নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার ভেতরের কারণগুলো জানতে এবং বিশ্লেষণ করতে চেষ্টা করি এবং সবার সাথে শেয়ার করতে পছন্দ করি। সামাজিক, রাজনৈতিক আর আন্তর্জাতিক বিষয়ে লেখালেখি করতে ভালো লাগে। তাই ব্লগে পদচারনা।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য: বড় পুকুরিয়ায় সাবক্রিটিক্যাল টেকনোলজি ব্যবহার করা হচ্ছে। কোন ক্ষতি হচ্ছে এরকম কথা একবারও কেউ লিখতে পারে নাই।
প্রকৃত তথ্য: এই বক্তব্যরে মধ্যে অনকেগুলো ভুল ধারণা আছ। প্রথমত, আমরা জানি না কোন সমীক্ষার ভিত্তিতে তিনি এই কথা বলছেন।বাস্তবে কেউ বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আশপাশে গেলেই দেখতে পাবেন পরিবেশ বিপর্যয়ের ভয়াবহ উদাহরণ। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চারপাশের কৃষিজমি কয়লা দূষণে রীতিমত কালো রঙ ধারণ করেছে, মাটির নিচের পানির স্তর নেমে গেছে, ছাইয়ের পুকুরে গাদা করে রাখা বিদুৎ কেন্দ্রের ছাই পরিবেশ দূষণ ঘটাচ্ছে। ২০১৪ সালে রাজশাহী ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি থেকে গবেষণা হয় বড়পুকুরিয়া কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে। গবেষণা থেকে দেখা যায়-
১)কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ঘন্টায় ৯ ঘনমিটার হারে দূষিত পানি নিকটস্থ তিলাই নদীতে ডিসচার্জ করা হচ্ছে কোন ধরণের পরিশোধন ছাড়াই;
২)ছাইয়ের পুকুরে থাকা তরল বর্জ্যে অতিরিক্ত বোরন, আর্সেনিক, পারদ পাওয়া গেছে যা চুইয়ে মাটিতে মিসছে যার কারণে ভূগর্ভস্থ পানি দূষিত হচ্ছে এবং ক্রমশ ব্যবহারের অনুপযোগি হচ্ছে;
৩)বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে সালফার ও নাইট্রোl8জেনের অক্সাইড ও ধুলোকণার ইমিশনের পরিমাণ সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি;
৪)আশপাশের ১৪ শতাংশ মানুষ বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে অ্যাজমা, এলার্জি, চর্মরোগ সহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। গবেষকদল নিকটস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসকের সাথে কথা বললে তারাও বলেছেন ২০০৬ সালে বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হওয়ার পর থেকে এইসকল অসুখ বেড়েছে।
৫) ফ্লাই অ্যাশের কারণে আশপাশের মাটির ক্ষারত্ব বেড়ে গেছে যা মাটিতে বসবাসকারী কেচোর জন্য ক্ষতিকর।
৬)৪৭.৩৬ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে ফসলের উৎপাদন হ্রাস, বাতাসে ও গাছের পাতায় ছাইয়ের উপস্থিতির কথা জানিয়েছেন। Click This Link
দ্বিতীয়ত, বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সঙ্গে প্রস্তাবিত রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তুলনা করাই সঠিক নয়। কারণ বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্র ছোট আকারের এবং বড়পুকুরিয়ার পাশে সুন্দরবনের মতো স্পর্শকাতর বনাঞ্চল নেই। বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা মাত্র ২৫০ মেগাওয়াট যার মধ্যে আবার কার্যত ১২৫ মেগাওয়াটের একটি ইউনিটই কেবল চালু থাকে। অথচ রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষমতা ১৩২০ মেগাওয়াট যা বড়পুকুরিয়ার কার্যকর (১২৫ মেগাওয়াট) বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার ১০ গুণেরও বেশি। ফলে বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ফলে যে ক্ষতি হয়েছে এবং হচ্ছে, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ফলে তার দশগুণেরও বেশি ক্ষতি হবে।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য: বড় পুকুরিয়ায় জমি উর্বর হচ্ছে, ফসলের ফলন বৃদ্ধি পেয়েছে।(বেগুন ক্ষেতে ছাই ছিটিয়ে জমি উর্বর করার উদাহরণ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী)
প্রকৃত তথ্য: প্রধানমন্ত্রী সম্ভবত কাঠ পুড়িয়ে তৈরী জৈব ছাই এবং খনিজ কয়লা পুড়িয়ে তৈরী ছাইয়ের পার্থক্য সম্পর্কে অবগত নন। কয়লা পুড়িয়ে তৈরী ছাই বিষাক্ত বলে এই ছাইয়ের মাধ্যমে জমি উর্বর করার চিন্তা বিপদজনক। ভারতের পরিবেশ মন্ত্রাণলয়ের এক্সপার্ট এপ্রাইজাল কমিটি গত ৬-৭ ডিসেম্বর ২০১০ এ কৃষি জমিতে ফ্লাই অ্যাশের ব্যবহারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বলে:
“Regarding use of Fly Ash in agriculture, the Committee also expressed its strong reservations considering that the available information is limited and not supported by long term scientific study. Considering that fly ash is reported to contain about 48 elements including radioactive elements and toxic heavy metals (in mild dose), the Committee advocated that unless scientific study rules out long term adverse health impacts, as such, this method of fly ash disposal shall not be resorted to.”
বড়পুকুরিয়া কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে ফসলের ফলন বাড়ছে কথাটি সঠিক নয়। সেখানকার বিদ্যুৎকেন্দ্রের দূষণের কারণে কয়েক আশপাশের কয়েক কিমি এলাকার নারিকেল গাছে এখন আর নারিকেল হয় না। বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে ভূগর্ভের পানি নীচে নেমে যাওয়ার কারণে পানি সংকট ও স্থানীয় জনগণের অসন্তোষের খবর প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর বরাবর বিশেষ সংস্থা থেকে চিঠি দিয়ে পর্যন্ত জানানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য: (বনাঞ্চলের ২৫ কিমি এর মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন না করা বিষয়ে ভারতের গাইড লাইন প্রসঙ্গে) “ভারতের মতো বিশাল দেশের সাথে তুলনা করা আমাদের খাটে না”
প্রকৃত তথ্য: কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের দূষণ কোন দেশের আয়তনের উপর নির্ভর করেনা অর্থাৎ দেশের আয়তন বড় হলে দূষণ বেশি হবে আর আয়তন কম হলে দূষণ কম হবে এরকম মনে করার কোন যুক্তি নেই। ফলে ভারতে ২৫ কিমি সীমার মধ্যে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র যদি নিরাপদ না হয় তাহলে বাংলাদেশ ছোট দেশ হওয়ার কারণে সেই কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নিরাপদ হয়ে যাবে- এটা কোন যুক্তি হতে পারেনা। বরং ভারতের তুলনায় বাংলাদেশে জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি ও বনাঞ্চল-নদী-কৃষি-জীবন-জীবিকা ইত্যাদি জালের মতো পরস্পরের ওতপ্রোত ভাবে জড়িত থাকার কারণে এখানে বরং ক্ষতি আরো বেশি হওয়ার কথা, সেই কারণে ভারত থেকে আরো বেশি সাবধান হওয়া দরকার।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য: পৃথিবীর বহু দেশে শহরের মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে যেগুলো থেকে কোন ক্ষতি হচ্ছে না(কয়েকটি দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রের ছবি প্রদর্শন)
প্রকৃত তথ্য: প্রধানমন্ত্রী ভারতের সাথে বাংলাদেশের তুলনা দিতে রাজী নন, কিন্তু কঠোর পরিবেশ আইন মেনে চলা হয় এরকম দেশের সাথে বাংলাদেশের তুলনা কিন্তু ঠিকই দিলেন। অথচ বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা হলো, যেসব দূষণ কারিগরি ভাবে নিয়ন্ত্রণযোগ্য সেগুলোও নিয়ন্ত্রণ করা হয় না যেকারণে বুড়িগঙ্গা শীতলক্ষা কর্ণফুলী নদীতে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ ঘনমিটার পানি পরিশোধণ না করেই ফেলা হয়। আরেকটা মুশকিল হলো বিদ্যুৎকেন্দ্রের ছবি দেখে বোঝার কোন উপায় নেই দূষণ হচ্ছে কি হচ্ছে না।
প্রধানমন্ত্রী নানান আশ্বাস দিলেন কিন্তু বাস্তবায়ন যারা করবে তারা কি এসব মনে রাখবে বা তিনি নিজে কি এই বিষয়টি দেখভাল করবেন?
©somewhere in net ltd.