নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অন্যদের সেভাবেই দেখি, নিজেকে যেভাবে দেখতে চাই। যারা জীবনকে উপভোগ করতে চান, আমি তাঁদের একজন। সহজ-সরল চিন্তা-ভাবনা করার চেষ্টা করি। আর, খুব ভালো আইডিয়া দিতে পারি।

সত্যপথিক শাইয়্যান

আমি লেখালিখি করি, মনের মাধুরী মিশিয়ে

সত্যপথিক শাইয়্যান › বিস্তারিত পোস্টঃ

শুদ্ধি অভিযানএকটি দূর্নীতি ধরার সফটওয়্যার

২১ শে আগস্ট, ২০২৪ রাত ১:২৮



বার্লিনভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) দুর্নীতির ধারণাসূচক ২০২৩-এ ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০ম। ২০২২ সালে বাংলাদেশ ১২-তম অবস্থানে ছিলো। অর্থাৎ, এক্ষেত্রে আমাদের দেশের অবস্থানের অবনতি হয়েছে। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির গবেষণায় উঠে এসেছে, ১৯৭২-৭৩ থেকে ২০২২-২৩ অর্থ বছর পর্যন্ত ৫০ বছরে দেশে পুঞ্জীভূত মোট কালো টাকার পরিমাণ ছিলো ১ কোটি ৩২ লাখ ৫৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এই যখন অবস্থা, তখন প্রশ্ন আসছে, এতো বিপুল পরিমাণ টাকা কোথায় আছে? এই টাকা কি শুধু ব্যাংকে জমা আছে, নাকি অন্য কোন সম্পদ, যেমন – বাড়ি, গাড়ি, ব্যবসা ইত্যাদিতে বিনিয়োগ অবস্থায় আছে? সে যা-ই হোক, কালো টাকাকে যেহেতু ট্রেইস করা গিয়েছে, সেগুলো কি অবস্থায় আছে তা জানার জন্যে আমরা যদি একটি সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারি, তাহলে হয়তো দূর্নীতি কমে আসবে। এরকম একটি সফটওয়্যারের ধারণা দিবো আমার আজকের লেখায়। চলুন, এই সফটওয়্যারের নাম দেওয়া যাক – ‘শুদ্ধি অভিযান’।

বাংলাদেশে কালো টাকার মালিক কারা সেটা নিয়ে একটু চিন্তা করলে দেখা যাবে, হয় আমাদের দেশের কেউ সেই টাকার মালিক, অথবা বিদেশী কোন ব্যক্তি। এই দুই জাতের মানুষ আমাদের দেশে অবস্থান করছেন। এখন, কালো টাকার মালিক সেই ব্যক্তিরা সেই সম্পদ নিয়ে কি করতে পারেন তা নিয়ে চিন্তা করি। একটু ভাবলেই বলে দেওয়া যায় যে, এই কালো সম্পদের মালিকগণ তাদের সম্পদ দিয়ে নিচের কাজগুলো করেন –

১) ফিক্সড ডিপোজিট এবং ব্যাংকে ক্যাশ ডিপোজিট,
২) নিজের বা পরিবারের নামে জমি কেনা,
৩) নিজের বা পরিবারের জন্যে গাড়ি কেনা,
৪) নিজের বা পরিবারের জন্যে বিল্ডিং বানানো বা কেনা,
৫) দেশীয় ব্যাংকিং চ্যানেল বা হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশী ব্যাংকে বা প্রতিষ্ঠানে টাকা পাঠানো,
৬) দেশের বা আন্তজার্তিক কোন ব্যবসায় বিনিয়োগ,
৭) টেন্ডার, ব্যাবসা বা অন্য কাজ পেতে ঘুষ দিতে,
8) নিজের এবং পরিবারের খাবার, পোশাক, ঔষধ ইত্যাদি কিনতে।

এখন, সরকারের উপযুক্ত ব্যাক্তিবর্গের কাছে যদি এমন একটি সফটওয়্যার থাকে যেখানে আমাদের দেশের জনগণের এবং দেশে অবস্থাকারী বিদেশীদের প্রধান প্রধান আয় – ব্যায়ের হিসাবের ডাটা মজুদ থাকবে, এবং সেই ডাটা আমাদের জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্টের মাধ্যমে সংযুক্ত হবে, তাহলে, দূর্নীতি ধরা সহজ হতে পারে। এখন, আরেকটু গভীরে যাওয়া যাক। এই ‘ শুদ্ধি অভিযান’ সফটওয়্যারটি কিভাবে কাজ করবে তা নিয়ে আরেকটু আলোচনা করি।



১) ফিক্সড ডিপোজিট এবং ব্যাংকে ক্যাশ ডিপোজিটের তথ্যঃ

ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট বা ক্যাশ ডিপোজিট করতে গেলে ব্যাংকের সফটওয়্যারে এন্ট্রি দিতে হয়। এই এন্ট্রি দেওয়ার সময়ে সোর্স অব ইনকাম লেখা অংশটি প্রায়ই খালি রাখা হয়। এখন, বাংলাদেশে অবস্থানকারী দেশী-বিদেশী একাউন্টহোল্ডাররা যত টাকা ব্যাংকে জমা দিবেন, সেই তথ্য যদি শুদ্ধি অভিযান সফটওয়্যারে কানেক্টেড থাকে, তাহলে, সহজেই সবার আয় – ব্যয়ের হিসাব স্বচ্ছ থাকবে।
কোন একাউন্টে কত টাকা আছে, সেই টাকা কোন একাউন্টে যাচ্ছে বা কখন, কোথা থেকে ক্যাশ হচ্ছে, কোন কাজে ক্যাশ হচ্ছে, এইসব তথ্য একটি ব্যাংকের কাছে থাকা উচিৎ। সেই তথ্য ব্যবহার করে হয়তো ন্যাশনাল বোর্ড অব রেভিনিউর চেয়ারম্যান জানতে চাইলেন যে, এই বছরের ট্যাক্স রিটার্নের তথ্যের সাথে ব্যাংকে ক্যাশ ডিপোজিটের তথ্য ঠিক আছে কি না, শুদ্ধি অভিযান সেই তথ্য তুলে ধরবে।

২) নিজের বা পরিবারের নামে জমি কেনার তথ্যঃ

শুদ্ধি অভিযান সফটওয়্যারে আমাদের ভূমিতে যত জমি কেন-বেচা হয় সেটার তথ্য জমা থাকবে। কেউ যখন কোন জমি কিনেন, তখন কি হয়? জমির ক্রেতা-বিক্রেতা নিজেদের ব্যাংক একাউন্ট থেকে আরেকটি ব্যাংক একাউন্টে ক্যাশ হস্তান্তর করে থাকেন অথবা নগদে কিনে থাকেন। নগদে কিনলেও তা কোন না ব্যাংক থেকে উঠানো বা জমা দেওয়া হয়। সেই সাথে, জমির দলিল লেখা হয়, সেই ডাটা অনলাইনে রেখে দেওয়া হয়। প্রতি বছরে, খাজনা দেওয়ার সময়ে ক্যাশ ট্রাঞ্জাকশন হয়, সেই ডাটাও কোন না কোন জায়গায় মজুদ থাকে। জমি ভরাট করা লাগলে মাটি বা বালু কেনা হয়। এইক্ষেত্রেও, টাকা লেন-দেন হয়ে থাকে যেসবের ডাটা কোন না কোন জায়গায় রেখে দেওয়া হয়।

এই কাজগুলোতে যারা করেন তারা হচ্ছেন –
১) সরকারী প্রতিষ্ঠান, ২) ক্রেতা, ৩) বিক্রেতা, ৪) ব্যাংক ৫) মিডলম্যান, ৬) রিইয়েল এস্টেট কোম্পানী, ৭) মাটি, বালু, ইট, রড, স্টিল, টিন, ইলেকট্রিক, ইলেক্ট্রনিক্স ইত্যাদি কোম্পানি।

লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, উপরের সোর্সগুলো হয় নিজের বা পরিবারের ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে নাহয় প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে টাকা লেনা-দেনা করেন। আর, সেই জন্যে এই একাউন্টগুলো ‘শুদ্ধি অভিযান’ সফটওয়্যারের সাথে সংযুক্ত করে রাখতে হবে। সেই সাথে, কার কয়টা জমি আছে, সেগুলোর পরিমাণ এবং কোন জায়গাতে আছে সেই তথ্যও যংযুক্ত থাকবে।



৩) নিজের বা পরিবারের জন্যে গাড়ি কেনার তথ্যঃ

কালো টাকা দিয়ে অনেক সময়ে নিজের বা পরিবারের বা প্রতিষ্ঠানের জন্যে গাড়ি কেনা হয়। গাড়ি কেনার সময়ে কি হয়ে থাকে? কোন ব্যাংক থেকে ক্যাশ নিয়ে গাড়ির দাম মেটানো হয়। আবার গাড়ির বিক্রেতা সেই টাকা কোন না কোন ব্যাংকে রাখেন। তারপরে, দুই পক্ষের মাঝে ডকুমেন্টেস আদান-প্রদা হয় এবং গাড়ির রেজিস্ট্রেশনের জন্যে প্রয়োজনীয় ডাটা অনলাইনে রেখে দেওয়া হয়। এসব কাজে মূলতঃ যারা সংযুক্ত থাকেন – ১) সরকারী প্রতিষ্ঠান, ২) ক্রেতা, ৩) ব্যক্তি মালিকানার বিক্রেতা বা গাড়ির ডিলার কোম্পানি, ৪) ব্যাংক, ৫) মিডিলম্যান।
এই কাজে সংযুক্ত সবার ব্যাংক একাউন্টের তথ্য ‘শুদ্ধি অভিযান’ সফটওয়্যারে রাখতে হবে। সেই সাথে কার কয়টা গাড়ি আছে, কোন মডেলের গাড়ি আছে, সেই তথ্যও রাখতে হবে।


৪) নিজের বা পরিবারের জন্যে বিল্ডিং বানানো বা কেনার তথ্যঃ

কালো টাকা দিয়ে এপার্টমেন্ট বা বিল্ডিং কেনা অথবা বানানোর জন্যে ব্যবহার হয়ে থাকে। এই তথ্য জানার জন্যে আমাদেরকে এই কাজের সাথে সংযুক্ত পুরো ‘ওয়ার্ক ফ্লো’ জানতে হবে। বিল্ডিং বা এপার্টমেন্ট কেনা-বেচার সময়ে কি হয়ে থাকে? এক বা একাধিক ব্যাংক থেকে ক্যাশ লেন-দেন হয়। বিল্ডিং বা এপার্টমেন্টের রেজিস্ট্রেশন হওয়ার সময়ে সেই তথ্য জমা রাখা হয়। এখন, এই কাজগুলোর সাথে সংযুক্ত সবার তথ্য যদি শুদ্ধি অভিযান সফটওয়্যারে সংযুক্ত করা হয়, তাহলে, এক ক্লিকে সমস্ত তথ্য জানা সম্ভব হবে।

৫) হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানোর তথ্যঃ

হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাঠাতে হলে কি করতে হয়, তা প্রথমেই জানতে হবে। বাংলাদেশের কোন ব্যক্তি বিদেশে হুন্ডি করে অর্থ পাচার করতে চাইলে, প্রথমেই বিদেশের কোন এক ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করা হয়। সেই বিদেশে থাকা ব্যক্তির ব্যাংকে একাউন্টে তা পাঠানো হয় বাংলাদেশের ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করেই। এখন, দুই পক্ষের ব্যাংক একাউন্টের তথ্য ট্রেইস করা সম্ভব যদি দেশে থাকা ব্যক্তির যাবতীয় তথ্য ‘শুদ্ধি অভিযান’ সফটওয়্যারে থাকে।

এভাবে, একটি ন্যাশনাল অর্থনৈতিক ডাটাবেস তৈরী হয়ে যাবে। যখনই কেউ কোন অবৈধ কাজ করবে, তা দেশে বাড়ী/গাড়ি কেনা হোক কি দেশের বাইরে অর্থ পাচার, এই সফটওয়্যার এলার্মের মাধ্যমে বা ইমেইলের মাধ্যমে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষকে সফটওয়্যার করে দিবে। ধরুন, দেশের প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী চাইলেন যে, ওমুক ন্যাশনাল আইডি নাম্বারের ২০২৪ সালে কতগুলো গাড়ি আছে, কোন মডেলের গাড়ি আছে কিংবা কোন নাম্বারের গাড়ি আছে, সাথে সাথে শুদ্ধি অভিযান সেই তথ্য জানিয়ে দিবে। এনবিআর-এর চেয়ারম্যান হয়তো জানতে চাইবেন, কোন ন্যাশনাল আইডি নাম্বারের ট্যাক্স রিটার্নের তথ্য আসলেই ঠিক কি না, শুধু অভিযান কয়েক সেকেন্ডে সেই তথ্য জানিয়ে দিবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের চেয়ারম্যান হয়তো জানতে চাইবেন, কোন ব্যাংক একাউন্ট থেকে কত টাকা কোন বিদেশী একাউন্টে পাঠানো হলো, তখন সেখানে গড়বড় থাকলে সাথে সাথে ‘শুধু অভিযান’ সেই তথ্য জানিয়ে দিতে পারবে। এভাবে, একটি সফটওয়্যার বানানো গেলে মন্দ হয় না!




লেখকঃ আই,টি উদ্যোক্তা,
ইমেইলঃ [email protected]

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে আগস্ট, ২০২৪ রাত ১:৩৭

সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:




বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ ছবিগুলো আমার তোলা।

২| ২১ শে আগস্ট, ২০২৪ ভোর ৪:৩৫

কামাল১৮ বলেছেন: এই দায়িত্বটা আপনাকে দিলেই ভালো হয়।ব্লগে একমাত্র আপনি আইটি এক্সপার্ট।তাছাড়া আপনার দলই ক্ষমতায়।কে যেন নাম জমায়েতে ইসলাম।

২৮ শে আগস্ট, ২০২৪ দুপুর ১:৪৬

সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:




মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ।

৩| ২১ শে আগস্ট, ২০২৪ বিকাল ৫:০৯

ইমরান৯২ বলেছেন: খুবই ভাল আইডিয়া , এমনটা করা গেলে খুবই ভাল হতো ।

২৮ শে আগস্ট, ২০২৪ দুপুর ১:৪৬

সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:



আমি করার চেষ্টা করবো।

ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.