নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি লেখালিখি করি, মনের মাধুরী মিশিয়ে
অঞ্জু মামা। আমার মায়ের আপন খালাতো ভাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স পাস। প্রচুর বই পড়তেন। সেই বই পড়তে গিয়েই তাঁর মাথা আউলা হয়ে গেলো। একদিন অদ্ভুত অদ্ভুত কাজ করা শুরু করলেন। হুমায়ুন আহমেদের হিমু'র ভক্ত ছিলেন, মনে হয়।
অঞ্জু মামা নিজের বড় ভাইয়ের সাথে মালিবাগে নিজ বাসায় থাকতেন। একদিন আমাদের কাছে খবর আসলো, অঞ্জু মামা বাথরুমে খাট পেতে ঘুমানো শুরু করেছেন! মামাদের বাসার বাথরুম অনেক বড় ছিলো। সেখানেই কোনক্রমে খাট পেতে তিনি বই পড়েন, সেখানেই তাঁকে খাবার দেওয়া হয়। সে এক হুলস্থূল ব্যাপার!
হাঁটতে পছন্দ করতেন অঞ্জু মামা। সারা ঢাকা শহর হেঁটে বেড়াতেন। কখনো কখনো কোন আত্মীয়ের বাসায় উপস্থিত হয়ে কোন না কোন কাণ্ড ঘটিয়ে বসতেন। সেজন্যে, আত্মীয়রা তাঁকে দূরে সরিয়ে রাখতেন। তবে, আমরা ভাগনারা তাঁর খুব আপন ছিলাম। তাঁকে অনুসরণ করার চেষ্টা করতাম।
মামা ক্যারাটে'র ব্ল্যাক বেল্ট ছিলেন। ইয়োগা মাস্টার হিসেবে খুব নামডাক ছিলো। মানুষকে ফ্রি শিখাতেন। আমি একদিন মামাকে বললাম যে, আমি তাঁর কাছে ইয়োগা শিখতে চাই। তিনি রাজি হয়ে গেলেন। তবে, শর্ত, প্রতিটি সেশনের পরে তাঁকে ভাত খাওয়াতে হবে। আর, রোজ ২ মাইল তাঁর সাথে হাঁটতে হবে। আমি তাঁর শর্তে 'হ্যাঁ' বলে দিলাম।
মামা'র সাথে হাঁটা আমার ডেইলি রুটিনের অংশ হয়ে গেলো। প্রতিদিন ইয়োগা শেষে আমরা পান্থপথে তাঁর বাসা থেকে হাঁটা শুরু করে গ্রিনরোড হয়ে সায়েন্স ল্যাবোরেটরীর উপর দিয়ে ধানমন্ডির ভিতর ঢুঁ মেরে মোহাম্মদপুর এলাকায় আমাদের সফর শেষ করতাম।
তখন ১৯৯৬/৯৭ সাল। আমি তখন ইন্টারমিডিয়েট ১ম বর্ষের ছাত্র। এক বছরের মাঝে পুরোপুরি অঞ্জু মামার সাগরেদ হয়ে গিয়েছি। ঢাকা শহর তখন এতোটা ময়লা ছিলো না। মানুষজনও কম ছিলো। বাড়িঘর দিয়ে এখনকার মতো এতো ঘিঞ্জি ভরা ছিলো না। বেশ ভালোই চলছিলো আমার দিনকাল। মাঝে মাঝে কলেজ ফাঁকি দিয়ে মামার বাসায় ইয়গা শেষ করে রাস্তায় নেমে পড়তাম। মামা আগে আগে, আমি পিছনে তাঁকে অনুসরণ করতাম।
কিন্তু, বিধি বাম। আমার কলেজ ফাঁকি দেওয়ার কথা একদিন আব্বু-আম্মুর কাছে ফাঁস হয়ে গেলো। আমি বাংলাদেশ রাইফেলস কলেজের ছাত্র ছিলাম। পরীক্ষায় খারাপ করায় আমাকে কলেজ থেকে বের করে দেওয়া হলো। আব্বু-আম্মু খুব রাগ করলেন। মামার বাসায় যাওয়া আমার বন্ধ হয়ে গেলো।
এক বছর পরে খবর এলো, অঞ্জু মামা মারা গিয়েছেন। কোন এক অফিসে কর্মকর্তার ঘুষের প্রতিবাদ করায় তাঁকে খুব মার দেওয়া হয়। মামা বুঝি সেই কর্মকর্তাকে ক্যারাটে কিক মেরে মাটিতে ধরাশায়ী করেছিলেন। যদিও হিমু কখনো মারামারি করেছে বলে পড়ি নাই!
সেই অফিসে মামাকে বেদম মার দেওয়া হয়। হাসপাতালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন আমাদের অঞ্জু মামা।
৩০ শে আগস্ট, ২০২৪ বিকাল ৫:১৫
সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:
কষ্ট পাওয়ার মতো ঘটনা। ধন্যবাদ।
২| ৩০ শে আগস্ট, ২০২৪ দুপুর ১:১২
রানার ব্লগ বলেছেন: মোরাল অব দ্যা স্টরি কি ? ইয়গা বা কারাটে শেখার একটাই ফলাফল - মৃত্যু !
৩০ শে আগস্ট, ২০২৪ দুপুর ২:১৬
সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:
আমাদের পৃথিবীতে মানুষ মিথ্যা স্টোরি থেকে মোরাল নেয়। যেমন - ইশপের গল্প।
সত্য ঘটনা থেকে সব মানুষ মোরাল নিতে পারে না। এটাই সত্যি!!!
ধন্যবাদ।
৩| ৩০ শে আগস্ট, ২০২৪ দুপুর ১:১৩
আমি সাজিদ বলেছেন: হিমু বাস্তবে হওয়া সম্ভব না। যাই হোক, আপনার মামার জন্য কষ্ট পেলাম।
চমৎকার একটা আসন করলেন, আপনি বোধ করি আপনার বয়সী বন্ধুদের সার্কেলে সবচেয়ে ফিট।
আমাদের মডুভাইকেও ইয়োগা শেখান।
৩০ শে আগস্ট, ২০২৪ বিকাল ৫:১৬
সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:
আমার পেটে বড় একটা অপারেশন হওয়ার পর থেকে বেশির ভাগ আসন দিতে পারি না।
তাই, মুটিয়ে গিয়েছি।
শুভেচ্ছা নিরন্তর।
৪| ৩০ শে আগস্ট, ২০২৪ দুপুর ১:৫২
আপেক্ষিক বলেছেন: অনেক দুঃখ পেলাম ভাই। অন্যায়ের বিরুদ্ধে তার অবস্থান তাকে মৃত্যুর পর ভাল জায়গায় রাখুক স্রষ্টা সেই কামনা করি। সেই ঘুষ খোরের কি বিচার হয়েছিল পরে? কবের ঘটনা এটা?
৩০ শে আগস্ট, ২০২৪ বিকাল ৫:১৭
সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:
প্রায় ৩০ বছর আগের ঘটনা।
তবু আমার মনে আছে।
ধন্যবাদ।
৫| ৩০ শে আগস্ট, ২০২৪ বিকাল ৪:০৫
নতুন নকিব বলেছেন:
কোন অফিস ছিল সেটা? কারা কারা মার দিয়েছিল আপনার মামাকে? খুঁজে বের করা সম্ভব?
৩০ শে আগস্ট, ২০২৪ বিকাল ৫:১৮
সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:
খুঁজে বের করা সম্ভব।
ধন্যবাদ নিরন্তর।
৬| ৩০ শে আগস্ট, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫
মামুinসামু বলেছেন: আর্টসেল এর এরশাদকে চিনতেন?
৩০ শে আগস্ট, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১১
সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:
এরশাদ ব্যান্ডের ফাউন্ডিং মেম্বার।
কেন জানতে পারি, প্লিজ?
ধন্যবাদ।
৭| ৩০ শে আগস্ট, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬
মামুinসামু বলেছেন: সেও ওই সময়ে আপনার কলেজেরই ছাত্র ছিল। তাই জিজ্ঞেস করলাম। Happy Blogging
৩০ শে আগস্ট, ২০২৪ রাত ১০:২৯
সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:
বাহ! তাহলে উনি মিয়া মোহাম্মদ মোনিরুজ্জামান স্যারকে চিনবেন।
ধন্যবাদ নিরন্তর।
৮| ৩০ শে আগস্ট, ২০২৪ রাত ৯:৩৪
রাজীব নুর বলেছেন: দুঃখ লাগলো।
বেশ দুঃখ।
আপনি কেমন আছেন? জীবনযাপন কেমন হচ্ছে?
৩০ শে আগস্ট, ২০২৪ রাত ১০:৩০
সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:
জী, খুব দুঃখের ঘটনা।
আমি ভালো আছি। ব্লগে আপনাকে দেখে খুব আনন্দ লাগছে।
শুভেচ্ছা নিরন্তর।
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে আগস্ট, ২০২৪ দুপুর ১:১০
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
কষ্ট পেলাম।