নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শাহজাহান হোসেন আহমেদ, কবিতা, অকবিতা।

শাহজাহান আহমেদ

• ধুমপানের বদ অভ্যাসটা সামান্য আছে। ( ঈদে চাঁন্দে আর কি) •মানুষের সাথে মিশতে ভাল লাগে। তবে সবার সাথে না। যাদের মাথায় সামান্য পরিমান হলেও গিলু নামের বস্তুটি আছে তাদের সাথে। • গান শুনতে ভাল লাগে। প্রিয় শিল্পিঃ প্রিতম আহমেদ। কুমার বিশ্বজিৎ। চন্দনা মজুমদার। আইয়ুব বাচ্চু। প্রয়াত সন্জিব চৌধুরী। • বই পড়তে ভালবাসি। যে কোন বই। গল্প উপন্যাস কবিতা সব কিছু। রাতের বেলায় ঘুমোতে যাওয়ার আগে ভুতের গল্প পড়ে ভয় পেতে ভাল লাগে। •রাত জাগতে ভাল লাগে। দু চোখে প্রচণ্ড ঘুম এবং সীমাহিন ক্লান্তি নিয়েও মাঝে মাঝে সারা রাত জেগে থাকি।

শাহজাহান আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রেম এবং জীবন! (গল্প)

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৫৪

আমার এক বন্ধু একদিন হঠাৎ করেই এক অতি-রুপবতী কিশোরীর প্রেমে পড়ে গেল। প্রেমে পড়ার পর তাঁর নাওয়া,খাওয়া, ঘুমের রুটিনে মারাত্মক গড়মিল দেখা গেল। বন্ধুতো চিন্তিত। বন্ধুর চিন্তা আমাকেও স্পর্শ করেছে। আমিও চিন্তিত। দু-জনে পরামর্শ করি কি করা যায়। অনেক চিন্তা ভাবনা করে বন্ধুকে সিদ্ধান্ত দিলাম "এটা হবেনা। বাদ দে।"

বন্ধু অবাক হয়ে বলল "বাদ দেব মানে? কি বলছিস এসব! আমার জীবন গেলেও বাদ দিতে পারবনা।"

"তাহলে আর কি করা। চালিয়ে যা।"

বন্ধু চালিয়ে যেতে থাকল। সে নিয়মিত কিশোরীর স্কুলে যাওয়ার পথে দাড়িয়ে থাকে। বাড়ির পাশে ঘুরা-ঘুরি করে।

ঘুরা-ঘুরি করতে করেতে একদিন একটা গোপন সংবাদ বের করে ফেলল। রুপবতী কিশোরীর নাকি অন্য একটা ছেলের সাথে সম্পর্ক আছে। এই খবর পেয়েতো সে ভীষণ হতাশ। আমার কাছে এসেছে তাঁর দুঃখের কথা শুনাতে। আমিও খুব মনযোগ দিয়ে তাঁর কথা শুনলাম। তাঁর কথাগুলো হল: কিশোরীটা যার সাথে প্রেম করছে বলে খবর আছে সেই ছেলেটা নাকি আমার এক দূর-সম্পর্কের বন্ধু! এখন আমার দায়িত্ব হচ্ছে সেই ছেলের কাছ থেকে তথ্য এনে দেওয়া। আসলেই সে প্রেম করছে নাকি সেও তাঁর মত ঘুরছে।

আমি বললাম "ঠিক আছে, তুইও আমার সাথে চল।"



একদিন একটা শুভ দিন দেখে দুই বন্ধু মিলে রওয়ানা দিলাম। গিয়ে দেখি আমার দূর-সম্পর্কের বন্ধুটি ঘরের দাওয়ায় বসে কঁচি আমপাতা ভাজ করে সেই পাতা দিয়ে দাত মাজতেছে। আমাদের দেখে হাসিমুখে উঠে দাড়াল। আমার সাথে আমার বন্ধুকে দেখে তাঁর মুখটা মূহুর্তেই মলিন হয়ে গেল। মুখ থেকে খ্যাত করে এক দলা থুথু ফেলে বিরস কন্ঠে বলল "কি ব্যাপার, তোমরা কি মনে করে?"

"আমরা তোমার কাছেই এসেছিলাম। ভাল আছ?"

সে ফিসফিসিয়ে বলল " ভাল আছি। সাথে করে ওকে নিয়া আসছ কেন?"

আমিও ফিসফিসিয়ে বললাম "ওর জন্যইতো তোমার কাছে আসা।"

তারপর বিস্তারিত সব খুলে বললাম। সে খুব আগ্রহ নিয়ে সব শুনল। তারপর, আমার বন্ধুকে হাত ইশারায় কাছে ডাকল। বলল " তুমি ওকে ভালবাস?"

"হুম।"

"ওর সাথে যে আমার প্রেম চলতাছে জাননা?"

"ওতো বলল, ও কারো সাথে প্রেম করেনা।"

"ওহ।"

ওহ বলার পর সে কিছুক্ষণ চুপ-চাপ থেকে পাশের কাঠাল গাছ থেকে একটা পাতা ছিড়ে সেই পাতাতে খ্যাত শব্দ করে একদলা থুতু ফেলল। তারপর সেই পাতাটা হাতে নিয়ে বলল।

"তুমি একটা কাজ কর। এই পাতাটা নিয়ে তুমি ওর কাছে যাও। গিয়ে আমার নাম বলে বলবা এই পাতার মধ্যে যে 'সেপ'টা আছে তা আমিই দিয়েছি। তাকে বলবে সেপটা খেয়ে ফেলতে। যদি সে সেপটা খায় তাহলে বুঝবে আমার সাথে ওর প্রেম আছে। যদি না খায় তাহলে তুমিই ওর সাথে প্রেম করো। আমি কিছুই বলবনা।"



এই কথা শুনার পর আমার বন্ধু সেখানে আর এক মূহুর্ত দাড়ালনা। আমি তাকে অনেক অনুরোধ করেছি। "সেপ মাখা পাতাটা মেয়েটার কাছে নিয়েই দেখনা। খায় কিনা দেখি। সেপ কিভাবে খায় তা দেখার অনেক ইচ্ছা হচ্ছে।"

আমার শত অনুরোধ উপেক্ষা করে সে চলে এল। বলল

"আমি আর এর মধ্যে নেই। আমি সিউর মেয়েটা সেপ মাখা পাতাটা পেলেই কুঁৎ করে সেপটা গিলে খেয়ে ফেলত। পাতাটাও চেটে-পুটে খেত!"

"তুই সিউর হলি কেমনে?"

"তুই দেখিসনি তোর বন্ধু কতটা কনফিডেণ্ট নিয়ে কথাটা বলল। আমার ধারনা সে মেয়েটাকে রোজ দুইবেলা করে সেপ খাওয়ায়। তাদের মধ্যে গভীর প্রেম যে চলছে আমি বুঝে গেছি।"



হ্যা, তাদের মধ্যে প্রেমটা গভীরই ছিল। একজনের জন্য অন্যজনের প্রাণ যায়-যায় অবস্থা। পরস্পরের আস্থা অর্জনের জন্য তারা নাকি ধর্মগ্রন্থ ছুয়েও প্রতিজ্ঞা করেছিল। কেউ কাউকে কখনো ভুলে যাবেনা। সারাজীবন পাশে থাকবে।



সারাজীবন না। জীবন থেকে মাত্র কয়েকটা বছর পেরিয়েছিল তাদের। কিশোরী তাঁর কৈশোর ছেড়ে যুবতী হয়েছে। শরীরে পরিবর্তন এসেছে। পরিবর্তন এসেছে মনেও। পছন্দ-অপছন্দ। রুচি-অরুচির মধ্যেও ব্যবধান হয়েছে অনেক। সেই পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় যুবতী মেয়েটি তাঁর জীবন-সঙ্গীও পরিবর্তন করে ফেলল। ভুলে গেল সব অতিত। ভুলে গেল কিশোরী-কালের ধর্মগ্রন্থ ছোয়া প্রতিজ্ঞা।



এটাই স্বাভাবিক। মানুষের মনের কোন নির্দিষ্ট গণ্ডি নেই। সেটা সময়ে-সময়ে পরিবর্তন হতেই পারে। এটাই মানুষের বৈশিষ্ট।

এক সময়ের সবচেয়ে প্রিয় বস্তুটি অন্য সময়ে, অন্য পরিবেশে নিতান্তই অপ্রয়োজনীয় মনে হয়। প্রকৃতি মানুষের সামনে তাঁর একটা প্রিয় বস্তুর বিনিময়ে অন্য একটা প্রিয় বস্তু উপস্থাপন করে জীবনকে চলমান রাখে। একটা জিনিষের মাঝে জীবন থমকে গেলে সৃষ্টিজগত বিশৃংখল হয়ে যাবে।

(শাহজাহান আহমেদ)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.