নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অন্যদের সেভাবেই দেখি, নিজেকে যেভাবে দেখতে চাই। যারা জীবনকে উপভোগ করতে চান, আমি তাঁদের একজন। সহজ-সরল চিন্তা-ভাবনা করার চেষ্টা করি। আর, খুব ভালো আইডিয়া দিতে পারি।

সত্যপথিক শাইয়্যান

আমার কাছে অনেক আইডিয়া আছে এবং আমি তা ব্লগে এপ্লাই করি! জানেনই তো, পৃথিবীর সব কিছুর মূলে রয়েছে আইডিয়া!

সত্যপথিক শাইয়্যান › বিস্তারিত পোস্টঃ

আবারও বঙ্গবন্ধু

২৯ শে অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১:৩৬

অঙ্ক–১ | পর্ব–৫: তিনটি আয়না


শিক্ষক

সকাল আটটা।
ঢাকার উপকণ্ঠে এক প্রাইমারি স্কুল। টিনের ছাদ, দেয়ালে খসে পড়া রং, তবু ছেলেমেয়েদের হাসি দূর থেকে শোনা যাচ্ছে, জোরে। শিক্ষক করিম স্যার টেবিলে বসে রেজিস্টার লিখছেন। ক্লাসে আজ অদ্ভুত নীরবতা।
বাচ্চারা আঁকছে— কিন্তু কেউ হাসছে না।

করিম স্যার বললেন,
—কী হলো? আঁকা মানে তো আনন্দ!
এক বাচ্চা বলল,
—স্যার, দেশ আঁকতে গেলে জায়গা পাই না।
করিম স্যার একটু হেসে মাথা নাড়লেন।
—তাহলে ছোট করে আঁকো।

ঠিক তখন বাতাস কেঁপে উঠল। জানালার কাচে নীল আলো ঝলকে উঠল।
করিম স্যার থমকে গেলেন।
“তুমি এখনো শেখাও?”
স্বরটা অচেনা, তবু পরিচিত।
—কে? কে বলছে?
“আমি বাতাস। আমি একসময় মানুষ ছিলাম। তোমার মতো শিক্ষকও আমার অনেক ছিল।”

করিম স্যার গলা শুকিয়ে গেলো। তিনি বললেন,
—আপনি... আপনি কি...?
“হ্যাঁ, যে একসময় তোমাদের স্বাধীনতার পাঠ পড়াত।”
করিম স্যার চেয়ারে বসে পড়লেন। কণ্ঠে কাঁপুনি—
—আপনি কি বঙ্গবন্ধু?
“আমি তো কেবল স্মৃতি। তবে স্মৃতিও কখনো শিক্ষক হয়।”
তিনি বললেন,
“তুমি এখন কী শেখাও, করিম?”
—বাংলা, স্যার।
“ছাত্রদের ক’জন বাংলা বোঝে?”
করিম স্যার চুপ। জানালার বাইরে বাচ্চারা কচি গলায় গান ধরেছে— “আমার সোনার বাংলা...”

কণ্ঠটা হাসল, নরম স্বরে বলল,
“তাদের শেখাও - দেশ মানে কবিতা নয়, দেশ অর্থ মানুষ।”
করিম স্যার চোখ মুছলেন।
—আমি চেষ্টা করি, স্যার। কিন্তু বইয়ে মানুষ শেখানো যায় না।
“তাই আমি বই হয়ে ফিরিনি। আমি বাতাস হয়ে ফিরেছি।”

বাইরে হঠাৎ বৃষ্টি নামল। ছেলেরা হইচই করে উঠল। করিম স্যার উঠে চৌকাঠে দাঁড়ালেন। বৃষ্টির মধ্যে যেন দেখা গেল একটা ছায়া— একজন মানুষ, হালকা হাসি মুখে।

ডাক্তার

দুপুর। মগবাজারের পুরনো ক্লিনিক। ডাক্তার তাহমিনা বসে আছেন ডেস্কে, সামনে রোগীর লম্বা লাইন।
এক বৃদ্ধা কাঁপতে কাঁপতে ঢুকলেন।

—মা, ওষুধের টাকা নাই। শুধু প্রেসক্রিপশন দাও।
তাহমিনা ক্লান্ত কণ্ঠে বললেন,
—আম্মা, নিয়ম আছে, ফি দিতে হয়।
বৃদ্ধা চলে যাচ্ছেন, হঠাৎ বাতাসে কাগজ উড়ে ডেস্কে এসে পড়ল— প্রেসক্রিপশন প্যাড।
তাতে অদ্ভুতভাবে লেখা—
“মানুষের খবর নাও আগে।”
তাহমিনা অবাক।

কোথা থেকে যেন এক কণ্ঠ—
“ডাক্তারি মানে শুধু লেখা নয়, শোনা।”
তাহমিনা চারদিকে তাকালেন। কেউ নেই।
—আপনি কে?
“যাকে মৃত বলেছিলে, সে এখন তোমার স্টেথোস্কোপের ভেতরে।”
তাহমিনা টেবিলের ওপর হাত রাখলেন। হালকা কম্পন।

“তুমি কি জানো, রোগের শুরু শরীরে নয়, একাকিত্বে?”
তাহমিনার চোখে জল এলো।
—আমি জানি, স্যার। কিন্তু সময় পাই না।
“সময় বানাতে হয়, যেমন ডাক্তার প্রাণ বাঁচায়।”

তিনি গভীর নিশ্বাস নিলেন।
বৃদ্ধাকে ডেকে বললেন,
—আম্মা, আপনি বসেন। আজ ফি লাগবে না।
বৃদ্ধা অবাক চোখে তাকালেন।
তাহমিনা বললেন,
—আমি আজ শুনব, লিখব না।
বৃদ্ধা হাসলেন।
বাইরে সূর্যের আলোয় এক মৃদু নীল আভা— যেন জানালা দিয়ে অদৃশ্য হাত আশীর্বাদ দিচ্ছে।

বিচারক

সন্ধ্যা। পুরনো আদালত ভবন। বিচারক সাবির হোসেন ফাইল উল্টাচ্ছেন।
আজকের মামলাগুলো— ঘুষ, দুর্নীতি, প্রতারণা।
সব প্রমাণ পরিষ্কার, কিন্তু অভিযুক্তদের সবাই ক্ষমতাবান।

তিনি কলম তুললেন, কিন্তু হাত কাঁপছে। ঠিক তখন বাতাসে কাগজ উল্টে গেল। একটা খালি পৃষ্ঠা সামনে এসে থামল।
তার ওপর অদৃশ্য হরফে লেখা উঠল—
“বিচার শুরু করো নিজের থেকে।”
সাবির সাহেব চোখ মেললেন। কেউ নেই।
হঠাৎ গভীর এক কণ্ঠ—
“তুমি এখনো ভয় পাও?”
—আপনি কে?
“যে ভয়কে চেনে বেঁচে ছিল, সেই মানুষ।”
সাবির নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে এলো।

“তুমি কি জানো, আইন লিখে ভয় মরে না। ভয় মরে, যখন বিবেক জেগে ওঠে।”
তিনি ফাইল বন্ধ করলেন। কাঁপা গলায় বললেন,
—তাহলে আমি কী লিখব?
“সত্য।”
—কিন্তু সত্য মানে বিপদ।
“বিপদ মানেই সাহসের দরজা। ওটা খুলে দাও।”
সাবির উঠে দাঁড়ালেন।

ঘরের দেয়ালে বঙ্গবন্ধুর পুরনো ছবি।
তিনি ছবিটার দিকে তাকিয়ে বললেন,
—স্যার, আজ থেকে আমি ভয় পাব না।
বাইরে হালকা বৃষ্টি শুরু হলো। ফাইলের ভেতরের কাগজে একটা অদ্ভুত শব্দ— যেন কেউ লিখে গেছে,
“বিচার মানে ভয়হীনতা।”

তিন আয়নার মিলন

রাত। ঢাকার তিন প্রান্তে একসঙ্গে তিনটি ঘটনা।
করিম স্যার ছাত্রদের সঙ্গে গান ধরেছেন। তাহমিনা বৃদ্ধার ওষুধ হাতে হাসছেন। বিচারক সাবির নিজের হাতের লেখা দেখে গভীর চিন্তায়।
ঠিক তখন বাতাসে একই কণ্ঠ তিন জায়গায় একসাথে—
“তোমরা আমার আয়না। আমি তোমাদের মুখে নিজের প্রতিবিম্ব দেখি।”

করিম স্যার চেয়ে দেখলেন, ক্লাসরুমে টিনের ফাঁক দিয়ে নীল আলো ঢুকছে।
তাহমিনা বুঝলেন, বৃদ্ধা চলে গিয়েছেন। প্যাডে পড়ে আছে এক লাইন—
“মানুষের চিকিৎসা শুরু হয় কান পেতে শোনা থেকে।”
সাবির সাহেব দেখলেন, তাঁর ডেস্কে রাখা পাথরটা নিজে নিজে নড়ছে, যেন কোনো প্রতিজ্ঞার সিল।

বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠ একসঙ্গে তিনজনের কানে—
“দেশ মানে এক বিশাল আয়না। কেউ হাসলে আলো পড়ে, কেউ কাঁদলে ছায়া হয়। তোমরা যদি আলো করো, দেশ নিজেই সুন্দর হবে।”

বাইরে তখন পূর্ণিমার আলো।
রাফি, দূরে নদীর ধারে দাঁড়িয়ে, ক্যামেরায় তিন জায়গার দৃশ্য দেখছে যেন লাইভ ফিডে— শিক্ষক, ডাক্তার, বিচারক।
তার চোখে জল, ঠোঁটে হাসি।
“স্যার, এটা কি শুরু?”
“না রে, এটা চর্চা। মুক্তি কোনো বিপ্লব নয়— অভ্যাস।”

রাতের বার্তা

রাফি বাসায় ফিরে দেখল টেবিলের ওপর একটা খাম।
তাতে লেখা— “মানুষ দিয়ে দেশ গড়ার কর্মপরিকল্পনা— পর্যায় ১ সম্পন্ন।”
ভেতরে একটা পাতলা নোট—
“প্রত্যেক বিকৃতি একটা আয়না চায়, আর প্রত্যেক আয়না একেকটি মানুষ।”
রাফি চুপ করে বসে রইল।

বাইরে বৃষ্টির শব্দ, বাতাসে গন্ধ— যেন ধানক্ষেতের।
সে জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়াল।
“স্যার, আপনি আছেন?”
“আছি। কিন্তু শোনার সময় তোমার।”
রাফি বলল,
—দেশ কি সত্যিই পাল্টাবে?
“পাল্টাবে, যদি মানুষ নিজের মুখ চিনতে শেখে।”
—তাহলে আজ থেকে আমরা আয়না খুঁজব।
“না, আয়না নয়— মানুষ।”

বাতাস থেমে গেল। ঘর নিস্তব্ধ।
রাফি টেবিলের কাগজে লিখল—
“শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিচার— এ তিনে মানুষ বাঁচে।”
বাইরে হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকালো। জানালায় নীল আলো পড়ল, কিন্তু এবার ভয় নয়— এক শান্ত জ্যোতি।

বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠ শেষবার ভেসে এল—
“তুমি লিখে যাও, রাফি। ইতিহাস শুরু হয় একজন মানুষের সাহস থেকে।”
রাফি কলম নামাল।
বৃষ্টি থেমে গেছে, তবু জানালার কাচে এখনো জল গড়িয়ে পড়ছে—
যেন অশরীরীর নিঃশ্বাসের ছোঁয়া।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৩:৪২

মীর সাখওয়াত হোসেন বলেছেন: আওয়ামীলীগ প্রথম গুম এর শিকার ছিলেন জহির রায়হান ও মুনির চৌধুরী যার কোন বিচার না হওয়াতে ওরা আরও অপকর্ম করার সাহস পায় ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.