![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষ হতে চেয়ে কি যে হচ্ছি তা নিজেও জানিনা
রাগীব জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানে পড়াশোনা করছে। সে তার মাকে নিয়ে ক্যাম্পাস সংলগ্ন ইসলামনগরে একটা তিন তলা বাড়িতে দুই রুমের একটা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে। সে সাভারে একোটা টিউশানি করিয়ে তার হাত খরচ চালায়। আজ বৃহস্প্রতিবার। সে বিকাল বেলা টিউশানি শেষ করে বাসায় চলে এলো। বাসায় ডুকতেই দেখে তার মা সোফার উপরে বসে আছেন। কপালে তার চিন্তার রেখা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। রাগীবকে দেখে তার মা বলে উঠলো,
এই শুনেছিস! কাল ভোর রাতে বলে এখানকার একটা স্থানীয় লোককে কে বা কারা যেনো গলা কেটে মেরে ফেলেছে।
তুমি কোথ্থেকে জানলে? কেবলেছে তোমাকে এই ঘটনা?
কে আবার আমাদের কাজের মেয়ে সুমি। সেই দুপুরবেলা ঘর মুছতে এসে বলে গেলো। তুই কিছু জানিস?
সারাদিন ক্যাম্পাসে ক্লাস, আড্ডা, টিউশানি করে এসবের খোজ সে রাখে না। সে বললো,
কই এরকম কিছু শুনলাম নাতো! অবশ্য কারো সাথে তেমন একটা কথা হয়নি। আচ্ছা মা, এসব বাদ দাওতো। আমার ক্ষুধা পাইছে কিছু খাইতে দাও। আমি আবার বের হবো।
এইনা তুই মাত্র বাইরে থেকে এলি। আবার যাবি বাইরে? এলাকার অবস্থাতো খারাপ।
আরে কি বলো না বলো মা। কোথায় কে খুন হইছে আর আমারে বাইরে যেতে মানা করছো। এটা কোন কথা! দেশে এরকম হাজারটা খুন হচ্ছে এখানে সেখানে। গ্রো আপ মা।
রাগীব মায়ের রান্না করা নুডুলস খেয়েই বেরিয়ে পড়লো বাসা থেকে। ঘটনা কি তা জানতে হবে। সে সোজা ইসলামনগর বাজারে চলে গেলো। সেখানে পাটোয়ারী ভাই এর দোকানে থেকে একটা সিগারেট কিনে জ্বালিয়ে জিজ্ঞাসা করলো,
ভাই কাহিনী কি? শুনলাম কে বলে খুন হইছে?
আরে হ। তাতপল্লীর রবি মজুমদার খুন হইছে কাল রাত্রি বেলা। ফযরের আযান দিতে যাওয়ার সময় অরোরা রোডের এক পাশে গলা কাটা লাশ দেখতে পায় পানধোয়া জামে মসজিদের ইমাম সাহেব।
পুলিশ আসছে?
আসছেনা আবার! সারা সকাল দুপুর গেলোত তাদের ল্যাঠাল্যাঠিতেই। যেনো আমি খুন কইরা আইসা এখন পান সাজাইতে বসছি।
কি মনে হয় কেন মারছে লোকটারে আপনার?
আপনে কি পুলিশে গেছেন নাকি? হেরাও আমারে এই প্রশ্নই করছে।
আরে এমনিতে। ইচ্ছা হলো জানি। আপনি জানলে বলতে পারেন।
জমি জমা নিয়া বিরোধ আছিলো বোধ হয়। শত্রুপক্ষ সুযোগ পাইয়্যা কল্লা ফতে কইরা দিছে।
ও আপনিতো শিউর না তাই না? যে জমি জমা নিয়েই ঝামেলা ছিল?
তাছাড়া আর ক্যান হইবো?
রাগীবের বলতে ইচ্ছা করলো অনেক কিছু কিন্তু এই লোককে কোন কিছু বলে লাভ নেই। অনেক প্রশ্ন উকি ঝুকি দিচ্ছে। কিন্তু কোন উপায়ন্তর না দেখে সে একটা রিকশাকে ডাক দিলো।
অই মামা খালি! চলো ট্রান্সপোর্ট চলো।
ট্রান্সপোর্ট যাওয়ার পথেই তার বান্ধবী পূর্বা তাকে ফোন দিলো।
এই তুমি কই?
আমিতো রিক্সায়। ট্রান্সপোর্ট যাচ্ছি। তুমি কই?
আমিতো হলে। তোমার টিউশানি শেষ?
হ্যা। অইটা অনেক আগেই শেষ। একটু ইসলাম নগর বাজারে গিয়েছিলাম।
কেন? বাসার জন্য বাজার করতে?
না অন্য একটা কাজে। তুমি কি ট্রান্সপোর্ট আসবা?
আমার একটু লেইট হবে। তুমি চা খাও আমি আসতেছি ওকে।
মোবাইল পকেটে রেখে রাগীব চিন্তা করতে থাকলো সম্ভাব্য খুনী কে হতে পারে। তার আত্নীয়স্বজন, বন্ধু বান্ধব শত্রু। স্থানীয় একজনকে মেরেছে। অর্থাৎ যে কেউই খুনী হতে পারে। এতসব ভাবতে ভাবতে সে ট্রান্সপোর্ট এ চলে আসলো। দেখলো কড়ই গাছের শিকড়ের উপরে তার বন্ধু বান্ধব, সিনিয়র জুনিয়ররা বসে আছে। সে রমজান ভাইয়ের দোকান থেকে চা আর সিগারেট নিয়ে তাদের কাছে গিয়ে বসলো। দেখলো তারা কথা বলছে বর্তমান এ সেরা ব্যান্ড দল কোনটা তা নিয়ে। মনটা উসখুশ করছে। কিন্তু তাদের এই প্রসঙ্গ থামছেও না। কয়েক মিনিট পর নীরবতা ভর করলে সে বলে উঠলো,
তাতপল্লীর কে একজন বলে খুন হইছে তোরা শুনেছিস?
এমন বেমক্কা খুনী প্রশনে সবাই কেমন যেনো হয়ে গেলো। তারপর সহজ স্বাভাবিক কন্ঠে বললো নবীন,
হ্যা শুনছিতো। রবি নাকি রাব্বি নামে কারে যেনো কেউ খুন করছে গতকাল রাতে।
তোরা কিছু জানিস?
আমরা আবার কি জানবো? সবাই যা জানে আমরাও তাই জানি।
কিছুক্ষন চললো রবির কথা। কিন্তু অই ঘুরে ফিরে একই কথা। কেউ বেশী কিছু জানে না। প্রসংগ পাল্টালো। চা শেষ করে সে কাপ রাখতে গেলো দোকানে। ফিরে দেখলো পূর্বা রিকশা থেকে নামছে।
রাগীব প্রতিবারের মতো আবারো মুগ্ধ হলো পূর্বাকে দেখে।
কি সুন্দর। যেনো অপ্সরী বানাতে গিয়ে ভুলে মানবী হয়ে গিয়েছে। কাছে আসতেই সে বললো
তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।
মৃদু হেসে পূর্বা বললো আচ্ছা! তোমাকেও কম হ্যান্ডসাম লাগছে না।
তারপর রাগীব খুনের ঘটনাটা খুলে বললো পূর্বাকে। পূর্বার মতামতো দেখা গেলো বাকিদেরই মতো। কিছুক্ষন সময় কাটিয়ে সে বাসায় চলে এলো। বাসায় এসে দেখে তার মা টিভি চ্যানেলে নাটক দেখছে। মোশাররফ করিমের কি একটা নাটক চলছে টিভিতে।
সে মনে মনে ভাবলো কারো মাথাতেইতো লাশ ঘুরছে না। আমার মাথায় কেন? সেও বাকিদের মতো খুনের ঘটনাটা এড়িয়ে গেলো আর চার পাঁচটা খবরের মতো। পরদিন সকালের সংবাদপত্র খুলে পাতা ওল্টাতেই খবরটা চোখে পড়লো সবার
“বিভিন্ন স্থানে সাত খুন, লাশ উদ্ধার”
সাভারে অটোরিকশাচালক এবং ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়ায় এক গৃহবধূ খুন হয়েছেন। বাগেরহাট, নারায়নগঞ্জ, বরিশাল ও নাটোরে পাচ খুন লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
সাভার:প্রতিনিধি জানিয়েছে সাভারের ইসলামনগর এলাকার তাতিপাড়ায় দূর্বত্তদের ছুরিকাঘাতে রবি মজুমদার নামে এক অটো রিকশাচালক খুন হয়েছেন। রবি অই এলাকার নাসির মজুমদারের ছেলে”।
কিন্তু সবাই নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা ভেবে ব্যাপারটা ভুলে গেলো। অজস্র লাশের ফাইলের স্তূপে আরেকটি ফাইল যুক্ত হলো পুলিশের হেফাজতে।
©somewhere in net ltd.