![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষ হতে চেয়ে কি যে হচ্ছি তা নিজেও জানিনা
সাব্বির মারাত্নক রেগে আছে। সে গত এক বছর ধরে চরকি কেটে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস থেকে নিজের ডিপার্টমেন্ট এ। এক এক দিন এক এক রকমের অজুহাত বাহানা দেখিয়ে সময় অতিক্রম করে চলেছে তারা। অবশ্য সাব্বিরেরও যে কোন ভুল ভ্রান্তি নেই তা নয়। সে পরীক্ষার আবেদন পত্রে ভুল কিছু তথ্য দিয়েছে। আসলে যখন সে ফর্ম ফিলাপ করেছিল তখন ঠিক ধাতস্থ অবস্থায় ছিলোনা। নেশার ঘোরে যে সে ফর্ম ফিলাপ করতে পেরেছে তাই অনেক বেশি। এখন পরিক্ষা নিয়ন্ত্রক থেকে স্পেশাল পরীক্ষার পারমিশন দিয়ে দেওয়া হয়েছে কিন্তু সময় ক্ষেপন করছে এখন নিজ ডিপার্টমেন্ট। পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান বলছেন তার কাছে আলাদাভাবে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক থেকে চিঠি যেতে হবে। পরীক্ষ নিয়ন্ত্রকের কাছে গেলে তিনি বলছেন এমন কোন আলাদা চিঠি দেওয়ার রেওয়াজ নাই। সাব্বির পরে গিয়েছে মহা ধন্ধের মধ্যে। সে লিস্ট করা শুরু করেছে প্রফেসরদের নাম। যারা তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবন নরক বানিয়ে ছেড়েছে। এদের প্রত্যেকের বাসার ঠিকানা জোগাড় করতে হবে। তারপর সিনিয়র দিয়ে শুরু করে জুনিয়র প্রফেসরে এসে সে তার সমস্ত হতাশা, ক্রোধ, স্বপ্ন ভাংার দুঃস্বপ্ন সব পূরন করবে। ধীরে ধীরে প্রত্যেকটা প্রফেসরের জীবন দোযখ বানাবে সে। শায়েত্তশাসিত বলে বিশ্ববিদ্যালয়ে কতিপয় প্রফেসর নিজের মহান চারিত্রিক আদরশে যে স্বৈরশাসন চালু করে রেখেছে তার মানসিক শিক্ষা না দেওয়া পর্যন্ত নিজের এই দৌড় থামাবে না বলে চিন্তা করেছে সে। এখানকার বুদ্ধিজীবি শিক্ষকেরা স্নায়ু বোমায় আক্রান্ত করছে ছাত্রদের। একপ্রকার নিরব স্নায়ু যুদ্ধ চালু করে রেখেছে তারা গোটা ক্যাম্পাস জুড়ে। যেই তাদের বানানো সিস্টেমের বাইরে যাচ্ছে তাকেই সিস্টেম করে জম্বি বানিয়ে রাখছে তারা। মেধাকে পুঁজি করে যে প্রতিষ্ঠান চলছে আজ সেই মেধাকেই মূল্যহীন করে বাজারে টানানো হচ্ছে চড়া দামে বিক্রি করার জন্য।
সাব্বির সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে। টার্গেটক ৃত সোনার শিক্ষকেরা বুঝতেও পারবে না কোন দিক দিয়ে কি ঘটে যাচ্ছে। প্রথমে সে চিন্ত করেছিলো এক যোগে হামলা করতে বলবে সবার উপর। পরে চিন্তা করে দেখলো না সবার উপর একসাথে হামলা হলে ব্যাপারটা সবার চোখে পড়ে যাবে। তাই সে এক এক করে ধরবে
ওর কিছু ছোট ভাই আছে। যারা সাব্বির ভাই বলতে অজ্ঞান। তার জন্য নিজের জান পর্যন্ত্য বিপন্ন করতে পিছপা হবেনা। আবার তাদের কিছু ছোট ভাই আছে। এরকম বিশাল একটা ভাই ব্রাদারের নেটওয়ার্ক আছে পুরো ক্যাম্পাস আর ক্যাম্পাসের বাইরে ঢাকাতেও। এদেরকে চিহ্নিত করা সহজ হবেনা। কারন এরা এক এক ডিপার্টমেন্ট এর। এক এক ইয়ারের ছাত্র। এরকম ছন্নছাড়া নেটওয়ার্ক এর কারনেই সাব্বিরের প্ল্যান সফল হবে। ওর তালিকায় অনেকগুলো শাস্তি আছে। সে বিভিন্ন বই পত্র ঘেটে, বিভিন্ন সাইকো হিস্ট্রি এনালাইসিস করেছে এদের বিরুদ্ধে একশানের জন্য। শারিরীক কোন আঘাত সে করবে না। ঠিক যে রকম মানসিক চাপে রেখে অদৃশ্য শাস্তি চলছে সবার উপর। ঠিক সেরকম করে ঘটনা ঘটাবে সে। একটা ছাত্রের দূর্দশার জন্য তার পরিবারকেও কম ভুগতে হয় না। কষ্টটা ভাগাভাগি করে নিয়ে নিজেকে হালকা রাখে অনেকে তাও পারে না। এইসব নিকৃষ্ট প্রফেসরদের ফ্যামিলি কি রকম আল্লাহ জানেন। যদি উলটাপালটা দেখা যায় তাহলে যে জিনিস ক্যাম্পাসের ছাত্রদের উপর প্রয়োগ করেছেন তারা একই রকম শাস্তি প্রয়োগ করা হবে তাদের উপরে। তবে সবার আগে পালের গোদা। সূক্ষন শাস্তি থেকে গুরু শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। যেমন যারা যারা গাড়িতে চড়ে আসে তাদের চাকার হাওয়া গায়েব করে দিতে হবে। সময় সুযোগ পেলে চার চাক্কা নাই হয়ে যাবে। এসি বাতাসে গদাই লস্করি চালে চলাফেরা কিছুক্ষন অথবা কিছুদিনের জন্য বন্ধ থাকবে। তখন গাটের টাকা খরচ করে ট্যাক্সি ক্যাব অথবা শিক্ষক বাসে অন্যান্য ব্রাক্ষনদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা যাওয়া করতে হবে। প্রত্যেকের বাসার বিদ্যুৎ টেলিফোন ডিশ ইন্টারনেট সং্যোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে হবে। যাদের নিজস্ব বাড়ি আছে তাদের পানির ট্যাংকিতে নর্দমার পানি ছেড়ে দিতে হবে। আর শেষে স্যার হুমায়ূন থেরাপিতো আছেই। প্রত্যেকের বাসার সামনে রাতের আধারে বিষ্ঠার পাহাড় রেখে আসতে হবে। যাতে তারা এক সপ্তাহ শয়নে স্বপনে শুধু হাগু দেখে। এতো গেলো অভ্যন্তরীণ ট্রিটমেন্ট। তারপর আছে বাহ্যিক ট্রিটমিন্ট। ডিপার্টমেন্ট থেকে শুরু করে রেজিস্টার পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ট্রান্সপোর্ট অফিস যে যেখানে যে রুমে বসে। সে রুমের বিশেষ ডেকোরেশন করা। এই সব লঘু কাজে দক্ষ প্রচুর মানুষ আছে চারপাশে আর তাদের সাথে যোগাযোগও করা হয়ে গিয়েছে। তারা বলেছে ভাই আপনে শুধু একবার আওয়াজ দিবেন বাদ বাকিটা আমরা করবো। কর্মচারীবৃন্দের একটা বিশাল অংশ এই কতিপয় শিক্ষকদের উপর ক্ষেপা। সমস্ত তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ নিজেরাই করবো শুধু যাচাই বাছাইটা করবে ভুক্তোভোগী কর্মচারীরা। সাব্বিরতো শুধু তার ডিপার্টমেন্ট এর কথা বিবেচনা করেছে। খোজ নিয়ে সে জেনেছে এরকম এনস্থা প্রায়ই হতে হচ্ছে ছাত্র ছাত্রীদের। যাদের পলিটিকাল কোন ব্যাক আপ নাই, যাদের ফ্যামিলি দরিদ্র, যারা অনেক নিচু জাতের কিন্তু শুধু মেধার কারনে চান্স পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে, এই ধরনের ছাত্র ছাত্রীদের উপরেই আগ্রাসন বেশি। বিশেষ করে কর্মচারী আর শিক্ষকদের ছেলে মেয়েদের মধ্যকার পার্থক্যটা প্রায় অদৃশ্য কিন্তু স্নায়বিক ভাবে স্পষ্ট। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব প্রফেসর এক রকম না। অনেক ভালো ভালো শিক্ষক আছেন। কিন্তু দূর্মুখো সাপেদের জন্য সাব্বির ওঝা হবে বলে চিন্তা করে রেখেছে। শুধু সঠিক সময়ের অপেক্ষা। শীতকালটা বেস্ট এই ধরনের একশন ঘটানোর জন্য। তবে সবগুলো না। গ্রীষ্মকালীন প্যাড়া, বর্ষাকালীন প্যাড়া আর শীতকালীন প্যাড়া। এই তিন ধরনের ধোলাই নিয়ে মাঠে নামতে হবে। বর্ষব্যাপি শাস্তিদান উত্সব। শিক্ষক এতোদিন শিক্ষা দিয়ে এসেছেন এবার এক ছাত্র দিবে শিক্ষকদের শিক্ষা।
সাব্বির এটা ভেবে অবাক হয় যে এরাওতো এক সময় ছাত্র ছিলো নাকি! কি ধরনের ছাত্র ছিলো এরা? এদের পড়াতো কারা? কি শিক্ষা দিয়েছিলো এদের যে এরা গায়ে গতোরে অমানুষ হয়ে গেলো? নিজের ব্যক্তি স্বার্থের জন্য শিক্ষকের মতো মহান পেশাকে এরা যে কোথায় টেনে নিয়ে গিয়েছে তা তারা নিজেরাও জানে না। আসলে জানে না বললে ভুল হবে জানে। তারা জেনে শুনেই ভুল গুলো করে যাচ্ছে। কারন তাদের জীবনতো এক প্রকার শেষ হয়ে গিয়েছেই এখন বাকিটা তারা কবরে যাওয়ার আগে দাফন করে রেখে যেতে চান। এরা স্থির বুদ্ধির জ্ঞানী ইবলিশ প্রজাতি।
সাব্বির তার রুমের দেয়ালে টানানো ক্যালেন্ডারের দিকে তাকালো। এপ্রিল চলছে । তার মানে আরো কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে গরমকাল থেরাপির জন্য। এখন বসন্তের বাতাস বইছে ক্যাম্পাসে।
হঠাতই একটা শয়তানি বুদ্ধি খেলে গেলো সাব্বিরের মাথায়। কন্ট্রোলার আর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের বাসা ক্যাম্পাসের ভিতরেই। আজ রাতেই তো একটা কাহিনী করা যায়। সে মোবাইল ঘেটে চতুর্থ শ্রেনীর এক কর্মচারীর নাম্বারে যোগাযোগ করলো।
হ্যালো করিম ভাই? আমি সাব্বির এস আর যে থেকে বলছি।
আরে কি অবস্থা ভাই?
যাচ্ছে চলে গড়াগড়ি করে। ভাই আজ রাতে একটা অপারেশনে যেতে হবে। তার জন্য তোমার হেল্প দরকার।
কি হেল্প ভাই?
তোমার সুইপার কলোনীর কারো সাথে যোগাযোগ আছে?
জ্বি আছে তো। থাকবেনা কেন?
ভাই দুই গাড়ি বিষ্ঠা লাগবে।
কি লাগবে? বিষ্ঠা? এটা কি ভাই?
আরে বিষ্ঠা মানে ইয়ে মানুষের পায়খানা।
এটা দিয়ে কি করবেন আপনে?
অপারেশনে লাগবে। পারবা? সাথে দুই জন লাগবে চালাক চতুর ধরনের। দুইটা ঠিকানা দিবো। ভোর রাতের দিকে দুই জন দুই ঠিকানায় ঢেলে দিয়ে আসবে। ধরা পড়া চলবে না। বিপদজ্জনক কাজ অবশ্য তবে তার জন্য উপযুক্ত পারিশ্রমিক পাবে তারা। ধরা পড়লে কিন্তু আমি কাউরে চিনি না। তুমি ফাদে পড়া ইদুর হয়ে যাবে। আর চাকরী নিয়ে টান দিবে প্রশাসন।
কি পারবে? থাকলে বলো। নাহলে আরেক জনকে বলছি।
আরে কি কন ভাই। আপনেতো আমাদের জন্যই করতাছেন। আমাদের দুখ কষ্ট গুলো তো আপনে ভালোই জানেন।
জানি দেখেই বলছি কিছু একটা করা দরকার। বড় সর একটা কাজের শুরু বলে ধরে নাও।
আচ্ছা ভাই। আপনারে আমি জানাইতেছি। একটু খোজ খবর নিয়া লই আগে।
ওকে আমাকে জানাও। আমি অপেক্ষায় থাকলাম তোমার ফোনের।
মিচকা একটা হাসি নিয়ে সাব্বির চিন্তা করতে থাকলো ভোরের বেলা দুই স্যার যখন সকালের বাসন্তী ফুরফুরে হাওয়া মাখতে বের হওয়ার জন্য সদর দরজা খুলে সামনে পুরিষ দেখবে। তখন গন্ধে আর চোখে দেখে কি অবস্থা টাই না হবে!
প্রচন্ড বেগে হাসতে শুরু করে দিলো সাব্বির অবস্থাটা কল্পনা করেই। উচিত শিক্ষা হবে। আর এটা ক্যাম্পাসে ছড়াতেও সময় নিবে না। যারা পরিষ্কার করতে আসবে তারাই ঘটনা একান ওকান করে দিবে। আর বাদ বাকি কাজ হাওয়া বাতাস করে দিবে।
সাব্বির ফেইসবুকে সিক্রেট পেজ গ্রুপ ওপেন করলো। সেখানকার সব মেম্বারদের ম্যাসেজ পাঠাতে শুরু করলো
“ফার্স্ট অপারেশন উইল স্টার্ট টু নাইট”
2.
কন্ট্রোলার বোরহান উদ্দিন ক্যাম্পাসের ভিতরেই দোতলা একটা বাড়ির নিচ তলায় শিক্ষক কোয়ার্টরে পরিবার নিয়ে থাকেন। তিনি অত্যন্ত অমায়িক প্রকৃতির মানুষ। তিনি বাংলা বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যান। তার চলন বলনে তিনি পুরোপুরি একজন সফল সাহিত্য প্রেমী। কিন্তু কেনো জানি স্টুডেন্টরা তার ধারে কাছে ঘেষতে চায় না। তিনি যতোই আদর সোহাগ করে কথা বলুন না কেন ছাত্র ছাত্রীরা অজানা কোন এক কারনে সব সময় তার থেকে একশো হাত দূরত্ব বজায় রেখে চলা ফেরা করে। তার দুই ছেলে এক মেয়ে। সবার বড় মেয়ে সে এবার অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে তারই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে ভরতি হয়েছে। বড় ছেলে ইন্টারে আর ছোট ছেলে ক্লাস নাইনে পড়ছে। তার স্ত্রী একজন গৃহিনী। দেখা যায় সাহিত্য প্রেমি মানুষদের লাইফ পার্টনার এরা কাঠ খোট্টা হয়। কিন্তু এখানে বিপরীত। কবিত আর গান তার স্ত্রীর খুবই প্রিয়। জীবনানন্দ আর রবীন্দ্রনাথ এতোটাই হৃদয় জুড়ে আছে তার যে মাঝে মধ্যে তিনি নিজেকেই কোথাএ খুজে পাননা। তার জীবন টুকটাক ঝামেলা ছাড়া বেশ ভালো ভাবেই যাচ্ছিলো আজকের ভোর রাত পর্যন্ত। ভোর রাতে তীব্র উৎকট গন্ধে দোতলা বাড়ি সহ আশেপাশের এলাকা ভরে গেলো। বোরহান সাহেব প্রথমে ঠিক বুঝতে পারলেন না কি হচ্ছে। তার কাছে মনে হলো তিনি তার বেডরুমে না উপচে পড়া মল মূত্রের কোন পাবলিক টয়লেটে শুয়ে আছেন। তিনি তার স্ত্রী সুলেখাকে ডেকে তুললেন ঘুম থেকে। ঘুম থেকে জেগেই আচল চাপা দিলেন সুলেখা নাকে মুখে। বললেন কি দূর্গন্ধ! ছি! এতো গন্ধ কিসের?
আমাকে জিজ্ঞাসা করছো কেন? বাথরুমের দরজা কি আটকানো না? নাকি কেউ টয়লেট করে পানি দেয় নি। পানি নাই নাকি ট্যাংকিতে? ট্যাংকি খালি?
এই সময় দূর দ্বার করে তার ছেলে মেয়ে তাদের রুমের দরজা কড়া নাড়তে লাগলো। তারা গন্ধে যতোটা না বিহবল হয়েছে তার থেকে বেশি হয়েছে এমন ঘটনায়। বোরহান সাহেব সবাইকে নিয়ে বাইরে বের হয়ে দেখেন এক ব্যারাথেরা ব্যপার স্যাপার। কারা যেনো তার গাড়ি বারান্দার উপর এক টন মল মূত্র ফেলে দিয়ে গিয়েছে। তিনি মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন। আর তার ছেলে মেয়ে আর স্ত্রী দ্রুত বাড়ি ছেড়ে দূরে সরে গিয়ে দাঁড়াল। যেখানে গন্ধ পৌছাচ্ছে না। তিনি ভেবে পেলেন না এই অকাজ করলো কারা। এখন তিনি এই ভোর রাতে এই আবর্জনা পরিষ্কার করবেন কিভাবে? পুরো এক ইউনিট দমকল বাহিনী লাগবে এই পুড়িষ পরিষ্কার করতে। ফায়ার ব্রিগেট কে ফোন দিতে হবে দ্রুত। তিনি ফজরের নামাযের পাচ মিনিট আগে দমকল বাহিনীকে ফোন করলেন। বললেন,
আপনারা তাড়াতাড়ি আসেন আমার বাড়িতে গজব পড়ছে। বাড়ির ঠিকানা দিয়ে তিনি তার পরিবারের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে অবাক বিস্ময় নিয়ে ভোর রাতে মানুষের বিষ্ঠা দেখতে থাকলেন।
একই অবস্থা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আজাদ হোসেন এর বাসার সামনেও। পার্থক্য শুধু সেখানে মসজিদে নামায পড়ে আসা মুসল্লিদের সাথে একা আজাদ সাহেব দাঁড়িয়ে আছেন। তার মাথার ভিতরে ঘুড়ছে শুধু
এতো বিষ্ঠা আসলো কই থাইকা।
তিনি প্রথমে কয়েক বালতি পানি ঢেলে ছিলেন পরিষ্কারের জন্য। কিন্তু হীতে বিপরীত হয়েছে। পানি পেয়ে বন্যার পানির মতো তার বাড়ির উঠান পেড়িয়ে বাগানে রাস্তায় গিয়ে পড়েছে মল মূত্র। ভাগ্য ভালো তার পরিবার গ্রামের বাড়ি গিয়েছে। না হলে তার ইজ্জতের বাহান্নোটা বেজে যেতো। তিনি দেখলেন মুসল্লিরা কানাকানি করছেে একে অপরের আর হাসাহাসি করতেছে। তিনি বুঝলেন তার সামনে বড় সর দুর্ভোগ অপেক্ষা করছে। তার এতোবছরের জীবনে এই ধরনের ঘটনা ঘটাতো দূরের ব্যাপার জীবনে কখনো শুনেনোনি। কার মাথা থেকে এ রকম বিকৃত শয়তানি বুদ্ধি আসতে পারে তিনি ভেবে পেলেন না। তার শত্রুর অভাব নেই। বলতে গেলে প্রায় সবার সাথেই তার বিবাদ লেগে আছে। যে কেউ করতে পারে এ কাজ। এই ঘটনা কানাকানি হতে হতে গোটা ক্যাম্পাসে চাউর হতে বেশি সময় লাগবে না। অফিস আওয়ার শুরু হওয়ার আগেই গোটা ক্যাম্পাস আর এর আশেপাশের এলাকায় জানাজানি হ্য়ে বিতিকিচ্ছিরি একটা ব্যাপার হবে। তিনি খালি বালতি হাতে নিয়ে বিমূড় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেন।
3.
বেশীক্ষন লাগলো না এই ধামাকার নিউজ ছড়াতে। ঢাকা থেকে সাড়ে সাতটায় যে সব বাস ক্যাম্পাসে আসে সে সব বাসের স্টুডেন্টদের ক্যাম্পাসে আসা লাগলো না তার আগেই তারা খবর পেয়ে গেলো দুই শিক্ষকের করুন অবস্থার। নানা রকমের কথার তুবড়ি ছুটলো নানা দিক থেকে। যারা ভুক্তভোগী ছিলো তারা আনন্দে হই হুল্লোড় শুরু করে দিলো। যারা আতেল গ্রুপের তারা বলা শুরু করলো।
দেখছিস কি বদের বদ পোলাগুলা যারা এই কাজ করছে? একা নিশ্চই করে নাই। মার্ক ভালো দেয়না ফেল করায় দেখে এই কাজ করছে। কি উচ্ছৃংখল সাহস? ধরা খাক অরা দেখবি তারপর কি মজা হয়।
নানা জনের নানা কথনে সারা ক্যাম্পাস গরম হয়ে থাকলো এই নিউজে। সবাই মারাত্নক খুশি এক বুদ্ধিজীবি মেধাবিরা বাদে। হলে হলে বটতলা ক্যান্টিন প্রান্তিক, ইসলাম নগর গেরুয়া, ডেইরী একাকার অবস্থা। দুপুরের মধ্যে ক্যাম্পাস ছেড়ে অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও ছড়িয়ে পড়লো এই সংবাদ। ফেইসবুকে ঝড় উঠলো। পক্ষে বিপক্ষে বিশাল বড় বড় স্ট্যাটাস দেওয়া শুরু করলো বিভিন্ন মহল। শুধু নিরব থাকলো তিন জন। সাব্বির, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আর কন্ট্রোলার।
সন্ধ্যার দিকে সাব্বির তার সিক্রেট ফেইসবুক পেইজে লিখলো
“গাইজ অপারেশন সাকসেসফুল, ওয়েট ফর এনাদার এটাক, বি রেডি “।
5.
এমন ন্যাক্কাড়জনক ঘটনা তদন্তের জন্য ভাইস চ্যান্সেলর এক জরুরী সভার আয়োজন করলেন। সকল ডিপার্টমেন্ট থেকে ম্যাক্সিমাম প্রফেসর, প্রক্টর, হল প্রভোস্ট সবাই এসে উপস্থিত হলেন মিটিংে। বোরহান সাহেব এবং আজাদ সাহেবও উপস্থিত হয়েছেন। তার মুখ ভার করে বসে আছেন। কোন কোন শিক্ষক প্রসংগটা নিয়ে হাসছেন। কেউ সহানুভূতি পূর্ন দৃষ্টি নিয়ে তাকাচ্ছেন দুই জনের দিকে। ভিসি মৃদু গলা খাকাড়ি দিয়ে শুরু করলেন
আমরা সবাই জানি আমাদের কলিগদের সাথে একটা বিশ্রী ঘটনা ঘটেছে। কারা এটা ঘটিয়েছে কেনো ঘটিয়েছে তা এখনো ধোঁয়াশা। পরিষ্কার নয় ঠিক। এটা কি উদ্দেশ্য মূলক নাকি শুধু হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য করা হয়েছে তাও জানা যাচ্ছে না। কোন রাজনৈতিক দলের কাজ নয় এটা। এই বিশ্রী ব্যাপারটা এলাকাবাসি করেছে না ছাত্ররা করেছে না কর্মচারীরা করেছে তা তদন্ত সাপেক্ষ। তবে স্থানীয় এলাকাবাসিদের সাহসে কুলাবে না এই কাজ করার। আমার কাছে মনে হচ্ছে ছাত্র অথবা কর্মচারী অথবা বহিরাগত কেউ এই কাজ করেছে ক্যাম্পাসে।
তিনি প্রকটরের দিকে তাকিয়ে বললেন আপনি না বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর? দুইটা গাড়ি রাতের বেলা ক্যাম্পাসে বিষ্ঠা নিয়ে এসে ঢেলে দিয়ে গেলো আপনি তার কিছুই জানেন না? আপনাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কিসের জন্য। আপনার আনসার গার্ডরা কি করছিল রাতে? তারা কোন তথ্য দিতে পারছে না কেনো?
প্রক্টর ড. শাকিল আহমেদ থতমত খেয়ে বললেন
এই ধরনের ঘটনা ক্যাম্পাসের ইতিহাসে কেউ করেনি আগে। অনেক ধরনের সমস্যা আমরা মোকাবেলা করেছি পূর্বে কিন্তু এরকম একটা ব্যাপার কিভাবে থেকে কি হয়ে গেলো ম্যাডাম ঠিক বুঝতে পারছি না। আর আনসার গার্ডরাও কিছু বলতে পারছে না ম্যাডাম।
এভাবে দুইটা ভ্যান ভরতি করে ক্যাম্পাস বিষ্ঠায় ভাসিয়ে দিয়ে গেলো আর আপনার মুখে এই ধরনের কথা ঠিক মানাচ্ছে না। যে দুই জনের ক্ষেত্রে এটা ঘটেছে তা আমার আপনার বাসায় ঘটার সমান। আজ তাদের সাথে ঘটেছে কাল আমাদের যে কারো সাথে ঘটতে পারে। তখন কোথায় মুখ দেখাবো আমরা? অবস্থার অস্বাভাবিকতা বোঝার চেষ্টা করুন। আপনার কন্টাক্ট কাজে লাগান। রাজনীতি করে যে ছেলে গুলা তাদের কাজে লাগান। কালপ্রিটকে খুজে বের করুন। আমরা চাই না গন মাধ্যমে এ বিষয়ে কোন তথ্য লিক
হোক।
ইতিমধ্যে হয়ে গিয়েছে ম্যাডাম। প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ই জেনে ফেলেছে।
এভাবে জানা আর গন মাধ্যমে জানানোর মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য আছে। আপনার মাথায় তা ঢুকবে বলে মনে হয় না। তাহলে আপনি আমার জায়গায় হতেন।
সভা শেষ হতেই সবাই আবার নানান প্যাচাল নিয়ে কথা বলতে থাকলো। এর আগে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে পক্ষ বিপক্ষ দোষী সাধুর বিচার বিশ্লেষন শুরু হয়ে গেলো। চা বিস্কিট খেয়ে সবাই কিছুক্ষন পর যে যার ডিপার্টমেন্ট এর দিকে চলে গেলেন।
6.
সুইপার কলোনির সাবের আর রফিক খুব ভয়ে ভয়ে আছে। তারা বুঝতে পারেনি ঘটনা যে এতোদূর গড়াবে। চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী সিরাজ ভাই বললো একটা কাজ করে দিতে হবে। কাজটায় টাকা এবং মজা দুইটাই আছে। উপরি হিসেবে আছে প্রতিশোধ । তাদের জাতের লোকেদের সাথে স্যারেরা যে খারাপ আচরন করে তা তারাও মেনে নিতে পারেনা। সিরাজ সেই সুরেই তাদের মগজ ধোলাই করে দিয়ে বলেছে কাজটা করতে হবে কিন্তু কোন প্রমান রাখা যাবে না। কাজ শেষ হওয়ার পর একেবারে হাওয়ায় মিলিয়ে যেতে হবে তাদের। যেনো এরকম কোন কাজ ঘটেনি আর তারা ঘটায়নি। কিন্তু তা বললে কি আর হয়। তাদের ভিতু মন। কাল রাতে টাকা পেয়ে মাল কিনে এনে ঘরে রেখেছিল। কাজ শেষে দুই বন্ধু ভোর রাত থেকে মাল খেয়ে টাল হয়ে পড়েছিল। সন্ধ্যার সময় নেশার রেশ কেটে যেতেই তাদের বুকে ভয় ডুকে গিয়েছে। সাথে আছে নানা দিক থেকে নানা রকমের পাচ মিশালি সংবাদ। এদের এখন কেউ জোরে ঝাড়ি দিলেই বাপ বাপ করে পুরো ঘটনা খুলে বলে মাপ চাওয়া শুরু করবে। সিরাজ খুবই চালাক লোক। সে আগেই বুঝতে পেরেছিলো যে এরকম সমস্যা হতে পারে এদের নিয়ে। তাই এদের কে এক সংগে না থাকতে দিয়ে একেক জনকে একেক দিকে অন্য কাজ দিয়ে পাঠিয়ে দিলো। সিরাজ মোবাইলে সাব্বিরের নাম্বারে ফোন দিলো। ফোনে কলার টিউন বাজছে খুব সুন্দর একটা। কিসের তা সে ধরতে পারলো না। তার সাথে সাব্বিরের পরিচয় ফার্স্ট ইয়ারে। খুব চটপটে দারুন সুদর্শন ফিটফাট একটা যুবক। যার সাথে এক দেখাতেই সবাই পছন্দ করা শুরু করবে। যদিও অনেক সাদা সিধা। মানে অন্তরটা সাফ। পানির মতো। কিন্তু এতো সব বাদেও সিরাজের টেনেছিলো সাব্বিরের টাকা খরচ করার বাহার দেখে। এই ছেলে চোখের পলকে পাচশো হাজার টাকার নোট ভেংে খরচ করে ফেলে। যেনো টাকা না কাগজ। প্রথম প্রথম মনে করেছিলো পাগল ছাগল টাইপের ছেলে। কিন্তু মেশার পর সিরাজ দেখলো এই লোক খুবই মারাত্নক । মাঝে মাঝে এমন সব কাজ করে যাতে বুদ্ধির তারিফ করতে হয়। আবার মাঝে মাঝে প্রচন্ড রকম এর বোকামি করে বসেন। কিন্তু অন্তরটা একদম খাটি। এর সাথে সম্পরক রাখতেই হবে। সে সবার সাথে সম্পরক করে না। একদম আপন যারা তাদের সাথে সে মিল মহব্বতের লোক। তাদের জন্য নিজের জানও দিতে পারে। সাব্বির ভাই এর কথা মনে করতে করতে অনেকবার ফোন দিয়ে ফেললো সে সাব্বিরের নাম্বারে। কিন্তু কেউ ধরলো না দেখে সে ফোন রেখে দিলো। এদিকের আপডেট জানাতে বলেছিলো সাব্বির ভাই। তাই সে একটা ম্যাসেজ লিখে পাঠিয়ে দিলো।
“ভাই টেনশন নিয়েন না। এখানে সব কিছু ঠিক ঠাক আছে। দুই জনকে দুই দিকে পাঠিয়ে দিয়েছি। তারা এক সাথে থাকলে সমস্যা হতে পারতো কিন্তু এখোন ফক ফকা ক্লিয়ার। আপনি চিন্তা মুক্ত থাকেন্বুদ্ধি
সাব্বির মহানন্দে বাশির প্র্যাক্টিস করছে। তার দম কম। বাশির ফুটোয় ফু দিলে ফ্যাত ফ্যাত করছে। ঠিক মতো সুর তুলতে পারছে না। কিন্তু তাতে তার কোন মাথা ব্যাথা নেই। সে প্রবল উতসাহে চালিয়ে যাচ্ছে তার সাধনা। মনে মনে চিন্তা করছে। বসন্ত বাতাসে স্যারের উঠানে কি গন্ধ ভাসে আমার আহা বসন্ত বাতাসে। হঠাত করে শুদ্ধ সুর বের হতে শুরু করলো বাশি দিয়ে। সে মহা আনন্দে চিৎকার দিয়ে উঠলো। ভাগ্য ভালো সে হলের ছাদে আছে নতুবা খবরই ছিলো তার। বন্ধু বান্ধবেরা এসে এক হাত দিয়ে যেতো। এমনিতে সে কম উতপাত করে না। পুরো হল মাতিয়ে রাখে পাগলামি করে। কিন্তু আজ অন্য এক ধরনের আনন্দ কাজ করছে তার ভিতরে। কারন তার পরিকল্পনাকে সবাই খুব উতসাহের সাথে নিচ্ছে। সবার কাছে সে অন্য এক পিরিচিতি পাচ্ছে। যেটা তাকে আনন্দ দিচ্ছে। যদিও কিছু কিছু বন্ধু উলটা সিধা কথা বলছে কিন্তু তারাতো আর জানেনা যে সেই হচ্ছে হোতা।
সাব্বির একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে ভাবলো বসন্তকালীন ট্রিটমেন্ট এর কোন ব্যবস্থা ছিলো না। কিন্তু হুজুগে একটা ঘটনা ঘটে গেলো। এবার ধীরে সুস্থ পরবর্তী প্ল্যানে যেতে হবে। গ্রীষ্মকালীন প্যাড়া আসতে যাচ্ছে সামনে।
সাব্বির শুণ্যে হাত ছূড়ে বললো দেখবা এবার ছাত্রদের হয়রানি করার মজা কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি। প্রফেসর নিজের জিনিস সামলাও। আমার চক্র আসিতেছে।
©somewhere in net ltd.