![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষ হতে চেয়ে কি যে হচ্ছি তা নিজেও জানিনা
আজ আকাশের অবস্থা বিশেষ সুবিধার না। যে কোন মুহুর্তে বৃষ্টি এসে ভিজিয়ে দিয়ে যেতে পারে। আমি গুলশান মোড়ে দাঁড়িয়ে ট্রাফিক পুলিশের মতো চারিদিকে নজর বুলাচ্ছি। মূলত আমি অপেক্ষা করছি খালি রিক্সার জন্য। যাবো ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে। আমার স্কুল জীবনের বন্ধু সাব্বির মাইক্রো বায়োলজি ডিপার্টমেন্ট এ পড়ে। ওর সাথে দেখা হওয়াটা জরুরী। নানান রকম উদ্ভট আইডিয়ার ফ্যাক্টরি বলা চলে ওকে। চোখে ভারী লেন্সের চশমা পড়ে। চশমা ছাড়া সে কানা। তাই কানা সাব্বির নামে বন্ধুমহলে ওর পরিচিতি আছে। মেধাবী নিসন্দেহে অবশ্যই। জীবনানন্দ কে আঁকড়ে ধরে ছিল কলেজ লাইফে। এখন মত্ত বাশির সুরে। অনেক গুলা কাজের মধ্যে তার একটা কাজ আমার কঠিন সমালোচনা করা। এক কথায় তার ঘটের মতের সাথে অমিল হলেই হলো সেরেছে কাজ। মেজাজ তিরিক্ষি করে ছাড়বে। একটা খালি রিক্সা আসছে দেখে উঠে পড়লাম।সময় এখন বেলা বারোটার কাছাকাছি। কিন্তু আকাশের ঘন মেঘ দেখে মনে হচ্ছে এই বুঝি তেড়ে শীতল বেগে মারতে এলো। চারিদিকে থমথমে অবস্থা। এমন সময় পাশে এসে থামলো একটা সাদা টয়োটা। দ্বখেই মন্টা খারাপ হয়ে গেলো। কি অবস্থা! হুমায়ূন স্যার যে বলেছিলেন অতি রূপবতী মেয়েরা শুধু গাড়িতে চড়ে ঘুরে বেড়ায় তা দেখি একেবারে সত্যি। লাল পাড়ের শাড়ি পড়ে আছে। সাথে ম্যাচিং করে পড়েছে কানের দুল। মুখটা আমার বিপরীত দিকে ঘুরিয়ে রেখেছে। হঠাত মনে হলো তাকে চিনি। কিন্তু কিছু বোঝার আগেই ভুশ করে সিগন্যাল অমান্য করে গাড়ি চলে গেলো সামনের দিকে। আমি মাথায় কে হতে পারে কে হতে পারে চিন্তা করতে থাকলাম। রিক্সাওয়ালাকে বললাম তোমার কাছেতো তোমার তিন চাকা রিক্সাই পাজেরো। চালাও হাওয়ার বেগে।
আমার মাথায় এখন বিনয় মজুমদারের ফিরে এসো চাকা কবিতার লাইন ঘুরছে।
কবির চাকার সাথে রিক্সার চাকার যোগাযোগ ঘটাচ্ছি।মাথার ইপর মেঘ দুরন্ত বেগে ছুটন্ত রিক্সা মাথার ভিতরে যখন ঘুরছে চাকা ঠিক তখনই আশেপাশে কোন বাসের টায়ার ব্রাস্ট হলো। চিন্তার চ এরা এলোমেলো হয়ে উলোট পালোট হয়ে গেলো।
সাব্বিরের কাছ থেকে এক শশানের ঠিকানা নিতেই তার কাছে যাচ্ছি। আমাদের প্ল্যান ছিল কোন মহাশশানে এক অমাবস্যাতিথি যাপন করবো। সে ডুবে আছে তার সেমিস্টার নিয়ে। আমি এদিকে হাত পা একেবারে ঝাড়া। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার এই সুবিধা। যখন ইচ্ছে হলো ক্লাস বাং দিয়ে ঘুরে বেড়াও শহর জুড়ে। বেশি ঘাটা ঘাটি হলে প্রক্সি সিস্টেমতো আছেই। মোবাইলে বলতে বলছিলাম জায়গার নাম। শালা ত্যাঁদড় বলে কিনা সামনাসামনি না হলে নাকি সে কোন ঠিকানা ফিকানা দিবে না। নেহাত ঠ্যাকাটা আমার তাই যাচ্ছি।
গলি দিয়ে বের হয়ে ভার্সিটির সামনে গিয়ে দেখি সে তার ক্লাসমেট বন্ধু মাহাদীর সাথে কথোপকথনে ব্যস্ত।
ভাড়া চুকিয়ে দিয়ে রিক্সা বিদায় করলাম।
আমাকে দেখে বলে উঠলো
আমি কিন্তু নাই এবার এসবের মধ্যে বলে দিলাম।
দেখা হলো। এবার ঠিকানাটা দে। গেলে যাবি না গেলে যাবি না। এটা তোর ব্যাপার। কিন্তু আমি যাবো। আকাশের যে অবস্থা। যে কোন মূহুরতে কেঁদে ফেলতে পারে।
পাশ থেকে মাহাদী বললো শুধু এই ঠিকানা জানার জন্য এতো কষ্ট করলি? কিছুক্ষন থাক আমাদের সাথে। আড্ডা দেই।
না, আজ থাক। দে তোর খাম দে।
খাম? কিসের খাম? মাহাদী জিজ্ঞাসা করলো।
কানায় একটা ঠিকানা কাগজে লিখে খামে পুরে রেখেছে আমার জন্য।
খামটা সাব্বিরের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে আমি সোজা তীতুমিরের দিকে হাটা ধরলাম। এখন প্রথম কাজ ক্যাম্পাসে হলে যাওয়া। বনানী থেকে সাভার যাওয়ার মাঝেই ঝুম বৃষ্টি নামলো। পথ ঘাট একেবারে ভাসিয়ে নিয়ে গেলো। সাভার নেমে শুভযাত্রায় করে চলে এলাম ক্যাম্পাসে। এই জায়গার হাওয়াটাই অন্য রকম। বুকের মধ্যে এক অদ্ভুত প্রশান্তি নিয়ে আসে। হল রুমে এসে দিন পঞ্জিকা নিয়ে বসলাম। সামনের অমাবস্যা কবে তা জানার জন্য। গুনে গুনে এক সপ্তাহ পড়েই অমাবস্যাতিথি। আমি টেবিলে খামটা রেখে দিলাম না খুলে। যাওয়ার আগের দিন খোলা যাবে।
©somewhere in net ltd.