নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি লেখালিখি করি, মনের মাধুরী মিশিয়ে
বাফা লেইকের ধার ঘেষে যে পর্বতগুলো আছে, তাতে ছাগল আর ভেড়া চড়াতো এন্ডিমিয়ন নামের এক রাখাল। সে ছিলো অতি সাধারণ একটি মানুষ। পর্বতগুলো'র পাথুরে জমিতে ছাগল চাড়ানো'র ফাঁকে বাঁশি বাজাতো এন্ডিমিয়ন। জীবনের চলার পথে এই বাঁশিটিই ছিলো তার একমাত্র বন্ধু ও সাথী। ব্যস্ত শহুরে জীবন ফেলে সেই পর্বতগুলোর কোলে এসে ঝর্ণাধারা, গাছ, পাখ-পাখালী'র গান তার বাঁশির সুরে ফুটে উঠতো।
শহর থেকে বিচ্ছিন্ন সে চারণভূমিতে তার বাঁশির আওয়াজ কেউ শুনতে পেতো না, শুধু চাঁদের আলো ছাড়া। চাঁদের দেবী সেলিন তাকে চুপি চুপি দেখতেন। এভাবে একদিন প্রেমে পড়ে গেলেন তার।
প্রতি রাতে এন্ডিমিয়ন যখন সবুজ ঘাসে ঘুমিয়ে পড়তো, তার উপর নিজেকে এলিয়ে দিতেন সেলিন। নিজের আলো দিয়ে জড়িয়ে ধরতেন তাকে, চুমু খেতেন এন্ডিমিয়নের ঘুমন্ত শরীরে।
এভাবেই চলছিলো প্রতি রাতেই। চাঁদ যখন আকাশের কোল ঘেষে জেগে উঠতো, সেলিন নেমে আসতেন মর্তে। প্রেমিকের অজান্তে তার পাশ ঘেষে শুয়ে তাকে আলিঙ্গন করতেন ভালবাসা ভরে।
একদিন ঘুম ভেঙ্গে গেলো এন্ডিমিয়নের। জেগে দেখতে পেলো দেবীকে। সে প্রথমে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু, যেখানেই সে যায়, চাঁদ তাকে অনুসরণ করে, সাথে দেবীও। একসময় ক্লান্ত হয়ে বসে পড়ে এন্ডিমিয়ন, মুচকি হেসে তার পাশে এসে বসলেন সেলিন। দেবী'র অপার সৌন্দর্যে বাধা পড়ে সে। ভালোবেসে ফেলে মন থেকে।
....
তদের এ ভালোবাসা স্বর্গের দেবতারা সুনজরে দেখতে পারলেন না। কারণ, তারা চান না কোন মানুষ অমর্ত্য সুধা পান করে অমর হয়ে যাক। কিন্তু, দেবতা জিউস ছিলেন ভিন্ন রকমের। তিনি সেলিন আর এন্ডিমিয়নের এই ভালোবাসাকে সমর্থন করলেন। তাই, তিনি একদিন নেমে আসলেন পৃথিবীতে।
এন্ডিমিয়নের সাথে সাক্ষাৎ করে বললেন, কি বর চাও তুমি?
এন্ডিমিয়ন বললো, আমাকে অমর ঘুম দিন।
দেবতা তাকে তা-ই দিলেন। সেই বরের কল্যাণেই পৃথিবী'র মানুষেরা আজো ঘুমের ঘোরে ভালো স্বপ্ন দেখে।
আর, এন্ডিমিয়নের কি হলো?
আজো দেবী সেলিন পৃথিবী'র বুকে নেমে আসেন। প্রেমাস্পদের চীর ঘুমন্ত শরীর কোলে নিয়ে সারা রাত কাটিয়ে দেন। পাইনের পাতাগুলো ঝড়ে পড়ে ঢেকে দেয় তাদের সারা শরীর। পর্বতের ফাঁকে ফাঁকে ধ্বনিত হয়ে ফিরে আসে এন্ডিমিয়নের একাকী বাঁশির সুর!
(গ্রীক পূরাণ অবলম্বনে)
©somewhere in net ltd.