভাবে চলছেনা। যে সময়ে দুপুর বেলায় কোকিল ডাকার কথা সে সময়ে না ডেকে ডাকছে অসময়ে।"
মহিলা আবারো অবাক হয়ে প্রশ্ন করল "কোকিল কী?"
"কোকিল আমাদের দেশের একটা পাখি।"
"ও আচ্ছা। পাখির ডাকের সাথে তুমি জলবায়ুকে মিলিয়ে ফেলছ কেন?"
"আছে। মিল আছে। যা হোক মূল কথাটা তোমাকে বলি। পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য যা কিছু দায়ী তার মধ্যে অন্যতম হল গাছ নিধন। গাছ নিধনের ফলে বাতাসে অক্সিজেনের পরিমান কমে যাচ্ছে। কার্বন-ডাই অক্সাইডের পরিমান বেড়ে জলবায়ুকে উষ্ণ করে ফেলছে। সেই উষ্ণতার ফলে জলবায়ু ভারসম্যহীন হয়ে যাচ্ছে। আমি চিন্তা করছি আমি যদি জেকপট জিতি তাহলে আমার সম-মনাদের নিয়ে সারা পৃথিবী ব্যাপী বৃক্ষ-রোপন অভিযানে নেমে যাব।"
"খুব সুন্দর চিন্তা তোমার। সৃষ্টিকর্তা তোমার সহায় হোক। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য গাছ কাটা ছাড়া আর কী কী দায়ী বলে তুমি মনে করছ।"
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম "আর দায়ী তোমরা। তোমরা মানে উন্নত রাষ্ট্রগুলো। তোমাদের দেশের কলকারখানার বিষাক্ত ধোয়া, বর্জ, পরিবেশকে খুব ক্ষতি করছে। বাতাসে উষ্ণতার মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাছাড়া পারমানবিক বোমার বিস্ফোরন ঘটিয়ে তোমরা পৃথিবীর যে ক্ষতি করে দিয়েছ। সে ক্ষতি কোটি বছরেও পূরণ হবেনা।"
"ওহ আচ্ছা! তোমাদের দেশে কোন ফেক্টরী নাই?"
"আছে। ফেক্টরী আছে।"
সে আনন্দে প্রায় লাফিয়ে উঠল। বলল "তাহলেতো তোমরাও দায়ী। তোমরাওতো পরিবেশ দূষন করছ।"
আমি সেদিন তাঁর সাথে খুব গর্ব করে বলেছিলাম "আমাদের দেশে বাতাস পরিশোধন করার একটা জীবন্ত মেশিন আছে। যার নাম সুন্দরবন! সেটা শুধু আমাদের বাতাসকেই শোধন করেনা। সেটা আমাদের দেশের বিরাট একটি অংশকে আগলে রেখেছে!"
(৩)
প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সারা বাংলাদেশের মানুষ সুন্দরবনের সুবিধাভোগী। পরিবেশগতভাবে, অর্থনৈতিকভাবে। সেটা অস্বিকার করার কোন উপায় নাই। কয়েক হাজার প্রজাতির প্রাণি ছাড়াও প্রায় ৪ মিলিয়ন মানুষ সুন্দরবনকে ঘিরে বেচে আছে। সুন্দরবন আমাদের অক্সিজেন দিচ্ছে। জ্বালানী দিচ্ছে। কাঠ দিচ্ছে। মাছ দিচ্ছে। মধু দিচ্ছে। কাগজ তৈরীর উপাদান দিচ্ছে। আরো অনেক কিছু দিয়ে আমাদের প্রত্যাহিক জীবনে অবদান রাখছে। আমরা সেই সুন্দরবনকে কী দিচ্ছি!
রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মান করা হলে ভয়াবহ একটা ব্যাপার হবে। বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মানের আগেই যন্ত্রপাতি কাঁচামাল আনা-নেওয়ার কারনে, শব্দ-দূষণে যে ক্ষতি হবে তার পরিমানও আৎকে উঠার মত।
বিশ্বের কোন দেশেই বনভূমি/বসতির এত কাছে কয়লা-পোড়া বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হয়না। আমাদের দেশে দেওয়া হয়েছে। কেন? কোন স্বার্থে?
বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মানের জন্য যে ১৮৩৪ একর জমি অধিগ্রহন করা হয়েছে সেখানে কৃষি জমি, মৎস চাষের জলাশয় এবং বসতি আছে। সেই এলাকায় বছরে প্রায় ৬০ হাজার টন ধান উৎপন্ন হয়। মাছ চাষ হয়। অন্যান্য ফসল উৎপন্ন হয়। বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হলে সেগুলোও হবেনা।
তারচেয়ে বড় কথা পরিবেশের উপর মারাত্বক প্রভাব পড়বে।
(৪)
রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে যদি মাত্র ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হয়। তাহলে আমরা ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের সঙ্গে যে ক্ষতিকর উপাদানগুলো পাব।
•৩৭ লক্ষ টন কার্বণ-ডাই-অক্সাইড!
•১০ হাজার দুইশত টন নাইট্রোজেন অক্সাইড!
•২২০ টন হাইড্রো-কার্বন!
•৭২০ টন কার্বন-মনোক্সাইড!
•১৭০ পাউণ্ড মার্কারী!
•২২৫ পাউন্ড আর্সেনিক!
•১১৪ পাউণ্ড লেড!
রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হলে- সেখান থেকে নির্গত ক্ষতিকর উপাদান এবং কাঙ্খিত বিদ্যুৎ দুটো পাশা-পাশি রেখে লাভ-লোকসানের হিসাব করলে দেখা যাবে লাভতো কিছু হচ্ছেইনা বরং যে ক্ষতি হবে তা কখনোই পূরণ করা সম্ভব হবেনা। তাহলে কার জন্য এই উদ্যেগ? কার স্বার্থে পরিবেশ ধংসের এই নীল-নকশা?
বিবেচনা আপনার। প্রতিবাদ করবেন নাকি ঘরে বসে থাকবেন।
(শাহজাহান আহমেদ)
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৪২
তিক্তভাষী বলেছেন: চমৎকার লেখা!
সবাইকে নিজ নিজ ক্ষেত্র থেকে পরিবেশ ধ্বংসকারী এই প্রকল্পের প্রতিবাদ জানাতে হবে।